রোমের বার্তায় হতাশ জলবায়ুর ঝুঁকিতে থাকা নেতারা

রোমে শিল্পোন্নত দেশগুলোর জি-২০ সম্মেলন থেকে যে বার্তা পাওয়া যাচ্ছে তাতে হতাশ জলবায়ু দুর্যোগে সবচেয়ে ঝুঁকির মুখে থাকা দরিদ্র অর্থনীতির দেশগুলোর নেতারা।

বিজ্ঞানীরা বলে দিয়েছেন, শিল্পায়নের আগের চেয়ে বৈশ্বিক তাপমাত্রা দেড় ডিগ্রির বেশি বাড়লে পৃথিবী তা সহ্য করতে পারবে না।

তাই ২০৫০ সালের মধ্যে তাপমাত্রা বৃদ্ধির পরিমাণ এর মধ্যে সীমিত রাখার বিষয়ে ঐকমত্যের প্রত্যাশা গ্লাসগোতে চলমান কপ২৬ জলবায়ু সম্মেলনে।

অনেক বিশ্লেষকই বলছেন, রোমে জি-২০ ভুক্ত দেশের নেতারা এ শতকের মাঝামাঝি সময়ের মধ্যে নিট কার্বন নিঃসরণ শূন্যে নামিয়ে আনা এবং তাপমাত্রা বৃদ্ধি ১ দশমিক ৫ ডিগ্রির মধ্যে নামিয়ে আনার বিষয়ে গুরুত্বপূর্ণ অগ্রগতি আনতে পেরেছেন।

কিন্তু জলবায়ু পরিবর্তনে সবচেয়ে ঝুঁকিতে থাকা দরিদ্র অর্থনীতির এই দেশগুলোর নেতাদের দাবি, উল্লিখিত ওই লক্ষ্য অর্জনে কোন সুনির্দিষ্ট পরিকল্পনা দেখাতে পারেনি উন্নত দেশগুলো। তারা বলছেন, শিল্পোন্নত দেশগুলো কথা রাখলো না। এতে তারা গভীরভাবে উদ্বিগ্ন।

সে কারণেই জলবায়ু বিপন্নতার মুখে থাকা দেশগুলোর নেতাদের প্রত্যাশা জি২০ভুক্ত দেশসমূহের যে নেতারা কপ২৬ এ অংশ নিচ্ছেন তারা আরও কার্বন নিঃসরণ কমাতে আরও উচ্চলক্ষ্যাভিসারী পরিকল্পনার ঘোষণা দেবেন। বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাও সেই আহ্বান জানিয়েছেন। তিনি বলেছেন, জলবায়ু পরিবর্তনের বিপদ মোকাবিলায় বিশ্বকে আরও বড় পরিসরে লক্ষ্য নির্ধারণ করতে হবে।

গার্ডিয়ানের প্রতিবেদনে বলা হয়, এই নেতারা যেসব দেশের প্রতিনিধিত্ব করছেন তাতে একশ কোটিরও বেশি মানুষের বাস। তাপমাত্রা বৃদ্ধি এই সীমার মধ্যে না রাখতে পারলে তাদের অস্তিত্ব বিলীন হয়ে যাবে। এর মধ্যে অনেকগুলো দ্বীপদেশ রয়েছে।

এই নেতাদের একজন অ্যান্টিগা ও বারবুডার প্রধানমন্ত্রী গ্যাস্টন ব্রাউন। তিনি ছোট দ্বীপরাষ্ট্রগুলোর জোট অ্যালায়েন্স অব স্মল আইল্যান্ড স্টেটসেরও চেয়ারম্যান। এই জোটে ৩৯টি দেশ আছে। তিনি শিল্পোন্নত দেশসমূহের এই ব্যর্থতার জন্য তাদের বেসরকারি খাতের স্বার্থকে দায়ী করেন।

যুক্তরাজ্যের গার্ডিয়ান পত্রিকাকে তিনি বলেন, ‘এখন পর্যন্ত যা দেখলাম তাতে মনে হচ্ছে তাপমাত্রা বৃদ্ধি দেড় ডিগ্রির মধ্যে রাখা যাবে না। আমরা খুবই উদ্বিগ্ন। এটা আমাদের অস্তিত্বের জন্য হুমকি হয়ে গেছে।’

তিনি বলেন, ‘উন্নত দেশগুলোর ওপরও তো জলবায়ু পরিবর্তনের প্রভাব পড়বে। আমরা তো এখানে এই গ্রহকে রক্ষা করার জন্য এসেছি। মুনাফাকে সুরক্ষা দিতে নয়। কিন্তু অনেক শক্তিশালী বহুজাতিক কোম্পানি ও তাদের তদ্বিরকারীরা (লবি) আছে, যারা জীবাশ্ম জ্বালানির ভর্তুকি থেকে লাভবান হয়।’

