সংখ্যালঘু নির্যাতনের গেম থিওরি

রাজিব শর্মা

প্রকৃতিতে গেম থিওরি বলতে একটি ব্যাপার আছে। আজ হিন্দুদের ওপর যে মর্মান্তিক ও হৃদয় বিদারক আক্রমণ ও অত্যাচার চলছে সে প্রসঙ্গে গেম থিওরির কথা মনে পড়ে গেলো। ফুটবল খেলায় যদি নেইমার প্রতিপক্ষকে প্রতিহত করার জন্যে প্রতিপক্ষের কাউকে ধাক্কা দেয় তবে সেটি খেলার নিয়মের একটি অংশ হয়ে যায় এবং প্রত্যেকে সেটাকে কপি করে নিজেদের সুবিধামতো ব্যবহার করার চেষ্টা করে। যেমন-নেইমার যদিও প্রথমবার কাউকে অনৈতিকভাবে আঘাত করে একটা গোল দিয়ে দেয় এবং তাকে অনুকরণ করে প্রতিপক্ষের খেলোয়াড়রাও একে অপরকে আঘাত করতে থাকে তবে এতে করে নেইমার আর বিশেষভাবে কাউকে ধাক্কা দিয়ে গোল দিতে পারবে না কারণ প্রতিপক্ষের প্লেয়ার তাকে এর আগেই ধাক্কা মেরে ফেলে দেবে নয়তোবা তাদের কেউ নেইমারের সঙ্গে এ প্রতিযোগিতায় উত্তীর্ণ হতে পারবে না। দলের ভারসাম্য রক্ষা করার জন্যেই অন্যদেরও একই প্রতিযোগিতায় যোগ দিতে হয়। এতে দেখা যায় খেলার ভারসাম্য পূর্বে যেমন ছিল তেমনি রয়ে গেছে কিন্তু মাঝখানে যুক্ত হয়েছে অনৈতিক একটি নিয়ম এবং শারীরিকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে উভয় দলের বিভিন্ন প্রতিযোগী। অনেকের ভাগ্যে জুটেছে হলুদ ও লাল কার্ড কিন্তু তারা কেউই বিশেষ কোন সুবিধা অর্জন করতে পারেনি! তাদের আল্টিমেট অর্জন শূন্য। এটাকে গণিতের ভাষায় বলা হয় ন্যাশ ইকুইলিব্রিয়াম! যাক, আমি ন্যাশ ইকুইলিব্রিয়ামের গাণিতিক জটিলতায় আপাতত যাচ্ছি না। আপনাদের বোঝানোর উদ্দেশ্যে খুব সহজ ভাষায় আর একটি থট এক্সপেরিমেন্ট প্রদান করছি।

আমরা সবাই এটা জানি যে, আইনস্টাইনের E=MC2 থেকে পারমাণবিক বোমা বের হয়ে এসেছিল। আইনস্টাইনের ইকুয়েশনকে ব্যবহার করে সেই পারমাণবিক বোমা তৈরি করেছিল ইউএস (যদিও আইনস্টাইন সরাসরি সাপোর্ট করেনি, J. Robert Oppenheimer এ প্রজেক্টের নেতৃত্ব দিয়েছিলেন, এডওয়ার্ড টেলারকে প্রথম নিয়োগ করা হয় এ প্রজেক্টে, লিউ সিজলার্ড ও এনরিকো ফার্মি ছিলেন নিউক্লিয়ার রি-এক্টর)।

বিশ্বের অন্যান্য রাষ্ট্রগুলো আতঙ্কে মুহূর্তে সচেতন হয়ে উঠল। তারা ইউনাইটেড স্টেটকে কপি করতে থাকে। পারমাণবিক বোমা তৈরির প্রক্রিয়া শুরু হয় রাশিয়া, ফ্রান্স ও চায়না, ইন্ডিয়া, পাকিস্তান ও কোরিয়া! মজার ব্যাপার হলো তারা কেউই এখন কাউকে পারমাণবিক বোমা নিক্ষেপ করে না! কারণ সবারই পারমাণবিক বোমা আছে, তাই এখন বোমা মেরে লজিক্যালি তারা বিশেষ কোনো সুবিধা করতে পারবে না। সবার জন্যই মর্মান্তিক ও অত্যন্ত নির্মম পর্যায়ের ঝুঁকি আছে। এর মানে হলো কেউই কাউকে বোমা হামলা করে না আর এ প্রক্রিয়ায় ভয়ানক বোমাই আজ বিশ্ব শান্তি রক্ষা করছে।

