জেলহত্যা দিবস আজ

৪৬ বছরেও দন্ডিত আসামিদের গ্রেপ্তার করা যায়নি

জাতির জনক বঙ্গবন্ধুকে সপরিবারে হত্যার আড়াই মাস পর জাতীয় ৪ নেতাকে জেলখানায় প্রবেশ করে নির্মমভাবে হত্যা করা হয়। যা জেলহত্যা হিসেবে পরিচিত। নিরাপদ জেলখানায় বঙ্গবন্ধু সরকারের ৪ নেতাকে হত্যার ৪৬ বছর পার হলেও এখনও আসামিদের গ্রেপ্তার করে রায় কার্যকর করা সম্ভব হয়নি। দীর্ঘ প্রক্রিয়ার পর নারকীয় ওই হত্যাকান্ডের ঘটনায় দায়ের হওয়া মামলায় চূড়ান্ত রায়ে দন্ডিত ১০ জনের এখনও কোন হদিসই মেলেনি। তবে ২০১৫ সালে দন্ডপ্রাপ্ত এক আসামি কানাডায় মারা গেছে।

আজ জেলহত্যা দিবসের ৪৬ বছর পূর্তি হচ্ছে। নানা কর্মসূচির মধ্যদিয়ে দিবসটি পালন হলেও রায় কার্যকর না করতে পারার ব্যর্থতায় জাতীয় ৪ নেতার পরিবারে ক্ষোভের সঞ্চার রয়ে গেছে।

পুলিশ সদর দপ্তরের এনসিবি শাখার এআইজি মহিউল ইসলাম টেলিফোনে সংবাদকে জানান, জেলহত্যা মামলায় দন্ডপ্রাপ্ত আসামিদের পুলিশ সদর দপ্তরের ইন্টারপোল শাখা থেকে ৩ জনের নামে রেড নোটিশ জারি করেছিল। এর মধ্যে হাসেম কিসমত আলী কানাডায় ২০১৫ সালের ২৫ মার্চ মারা যায়। পরে সে রেড নোটিশ বাতিল করা হয়। অন্য দুজন হলেন শরফুল ইসলাম এবং আনসার আলী। এ দুজনের রেড নোটিশ জারি রয়েছে। আনসার আলীর অবস্থানও কানাডায় থাকলেও শরফুল হাসানের অবস্থান নিশ্চিত হওয়া যায়নি। তবে তার অবস্থান থাইল্যান্ড হতে পারে বলে সন্দেহ করা হচ্ছে।

জাতীয় ৪ নেতার একজন অস্থায়ী রাষ্ট্রপতি সৈয়দ নজরুল ইসলাম। তার ছেলে মেজর জেনারেল (অব.) সৈয়দ শাফায়েতুল ইসলাম আমাদের কিশোরগঞ্জ প্রতিনিধির সঙ্গে সাক্ষাতে বলেন, এরকম একটি জঘণ্য হত্যাকান্ডের পেছনে কেবল খন্দকার মুশতাক আর কিছু বিশ্বাসঘাতক সেনা সদস্যই নন, এর নেপথ্যে আরও কুশিলব জড়িত ছিলেন। তাদের অনেকেই আজ বেঁচে নেই। কিন্তু বিচার বিভাগীয় তদন্ত কমিশন করে এসব কুশিলবদের পরিচয় জাতির সামনে তুলে আনা দরকার, জাতিকে এই বিশ্বাসঘাতদের চেনানো দরকার।

তিনি জানান, বঙ্গবন্ধুকে হত্যার পর মুশতাক তার বাবার সঙ্গে ফোনে কথা বলতে চাইলেও তিনি মুশতাকের সঙ্গে কোন কথাই বলেননি। তার মা সৈয়দা নাফিসা ইসলামকে মুশতাক ফোনে জানিয়েছিলেন, সৈয়দ নজরুল যদি তার সঙ্গে থাকেন, তাহলে তার কোন বিপদ হবে না। মুশতাকের এসব কোন প্রস্তাবই তারা আমলে নেননি। ২৩ আগস্ট তার সৈয়দ নজরুলসহ চার নেতাকে গ্রেপ্তার করে কেন্দ্রীয় কারাগারে পাঠানো হয়।

