‘নয়ন সমুখে তুমি নাই, নয়নের মাঝখানে নিয়েছ যে ঠাঁই’

আজ ১ নভেম্বর। এক বছর হয়ে গেল কবি, প্রাবন্ধিক ও সম্পাদক আবুল হাসনাতের চলে যাওয়া। গত বছর এই দিনে পৃথিবীর মায়া কাটিয়ে চিরবিদায় নেন বিচক্ষণ সাহিত্য সম্পাদক হিসেবে খ্যাত এই লেখক। দীর্ঘ ২৪ বছর দৈনিক সংবাদের সাহিত্য সাময়িকী সম্পাদনা করা আবুল হাসনাত ২০০৪ সাল থেকে আমৃত্যু কালি ও কলমের সম্পাদকের দায়িত্বে ছিলেন। একই সঙ্গে চিত্রকলাবিষয়ক ত্রৈমাসিক ‘শিল্প ও শিল্পী’রও সম্পাদকও ছিলেন তিনি।

কবিতা, উপন্যাস, চিত্র-সমালোচনাসহ সাহিত্যের নানা শাখায় গুরুত্বপূর্ণ অবদান রাখা গুণী এই ব্যক্তিত্ব ১৯৮২ সালে ‘টুকু ও সমুদ্রের গল্প’র জন্য আবুল হাসনাত অগ্রণী ব্যাংক শিশু সাহিত্য পুরস্কার পান।

মাহমুদ আল জামান নামে কবিতা লিখে প্রশংসিত হয়েছেন। কবিতা, শিল্প সমালোচনা, গল্প মিলিয়ে তার মৌলিক এবং সম্পাদিত গ্রন্থ অর্ধশতাধিক।

নাট্যব্যক্তিত্ব রামেন্দু মজুমদার তাকে স্মরণ করে এক অনুষ্ঠানে বলেন, আবুল হাসনাত সাংস্কৃতিক রুচিকে উন্নত করার চেষ্টায় আত্মনিবেদিত থেকেছেন। দৈনিক সংবাদ-এর সাহিত্য পাতা তার সম্পাদনায় যেমন সেরা হিসেবে দৃষ্টান্ত স্থাপন করেছিল, একইভাবে কালি ও কলমকে তিনি শ্রেষ্ঠ পত্রিকায় পরিণত করেছিলেন।

সংবাদ-এর বার্তা সম্পাদক কাজী রফিক আবুল হাসনাত প্রসঙ্গে বলেন, আবুল হাসনাত নতুন লেখক সৃষ্টি করেছেন। তিনি জীবিত থাকা অবস্থায় যতটা না বোঝা গেছে, চলে যাওয়ার পর তার অভাব বোঝা যাচ্ছে। দেশের সাহিত্য সংস্কৃতি এক দিনে গড়ে ওঠে না। এ জন্য হাসনাত ভাইয়ের মতো কিছু মানুষ নেপথ্যে থেকে অনেক কাজ করে যান। তিনি তেমনি একজন নেপথ্যচারী, যিনি নিভৃতে কাজ করে গেছেন নিজের মতো করে।

সংবাদ-এর প্রধান প্রতিবেদক সালাম জুবায়ের আবুল হাসনাতের স্মৃতিচারণ করতে গিয়ে বলেন, ‘তিনি নানামুখী কাজের সঙ্গে সম্পৃক্ত ছিলেন। সম্পাদনায় বিপুল সাফল্য সত্ত্বেও শেষ পর্যন্ত তিনি ছিলেন কবি। তিনি কবিতা লিখতে পছন্দ করতেন। কবিতার ভেতর দিয়েই আমরা তাকে খুঁজে পাই। তার নিজের কথা জানতে পারি।

নারী সাংবাদিক কেন্দ্রের সভাপতি সিনিয়র সাংবাদিক আবুল হাসনাতের স্ত্রী নাসিমুন আরা হক মিনু তাকে নিয়ে বলেতে গিয়ে আবেগাপ্লুত হয়ে পড়েন। তিনি বলেন, ‘আবুল হাসনাত সারাজীবন অন্যের জন্যই কাজ করে গেছেন। নিজের জন্য কিছু চাননি। সাহিত্য সংস্কৃতিতে তার অনুরাগ ছিল চোখে পড়ার মতো।

