ত্রিপুরা-মেঘালয়-আসাম ও উত্তরপ্রদেশ জয়ের পর দিল্লি শাসনের ঘোষণা তৃণমূলের

বহু বাধা-বিতর্ক পেরিয়ে অবশেষে বিপ্লব গড়ে আগরতলার রবীন্দ্র ভবন চত্বরে জনসভা করলেন তৃণমূল কংগ্রেস। ত্রিপুরার মঞ্চ থেকে অভিষেক বন্দ্যোপাধায় বলেন, ২০১৬ সাল থেকেই তৃণমূল এখানে কাজ শুরু করেছে। সেই সময় ক্ষমতায় ছিল মানিক সরকারের নেতৃত্বাধীন সিপিএম সরকার। পাঁচ বছর পর একই জায়গায় সভা করছি। সেই সময় এত বাধার মুখে পড়তে হয়নি। এত হাইকোর্টের নির্দেশেরও দরকার হয়নি। সেদিন ৫ হাজার লোক ছিল, আজ আদালতের নির্দেশে ৫শ লোক জমায়েত হয়েছে। আদালত বলেছে, কোভিড বিধির কারণে ৫শ লোকের বেশি জমায়ে করা যাবে না। আমরা আদলতের নির্দেশ আনুযায়ীই সভা করেছি। কিন্তু রাজ্যের ২০ লাখ মানুষ এই সভা আজ দেখেছে।

ত্রিপুরা সরকার কতৃক এই সভা বাতিল প্রসঙ্গে অভিষেক বলেন, ‘ওরা ছলে-বলে আমাদের জনসভা আটকানোর চেষ্টা করেছে। কিন্তু আদলত আমাদের সভা করার আনুমতি দিয়েছে। আদালতে ওদের মুখ পুড়েছে। এমনকি আমাকে আটকানোর জন্য ১৪৪ ধারা জারি করে রেখেছে। ত্রিপুরার সব মানুষ এখানে তৃণমূল হয়ে গেছে। এখন কেবল ভোটের অপেক্ষা। ত্রিপুরায় আসন্ন পুরসভার ভোট বিপ্লব সরকার গায়ের জোরে করবে। গণতন্ত্রকে ধ্বংস করে জঙ্গলরাজ চালাচ্ছে বিজেপি। ত্রিপুরাকে আফগানিস্তান বানাচ্ছে বিজেপি।’

দলের সর্বভারতীয় সাধারণ সম্পাদকের দায়িত্ব নেয়ার পর অন্য রাজ্যেও তৃণমূলের বিস্তারের কথা ঘোষণা করেছিলেন অভিষেক। সেই লক্ষ্যেই ত্রিপুরা ও গোয়ায় সংগঠন বাড়াচ্ছে তৃণমূল। ইতোমধ্যেই ত্রিপুরায় সংগঠন করতে গিয়ে দফায় দফায় বাধাগ্রস্ত হয় তৃণমূল। অভিষেকের সভা ঘিরেও জলঘোলা হয়েছে। প্রথমে সভার অনুমতি মেলেনি। পরে সেখানে ১৪৪ ধারা জারি করা হয়। কিন্তু অভিষেকের ঘোষণা অনুযায়ী রোববার-ই তারা ত্রিপুরায় সভা করতে সক্ষম হয়েছে। আগের দিন রাত সাড়ে ৯টায় তৃণমূলের আবেদনের প্রেক্ষিতে ত্রিপুরা হাইকোর্ট জানিয়ে দেয়, রবীন্দ্রভবনের সামনেই অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায় সভা করতে পারবেন। আদালতের আইনি লড়াইয়ে জেতার পরই ফেইসবুকে অভিষেক পোস্ট দিয়ে জানায় ‘পশ্চিমবঙ্গের মতো ত্রিপুরায় এখন তৃণমূলের জয়ের দামামা বেজেছে’।

