বিএনপি কী চায় প্রশ্ন প্রধানমন্ত্রীর

বিএনপি কেন সরকারের বিরুদ্ধে আন্দোলনের কথা বলে, যখন দলটির দন্ডিত চেয়ারপারসন খালেদা জিয়াকে সাময়িক মুক্তি দিয়ে ‘উন্নত চিকিৎসার সুযোগ’ করে দেয়া হয়েছে, এই প্রশ্ন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার।

‘যে আমাকে হত্যার চেষ্টা করেছে, তাকে আমি এই সুযোগও দিয়েছি। আর কী চায় তারা? তারপরও কিসের ডেমোস্ট্রেশন?’ এই প্রশ্ন ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ প্রধান শেখ হাসিনার।

ভিডিও কনফারেন্সের মাধ্যমে স্কটল্যান্ডের গ্লাসগোতে সোমবার প্রবাসী বাংলাদেশিদের এক নাগরিক সংবর্ধনায় কথা বলছিলেন তিনি। বিশ্ব জলবায়ু সম্মেলন উপলক্ষে সেখানে আছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।

প্রবাসীদের উদ্দেশ্যে তিনি বলেন, ‘আজকে আমি শুনলাম আমার বিরুদ্ধে অনেক ডেমোনেস্ট্রেশন হচ্ছে। আমার প্রশ্ন আমি অন্যায়টা কী করেছি? আমি বাংলাদেশের উন্নতি করেছি, দারিদ্র্যের হার কমিয়েছি, বাংলাদেশের মানুষকে খাদ্যে স্বয়ংসম্পূর্ণ করেছি।’

দুর্নীতি মামলায় খালেদা জিয়া দোষী সাব্যস্ত হয়েছেন, ছিলেন কারাগারে, একথা উল্লেখ করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘যেহেতু সে অসুস্থ, তাকে আমরা তার বাসায় থাকতে দিয়েছি এবং তার উন্নত চিকিৎসার ব্যবস্থা করা হয়েছে। কই জেলখানায় এই রকম কখনও তো কাউকে সুযোগ দেয়া হয় না। এমনকি তিনি মেইড সার্ভেন্টও নিয়ে গেছেন। কারাগারে মেইউ সার্ভেন্ট পাওয়া যায়- এটা কখনও শুনেছেন আপনারা?’

খালেদা জিয়ার বড় ছেলে এবং বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান যাবজ্জীবন সাজায় দন্ডিত কিন্তু পালিয়ে আছেন লন্ডনে, একথা উল্লেখ করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, তিনি শুধু অনলাইনে যোগাযোগ করে দেশে আন্দোলন করতে বলে।

তারেকের সাহস থাকলে দেশে ফেরা উচিত বলে মন্তব্য করে শেখ হাসিনা বলেন, ‘এত ভয় কিসের? দেশে যায় না কেন?’

‘আমার বিরুদ্ধে যখন মামলা দিয়েছে আমি তো জোর করে দেশে গিয়েছি,’ ২০০৭-২০০৮ এর সামরিক নেতাদের সমর্থিত জরুরি সরকারের সময়ের প্রসঙ্গ টেনে বলেন শেখ হাসিনা।

আর তারেক প্রসঙ্গে বলেন, ‘তো দেশে চলে আসুক যদি সাহস থাকে। আর রাজনীতি করতে হলে সাহস দেখাতে হবে। পালিয়ে থেকে খালি বোমা মেরে, আগুন দিয়ে, আর ডেমোনস্ট্রেশন দিয়ে তো চলবে না।’

দেশে সাক্ষরতার হার বাড়ছে, মানুষ শিক্ষিত হচ্ছে, একথা জানিয়ে শেখ হাসিনার মন্তব্য তা বিএনপির ‘পছন্দ না’। কারণ তিনি বলেন, ‘অবশ্য সেটা পছন্দ নাই হতে পারে। কারণ খালেদা জিয়া মেট্রিক পাস করেনি। জিয়াউর রহমান কেবলই ইন্টারমিডিয়েট পাস ছিল। আর তারেক জিয়া তো ফেল করতে করতে এখন নাকি অখ্যাত কোথা থেকে পাস করেছে বলে শোনা যায়।’