তিনি আরও বলেন, ‘কেউ কিছু লিখতে চাইলে, কোন রেফারেন্স দরকার হলে, তিনি অত্যন্ত যতেœর সঙ্গে পরামর্শ দিতেন কোন বইতে পাওয়া যাবে। এমনকি, কারও সঙ্গে যোগাযোগের দরকার হলে অনুরোধ করে চিঠি দেয়াসহ সব রকমের সহায়তা করতেন হাসিমুুখে। তিনি সব সময় চাইতেন নতুন লেখক সৃষ্টি হোক, পাঠক বাড়–ক। আবুল হাসনাত সাহিত্য-সংস্কৃতির জন্য সারাজীবন কাজ করে গেছেন। আজ তিনি নেই। এখন আমাদের দায়িত্ব নিয়ে এই কাজ চালিয়ে যেতে হবে।’

কবিতা, উপন্যাস, চিত্র-সমালোচনাসহ সাহিত্যের নানা বিভাগে স্বাক্ষর রেখে যাওয়া আবুল হাসনাতের চিত্রকলা বিষয়েও ছিল ঝোঁক। এ বিষয়ে তার প্রজ্ঞা সর্বজনবিদিত। তার হাত ধরেই বহু কবি-সাহিত্যিক-শিল্পী পাঠক-দর্শকের কাছাকাছি পৌঁছাতে পেরেছেন এবং স্থান করে নিয়েছেন এদেশের সাহিত্যভুবনে। মিতভাষী আবুল হাসনাত তার ‘প্রত্যয়ী স্মৃতি ও অন্যান্য’ গ্রন্থে তার সময়কার রাজনৈতিক, সামাজিক, অর্থনৈতিক ও সাহিত্য-সংস্কৃতি অঙ্গনের নানা বাঁকবদলের ঘটনাক্রমসহ জীবনপথের নানা ঘটনা ও তথ্য বর্ণনা করে গেছেন সাবলীল ভঙ্গিমায়।

সোমবার, ০১ নভেম্বর ২০২১ , ১৬ কার্তিক ১৪২৮ ২৪ রবিউল আউয়াল ১৪৪৩

‘নয়ন সমুখে তুমি নাই, নয়নের মাঝখানে নিয়েছ যে ঠাঁই’

জাহিদা পারভেজ ছন্দা

আজ ১ নভেম্বর। এক বছর হয়ে গেল কবি, প্রাবন্ধিক ও সম্পাদক আবুল হাসনাতের চলে যাওয়া। গত বছর এই দিনে পৃথিবীর মায়া কাটিয়ে চিরবিদায় নেন বিচক্ষণ সাহিত্য সম্পাদক হিসেবে খ্যাত এই লেখক। দীর্ঘ ২৪ বছর দৈনিক সংবাদের সাহিত্য সাময়িকী সম্পাদনা করা আবুল হাসনাত ২০০৪ সাল থেকে আমৃত্যু কালি ও কলমের সম্পাদকের দায়িত্বে ছিলেন। একই সঙ্গে চিত্রকলাবিষয়ক ত্রৈমাসিক ‘শিল্প ও শিল্পী’রও সম্পাদকও ছিলেন তিনি।

কবিতা, উপন্যাস, চিত্র-সমালোচনাসহ সাহিত্যের নানা শাখায় গুরুত্বপূর্ণ অবদান রাখা গুণী এই ব্যক্তিত্ব ১৯৮২ সালে ‘টুকু ও সমুদ্রের গল্প’র জন্য আবুল হাসনাত অগ্রণী ব্যাংক শিশু সাহিত্য পুরস্কার পান।

মাহমুদ আল জামান নামে কবিতা লিখে প্রশংসিত হয়েছেন। কবিতা, শিল্প সমালোচনা, গল্প মিলিয়ে তার মৌলিক এবং সম্পাদিত গ্রন্থ অর্ধশতাধিক।

