স্ত্রী-শাশুড়িসহ জামিন পেলেন ক্রিকেটার নাসির, আত্মসমর্পণ করে মুচলেকা

ডিভোর্স না হওয়া সত্ত্বেও অন্যের স্ত্রীকে প্রলুব্ধ করে বিয়ে করা এবং ‘ব্যভিচার’ ও মানহানি’র অভিযোগে দায়ের করা মামলায় ক্রিকেটার নাসির হোসেন ও তামিমা সুলতানা তাম্মিসহ তিনজনের জামিন মঞ্জুর করেছে আদালত। জামিনপ্রাপ্ত অন্য আসামি হলেন, নাসিরের শাশুড়ি সুমি আক্তার। গতকাল ঢাকার মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট মোহাম্মদ জসীমের আদালতে আসামিরা উপস্থিত হয়ে আত্মসমর্পণ করে আইনজীবীর মাধ্যমে জামিনের জন্য আবেদন করেন। অন্যদিকে, বাদী পক্ষের আইনজীবী জামিন বাতিলের জন্য আবেদন করেন।

শুনানিতে আইনজীবী কাজী নজিব উল্ল্যাহ হিরু বলেন, আসামি নাসির একজন ক্রিকেটার। তিনি তামিমাকে বিয়ে করেছেন। তালাক না দিয়ে তামিমা নাসিরকে বিয়ে করেছেন মর্মে বাদী মামলা করেন। তালাক কাজী অফিসে এন্ট্রি আছে। তালাকের নোটিশ পাঠানোর দায়িত্ব কাজীর। আর পোস্ট অফিস ডাক রসিদের কপি সংরক্ষণ করে কি করে নাই, তা আসামিদের ওপর বর্তায় না। আসামি নাসির ক্রিকেটার হওয়ায় অনেক জনপ্রিয়। এ মামলায় না পড়লে হয়তো তিনি এখন জাতীয় দলের সঙ্গে থাকতেন।

নজিব উল্ল্যাহ হিরু আরও বলেন, আদালত সমন দিয়েছিলেন। আসামিরা স্বেচ্ছায় আদালতে এসেছেন। আসামিরা সমন অনুযায়ী স্বেচ্ছায় আসলে তাদের জামিন দেয়া আদালতের একটি প্র্যাকটিস। তাদের জামিনের প্রার্থনা করছি।

বাদীপক্ষে অ্যাডভোকেট ইসরাত হাসান জামিনের বিরোধিতা করেন। তিনি বলেন, মামলায় আসামিদের বিরুদ্ধে জামিন অযোগ্য ধারা থাকলেও জামিনের আবেদনে উল্লেখ করেন নাই। আইন অনুযায়ী নোটিশ সার্ভ করার দায়িত্ব কাজীর নয়, যিনি তালাক দেবেন তার ওপর বর্তায়। ডাক রসিদ জালিয়াতির মাধ্যমে তালাক দেখানোর চেষ্টা করা হয়েছে, যা তদন্ত প্রতিবেদনে উঠে এসেছে।

এ আইনজীবী বলেন, আসামিরা ২০১৬ সালের ডিসেম্বরে তালাক দেয়ার কথা বলেছেন। কিন্তু তদন্তে বাদী এবং আসামি তামিমা ২০১৮ এবং ২০১৯ সালে বিভিন্ন সময় বিভিন্ন হোটেলে থেকেছেন মর্মে উঠে এসেছে। আসামিরা সরকারি ডকুমেন্ট জাল-জালিয়াতির মাধ্যমে সৃজন করে তালাক দেখানোর চেষ্টা করেছেন। তাই আসামিদের জামিন নামঞ্জুর করে কারাগারে পাঠানো হোক। উভয় পক্ষে শুনানি শেষে আদালত দশ হাজার টাকা মুচলেকায় জামিন মঞ্জুর করেন এবং মামলা বিচারিক আদালতে বদলি হবে বলে জানান। একই সঙ্গে মামলা বিচারের জন্য প্রস্তুত হওয়ায় নথি মুখ্য মহানগর হাকিম বরাবর পাঠানো হয়।

