চট্টগ্রামবাসী না চাইলে, সিআরবিতে হাসপাতাল হবে না

প্রধানমন্ত্রী চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত দেবেন : রেলমন্ত্রী

রেলমন্ত্রী নুরুল ইসলাম সুজন বলেছেন, সিআরবিতে হাসপাতাল করতে হলে চট্টগ্রাম উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ (সিডিএ) থেকে নকশা অনুমোদন দিতে হবে। সিডিএ যদি নকশা না দেয় সেখানে হাসপাতাল হবে কী করে? আর অন্যান্য সংস্থার অনুমোদনে আইনী বাধ্যবাধকতা থাকলেও সেখানে কোনও কিছু করা সম্ভব না। সবচেয়ে বড় কথা, চট্টগ্রামবাসী না চাইলে সেখানে হাসপাতাল প্রকল্প হবে না। তিনি বলেন, সিআরবিতে হাসপাতাল প্রকল্প রেল মন্ত্রণালয় গ্রহণ করেনি। এটি প্রধানমন্ত্রী কার্যালয়ের পিপিপি অথরিটির প্রকল্প। বিনিয়োগও বেসরকারি। সুতরাং রেল মন্ত্রণালয়ের এখানে করার কিছুই নেই। নাগরিক সমাজের দেয়া যাবতীয় তথ্য উপাত্ত আমি প্রধানমন্ত্রীর কাছে তুলে ধরবো, তিনিই এ ব্যাপারে চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত দেবেন। তবে আমার অভিমত হচ্ছে, আইন ও চট্টগ্রামবাসীর সেন্টিমেন্টের বাইরে যাওয়া ঠিক হবে না। আমরা যা কিছু করছি জনগণের কল্যাণে। জনগণের কল্যাণে সরকার প্রকল্প গ্রহণ করে।

গতকাল রেল ভবনে নাগরিক সমাজ-চটগ্রামের নেতাদের সঙ্গে মতবিনিময়কালে এসব কথা বলেন। মতবিনিময়কালে মন্ত্রীর কাছে প্রকল্পের যাবতীয় অসঙ্গতি তুলে ধরে তথ্য-উপাত্ত উপস্থাপন করেন নাগরিক সমাজ-চট্টগ্রামের সদস্য সচিব বীর মুক্তিযোদ্ধা অ্যাড. ইব্রাহিম হোসেন চৌধুরী বাবুল।

এ সময় তিনি মন্ত্রীকে বলেন, সিআরবি হচ্ছে ২০০৯ সালের গেজেট অনুযায়ী রাষ্ট্রপতি অনুমোদিত সরকার ঘোষিত হেরিটেজ জোন। এখানে কোনও ধরনের বাণিজ্যিক স্থাপনা হতে পারে না। আইনত নিষিদ্ধ। তাছাড়া এটি চট্টগ্রামের ফুসফুস এবং সাংস্কৃতিক কর্মকা-ের কেন্দ্রবিন্দু। চাকসু জিএস শহীদ আবদুর রব, শহীদ মনোয়ার, শহীদ শেখ নজিরসহ ৯ শহীদের কবর এই সিআরবিতে। এখানে কোনও স্থাপনা হলে শহীদের কবর ধ্বংস হবে। তিনি আরও বলেন, আমরা হাসপাতালের বিপক্ষে নই। হাসপাতাল চাই। তবে সিআরবিতে নয়। সিআরবি ছাড়া অন্যত্র হাসপাতাল হলে আমরা স্বাগত জানাবো।

জানা গেছে, গত বছর সিআরবি এলাকায় বর্তমান রেলওয়ে হাসপাতাল ও সংলগ্ন খালি জমি, রেলওয়ে হাসপাতাল কলোনি স্টাফ কোয়ার্টারের ছয় একর জমিতে সরকারি-বেসরকারি অংশীদারিত্বে (পিপিপি) প্রকল্পের চুক্তি সই ও অনুমোদন হয়। বেসরকারি ইউনাইটেড এন্টারপ্রাইজ কোম্পানি লিমিটেড নামের প্রতিষ্ঠান ছয় একর জমিতে ৫০০ শয্যার হাসপাতাল, ১০০ আসনের মেডিক্যাল কলেজ ও ৫০ আসনের নার্সিং ইনস্টিটিউট করতে চায়। প্রকল্প বাস্তবায়নের সময় ধরা হয় ১২ বছর। ইতিমধ্যে রেলওয়েকে আট কোটি টাকা পরিশোধ করেছে বেসরকারি প্রতিষ্ঠানটি। ৫০ বছর পর হাসপাতালটি রেলওয়েকে হস্তান্তÍর করা হবে বলে চুক্তিতে উল্লেখ করা হয়। সিআরবিতে বেসরকারি উদ্যোগে হাসপাতাল ও মেডিক্যাল কলেজ নির্মাণের পরিকল্পনার বিরোধিতা করে আন্দোলনে নামে চট্টগ্রাম নগরবাসী।