শাফায়েতুল ইসলাম জানান, তিনি ওই সময় সামরিক বাহিনীতে শিক্ষানবিশ ক্যাডেট হিসেবে প্রশিক্ষণরত ছিলেন। বঙ্গবন্ধুর আগ্রহেই তিনি এবং শেখ জামাল একসঙ্গেই সেনাবাহিনীতে ঢুকেছিলেন। তিনি অক্টোবরের কোন একদিন মাসহ কারাগারে গিয়ে তার বাবার সঙ্গে দেখা করেছিলেন। তখনই তার বাবা বলেছিলেন, খন্দকার মুশতাক তাদের জীবিত রাখবেন না।

শাফায়েত জানান, বাবাকে হত্যার পর তারা পুরনো ঢাকায় মামার বাসায় গিয়ে উঠেছিলেন। সেখানে তাদের বহুদিন কেটেছে। তবে আওয়ামী লীগ ১৯৯৬ সালে সরকার গঠনের পর শাফায়েতুল ইসলাম প্রধানমন্ত্রীর সামরিক সচিব হিসেবে প্রায় সাড়ে ৪ বছর দায়িত্ব পালন করে মেজর জেনারেল হিসেবে অবসরে যান।

১৯৭৫ সালের ৩ নভেম্বর পুরান ঢাকার নাজিম উদ্দিন রোডে ঢাকা কেন্দ্রীয় কারাগারে আওয়ামী লীগের চারজন জাতীয় নেতা সাবেক উপরাষ্ট্রপতি সৈয়দ নজরুল ইসলাম, বঙ্গবন্ধু সরকারের প্রধানমন্ত্রী তাজউদ্দীন আহমদ, ক্যাপ্টেন মনসুর আলী এবং সাবেক স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আবুল হাসনাত মোহাম্মদ কামারুজ্জামানকে হত্যা করা হয়। হত্যার পর তাদের লাশ কারাগারেই পড়ে থাকে। জাতীয় ৪ নেতাকে হত্যার আগে ১৫ অ্যাগস্ট জাতির জনক বঙ্গবন্ধুকে সপরিবারে হত্যা করা হয়।

জেলখানায় নৃশংস ওই হত্যাযজ্ঞের পরদিন ৪ নভেম্বর তৎকালীন কারা উপমহাপরিদর্শক (ডিআইজি প্রিজন) কাজী আবদুল আউয়াল লালবাগ থানায় একটি হত্যা মামলা করেন। মামলায় সেনাবাহিনীর তৎকালীন রিসালদার মোসলেহ উদ্দিনের নাম উল্লেখ করে বলা হয় তার নেতৃত্বে চার-পাঁচজন সেনাসদস্য কারাগারে ঢুকে চার নেতাকে হত্যা করেন। ঘটনার পরদিন মামলা করা হলেও এই মামলার তদন্ত থেমে ছিল ২১ বছর।

হত্যাকান্ডের ২৩ বছর পর আওয়ামী লীগ নেতৃত্বাধীন সরকার ১৯৯৬ সালে ক্ষমতায় এলে বঙ্গবঙ্গু হত্যা মামলার সঙ্গে জেলহত্যা মামলাটি সচল করে। ১৯৯৮ সালের ১৫ অক্টোবর ২৩ জনের বিরুদ্ধে আদালতে অভিযোগপত্র দেয়া হয়। ২০০৪ সালের ২০ অক্টোবর ঢাকা মহানগর দায়রা জজ আদালত এ মামলার রায়ে আসামি তিনজনকে মৃত্যুদন্ড এবং ১২ জনকে যাবজ্জীবন কারাদন্ড দেন। মৃত্যুদন্ড প্রাপ্তরা হলেন রিসালদার মোসলেম উদ্দিন, দফাদার মারফত আলী শাহ ও দফাদার আবুল হাশেম মৃধা।

যাবজ্জীবন কারাদন্ড প্রাপ্তরা হলেন, খন্দকার আবদুর রশিদ, শরিফুল হক ডালিম, এমএইচএম বি নূর চৌধুরী, এএম রাশেদ চৌধুরী, আবদুল মাজেদ, আহমদ শরিফুল হোসেন, মো. কিসমত হোসেন, নাজমুল হোসেন আনসার, সৈয়দ ফারুক রহমান, শাহরিয়ার রশিদ, বজলুল হুদা ও একেএম মহিউদ্দিন। এই মামলায় সাবেক মন্ত্রী কে এম ওবায়দুর রহমান, শাহ মোয়াজ্জেম হোসেন, নুরুল ইসলাম মঞ্জুর ও তাহের উদ্দিন ঠাকুরকে খালাস দেয়া হয়।