কিন্তু ত্রিপুরার পাশাপাশি তৃণমূল কংগ্রেসের নজর এবার সৈকত রাজ্য গোয়ার দিকে। তাই তৃণমূল নেত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের সফরের পর এবার গোয়া যাচ্ছেন অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়। ইতোমধ্যেই তৃণমূলে যোগ দিয়েছেন গোয়ার প্রাক্তন মুখ্যমন্ত্রী। কয়েকদিন আগে খোদ মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় সেখানে গিয়ে দলের একাধিক কর্মসূচিতে অংশ নিয়েছেন। তৃণমূলে যোগ দিয়েছেন সেখানকার বেশ কয়েকজন বিশিষ্ট ব্যক্তিত্ব। এবার কালীপূজার পর সেখানে যাচ্ছেন অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়। ২০২২ সালে গোয়ায় বিধানসভা নির্বাচন। সেই নির্বাচনে লড়াই করবে তৃণমূল কংগ্রেস। এমনটাই ঠিক হয়েছে দলের তরফে। দলের একাধিক সাংগঠনিক বৈঠকে অংশ নেবে অভিষেক। গোয়া যে তৃণমূলের অন্যতম প্রধান লক্ষ্য তা আগেই স্পষ্ট করে দিয়েছেন অভিষেক। এ প্রসঙ্গে তিনি বলেন, ‘তৃণমূল শুধু বাংলার মাটিতেই সীমাবদ্ধ নয়। আমরা ত্রিপুরায় গিয়েছি। আমরা গোয়ায় ঢুকেছি। আমরা আরও ৫-৭টা রাজ্যে আগামী এক মাসের মধ্যে যাব।’

অভিষেক এদিন আরও বলেন, ‘আগামী তিন মাসের মধ্যে গোয়ায় নির্বাচন। ৪০টি বিধানসভা আসন আছে। শূন্য থেকে তৃণমূল শুরু করেছে। লিখে রাখুন ৩ মাসের মধ্যে গোয়ায় তৃণমূলের সরকার প্রতিষ্ঠা হবে। তারপর ত্রিপুরা, মেঘালয়, অসম ও উত্তরপ্রদেশ জয় করবো। কারণ বাংলা পথ দেখিয়েছে। আজ ভারতকে পথ দেখাচ্ছেন জননেত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। কাশ্মীর থেকে কন্যাকুমারী একটাই আওয়াজ ‘দেশের নেত্রী মমতাদিদি’। এর পর দিল্লি দখল সময়ের ব্যাপার।

মঙ্গলবার, ০২ নভেম্বর ২০২১ , ১৭ কার্তিক ১৪২৮ ২৫ রবিউল আউয়াল ১৪৪৩

ত্রিপুরা-মেঘালয়-আসাম ও উত্তরপ্রদেশ জয়ের পর দিল্লি শাসনের ঘোষণা তৃণমূলের

দীপক মুখার্জী, কলকাতা

বহু বাধা-বিতর্ক পেরিয়ে অবশেষে বিপ্লব গড়ে আগরতলার রবীন্দ্র ভবন চত্বরে জনসভা করলেন তৃণমূল কংগ্রেস। ত্রিপুরার মঞ্চ থেকে অভিষেক বন্দ্যোপাধায় বলেন, ২০১৬ সাল থেকেই তৃণমূল এখানে কাজ শুরু করেছে। সেই সময় ক্ষমতায় ছিল মানিক সরকারের নেতৃত্বাধীন সিপিএম সরকার। পাঁচ বছর পর একই জায়গায় সভা করছি। সেই সময় এত বাধার মুখে পড়তে হয়নি। এত হাইকোর্টের নির্দেশেরও দরকার হয়নি। সেদিন ৫ হাজার লোক ছিল, আজ আদালতের নির্দেশে ৫শ লোক জমায়েত হয়েছে। আদালত বলেছে, কোভিড বিধির কারণে ৫শ লোকের বেশি জমায়ে করা যাবে না। আমরা আদলতের নির্দেশ আনুযায়ীই সভা করেছি। কিন্তু রাজ্যের ২০ লাখ মানুষ এই সভা আজ দেখেছে।

ত্রিপুরা সরকার কতৃক এই সভা বাতিল প্রসঙ্গে অভিষেক বলেন, ‘ওরা ছলে-বলে আমাদের জনসভা আটকানোর চেষ্টা করেছে। কিন্তু আদলত আমাদের সভা করার আনুমতি দিয়েছে। আদালতে ওদের মুখ পুড়েছে। এমনকি আমাকে আটকানোর জন্য ১৪৪ ধারা জারি করে রেখেছে। ত্রিপুরার সব মানুষ এখানে তৃণমূল হয়ে গেছে। এখন কেবল ভোটের অপেক্ষা। ত্রিপুরায় আসন্ন পুরসভার ভোট বিপ্লব সরকার গায়ের জোরে করবে। গণতন্ত্রকে ধ্বংস করে জঙ্গলরাজ চালাচ্ছে বিজেপি। ত্রিপুরাকে আফগানিস্তান বানাচ্ছে বিজেপি।’