বিএনপি-জামায়াত দেশকে পিছিয়ে নিতে চায় মন্তব্য করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘বাংলাদেশ আর দরিদ্র থাকবে না, আর পেছাবে না। এরা চাচ্ছে বাংলাদেশ পিছিয়ে যাক। কারণ আমি থাকলে ডেভেলপমেন্ট হবে এবং আমি না থাকলে এগুলো স্থবির হয়ে যাবে। আর ওদের মত চোর-চোট্টারা যদি ক্ষমতায় আসে তো বাংলাদেশ রসাতলে যাবে।’

তবে শেখ হাসিনা প্রবাসীদের বলেন, তিনি তার মতো কাজ করে যাবেন। ‘ওরা বলে যাবে, আন্দোলন করে যাবে, আমি আমার ডেভেলপমেন্ট করে যাব, আমি আমার উন্নয়ন করে যাব। কারণ আমরা আন্দোলন করেই এখানে এসেছি। আর খালেদা জিয়া ভোট চুরি করেছিল বলে আন্দোলন করে তাকে আমরা ক্ষমতা থেকে উৎখাত করেছিলাম।’

নির্বাচন নিয়ে প্রশ্ন তুলে বিএনপি, আর প্রধানমন্ত্রীর প্রশ্ন ‘বিএনপিকে মানুষ কেন ভোট দেবে?’

‘আমার কথা হচ্ছে তারা ভোটটা পাবে কোত্থেকে, যেখানে নেতৃত্বশূন্যতা রয়েছে? নেতৃত্বে সাজাপ্রাপ্ত আসামি, পতালক আসামি। সেই নেতৃত্বকে কি জনগণ ভোট দেবে? আপনারা বলেন, কোন আশায় দেবে?’ এই প্রশ্ন ছুড়ে দিলেন একাধারে ১২ বছরের বেশি ক্ষমতায় থাকা প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।

তিনি প্রবাসীদের মনে করিয়ে দিলেন, বিএনপির শাসনকালে টিআইয়ের দুর্নীতির সূচকে চার বার বাংলাদেশের শীর্ষে থাকার কথা, আর বললেন, ‘এমন কোন জায়গা নেই যেখানে তারা অর্থ বানায়নি। আজকে যদি চুরি করে এই অর্থ না বানাত, তাহলে নিশ্চয় লন্ডনে এত বিলাসী জীবনযাপন করতে পারত না। এত শান শওকতে থাকতে পারত না, এত টাকাও খরচ করতে পারত না।

‘চুরি করে টাকা পাচার করেছে এটা আমার কথা না। আমেরিকার গোয়েন্দা সংস্থা এফবিআইয়ের তদন্তে সেটা বের হয়েছে। তারা আন্দোলন করে আমার বিরুদ্ধে, কেন? সেটা আমার প্রশ্ন।’

শেখ হাসিনা বলেন, ‘আমার অপরাধটা কী? বাংলাদেশের উন্নতি করেছি এটাই তো তাদের কাছে অপরাধ? তাহলে এর অর্থটা কী দাঁড়ায়? এরা স্বাধীনতা চায় না, বাংলাদেশের উন্নতিটা চায় না। বাংলাদেশের মানুষের ভাগ্য ফিরুক সেটা চায় না।

‘কিন্তু আমি আপনাদের কথা দিচ্ছি, বাংলাদেশের একটি মানুষও গৃহহারা থাকবে না,’ প্রতিশ্রুতি দিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী। আর তিনি বলেন, বাংলাদেশের মানুষের জীবনকে ‘সুন্দর করতে’ যা যা করতে হয়, তার সবই আওয়ামী লীগ সরকার ‘করে দিচ্ছে’।