অ্যান্টিগা ও বারবুডার প্রধানমন্ত্রী ব্রাউন বলেন, ‘আমি ভীষণভাবে উদ্বিগ্ন। তবে হতাশা সত্ত্বেও আমি আশাবাদী।’

স্বল্পোন্নত দেশসমূহের জোটের প্রধান সোনাম ওয়াংডি বলেন, ‘এখন পর্যন্ত অগ্রগতি যথেষ্ট নয়। আমরা তাপমাত্রার সীমার মধ্যে রাখার লক্ষ্যমাত্রা থেকে অনেক পেছনে এখনও। আমাদের আরও কার্যকরী লক্ষ্য নির্ধারণ করা দরকার। আমরা আমাদের কাজটা করেছি। এই যে সমস্যা তাতে আমাদের দায় কম।’

পালাউয়ের পরিবেশমন্ত্রী স্টিভ ভিক্টর বলেন, ‘দ্বীপরাষ্ট্রগুলোর জন্য নিরাপদ ভবিষ্যত নিশ্চিত করার ক্ষেত্রে জি২০ভুক্ত দেশগুলো ভূমিকা গ্রহণের দিক থেকে অনেক পিছিয়ে আছে। তিনি বলেন, এটা তো কোন বিমূর্ত বা রাজনৈতিক বিষয় নয়। এটা তো জলবায়ু পরিবর্তনের হুমকি। এখানে বাড়িয়ে বলার সুযোগ নেই। এখন এর মধ্যেই আমরা বাস করছি।’

তিনি বলেন, ‘শুধু জি২০’র দেশগুলো পৃথিবীর ৮০ শতাংশ তাপমাত্রা বৃদ্ধিকারী গ্যাস নিঃসরণের জন্য দায়ী। তাপমাত্রা নিয়ন্ত্রণে রাখতে তাদের ভূমিকাই হবে মুখ্য।’

তিনি বলেন, জি২০ দেশগুলোকে কয়লা উৎপাদন বন্ধ করতে হবে। তারা এর আগে এই খাতে ভর্তুকি বন্ধের সিদ্ধান্ত নিয়েও ব্যর্থ হয়েছে। তার সোজা কথাÑ জীবাশ্ম জ্বালানিতে তাদের ভর্তুকি বন্ধ করতে হবে।

মার্শাল দ্বীপপুঞ্জের স্বাস্থ্যমন্ত্রী ব্রুস বিলিমন বলেন, ‘আমরা এমন একটি সময়ে বাস করছি, যখন আমাদের সিদ্ধান্ত আমাদের আগামী প্রজন্মের ওপর, আমাদের মানুষের স্বাস্থ্য, সুস্থতা, নিরাপত্তা ও সুরক্ষার ওপর প্রভাব ফেলবে।’

তিনি বলেন, ‘তাপমাত্রা ১ দশমিক ১ ডিগ্রি বাড়ার ফল আমার এর মধ্যেই দেখেছি। কিন্তু দেড় ডিগ্রি যখন বাড়বে তখন মার্শাল দ্বীপপুঞ্জসহ অন্যান্য দ্বীপ দেশের মানুষ সবাই ধ্বংসের মুখে পড়বে। আর সেই পরিস্থিতি শুধু আমরা ভোগ করবো তা নয়, তারা ধারাবাহিক প্রভাব পড়বে জি২০ দেশগুলোর ওপরও।’

সোমবার থেকে জাতিসংঘ কপ২৬ সম্মেলনে যুক্তরাজ্যে জি২০ভুক্ত দেশগুলোর সঙ্গে এসব দেশের এই বিষয়গুলো আলোচনা শুরু হয়েছে, যা আগামী দুই সপ্তাহ চলবে। এর আগে শনিবার থেকে রোমে চলে জি২০ ভুক্ত নেতাদের সম্মেলন।

দেড় ডিগ্রির মধ্যে তাপমাত্রা বৃদ্ধির পরিমাণকে আটকে রাখার লক্ষ্য গৃহীত হয় ২০১৫ সালে জলবায়ু বিষয়ক প্যারিস চুক্তিতে। তবে এতে দ্বিমত রয়েছে চীন, সৌদি আরব ও রাশিয়ার। বৈশ্বিক জলবায়ুতে তাপমাত্রা বাড়ায় এমন গ্যাসের নিঃসরণ সবচেয়ে বেশি হয় চীনে।

