একে ৪৭ রাইফেলসহ অবৈধ অস্ত্র আনছে বৈধ ব্যবসায়ীরা

মায়ানমার ও মিজোরাম থেকে আনা হচ্ছে অস্ত্র

সীমান্তের ফাঁক গলে চোরাচালানকারীদের মাধ্যমে প্রতিবেশী রাষ্ট্র ভারতের মিজোরাম রাজ্য ও মায়ানমার থেকে আনা হচ্ছে একে-৪৭ রাইফেলসহ অবৈধ অত্যাধুনিক সব অস্ত্র। পরে বৈধ অস্ত্র ব্যবসার আড়ালে সেগুলো তুলে দেয়া হচ্ছে বিভিন্ন সন্ত্রাসী গ্রুপের হাতে। মূলতো চড়া দামে বিক্রির করে অধিক লাভের আশায় এই পন্থা বেছে নিয়েছে বৈধ অস্ত্র ব্যবসায়ীরা। বিভিন্ন সন্ত্রাসী গ্রুপ নাশকতার উদ্দেশ্যে এসব অস্ত্র সংগ্রহ করছে বলে জানিয়েছে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী। ইতোমধ্যে বেশকিছু অবৈধ অত্যাধুনিক অস্ত্র বিক্রি করেছে বৈধ লাইসেন্সে অবৈধ অস্ত্র বিক্রি চক্রের সদস্যরা। ফলে দেশের সামগ্রিক নিরাপত্তা নিয়ে শঙ্কা দেখা দিয়েছে। অস্ত্রগুলো উদ্ধারে এগুলোর ক্রেতাদের খোঁজে মাঠে কাজ শুরু করেছে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যরা।

রাজধানীর সায়েদাবাদ থেকে এ চক্রের ৪ সদস্যকে গ্রেপ্তারের পর গতকাল ডিএমপির মিডিয়া সেন্টারে আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে এ তথ্য জানান কাউন্টার টেরোরিজম অ্যান্ড ট্রান্সন্যাশনাল ক্রাইম (সিটিটিসি) ইউনিটের প্রধান অতিরিক্ত পুলিশ কমিশনার মো. আসাদুজ্জামান। গত রোববার রাতে তাদের গ্রেপ্তার করা হয়। গ্রেপ্তারকৃতরা হলো- চট্টগ্রাম মহানগরে বৈধ অস্ত্রের দোকান মালিক মো. হোসেন, রাঙ্গামাটির বরকল থানা এলাকার লাল তন পাংখোয়া এবং মো. হোসেনের দুই সহযোগী চট্টগ্রামের রাউজানের মো. আলী আকবর ও চট্টগ্রামের বোয়ালখালী এলাকার মো. আদিলুর রহমান সুজন। এ সময় তাদের কাছ থেকে একটি শটগান, একটি রিভলবার, ৩টি পিস্তল ও ৩০১ রাউন্ড গুলি উদ্ধার করা হয়। জব্দকৃত গুলির মধ্যে একে-৪৭-এর গুলি থাকায় সংশ্লিষ্টরা ধারণা করছেন, কোন একে-৪৭ ক্রেতার চাহিদার ভিত্তিতে গুলিগুলো হস্তান্তর করতে চেয়েছিল চক্রটি। এদিকে, গতকাল তাদের ১০ দিনের রিমান্ড আবেদন করে আদালতে পাঠানো হলে আদালত প্রত্যেকের ৩ দিনের রিমান্ড আবেদন মঞ্জুর করেছেন বলে জানা গেছে।