বুধবার, ০৩ নভেম্বর ২০২১ , ১৮ কার্তিক ১৪২৮ ২৬ রবিউল আউয়াল ১৪৪৩

বিএনপি কী চায় প্রশ্ন প্রধানমন্ত্রীর

স্কটল্যান্ডের গ্লাসগো থেকে সালাম জুবায়ের

image

বিএনপি কেন সরকারের বিরুদ্ধে আন্দোলনের কথা বলে, যখন দলটির দন্ডিত চেয়ারপারসন খালেদা জিয়াকে সাময়িক মুক্তি দিয়ে ‘উন্নত চিকিৎসার সুযোগ’ করে দেয়া হয়েছে, এই প্রশ্ন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার।

‘যে আমাকে হত্যার চেষ্টা করেছে, তাকে আমি এই সুযোগও দিয়েছি। আর কী চায় তারা? তারপরও কিসের ডেমোস্ট্রেশন?’ এই প্রশ্ন ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ প্রধান শেখ হাসিনার।

ভিডিও কনফারেন্সের মাধ্যমে স্কটল্যান্ডের গ্লাসগোতে সোমবার প্রবাসী বাংলাদেশিদের এক নাগরিক সংবর্ধনায় কথা বলছিলেন তিনি। বিশ্ব জলবায়ু সম্মেলন উপলক্ষে সেখানে আছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।

প্রবাসীদের উদ্দেশ্যে তিনি বলেন, ‘আজকে আমি শুনলাম আমার বিরুদ্ধে অনেক ডেমোনেস্ট্রেশন হচ্ছে। আমার প্রশ্ন আমি অন্যায়টা কী করেছি? আমি বাংলাদেশের উন্নতি করেছি, দারিদ্র্যের হার কমিয়েছি, বাংলাদেশের মানুষকে খাদ্যে স্বয়ংসম্পূর্ণ করেছি।’

দুর্নীতি মামলায় খালেদা জিয়া দোষী সাব্যস্ত হয়েছেন, ছিলেন কারাগারে, একথা উল্লেখ করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘যেহেতু সে অসুস্থ, তাকে আমরা তার বাসায় থাকতে দিয়েছি এবং তার উন্নত চিকিৎসার ব্যবস্থা করা হয়েছে। কই জেলখানায় এই রকম কখনও তো কাউকে সুযোগ দেয়া হয় না। এমনকি তিনি মেইড সার্ভেন্টও নিয়ে গেছেন। কারাগারে মেইউ সার্ভেন্ট পাওয়া যায়- এটা কখনও শুনেছেন আপনারা?’

খালেদা জিয়ার বড় ছেলে এবং বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান যাবজ্জীবন সাজায় দন্ডিত কিন্তু পালিয়ে আছেন লন্ডনে, একথা উল্লেখ করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, তিনি শুধু অনলাইনে যোগাযোগ করে দেশে আন্দোলন করতে বলে।

তারেকের সাহস থাকলে দেশে ফেরা উচিত বলে মন্তব্য করে শেখ হাসিনা বলেন, ‘এত ভয় কিসের? দেশে যায় না কেন?’

‘আমার বিরুদ্ধে যখন মামলা দিয়েছে আমি তো জোর করে দেশে গিয়েছি,’ ২০০৭-২০০৮ এর সামরিক নেতাদের সমর্থিত জরুরি সরকারের সময়ের প্রসঙ্গ টেনে বলেন শেখ হাসিনা।

আর তারেক প্রসঙ্গে বলেন, ‘তো দেশে চলে আসুক যদি সাহস থাকে। আর রাজনীতি করতে হলে সাহস দেখাতে হবে। পালিয়ে থেকে খালি বোমা মেরে, আগুন দিয়ে, আর ডেমোনস্ট্রেশন দিয়ে তো চলবে না।’