নাট্যব্যক্তিত্ব রামেন্দু মজুমদার তাকে স্মরণ করে এক অনুষ্ঠানে বলেন, আবুল হাসনাত সাংস্কৃতিক রুচিকে উন্নত করার চেষ্টায় আত্মনিবেদিত থেকেছেন। দৈনিক সংবাদ-এর সাহিত্য পাতা তার সম্পাদনায় যেমন সেরা হিসেবে দৃষ্টান্ত স্থাপন করেছিল, একইভাবে কালি ও কলমকে তিনি শ্রেষ্ঠ পত্রিকায় পরিণত করেছিলেন।

সংবাদ-এর বার্তা সম্পাদক কাজী রফিক আবুল হাসনাত প্রসঙ্গে বলেন, আবুল হাসনাত নতুন লেখক সৃষ্টি করেছেন। তিনি জীবিত থাকা অবস্থায় যতটা না বোঝা গেছে, চলে যাওয়ার পর তার অভাব বোঝা যাচ্ছে। দেশের সাহিত্য সংস্কৃতি এক দিনে গড়ে ওঠে না। এ জন্য হাসনাত ভাইয়ের মতো কিছু মানুষ নেপথ্যে থেকে অনেক কাজ করে যান। তিনি তেমনি একজন নেপথ্যচারী, যিনি নিভৃতে কাজ করে গেছেন নিজের মতো করে।

সংবাদ-এর প্রধান প্রতিবেদক সালাম জুবায়ের আবুল হাসনাতের স্মৃতিচারণ করতে গিয়ে বলেন, ‘তিনি নানামুখী কাজের সঙ্গে সম্পৃক্ত ছিলেন। সম্পাদনায় বিপুল সাফল্য সত্ত্বেও শেষ পর্যন্ত তিনি ছিলেন কবি। তিনি কবিতা লিখতে পছন্দ করতেন। কবিতার ভেতর দিয়েই আমরা তাকে খুঁজে পাই। তার নিজের কথা জানতে পারি।

নারী সাংবাদিক কেন্দ্রের সভাপতি সিনিয়র সাংবাদিক আবুল হাসনাতের স্ত্রী নাসিমুন আরা হক মিনু তাকে নিয়ে বলেতে গিয়ে আবেগাপ্লুত হয়ে পড়েন। তিনি বলেন, ‘আবুল হাসনাত সারাজীবন অন্যের জন্যই কাজ করে গেছেন। নিজের জন্য কিছু চাননি। সাহিত্য সংস্কৃতিতে তার অনুরাগ ছিল চোখে পড়ার মতো।

তিনি আরও বলেন, ‘কেউ কিছু লিখতে চাইলে, কোন রেফারেন্স দরকার হলে, তিনি অত্যন্ত যতেœর সঙ্গে পরামর্শ দিতেন কোন বইতে পাওয়া যাবে। এমনকি, কারও সঙ্গে যোগাযোগের দরকার হলে অনুরোধ করে চিঠি দেয়াসহ সব রকমের সহায়তা করতেন হাসিমুুখে। তিনি সব সময় চাইতেন নতুন লেখক সৃষ্টি হোক, পাঠক বাড়–ক। আবুল হাসনাত সাহিত্য-সংস্কৃতির জন্য সারাজীবন কাজ করে গেছেন। আজ তিনি নেই। এখন আমাদের দায়িত্ব নিয়ে এই কাজ চালিয়ে যেতে হবে।’

কবিতা, উপন্যাস, চিত্র-সমালোচনাসহ সাহিত্যের নানা বিভাগে স্বাক্ষর রেখে যাওয়া আবুল হাসনাতের চিত্রকলা বিষয়েও ছিল ঝোঁক। এ বিষয়ে তার প্রজ্ঞা সর্বজনবিদিত। তার হাত ধরেই বহু কবি-সাহিত্যিক-শিল্পী পাঠক-দর্শকের কাছাকাছি পৌঁছাতে পেরেছেন এবং স্থান করে নিয়েছেন এদেশের সাহিত্যভুবনে। মিতভাষী আবুল হাসনাত তার ‘প্রত্যয়ী স্মৃতি ও অন্যান্য’ গ্রন্থে তার সময়কার রাজনৈতিক, সামাজিক, অর্থনৈতিক ও সাহিত্য-সংস্কৃতি অঙ্গনের নানা বাঁকবদলের ঘটনাক্রমসহ জীবনপথের নানা ঘটনা ও তথ্য বর্ণনা করে গেছেন সাবলীল ভঙ্গিমায়।