আদালতের আদেশের পর বাদী পক্ষের আইনজীবী অ্যাডভোকেট ইসরাত জাহান বলেন, আদালতে তিন আসামিকে জামিন দিয়েছে। আমরা এই রায়ে সন্তুষ্ট নই। জামিনের বিরুদ্ধে আমরা দায়রা আদালতে আপিল করব। বাদীপক্ষ কী চায় জানতে চাইলে তিনি বলেন, আমরা ন্যায়বিচার চাই। অপরাধীদের শাস্তির মাধ্যমে বিচার নিশ্চিত করতে হবে। তামিমা ও নাসির যা করেছে, তা বাংলাদেশের দ-বিধি অনুযায়ী শাস্তিযোগ্য অপরাধ।

গত ৩০ সেপ্টেম্বর নাসির হোসেনসহ তিনজনের বিরুদ্ধে বাদীর অভিযোগ প্রাথমিক তদন্তে প্রমাণিত হয়েছে বলে আদালতে প্রতিবেদন দাখিল করে পিবিআই। আদালত আসামিদের অপরাধ আমলে নিয়ে গতকাল আদালতে হাজির হতে নির্দেশ দেয়। তদন্ত প্রতিবেদনে বলা হয়, মো. রাকিব হাসানের স্ত্রী তামিমা স্বামীকে তালাক দেননি। আইনগতভাবে রাকিব তালাকের কোন নোটিশও পাননি। তামিমা উল্টো জালিয়াতি করে তালাকের নোটিশ তৈরি করে তা বিভিন্ন মাধ্যমে প্রকাশ করেছেন। যথাযথ প্রক্রিয়ায় তালাক না দেয়ার কারণে তামিমা এখন রাকিবের স্ত্রী হিসেবে বহাল রয়েছেন। দেশের ধর্মীয় বিধিবিধান ও আইন অনুযায়ী এক স্বামীকে তালাক না দিয়ে অন্য কাউকে বিয়ে করা অবৈধ ও শাস্তিযোগ্য অপরাধ। এমন পরিস্থিতিতে ক্রিকেটার নাসির হোসেন ও তামিমা তাম্মির বিয়ে অবৈধ বলে প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়েছে।

সোমবার, ০১ নভেম্বর ২০২১ , ১৬ কার্তিক ১৪২৮ ২৪ রবিউল আউয়াল ১৪৪৩

স্ত্রী-শাশুড়িসহ জামিন পেলেন ক্রিকেটার নাসির, আত্মসমর্পণ করে মুচলেকা

আদালত বার্তা পরিবেশক

image

ডিভোর্স না হওয়া সত্ত্বেও অন্যের স্ত্রীকে প্রলুব্ধ করে বিয়ে করা এবং ‘ব্যভিচার’ ও মানহানি’র অভিযোগে দায়ের করা মামলায় ক্রিকেটার নাসির হোসেন ও তামিমা সুলতানা তাম্মিসহ তিনজনের জামিন মঞ্জুর করেছে আদালত। জামিনপ্রাপ্ত অন্য আসামি হলেন, নাসিরের শাশুড়ি সুমি আক্তার। গতকাল ঢাকার মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট মোহাম্মদ জসীমের আদালতে আসামিরা উপস্থিত হয়ে আত্মসমর্পণ করে আইনজীবীর মাধ্যমে জামিনের জন্য আবেদন করেন। অন্যদিকে, বাদী পক্ষের আইনজীবী জামিন বাতিলের জন্য আবেদন করেন।

শুনানিতে আইনজীবী কাজী নজিব উল্ল্যাহ হিরু বলেন, আসামি নাসির একজন ক্রিকেটার। তিনি তামিমাকে বিয়ে করেছেন। তালাক না দিয়ে তামিমা নাসিরকে বিয়ে করেছেন মর্মে বাদী মামলা করেন। তালাক কাজী অফিসে এন্ট্রি আছে। তালাকের নোটিশ পাঠানোর দায়িত্ব কাজীর। আর পোস্ট অফিস ডাক রসিদের কপি সংরক্ষণ করে কি করে নাই, তা আসামিদের ওপর বর্তায় না। আসামি নাসির ক্রিকেটার হওয়ায় অনেক জনপ্রিয়। এ মামলায় না পড়লে হয়তো তিনি এখন জাতীয় দলের সঙ্গে থাকতেন।