সিটিটিসি প্রধান মো. আসাদুজ্জামান বলেন, মো. হোসেন বৈধ অস্ত্রের একজন ডিলার। চট্টগ্রাম মহানগরে তার একটি অস্ত্রের দোকান রয়েছে। এ দোকান ব্যবহার করে বৈধ অস্ত্রের ব্যবসার আড়ালে তিনি অবৈধ অস্ত্রের ব্যবসা করতেন। তিনি বিভিন্ন জায়গা থেকে অবৈধ অস্ত্র সংগ্রহ করে ঢাকা-চট্টগ্রাম-কক্সবাজারসহ দেশের বিভিন্ন অঞ্চলের সন্ত্রাসী গোষ্ঠীর কাছে চড়া দামে বিক্রি করতেন। এছাড়াও অবৈধ অস্ত্র বিক্রিতে হোসেন এক অভিনব কৌশল বেছে নিয়েছিলেন। দেশের বিভিন্ন জায়গা থেকে পুরাতন অস্ত্রের লাইসেন্স সংগ্রহ করতেন। বিশেষ করে যারা বৈধ অস্ত্র আগে ব্যবহার করতেন এখন মারা গেছেন, আবার কেউ কেউ এই অস্ত্র আর ব্যবহার করেন না- তাদের লাইসেন্স টার্গেট করা হতো। পরে ওই লাইসেন্স সংগ্রহ করে সেটি দিয়ে অস্ত্র কিনে অবৈধ অস্ত্র ব্যবহারকারীদের কাছে অনেক বেশি টাকায় বিক্রি করতেন। তার কাছ থেকে জব্দ হওয়া শটগানটিও এরকম একটি লাইসেন্স দিয়ে কেনা। সিটিটিসি প্রধান আর বলেন, গ্রেপ্তারকৃত লালতন পাংখোয়ার একসময় বড়কল এলাকার সাইচাল পাংখোয়া পাড়ার হেডম্যান ছিলেন। তিনি দীর্ঘদিন ধরে বরকল সীমান্তবর্তী মিজোরাম রাজ্য এবং বান্দরবনের মায়ানমারের সীমান্ত থেকে অস্ত্র-গুলি চোরাচালানে জড়িত। এসব অস্ত্র তিনি পার্বত্য অঞ্চলসহ কক্সবাজার, চট্টগ্রাম ও ঢাকায় বিক্রি করতেন। মো. হোসেন পাংখোয়া ছাড়াও ঢাকার অস্ত্র ব্যবসায়ী স্বপনসহ বিভিন্ন অবৈধ অস্ত্র ব্যবসায়ীদের থেকে অস্ত্র-গুলি ক্রয় করতেন। সেসব অস্ত্র হোসেন ঘনিষ্ট দুই সহযোগী আকবর এবং আদিলুর রহমান সুজনের মাধ্যমে কক্সবাজার এলাকার বিভিন্ন সন্ত্রাসী গোষ্ঠীসহ চট্টগ্রামের বিভিন্ন জায়গায় বিক্রি করতেন। এছাড়াও তারা (আদিল ও সুজন) অবৈধ অস্ত্র-গুলি চট্টগ্রামের হামিদুল হক, আবদুল মান্নান আহমেদ, কক্সবাজারের সেলিম ও জুয়েলের কাছে বিক্রি করতেন।

মঙ্গলবার, ০২ নভেম্বর ২০২১ , ১৭ কার্তিক ১৪২৮ ২৫ রবিউল আউয়াল ১৪৪৩

একে ৪৭ রাইফেলসহ অবৈধ অস্ত্র আনছে বৈধ ব্যবসায়ীরা

মায়ানমার ও মিজোরাম থেকে আনা হচ্ছে অস্ত্র

নিজস্ব বার্তা পরিবেশক

সীমান্তের ফাঁক গলে চোরাচালানকারীদের মাধ্যমে প্রতিবেশী রাষ্ট্র ভারতের মিজোরাম রাজ্য ও মায়ানমার থেকে আনা হচ্ছে একে-৪৭ রাইফেলসহ অবৈধ অত্যাধুনিক সব অস্ত্র। পরে বৈধ অস্ত্র ব্যবসার আড়ালে সেগুলো তুলে দেয়া হচ্ছে বিভিন্ন সন্ত্রাসী গ্রুপের হাতে। মূলতো চড়া দামে বিক্রির করে অধিক লাভের আশায় এই পন্থা বেছে নিয়েছে বৈধ অস্ত্র ব্যবসায়ীরা। বিভিন্ন সন্ত্রাসী গ্রুপ নাশকতার উদ্দেশ্যে এসব অস্ত্র সংগ্রহ করছে বলে জানিয়েছে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী। ইতোমধ্যে বেশকিছু অবৈধ অত্যাধুনিক অস্ত্র বিক্রি করেছে বৈধ লাইসেন্সে অবৈধ অস্ত্র বিক্রি চক্রের সদস্যরা। ফলে দেশের সামগ্রিক নিরাপত্তা নিয়ে শঙ্কা দেখা দিয়েছে। অস্ত্রগুলো উদ্ধারে এগুলোর ক্রেতাদের খোঁজে মাঠে কাজ শুরু করেছে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যরা।