গতকাল মত বিনিময়কালে উপস্থিত ছিলেন নাগরিক সমাজ-চট্টগ্রাম এর কো-চেয়ারম্যান বীর মুক্তিযোদ্ধা মোহাম্মদ ইউনুস, আওয়ামী লীগের উপ প্রচার সম্পাদক আমিনুল ইসলাম আমিন, জাসদ কেন্দ্রীয় সাংগঠনিক সম্পাদক জসিম উদ্দিন বাবুল, চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্রলীগের সাবেক সভাপতি শাহজাহান চৌধুরী, চট্টগ্রাম জেলা আইনজীবী সমিতির সাধারণ সম্পাদক এএইচএম জিয়াউদ্দিন, নাগরিক সমাজ-চট্টগ্রামের যুগ্ম সদস্য সচিব ও বিএফইউজের যুগ্ম মহাসচিব মহসীন কাজী, শাহীন উল ইসলাম চৌধুরী, আবৃত্তিশিল্পী রাশেদ হাসান, প্রণব চৌধুরী, অ্যাড. রাশেদুল ইসলাম, অনির্বাণ দত্ত, অ্যাড. মাসুদুল আলম চৌধুরী, ব্যারিস্টার হেলালউদ্দিন, ব্যারিস্টার হারুনর রশীদ প্রমুখ।

মঙ্গলবার, ০২ নভেম্বর ২০২১ , ১৭ কার্তিক ১৪২৮ ২৫ রবিউল আউয়াল ১৪৪৩

চট্টগ্রামবাসী না চাইলে, সিআরবিতে হাসপাতাল হবে না

প্রধানমন্ত্রী চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত দেবেন : রেলমন্ত্রী

চট্টগ্রাম ব্যুরো

image

রেলমন্ত্রী নুরুল ইসলাম সুজন বলেছেন, সিআরবিতে হাসপাতাল করতে হলে চট্টগ্রাম উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ (সিডিএ) থেকে নকশা অনুমোদন দিতে হবে। সিডিএ যদি নকশা না দেয় সেখানে হাসপাতাল হবে কী করে? আর অন্যান্য সংস্থার অনুমোদনে আইনী বাধ্যবাধকতা থাকলেও সেখানে কোনও কিছু করা সম্ভব না। সবচেয়ে বড় কথা, চট্টগ্রামবাসী না চাইলে সেখানে হাসপাতাল প্রকল্প হবে না। তিনি বলেন, সিআরবিতে হাসপাতাল প্রকল্প রেল মন্ত্রণালয় গ্রহণ করেনি। এটি প্রধানমন্ত্রী কার্যালয়ের পিপিপি অথরিটির প্রকল্প। বিনিয়োগও বেসরকারি। সুতরাং রেল মন্ত্রণালয়ের এখানে করার কিছুই নেই। নাগরিক সমাজের দেয়া যাবতীয় তথ্য উপাত্ত আমি প্রধানমন্ত্রীর কাছে তুলে ধরবো, তিনিই এ ব্যাপারে চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত দেবেন। তবে আমার অভিমত হচ্ছে, আইন ও চট্টগ্রামবাসীর সেন্টিমেন্টের বাইরে যাওয়া ঠিক হবে না। আমরা যা কিছু করছি জনগণের কল্যাণে। জনগণের কল্যাণে সরকার প্রকল্প গ্রহণ করে।