মঙ্গলবার, ০২ নভেম্বর ২০২১ , ১৭ কার্তিক ১৪২৮ ২৫ রবিউল আউয়াল ১৪৪৩

রোমের বার্তায় হতাশ জলবায়ুর ঝুঁকিতে থাকা নেতারা

সংবাদ ডেস্ক

রোমে শিল্পোন্নত দেশগুলোর জি-২০ সম্মেলন থেকে যে বার্তা পাওয়া যাচ্ছে তাতে হতাশ জলবায়ু দুর্যোগে সবচেয়ে ঝুঁকির মুখে থাকা দরিদ্র অর্থনীতির দেশগুলোর নেতারা।

বিজ্ঞানীরা বলে দিয়েছেন, শিল্পায়নের আগের চেয়ে বৈশ্বিক তাপমাত্রা দেড় ডিগ্রির বেশি বাড়লে পৃথিবী তা সহ্য করতে পারবে না।

তাই ২০৫০ সালের মধ্যে তাপমাত্রা বৃদ্ধির পরিমাণ এর মধ্যে সীমিত রাখার বিষয়ে ঐকমত্যের প্রত্যাশা গ্লাসগোতে চলমান কপ২৬ জলবায়ু সম্মেলনে।

অনেক বিশ্লেষকই বলছেন, রোমে জি-২০ ভুক্ত দেশের নেতারা এ শতকের মাঝামাঝি সময়ের মধ্যে নিট কার্বন নিঃসরণ শূন্যে নামিয়ে আনা এবং তাপমাত্রা বৃদ্ধি ১ দশমিক ৫ ডিগ্রির মধ্যে নামিয়ে আনার বিষয়ে গুরুত্বপূর্ণ অগ্রগতি আনতে পেরেছেন।

কিন্তু জলবায়ু পরিবর্তনে সবচেয়ে ঝুঁকিতে থাকা দরিদ্র অর্থনীতির এই দেশগুলোর নেতাদের দাবি, উল্লিখিত ওই লক্ষ্য অর্জনে কোন সুনির্দিষ্ট পরিকল্পনা দেখাতে পারেনি উন্নত দেশগুলো। তারা বলছেন, শিল্পোন্নত দেশগুলো কথা রাখলো না। এতে তারা গভীরভাবে উদ্বিগ্ন।

সে কারণেই জলবায়ু বিপন্নতার মুখে থাকা দেশগুলোর নেতাদের প্রত্যাশা জি২০ভুক্ত দেশসমূহের যে নেতারা কপ২৬ এ অংশ নিচ্ছেন তারা আরও কার্বন নিঃসরণ কমাতে আরও উচ্চলক্ষ্যাভিসারী পরিকল্পনার ঘোষণা দেবেন। বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাও সেই আহ্বান জানিয়েছেন। তিনি বলেছেন, জলবায়ু পরিবর্তনের বিপদ মোকাবিলায় বিশ্বকে আরও বড় পরিসরে লক্ষ্য নির্ধারণ করতে হবে।

গার্ডিয়ানের প্রতিবেদনে বলা হয়, এই নেতারা যেসব দেশের প্রতিনিধিত্ব করছেন তাতে একশ কোটিরও বেশি মানুষের বাস। তাপমাত্রা বৃদ্ধি এই সীমার মধ্যে না রাখতে পারলে তাদের অস্তিত্ব বিলীন হয়ে যাবে। এর মধ্যে অনেকগুলো দ্বীপদেশ রয়েছে।

এই নেতাদের একজন অ্যান্টিগা ও বারবুডার প্রধানমন্ত্রী গ্যাস্টন ব্রাউন। তিনি ছোট দ্বীপরাষ্ট্রগুলোর জোট অ্যালায়েন্স অব স্মল আইল্যান্ড স্টেটসেরও চেয়ারম্যান। এই জোটে ৩৯টি দেশ আছে। তিনি শিল্পোন্নত দেশসমূহের এই ব্যর্থতার জন্য তাদের বেসরকারি খাতের স্বার্থকে দায়ী করেন।

যুক্তরাজ্যের গার্ডিয়ান পত্রিকাকে তিনি বলেন, ‘এখন পর্যন্ত যা দেখলাম তাতে মনে হচ্ছে তাপমাত্রা বৃদ্ধি দেড় ডিগ্রির মধ্যে রাখা যাবে না। আমরা খুবই উদ্বিগ্ন। এটা আমাদের অস্তিত্বের জন্য হুমকি হয়ে গেছে।’