দেশে সাক্ষরতার হার বাড়ছে, মানুষ শিক্ষিত হচ্ছে, একথা জানিয়ে শেখ হাসিনার মন্তব্য তা বিএনপির ‘পছন্দ না’। কারণ তিনি বলেন, ‘অবশ্য সেটা পছন্দ নাই হতে পারে। কারণ খালেদা জিয়া মেট্রিক পাস করেনি। জিয়াউর রহমান কেবলই ইন্টারমিডিয়েট পাস ছিল। আর তারেক জিয়া তো ফেল করতে করতে এখন নাকি অখ্যাত কোথা থেকে পাস করেছে বলে শোনা যায়।’

বিএনপি-জামায়াত দেশকে পিছিয়ে নিতে চায় মন্তব্য করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘বাংলাদেশ আর দরিদ্র থাকবে না, আর পেছাবে না। এরা চাচ্ছে বাংলাদেশ পিছিয়ে যাক। কারণ আমি থাকলে ডেভেলপমেন্ট হবে এবং আমি না থাকলে এগুলো স্থবির হয়ে যাবে। আর ওদের মত চোর-চোট্টারা যদি ক্ষমতায় আসে তো বাংলাদেশ রসাতলে যাবে।’

তবে শেখ হাসিনা প্রবাসীদের বলেন, তিনি তার মতো কাজ করে যাবেন। ‘ওরা বলে যাবে, আন্দোলন করে যাবে, আমি আমার ডেভেলপমেন্ট করে যাব, আমি আমার উন্নয়ন করে যাব। কারণ আমরা আন্দোলন করেই এখানে এসেছি। আর খালেদা জিয়া ভোট চুরি করেছিল বলে আন্দোলন করে তাকে আমরা ক্ষমতা থেকে উৎখাত করেছিলাম।’

নির্বাচন নিয়ে প্রশ্ন তুলে বিএনপি, আর প্রধানমন্ত্রীর প্রশ্ন ‘বিএনপিকে মানুষ কেন ভোট দেবে?’

‘আমার কথা হচ্ছে তারা ভোটটা পাবে কোত্থেকে, যেখানে নেতৃত্বশূন্যতা রয়েছে? নেতৃত্বে সাজাপ্রাপ্ত আসামি, পতালক আসামি। সেই নেতৃত্বকে কি জনগণ ভোট দেবে? আপনারা বলেন, কোন আশায় দেবে?’ এই প্রশ্ন ছুড়ে দিলেন একাধারে ১২ বছরের বেশি ক্ষমতায় থাকা প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।

তিনি প্রবাসীদের মনে করিয়ে দিলেন, বিএনপির শাসনকালে টিআইয়ের দুর্নীতির সূচকে চার বার বাংলাদেশের শীর্ষে থাকার কথা, আর বললেন, ‘এমন কোন জায়গা নেই যেখানে তারা অর্থ বানায়নি। আজকে যদি চুরি করে এই অর্থ না বানাত, তাহলে নিশ্চয় লন্ডনে এত বিলাসী জীবনযাপন করতে পারত না। এত শান শওকতে থাকতে পারত না, এত টাকাও খরচ করতে পারত না।

‘চুরি করে টাকা পাচার করেছে এটা আমার কথা না। আমেরিকার গোয়েন্দা সংস্থা এফবিআইয়ের তদন্তে সেটা বের হয়েছে। তারা আন্দোলন করে আমার বিরুদ্ধে, কেন? সেটা আমার প্রশ্ন।’

শেখ হাসিনা বলেন, ‘আমার অপরাধটা কী? বাংলাদেশের উন্নতি করেছি এটাই তো তাদের কাছে অপরাধ? তাহলে এর অর্থটা কী দাঁড়ায়? এরা স্বাধীনতা চায় না, বাংলাদেশের উন্নতিটা চায় না। বাংলাদেশের মানুষের ভাগ্য ফিরুক সেটা চায় না।

‘কিন্তু আমি আপনাদের কথা দিচ্ছি, বাংলাদেশের একটি মানুষও গৃহহারা থাকবে না,’ প্রতিশ্রুতি দিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী। আর তিনি বলেন, বাংলাদেশের মানুষের জীবনকে ‘সুন্দর করতে’ যা যা করতে হয়, তার সবই আওয়ামী লীগ সরকার ‘করে দিচ্ছে’।