দণ্ডিতদের ‘হাজতবাস সময়’ মোট সাজা থেকে বাদ যাবে আপিল বিভাগ

সাজাপ্রাপ্ত আসামি যেদিন গ্রেপ্তার হয়েছেন সেদিন থেকে সাজার রায় ঘোষণার আগ পর্যন্ত যতদিন কারাগারে ছিলেন তা মোট সাজা থেকে বাদ যাবে। প্রতিটি মামলার ক্ষেত্রে এটা প্রযোজ্য বলে মতামত দিয়েছে সুপ্রিম কোর্টের আপিল বিভাগ। ২৬ বছর ধরে কারাবন্দী যাবজ্জীবন দণ্ডিত এক আসামির লিভ টু আপিল পর্যবেক্ষণসহ খারিজ করে গতকাল প্রধান বিচারপতি সৈয়দ মাহমুদ হোসেনের নেতৃত্বাধীন পাঁচ বিচারপতির আপিল বেঞ্চ এই মতামত দেয়। এ বিষয়ে আইন মন্ত্রণালয়, স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় ও আইজি প্রিজনকে পদক্ষেপ নিতে বলেছে আপিল বিভাগ।

ফৌজদারি কার্যবিধির ৩৫(ক) ধারা অনুসারে কোন আদালত একজন অভিযুক্তকে কোন অপরাধে দণ্ডিত করেন, সে ক্ষেত্রে ওই আদালত ওই অপরাধে অভিযুক্ত ব্যক্তি যতদিন জেলহাজতে থাকবেন, তা কারাদণ্ড হতে বাদ দেবেন। যদি দণ্ডের চেয়ে জেল হাজতের মেয়াদ বেশি হয় তাহলে ওই ব্যক্তি দণ্ড ভোগ করেছেন বলে গণ্য হবে এবং অন্য অপরাধ না থাকলে জেলহাজত থেকে তৎক্ষণাৎ মুক্তি দিতে হবে।

আদালতে রাষ্ট্রপক্ষে ছিলেন ডেপুটি অ্যাটর্নি জেনারেল বিশ্বজিৎ দেবনাথ। আসামি পক্ষে ছিলেন আইনজীবী গোলাম আব্বাস চৌধুরী দুলাল। সঙ্গে ছিলেন আইনজীবী মোহাম্মদ রায়হান চৌধুরী। পরে বিশ্বজিৎ দেবনাথ বলেন, ডাবল মার্ডার মামলার আসামি ইউনুছ আলীকে নিম্ন আদালত মৃত্যুদণ্ড দিয়েছিল। পরে হাইকোর্ট মৃত্যদণ্ড থেকে কমিয়ে তাকে যাবজ্জীবন কারাদণ্ড দেয়। ইউনুছ আলীর আইনজীবী আপিল বিভাগে বলেন, এ পর্যন্ত ইউনুছ আলী ২৬ বছর হাজত খেটেছেন।

আইনজীবী গোলাম আব্বাস চৌধুরী দুলাল বলেন, প্রায় ২৬ বছর ধরে ইউনুছ আলী কারাবাসে করছেন। জেলকোড অনুযায়ী যেটার কারাবাস হয় ৩৪ বছরের মতো। যাবজ্জীবন মানে ৩০ বছর ধরে নিলে আসামি চার বছর বেশি কারাবাস করছে। আদালত বলেছেন, সিআরপিসির ৩৫ (ক) ধারা যেন পালন করা হয় সে বিষয়ে সিদ্ধান্ত সবখানে (কারা কর্তৃপক্ষ, আইন ও স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়) পাঠিয়ে দেয়া হবে। যাতে করে এটা সবাই যেন মেনে চলে।

তিনি বলেন, এর ফলে আমি বিশ্বাস করি, যারা অনেক দিন ধরে জেলহাজতে আছে তারা এ রায়ের সুবিধা পাবেন। তারা কারগার থেকে বেরিয়ে যেতে পারবেন।

১৯৯৫ সালের জুন মাসে নাটোর সদর উপজেলার চকপাড়ায় হত্যা মামলায় সেনবাগ লক্ষ্মীকোল এলাকার আফছার মণ্ডলের ছেলে ইউনুছ আলীসহ দুই জনকে ২০০২ সালের ১৭ নভেম্বর বিচারিক আদালত মৃত্যুদণ্ড দেয়। বাকি ৮ জনকে যাবজ্জীবন দণ্ড দেয়। আপিলের পর ২০০৫ সালের ২৯ আগস্ট ইউনুছ আলীর মৃত্যুদণ্ড কমিয়ে যাবজ্জীবন দেয় হাইকোর্ট। এর বিরুদ্ধে চলতি বছরের ২৭ সেপ্টেম্বর আপিল বিভাগে লিভ টু আপিল করে ইউনুস আলী। যেটি সোমবার পর্যবেক্ষণসহ খারিজ করে দেয় আদালত।