আসামিদের মৃত্যু অনুমোদনের জন্য রায়সহ মামলার নথিপত্র ২০০৮ সালে হাইকোর্টে আসে। এছাড়া কারাগারে থাকা যাবজ্জীবন দন্ডিত চার আসামি সৈয়দ ফারুক রহমান, সুলতান শাহরিয়ার রশিদ খান, বজলুল হুদা ও এ কে এম মহিউদ্দিন আহমেদ (ল্যান্সার) আপিল করেন। ২০০৮ সালের ২৮ আগস্ট হাইকোর্ট রায় দেন। রায়ে মৃত্যুদন্ড প্রাপ্ত তিন আসামির মধ্যে রিসালদার মোসলেহ উদ্দিনের মৃত্যুদন্ড বহাল থাকে। মারফত আলী শাহ ও দফাদার আবুল হাশেম মৃধা মৃত্যুদন্ড থেকে খালাস পান। আপিলকারী চার দন্ডিত যাবজ্জীবন কারাদন্ড থেকে খালাস পান। যাবজ্জীবন দন্ডিত অপর আট আসামির যাবজ্জীবন কারাদন্ড বহাল থাকে। কিন্তু রাষ্ট্রপক্ষ হাইকোর্টের রায়ের বিরুদ্ধে আপিল করলে ২০১৩ সালের ১৫ এপ্রিল সুপ্রিম কোর্টের আপিল বিভাগ রায়ে ঢাকা মহানগর দায়রা জজ আদালতের দেয়া তিন জনের মৃত্যুদন্ড এবং ১২ জনের যাবজ্জীবন কারাদন্ড বহাল রাখে। ২০১৫ সালে চূড়ান্ত রায় প্রকাশ করা হয়।

জেলহত্যা মামলার ১০ জন আসামি এখনও পলাতক। তারা হলেন, মৃত্যুদন্ড প্রাপ্ত মোসলেম উদ্দিন, আপিল বিভাগের রায়ে মৃত্যুদন্ড মারফত আলী শাহ ও আবুল হাসেম মৃধা, যাবজ্জীবন কারাদন্ড প্রাপ্ত খন্দকার আবদুর রশিদ, শরিফুল হক ডালিম, এমএইচএম বি নূর চৌধুরী, এএম রাশেদ চৌধুরী, আহমদ শরিফুল হোসেন, ও নাজমুল হোসেন আনসার।

বুধবার, ০৩ নভেম্বর ২০২১ , ১৮ কার্তিক ১৪২৮ ২৬ রবিউল আউয়াল ১৪৪৩

জেলহত্যা দিবস আজ

৪৬ বছরেও দন্ডিত আসামিদের গ্রেপ্তার করা যায়নি

নিজস্ব বার্তা পরিবেশক

image

জাতির জনক বঙ্গবন্ধুকে সপরিবারে হত্যার আড়াই মাস পর জাতীয় ৪ নেতাকে জেলখানায় প্রবেশ করে নির্মমভাবে হত্যা করা হয়। যা জেলহত্যা হিসেবে পরিচিত। নিরাপদ জেলখানায় বঙ্গবন্ধু সরকারের ৪ নেতাকে হত্যার ৪৬ বছর পার হলেও এখনও আসামিদের গ্রেপ্তার করে রায় কার্যকর করা সম্ভব হয়নি। দীর্ঘ প্রক্রিয়ার পর নারকীয় ওই হত্যাকান্ডের ঘটনায় দায়ের হওয়া মামলায় চূড়ান্ত রায়ে দন্ডিত ১০ জনের এখনও কোন হদিসই মেলেনি। তবে ২০১৫ সালে দন্ডপ্রাপ্ত এক আসামি কানাডায় মারা গেছে।

আজ জেলহত্যা দিবসের ৪৬ বছর পূর্তি হচ্ছে। নানা কর্মসূচির মধ্যদিয়ে দিবসটি পালন হলেও রায় কার্যকর না করতে পারার ব্যর্থতায় জাতীয় ৪ নেতার পরিবারে ক্ষোভের সঞ্চার রয়ে গেছে।