রাজধানীর সায়েদাবাদ থেকে এ চক্রের ৪ সদস্যকে গ্রেপ্তারের পর গতকাল ডিএমপির মিডিয়া সেন্টারে আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে এ তথ্য জানান কাউন্টার টেরোরিজম অ্যান্ড ট্রান্সন্যাশনাল ক্রাইম (সিটিটিসি) ইউনিটের প্রধান অতিরিক্ত পুলিশ কমিশনার মো. আসাদুজ্জামান। গত রোববার রাতে তাদের গ্রেপ্তার করা হয়। গ্রেপ্তারকৃতরা হলো- চট্টগ্রাম মহানগরে বৈধ অস্ত্রের দোকান মালিক মো. হোসেন, রাঙ্গামাটির বরকল থানা এলাকার লাল তন পাংখোয়া এবং মো. হোসেনের দুই সহযোগী চট্টগ্রামের রাউজানের মো. আলী আকবর ও চট্টগ্রামের বোয়ালখালী এলাকার মো. আদিলুর রহমান সুজন। এ সময় তাদের কাছ থেকে একটি শটগান, একটি রিভলবার, ৩টি পিস্তল ও ৩০১ রাউন্ড গুলি উদ্ধার করা হয়। জব্দকৃত গুলির মধ্যে একে-৪৭-এর গুলি থাকায় সংশ্লিষ্টরা ধারণা করছেন, কোন একে-৪৭ ক্রেতার চাহিদার ভিত্তিতে গুলিগুলো হস্তান্তর করতে চেয়েছিল চক্রটি। এদিকে, গতকাল তাদের ১০ দিনের রিমান্ড আবেদন করে আদালতে পাঠানো হলে আদালত প্রত্যেকের ৩ দিনের রিমান্ড আবেদন মঞ্জুর করেছেন বলে জানা গেছে।

সিটিটিসি প্রধান মো. আসাদুজ্জামান বলেন, মো. হোসেন বৈধ অস্ত্রের একজন ডিলার। চট্টগ্রাম মহানগরে তার একটি অস্ত্রের দোকান রয়েছে। এ দোকান ব্যবহার করে বৈধ অস্ত্রের ব্যবসার আড়ালে তিনি অবৈধ অস্ত্রের ব্যবসা করতেন। তিনি বিভিন্ন জায়গা থেকে অবৈধ অস্ত্র সংগ্রহ করে ঢাকা-চট্টগ্রাম-কক্সবাজারসহ দেশের বিভিন্ন অঞ্চলের সন্ত্রাসী গোষ্ঠীর কাছে চড়া দামে বিক্রি করতেন। এছাড়াও অবৈধ অস্ত্র বিক্রিতে হোসেন এক অভিনব কৌশল বেছে নিয়েছিলেন। দেশের বিভিন্ন জায়গা থেকে পুরাতন অস্ত্রের লাইসেন্স সংগ্রহ করতেন। বিশেষ করে যারা বৈধ অস্ত্র আগে ব্যবহার করতেন এখন মারা গেছেন, আবার কেউ কেউ এই অস্ত্র আর ব্যবহার করেন না- তাদের লাইসেন্স টার্গেট করা হতো। পরে ওই লাইসেন্স সংগ্রহ করে সেটি দিয়ে অস্ত্র কিনে অবৈধ অস্ত্র ব্যবহারকারীদের কাছে অনেক বেশি টাকায় বিক্রি করতেন। তার কাছ থেকে জব্দ হওয়া শটগানটিও এরকম একটি লাইসেন্স দিয়ে কেনা। সিটিটিসি প্রধান আর বলেন, গ্রেপ্তারকৃত লালতন পাংখোয়ার একসময় বড়কল এলাকার সাইচাল পাংখোয়া পাড়ার হেডম্যান ছিলেন। তিনি দীর্ঘদিন ধরে বরকল সীমান্তবর্তী মিজোরাম রাজ্য এবং বান্দরবনের মায়ানমারের সীমান্ত থেকে অস্ত্র-গুলি চোরাচালানে জড়িত। এসব অস্ত্র তিনি পার্বত্য অঞ্চলসহ কক্সবাজার, চট্টগ্রাম ও ঢাকায় বিক্রি করতেন। মো. হোসেন পাংখোয়া ছাড়াও ঢাকার অস্ত্র ব্যবসায়ী স্বপনসহ বিভিন্ন অবৈধ অস্ত্র ব্যবসায়ীদের থেকে অস্ত্র-গুলি ক্রয় করতেন। সেসব অস্ত্র হোসেন ঘনিষ্ট দুই সহযোগী আকবর এবং আদিলুর রহমান সুজনের মাধ্যমে কক্সবাজার এলাকার বিভিন্ন সন্ত্রাসী গোষ্ঠীসহ চট্টগ্রামের বিভিন্ন জায়গায় বিক্রি করতেন। এছাড়াও তারা (আদিল ও সুজন) অবৈধ অস্ত্র-গুলি চট্টগ্রামের হামিদুল হক, আবদুল মান্নান আহমেদ, কক্সবাজারের সেলিম ও জুয়েলের কাছে বিক্রি করতেন।