তথা আইনস্টাইনের ইকুয়েশনই বিশ্ব শান্তি রক্ষার অগ্রদূতে পরিণত হলো। এ কথাটি বলার বিশেষ কারণ হলো অধিকাংশ বিজ্ঞানী এ পারমাণবিক বোমার পক্ষে ছিলেন না, অনেকের ওপর একপ্রকার ফোর্স করা হয়েছিল কিন্তু আজ সারা বিশ্বে অনেক দেশেই পারমাণবিক বোমা আছে অথচ তেমন কোনো যুদ্ধ নেই। (Leo Szilard নিজেই এ বোমার প্রতিকূল ব্যবহারের বিপক্ষে একটি পিটিশন জমা দিয়েছিলেন) অথচ উইকি সূত্রমতে, ইউনাইটেড স্টেট যখন ১৯৪৫ সালে হিরোসীমা ও নাগাসাকিকে আক্রমণ করেছিল তখন ১,২৯০০০ থেকে ২,২৬০০০ মানুষের মৃত্যু হয়েছিল। নেইমার প্রাথমিক ল্যাং মেরে বিপরীত পক্ষকে যে মর্মান্তিক আঘাতটা করে, পরে হয়তো সবাই সেটি কপি অথবা ভিন্ন কোন কৌশল অবলম্বন করে খুব একটা সুবিধা করতে পারে না কিন্তু প্রাথমিক আঘাতটা ঐতিহাসিক হয়ে যায়। কারণ সবাই কৌশলটি কপি করতে মাঝখানে একটি নির্দিষ্ট সময়ের প্রয়োজন হয়!

ন্যাশ সাম্যাবস্থা অর্জনের পূর্বে মোটামুটি ভালোই একটি অস্থিতিশীলতার উদয় ঘটে। আমি আবার বলছি, গেম থিওরি অত্যন্ত জটিল। আমি শুধু এটিকে অত্যন্ত সরলীকৃত করে উপস্থাপন করছি।

[লেখক : সংবাদকর্মী, চট্টগ্রাম]

সোমবার, ০১ নভেম্বর ২০২১ , ১৬ কার্তিক ১৪২৮ ২৪ রবিউল আউয়াল ১৪৪৩

সংখ্যালঘু নির্যাতনের গেম থিওরি

রাজিব শর্মা

প্রকৃতিতে গেম থিওরি বলতে একটি ব্যাপার আছে। আজ হিন্দুদের ওপর যে মর্মান্তিক ও হৃদয় বিদারক আক্রমণ ও অত্যাচার চলছে সে প্রসঙ্গে গেম থিওরির কথা মনে পড়ে গেলো। ফুটবল খেলায় যদি নেইমার প্রতিপক্ষকে প্রতিহত করার জন্যে প্রতিপক্ষের কাউকে ধাক্কা দেয় তবে সেটি খেলার নিয়মের একটি অংশ হয়ে যায় এবং প্রত্যেকে সেটাকে কপি করে নিজেদের সুবিধামতো ব্যবহার করার চেষ্টা করে। যেমন-নেইমার যদিও প্রথমবার কাউকে অনৈতিকভাবে আঘাত করে একটা গোল দিয়ে দেয় এবং তাকে অনুকরণ করে প্রতিপক্ষের খেলোয়াড়রাও একে অপরকে আঘাত করতে থাকে তবে এতে করে নেইমার আর বিশেষভাবে কাউকে ধাক্কা দিয়ে গোল দিতে পারবে না কারণ প্রতিপক্ষের প্লেয়ার তাকে এর আগেই ধাক্কা মেরে ফেলে দেবে নয়তোবা তাদের কেউ নেইমারের সঙ্গে এ প্রতিযোগিতায় উত্তীর্ণ হতে পারবে না। দলের ভারসাম্য রক্ষা করার জন্যেই অন্যদেরও একই প্রতিযোগিতায় যোগ দিতে হয়। এতে দেখা যায় খেলার ভারসাম্য পূর্বে যেমন ছিল তেমনি রয়ে গেছে কিন্তু মাঝখানে যুক্ত হয়েছে অনৈতিক একটি নিয়ম এবং শারীরিকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে উভয় দলের বিভিন্ন প্রতিযোগী। অনেকের ভাগ্যে জুটেছে হলুদ ও লাল কার্ড কিন্তু তারা কেউই বিশেষ কোন সুবিধা অর্জন করতে পারেনি! তাদের আল্টিমেট অর্জন শূন্য। এটাকে গণিতের ভাষায় বলা হয় ন্যাশ ইকুইলিব্রিয়াম! যাক, আমি ন্যাশ ইকুইলিব্রিয়ামের গাণিতিক জটিলতায় আপাতত যাচ্ছি না। আপনাদের বোঝানোর উদ্দেশ্যে খুব সহজ ভাষায় আর একটি থট এক্সপেরিমেন্ট প্রদান করছি।