পুলিশ সদর দপ্তরের এনসিবি শাখার এআইজি মহিউল ইসলাম টেলিফোনে সংবাদকে জানান, জেলহত্যা মামলায় দন্ডপ্রাপ্ত আসামিদের পুলিশ সদর দপ্তরের ইন্টারপোল শাখা থেকে ৩ জনের নামে রেড নোটিশ জারি করেছিল। এর মধ্যে হাসেম কিসমত আলী কানাডায় ২০১৫ সালের ২৫ মার্চ মারা যায়। পরে সে রেড নোটিশ বাতিল করা হয়। অন্য দুজন হলেন শরফুল ইসলাম এবং আনসার আলী। এ দুজনের রেড নোটিশ জারি রয়েছে। আনসার আলীর অবস্থানও কানাডায় থাকলেও শরফুল হাসানের অবস্থান নিশ্চিত হওয়া যায়নি। তবে তার অবস্থান থাইল্যান্ড হতে পারে বলে সন্দেহ করা হচ্ছে।

জাতীয় ৪ নেতার একজন অস্থায়ী রাষ্ট্রপতি সৈয়দ নজরুল ইসলাম। তার ছেলে মেজর জেনারেল (অব.) সৈয়দ শাফায়েতুল ইসলাম আমাদের কিশোরগঞ্জ প্রতিনিধির সঙ্গে সাক্ষাতে বলেন, এরকম একটি জঘণ্য হত্যাকান্ডের পেছনে কেবল খন্দকার মুশতাক আর কিছু বিশ্বাসঘাতক সেনা সদস্যই নন, এর নেপথ্যে আরও কুশিলব জড়িত ছিলেন। তাদের অনেকেই আজ বেঁচে নেই। কিন্তু বিচার বিভাগীয় তদন্ত কমিশন করে এসব কুশিলবদের পরিচয় জাতির সামনে তুলে আনা দরকার, জাতিকে এই বিশ্বাসঘাতদের চেনানো দরকার।

তিনি জানান, বঙ্গবন্ধুকে হত্যার পর মুশতাক তার বাবার সঙ্গে ফোনে কথা বলতে চাইলেও তিনি মুশতাকের সঙ্গে কোন কথাই বলেননি। তার মা সৈয়দা নাফিসা ইসলামকে মুশতাক ফোনে জানিয়েছিলেন, সৈয়দ নজরুল যদি তার সঙ্গে থাকেন, তাহলে তার কোন বিপদ হবে না। মুশতাকের এসব কোন প্রস্তাবই তারা আমলে নেননি। ২৩ আগস্ট তার সৈয়দ নজরুলসহ চার নেতাকে গ্রেপ্তার করে কেন্দ্রীয় কারাগারে পাঠানো হয়।

শাফায়েতুল ইসলাম জানান, তিনি ওই সময় সামরিক বাহিনীতে শিক্ষানবিশ ক্যাডেট হিসেবে প্রশিক্ষণরত ছিলেন। বঙ্গবন্ধুর আগ্রহেই তিনি এবং শেখ জামাল একসঙ্গেই সেনাবাহিনীতে ঢুকেছিলেন। তিনি অক্টোবরের কোন একদিন মাসহ কারাগারে গিয়ে তার বাবার সঙ্গে দেখা করেছিলেন। তখনই তার বাবা বলেছিলেন, খন্দকার মুশতাক তাদের জীবিত রাখবেন না।

শাফায়েত জানান, বাবাকে হত্যার পর তারা পুরনো ঢাকায় মামার বাসায় গিয়ে উঠেছিলেন। সেখানে তাদের বহুদিন কেটেছে। তবে আওয়ামী লীগ ১৯৯৬ সালে সরকার গঠনের পর শাফায়েতুল ইসলাম প্রধানমন্ত্রীর সামরিক সচিব হিসেবে প্রায় সাড়ে ৪ বছর দায়িত্ব পালন করে মেজর জেনারেল হিসেবে অবসরে যান।