গতকাল রেল ভবনে নাগরিক সমাজ-চটগ্রামের নেতাদের সঙ্গে মতবিনিময়কালে এসব কথা বলেন। মতবিনিময়কালে মন্ত্রীর কাছে প্রকল্পের যাবতীয় অসঙ্গতি তুলে ধরে তথ্য-উপাত্ত উপস্থাপন করেন নাগরিক সমাজ-চট্টগ্রামের সদস্য সচিব বীর মুক্তিযোদ্ধা অ্যাড. ইব্রাহিম হোসেন চৌধুরী বাবুল।

এ সময় তিনি মন্ত্রীকে বলেন, সিআরবি হচ্ছে ২০০৯ সালের গেজেট অনুযায়ী রাষ্ট্রপতি অনুমোদিত সরকার ঘোষিত হেরিটেজ জোন। এখানে কোনও ধরনের বাণিজ্যিক স্থাপনা হতে পারে না। আইনত নিষিদ্ধ। তাছাড়া এটি চট্টগ্রামের ফুসফুস এবং সাংস্কৃতিক কর্মকা-ের কেন্দ্রবিন্দু। চাকসু জিএস শহীদ আবদুর রব, শহীদ মনোয়ার, শহীদ শেখ নজিরসহ ৯ শহীদের কবর এই সিআরবিতে। এখানে কোনও স্থাপনা হলে শহীদের কবর ধ্বংস হবে। তিনি আরও বলেন, আমরা হাসপাতালের বিপক্ষে নই। হাসপাতাল চাই। তবে সিআরবিতে নয়। সিআরবি ছাড়া অন্যত্র হাসপাতাল হলে আমরা স্বাগত জানাবো।

জানা গেছে, গত বছর সিআরবি এলাকায় বর্তমান রেলওয়ে হাসপাতাল ও সংলগ্ন খালি জমি, রেলওয়ে হাসপাতাল কলোনি স্টাফ কোয়ার্টারের ছয় একর জমিতে সরকারি-বেসরকারি অংশীদারিত্বে (পিপিপি) প্রকল্পের চুক্তি সই ও অনুমোদন হয়। বেসরকারি ইউনাইটেড এন্টারপ্রাইজ কোম্পানি লিমিটেড নামের প্রতিষ্ঠান ছয় একর জমিতে ৫০০ শয্যার হাসপাতাল, ১০০ আসনের মেডিক্যাল কলেজ ও ৫০ আসনের নার্সিং ইনস্টিটিউট করতে চায়। প্রকল্প বাস্তবায়নের সময় ধরা হয় ১২ বছর। ইতিমধ্যে রেলওয়েকে আট কোটি টাকা পরিশোধ করেছে বেসরকারি প্রতিষ্ঠানটি। ৫০ বছর পর হাসপাতালটি রেলওয়েকে হস্তান্তÍর করা হবে বলে চুক্তিতে উল্লেখ করা হয়। সিআরবিতে বেসরকারি উদ্যোগে হাসপাতাল ও মেডিক্যাল কলেজ নির্মাণের পরিকল্পনার বিরোধিতা করে আন্দোলনে নামে চট্টগ্রাম নগরবাসী।

গতকাল মত বিনিময়কালে উপস্থিত ছিলেন নাগরিক সমাজ-চট্টগ্রাম এর কো-চেয়ারম্যান বীর মুক্তিযোদ্ধা মোহাম্মদ ইউনুস, আওয়ামী লীগের উপ প্রচার সম্পাদক আমিনুল ইসলাম আমিন, জাসদ কেন্দ্রীয় সাংগঠনিক সম্পাদক জসিম উদ্দিন বাবুল, চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্রলীগের সাবেক সভাপতি শাহজাহান চৌধুরী, চট্টগ্রাম জেলা আইনজীবী সমিতির সাধারণ সম্পাদক এএইচএম জিয়াউদ্দিন, নাগরিক সমাজ-চট্টগ্রামের যুগ্ম সদস্য সচিব ও বিএফইউজের যুগ্ম মহাসচিব মহসীন কাজী, শাহীন উল ইসলাম চৌধুরী, আবৃত্তিশিল্পী রাশেদ হাসান, প্রণব চৌধুরী, অ্যাড. রাশেদুল ইসলাম, অনির্বাণ দত্ত, অ্যাড. মাসুদুল আলম চৌধুরী, ব্যারিস্টার হেলালউদ্দিন, ব্যারিস্টার হারুনর রশীদ প্রমুখ।