আমরা সবাই এটা জানি যে, আইনস্টাইনের E=MC2 থেকে পারমাণবিক বোমা বের হয়ে এসেছিল। আইনস্টাইনের ইকুয়েশনকে ব্যবহার করে সেই পারমাণবিক বোমা তৈরি করেছিল ইউএস (যদিও আইনস্টাইন সরাসরি সাপোর্ট করেনি, J. Robert Oppenheimer এ প্রজেক্টের নেতৃত্ব দিয়েছিলেন, এডওয়ার্ড টেলারকে প্রথম নিয়োগ করা হয় এ প্রজেক্টে, লিউ সিজলার্ড ও এনরিকো ফার্মি ছিলেন নিউক্লিয়ার রি-এক্টর)।

বিশ্বের অন্যান্য রাষ্ট্রগুলো আতঙ্কে মুহূর্তে সচেতন হয়ে উঠল। তারা ইউনাইটেড স্টেটকে কপি করতে থাকে। পারমাণবিক বোমা তৈরির প্রক্রিয়া শুরু হয় রাশিয়া, ফ্রান্স ও চায়না, ইন্ডিয়া, পাকিস্তান ও কোরিয়া! মজার ব্যাপার হলো তারা কেউই এখন কাউকে পারমাণবিক বোমা নিক্ষেপ করে না! কারণ সবারই পারমাণবিক বোমা আছে, তাই এখন বোমা মেরে লজিক্যালি তারা বিশেষ কোনো সুবিধা করতে পারবে না। সবার জন্যই মর্মান্তিক ও অত্যন্ত নির্মম পর্যায়ের ঝুঁকি আছে। এর মানে হলো কেউই কাউকে বোমা হামলা করে না আর এ প্রক্রিয়ায় ভয়ানক বোমাই আজ বিশ্ব শান্তি রক্ষা করছে।

তথা আইনস্টাইনের ইকুয়েশনই বিশ্ব শান্তি রক্ষার অগ্রদূতে পরিণত হলো। এ কথাটি বলার বিশেষ কারণ হলো অধিকাংশ বিজ্ঞানী এ পারমাণবিক বোমার পক্ষে ছিলেন না, অনেকের ওপর একপ্রকার ফোর্স করা হয়েছিল কিন্তু আজ সারা বিশ্বে অনেক দেশেই পারমাণবিক বোমা আছে অথচ তেমন কোনো যুদ্ধ নেই। (Leo Szilard নিজেই এ বোমার প্রতিকূল ব্যবহারের বিপক্ষে একটি পিটিশন জমা দিয়েছিলেন) অথচ উইকি সূত্রমতে, ইউনাইটেড স্টেট যখন ১৯৪৫ সালে হিরোসীমা ও নাগাসাকিকে আক্রমণ করেছিল তখন ১,২৯০০০ থেকে ২,২৬০০০ মানুষের মৃত্যু হয়েছিল। নেইমার প্রাথমিক ল্যাং মেরে বিপরীত পক্ষকে যে মর্মান্তিক আঘাতটা করে, পরে হয়তো সবাই সেটি কপি অথবা ভিন্ন কোন কৌশল অবলম্বন করে খুব একটা সুবিধা করতে পারে না কিন্তু প্রাথমিক আঘাতটা ঐতিহাসিক হয়ে যায়। কারণ সবাই কৌশলটি কপি করতে মাঝখানে একটি নির্দিষ্ট সময়ের প্রয়োজন হয়!

ন্যাশ সাম্যাবস্থা অর্জনের পূর্বে মোটামুটি ভালোই একটি অস্থিতিশীলতার উদয় ঘটে। আমি আবার বলছি, গেম থিওরি অত্যন্ত জটিল। আমি শুধু এটিকে অত্যন্ত সরলীকৃত করে উপস্থাপন করছি।

[লেখক : সংবাদকর্মী, চট্টগ্রাম]