মঙ্গলবার, ০২ নভেম্বর ২০২১ , ১৭ কার্তিক ১৪২৮ ২৫ রবিউল আউয়াল ১৪৪৩

দণ্ডিতদের ‘হাজতবাস সময়’ মোট সাজা থেকে বাদ যাবে আপিল বিভাগ

আদালত বার্তা পরিবেশক

সাজাপ্রাপ্ত আসামি যেদিন গ্রেপ্তার হয়েছেন সেদিন থেকে সাজার রায় ঘোষণার আগ পর্যন্ত যতদিন কারাগারে ছিলেন তা মোট সাজা থেকে বাদ যাবে। প্রতিটি মামলার ক্ষেত্রে এটা প্রযোজ্য বলে মতামত দিয়েছে সুপ্রিম কোর্টের আপিল বিভাগ। ২৬ বছর ধরে কারাবন্দী যাবজ্জীবন দণ্ডিত এক আসামির লিভ টু আপিল পর্যবেক্ষণসহ খারিজ করে গতকাল প্রধান বিচারপতি সৈয়দ মাহমুদ হোসেনের নেতৃত্বাধীন পাঁচ বিচারপতির আপিল বেঞ্চ এই মতামত দেয়। এ বিষয়ে আইন মন্ত্রণালয়, স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় ও আইজি প্রিজনকে পদক্ষেপ নিতে বলেছে আপিল বিভাগ।

ফৌজদারি কার্যবিধির ৩৫(ক) ধারা অনুসারে কোন আদালত একজন অভিযুক্তকে কোন অপরাধে দণ্ডিত করেন, সে ক্ষেত্রে ওই আদালত ওই অপরাধে অভিযুক্ত ব্যক্তি যতদিন জেলহাজতে থাকবেন, তা কারাদণ্ড হতে বাদ দেবেন। যদি দণ্ডের চেয়ে জেল হাজতের মেয়াদ বেশি হয় তাহলে ওই ব্যক্তি দণ্ড ভোগ করেছেন বলে গণ্য হবে এবং অন্য অপরাধ না থাকলে জেলহাজত থেকে তৎক্ষণাৎ মুক্তি দিতে হবে।

আদালতে রাষ্ট্রপক্ষে ছিলেন ডেপুটি অ্যাটর্নি জেনারেল বিশ্বজিৎ দেবনাথ। আসামি পক্ষে ছিলেন আইনজীবী গোলাম আব্বাস চৌধুরী দুলাল। সঙ্গে ছিলেন আইনজীবী মোহাম্মদ রায়হান চৌধুরী। পরে বিশ্বজিৎ দেবনাথ বলেন, ডাবল মার্ডার মামলার আসামি ইউনুছ আলীকে নিম্ন আদালত মৃত্যুদণ্ড দিয়েছিল। পরে হাইকোর্ট মৃত্যদণ্ড থেকে কমিয়ে তাকে যাবজ্জীবন কারাদণ্ড দেয়। ইউনুছ আলীর আইনজীবী আপিল বিভাগে বলেন, এ পর্যন্ত ইউনুছ আলী ২৬ বছর হাজত খেটেছেন।

আইনজীবী গোলাম আব্বাস চৌধুরী দুলাল বলেন, প্রায় ২৬ বছর ধরে ইউনুছ আলী কারাবাসে করছেন। জেলকোড অনুযায়ী যেটার কারাবাস হয় ৩৪ বছরের মতো। যাবজ্জীবন মানে ৩০ বছর ধরে নিলে আসামি চার বছর বেশি কারাবাস করছে। আদালত বলেছেন, সিআরপিসির ৩৫ (ক) ধারা যেন পালন করা হয় সে বিষয়ে সিদ্ধান্ত সবখানে (কারা কর্তৃপক্ষ, আইন ও স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়) পাঠিয়ে দেয়া হবে। যাতে করে এটা সবাই যেন মেনে চলে।

তিনি বলেন, এর ফলে আমি বিশ্বাস করি, যারা অনেক দিন ধরে জেলহাজতে আছে তারা এ রায়ের সুবিধা পাবেন। তারা কারগার থেকে বেরিয়ে যেতে পারবেন।

১৯৯৫ সালের জুন মাসে নাটোর সদর উপজেলার চকপাড়ায় হত্যা মামলায় সেনবাগ লক্ষ্মীকোল এলাকার আফছার মণ্ডলের ছেলে ইউনুছ আলীসহ দুই জনকে ২০০২ সালের ১৭ নভেম্বর বিচারিক আদালত মৃত্যুদণ্ড দেয়। বাকি ৮ জনকে যাবজ্জীবন দণ্ড দেয়। আপিলের পর ২০০৫ সালের ২৯ আগস্ট ইউনুছ আলীর মৃত্যুদণ্ড কমিয়ে যাবজ্জীবন দেয় হাইকোর্ট। এর বিরুদ্ধে চলতি বছরের ২৭ সেপ্টেম্বর আপিল বিভাগে লিভ টু আপিল করে ইউনুস আলী। যেটি সোমবার পর্যবেক্ষণসহ খারিজ করে দেয় আদালত।