নজিব উল্ল্যাহ হিরু আরও বলেন, আদালত সমন দিয়েছিলেন। আসামিরা স্বেচ্ছায় আদালতে এসেছেন। আসামিরা সমন অনুযায়ী স্বেচ্ছায় আসলে তাদের জামিন দেয়া আদালতের একটি প্র্যাকটিস। তাদের জামিনের প্রার্থনা করছি।

বাদীপক্ষে অ্যাডভোকেট ইসরাত হাসান জামিনের বিরোধিতা করেন। তিনি বলেন, মামলায় আসামিদের বিরুদ্ধে জামিন অযোগ্য ধারা থাকলেও জামিনের আবেদনে উল্লেখ করেন নাই। আইন অনুযায়ী নোটিশ সার্ভ করার দায়িত্ব কাজীর নয়, যিনি তালাক দেবেন তার ওপর বর্তায়। ডাক রসিদ জালিয়াতির মাধ্যমে তালাক দেখানোর চেষ্টা করা হয়েছে, যা তদন্ত প্রতিবেদনে উঠে এসেছে।

এ আইনজীবী বলেন, আসামিরা ২০১৬ সালের ডিসেম্বরে তালাক দেয়ার কথা বলেছেন। কিন্তু তদন্তে বাদী এবং আসামি তামিমা ২০১৮ এবং ২০১৯ সালে বিভিন্ন সময় বিভিন্ন হোটেলে থেকেছেন মর্মে উঠে এসেছে। আসামিরা সরকারি ডকুমেন্ট জাল-জালিয়াতির মাধ্যমে সৃজন করে তালাক দেখানোর চেষ্টা করেছেন। তাই আসামিদের জামিন নামঞ্জুর করে কারাগারে পাঠানো হোক। উভয় পক্ষে শুনানি শেষে আদালত দশ হাজার টাকা মুচলেকায় জামিন মঞ্জুর করেন এবং মামলা বিচারিক আদালতে বদলি হবে বলে জানান। একই সঙ্গে মামলা বিচারের জন্য প্রস্তুত হওয়ায় নথি মুখ্য মহানগর হাকিম বরাবর পাঠানো হয়।

আদালতের আদেশের পর বাদী পক্ষের আইনজীবী অ্যাডভোকেট ইসরাত জাহান বলেন, আদালতে তিন আসামিকে জামিন দিয়েছে। আমরা এই রায়ে সন্তুষ্ট নই। জামিনের বিরুদ্ধে আমরা দায়রা আদালতে আপিল করব। বাদীপক্ষ কী চায় জানতে চাইলে তিনি বলেন, আমরা ন্যায়বিচার চাই। অপরাধীদের শাস্তির মাধ্যমে বিচার নিশ্চিত করতে হবে। তামিমা ও নাসির যা করেছে, তা বাংলাদেশের দ-বিধি অনুযায়ী শাস্তিযোগ্য অপরাধ।

গত ৩০ সেপ্টেম্বর নাসির হোসেনসহ তিনজনের বিরুদ্ধে বাদীর অভিযোগ প্রাথমিক তদন্তে প্রমাণিত হয়েছে বলে আদালতে প্রতিবেদন দাখিল করে পিবিআই। আদালত আসামিদের অপরাধ আমলে নিয়ে গতকাল আদালতে হাজির হতে নির্দেশ দেয়। তদন্ত প্রতিবেদনে বলা হয়, মো. রাকিব হাসানের স্ত্রী তামিমা স্বামীকে তালাক দেননি। আইনগতভাবে রাকিব তালাকের কোন নোটিশও পাননি। তামিমা উল্টো জালিয়াতি করে তালাকের নোটিশ তৈরি করে তা বিভিন্ন মাধ্যমে প্রকাশ করেছেন। যথাযথ প্রক্রিয়ায় তালাক না দেয়ার কারণে তামিমা এখন রাকিবের স্ত্রী হিসেবে বহাল রয়েছেন। দেশের ধর্মীয় বিধিবিধান ও আইন অনুযায়ী এক স্বামীকে তালাক না দিয়ে অন্য কাউকে বিয়ে করা অবৈধ ও শাস্তিযোগ্য অপরাধ। এমন পরিস্থিতিতে ক্রিকেটার নাসির হোসেন ও তামিমা তাম্মির বিয়ে অবৈধ বলে প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়েছে।