তিনি বলেন, ‘উন্নত দেশগুলোর ওপরও তো জলবায়ু পরিবর্তনের প্রভাব পড়বে। আমরা তো এখানে এই গ্রহকে রক্ষা করার জন্য এসেছি। মুনাফাকে সুরক্ষা দিতে নয়। কিন্তু অনেক শক্তিশালী বহুজাতিক কোম্পানি ও তাদের তদ্বিরকারীরা (লবি) আছে, যারা জীবাশ্ম জ্বালানির ভর্তুকি থেকে লাভবান হয়।’

অ্যান্টিগা ও বারবুডার প্রধানমন্ত্রী ব্রাউন বলেন, ‘আমি ভীষণভাবে উদ্বিগ্ন। তবে হতাশা সত্ত্বেও আমি আশাবাদী।’

স্বল্পোন্নত দেশসমূহের জোটের প্রধান সোনাম ওয়াংডি বলেন, ‘এখন পর্যন্ত অগ্রগতি যথেষ্ট নয়। আমরা তাপমাত্রার সীমার মধ্যে রাখার লক্ষ্যমাত্রা থেকে অনেক পেছনে এখনও। আমাদের আরও কার্যকরী লক্ষ্য নির্ধারণ করা দরকার। আমরা আমাদের কাজটা করেছি। এই যে সমস্যা তাতে আমাদের দায় কম।’

পালাউয়ের পরিবেশমন্ত্রী স্টিভ ভিক্টর বলেন, ‘দ্বীপরাষ্ট্রগুলোর জন্য নিরাপদ ভবিষ্যত নিশ্চিত করার ক্ষেত্রে জি২০ভুক্ত দেশগুলো ভূমিকা গ্রহণের দিক থেকে অনেক পিছিয়ে আছে। তিনি বলেন, এটা তো কোন বিমূর্ত বা রাজনৈতিক বিষয় নয়। এটা তো জলবায়ু পরিবর্তনের হুমকি। এখানে বাড়িয়ে বলার সুযোগ নেই। এখন এর মধ্যেই আমরা বাস করছি।’

তিনি বলেন, ‘শুধু জি২০’র দেশগুলো পৃথিবীর ৮০ শতাংশ তাপমাত্রা বৃদ্ধিকারী গ্যাস নিঃসরণের জন্য দায়ী। তাপমাত্রা নিয়ন্ত্রণে রাখতে তাদের ভূমিকাই হবে মুখ্য।’

তিনি বলেন, জি২০ দেশগুলোকে কয়লা উৎপাদন বন্ধ করতে হবে। তারা এর আগে এই খাতে ভর্তুকি বন্ধের সিদ্ধান্ত নিয়েও ব্যর্থ হয়েছে। তার সোজা কথাÑ জীবাশ্ম জ্বালানিতে তাদের ভর্তুকি বন্ধ করতে হবে।

মার্শাল দ্বীপপুঞ্জের স্বাস্থ্যমন্ত্রী ব্রুস বিলিমন বলেন, ‘আমরা এমন একটি সময়ে বাস করছি, যখন আমাদের সিদ্ধান্ত আমাদের আগামী প্রজন্মের ওপর, আমাদের মানুষের স্বাস্থ্য, সুস্থতা, নিরাপত্তা ও সুরক্ষার ওপর প্রভাব ফেলবে।’

তিনি বলেন, ‘তাপমাত্রা ১ দশমিক ১ ডিগ্রি বাড়ার ফল আমার এর মধ্যেই দেখেছি। কিন্তু দেড় ডিগ্রি যখন বাড়বে তখন মার্শাল দ্বীপপুঞ্জসহ অন্যান্য দ্বীপ দেশের মানুষ সবাই ধ্বংসের মুখে পড়বে। আর সেই পরিস্থিতি শুধু আমরা ভোগ করবো তা নয়, তারা ধারাবাহিক প্রভাব পড়বে জি২০ দেশগুলোর ওপরও।’

সোমবার থেকে জাতিসংঘ কপ২৬ সম্মেলনে যুক্তরাজ্যে জি২০ভুক্ত দেশগুলোর সঙ্গে এসব দেশের এই বিষয়গুলো আলোচনা শুরু হয়েছে, যা আগামী দুই সপ্তাহ চলবে। এর আগে শনিবার থেকে রোমে চলে জি২০ ভুক্ত নেতাদের সম্মেলন।

দেড় ডিগ্রির মধ্যে তাপমাত্রা বৃদ্ধির পরিমাণকে আটকে রাখার লক্ষ্য গৃহীত হয় ২০১৫ সালে জলবায়ু বিষয়ক প্যারিস চুক্তিতে। তবে এতে দ্বিমত রয়েছে চীন, সৌদি আরব ও রাশিয়ার। বৈশ্বিক জলবায়ুতে তাপমাত্রা বাড়ায় এমন গ্যাসের নিঃসরণ সবচেয়ে বেশি হয় চীনে।