দলের সর্বভারতীয় সাধারণ সম্পাদকের দায়িত্ব নেয়ার পর অন্য রাজ্যেও তৃণমূলের বিস্তারের কথা ঘোষণা করেছিলেন অভিষেক। সেই লক্ষ্যেই ত্রিপুরা ও গোয়ায় সংগঠন বাড়াচ্ছে তৃণমূল। ইতোমধ্যেই ত্রিপুরায় সংগঠন করতে গিয়ে দফায় দফায় বাধাগ্রস্ত হয় তৃণমূল। অভিষেকের সভা ঘিরেও জলঘোলা হয়েছে। প্রথমে সভার অনুমতি মেলেনি। পরে সেখানে ১৪৪ ধারা জারি করা হয়। কিন্তু অভিষেকের ঘোষণা অনুযায়ী রোববার-ই তারা ত্রিপুরায় সভা করতে সক্ষম হয়েছে। আগের দিন রাত সাড়ে ৯টায় তৃণমূলের আবেদনের প্রেক্ষিতে ত্রিপুরা হাইকোর্ট জানিয়ে দেয়, রবীন্দ্রভবনের সামনেই অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায় সভা করতে পারবেন। আদালতের আইনি লড়াইয়ে জেতার পরই ফেইসবুকে অভিষেক পোস্ট দিয়ে জানায় ‘পশ্চিমবঙ্গের মতো ত্রিপুরায় এখন তৃণমূলের জয়ের দামামা বেজেছে’।

কিন্তু ত্রিপুরার পাশাপাশি তৃণমূল কংগ্রেসের নজর এবার সৈকত রাজ্য গোয়ার দিকে। তাই তৃণমূল নেত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের সফরের পর এবার গোয়া যাচ্ছেন অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়। ইতোমধ্যেই তৃণমূলে যোগ দিয়েছেন গোয়ার প্রাক্তন মুখ্যমন্ত্রী। কয়েকদিন আগে খোদ মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় সেখানে গিয়ে দলের একাধিক কর্মসূচিতে অংশ নিয়েছেন। তৃণমূলে যোগ দিয়েছেন সেখানকার বেশ কয়েকজন বিশিষ্ট ব্যক্তিত্ব। এবার কালীপূজার পর সেখানে যাচ্ছেন অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়। ২০২২ সালে গোয়ায় বিধানসভা নির্বাচন। সেই নির্বাচনে লড়াই করবে তৃণমূল কংগ্রেস। এমনটাই ঠিক হয়েছে দলের তরফে। দলের একাধিক সাংগঠনিক বৈঠকে অংশ নেবে অভিষেক। গোয়া যে তৃণমূলের অন্যতম প্রধান লক্ষ্য তা আগেই স্পষ্ট করে দিয়েছেন অভিষেক। এ প্রসঙ্গে তিনি বলেন, ‘তৃণমূল শুধু বাংলার মাটিতেই সীমাবদ্ধ নয়। আমরা ত্রিপুরায় গিয়েছি। আমরা গোয়ায় ঢুকেছি। আমরা আরও ৫-৭টা রাজ্যে আগামী এক মাসের মধ্যে যাব।’

অভিষেক এদিন আরও বলেন, ‘আগামী তিন মাসের মধ্যে গোয়ায় নির্বাচন। ৪০টি বিধানসভা আসন আছে। শূন্য থেকে তৃণমূল শুরু করেছে। লিখে রাখুন ৩ মাসের মধ্যে গোয়ায় তৃণমূলের সরকার প্রতিষ্ঠা হবে। তারপর ত্রিপুরা, মেঘালয়, অসম ও উত্তরপ্রদেশ জয় করবো। কারণ বাংলা পথ দেখিয়েছে। আজ ভারতকে পথ দেখাচ্ছেন জননেত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। কাশ্মীর থেকে কন্যাকুমারী একটাই আওয়াজ ‘দেশের নেত্রী মমতাদিদি’। এর পর দিল্লি দখল সময়ের ব্যাপার।