১৯৭৫ সালের ৩ নভেম্বর পুরান ঢাকার নাজিম উদ্দিন রোডে ঢাকা কেন্দ্রীয় কারাগারে আওয়ামী লীগের চারজন জাতীয় নেতা সাবেক উপরাষ্ট্রপতি সৈয়দ নজরুল ইসলাম, বঙ্গবন্ধু সরকারের প্রধানমন্ত্রী তাজউদ্দীন আহমদ, ক্যাপ্টেন মনসুর আলী এবং সাবেক স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আবুল হাসনাত মোহাম্মদ কামারুজ্জামানকে হত্যা করা হয়। হত্যার পর তাদের লাশ কারাগারেই পড়ে থাকে। জাতীয় ৪ নেতাকে হত্যার আগে ১৫ অ্যাগস্ট জাতির জনক বঙ্গবন্ধুকে সপরিবারে হত্যা করা হয়।

জেলখানায় নৃশংস ওই হত্যাযজ্ঞের পরদিন ৪ নভেম্বর তৎকালীন কারা উপমহাপরিদর্শক (ডিআইজি প্রিজন) কাজী আবদুল আউয়াল লালবাগ থানায় একটি হত্যা মামলা করেন। মামলায় সেনাবাহিনীর তৎকালীন রিসালদার মোসলেহ উদ্দিনের নাম উল্লেখ করে বলা হয় তার নেতৃত্বে চার-পাঁচজন সেনাসদস্য কারাগারে ঢুকে চার নেতাকে হত্যা করেন। ঘটনার পরদিন মামলা করা হলেও এই মামলার তদন্ত থেমে ছিল ২১ বছর।

হত্যাকান্ডের ২৩ বছর পর আওয়ামী লীগ নেতৃত্বাধীন সরকার ১৯৯৬ সালে ক্ষমতায় এলে বঙ্গবঙ্গু হত্যা মামলার সঙ্গে জেলহত্যা মামলাটি সচল করে। ১৯৯৮ সালের ১৫ অক্টোবর ২৩ জনের বিরুদ্ধে আদালতে অভিযোগপত্র দেয়া হয়। ২০০৪ সালের ২০ অক্টোবর ঢাকা মহানগর দায়রা জজ আদালত এ মামলার রায়ে আসামি তিনজনকে মৃত্যুদন্ড এবং ১২ জনকে যাবজ্জীবন কারাদন্ড দেন। মৃত্যুদন্ড প্রাপ্তরা হলেন রিসালদার মোসলেম উদ্দিন, দফাদার মারফত আলী শাহ ও দফাদার আবুল হাশেম মৃধা।

যাবজ্জীবন কারাদন্ড প্রাপ্তরা হলেন, খন্দকার আবদুর রশিদ, শরিফুল হক ডালিম, এমএইচএম বি নূর চৌধুরী, এএম রাশেদ চৌধুরী, আবদুল মাজেদ, আহমদ শরিফুল হোসেন, মো. কিসমত হোসেন, নাজমুল হোসেন আনসার, সৈয়দ ফারুক রহমান, শাহরিয়ার রশিদ, বজলুল হুদা ও একেএম মহিউদ্দিন। এই মামলায় সাবেক মন্ত্রী কে এম ওবায়দুর রহমান, শাহ মোয়াজ্জেম হোসেন, নুরুল ইসলাম মঞ্জুর ও তাহের উদ্দিন ঠাকুরকে খালাস দেয়া হয়।

আসামিদের মৃত্যু অনুমোদনের জন্য রায়সহ মামলার নথিপত্র ২০০৮ সালে হাইকোর্টে আসে। এছাড়া কারাগারে থাকা যাবজ্জীবন দন্ডিত চার আসামি সৈয়দ ফারুক রহমান, সুলতান শাহরিয়ার রশিদ খান, বজলুল হুদা ও এ কে এম মহিউদ্দিন আহমেদ (ল্যান্সার) আপিল করেন। ২০০৮ সালের ২৮ আগস্ট হাইকোর্ট রায় দেন। রায়ে মৃত্যুদন্ড প্রাপ্ত তিন আসামির মধ্যে রিসালদার মোসলেহ উদ্দিনের মৃত্যুদন্ড বহাল থাকে। মারফত আলী শাহ ও দফাদার আবুল হাশেম মৃধা মৃত্যুদন্ড থেকে খালাস পান। আপিলকারী চার দন্ডিত যাবজ্জীবন কারাদন্ড থেকে খালাস পান। যাবজ্জীবন দন্ডিত অপর আট আসামির যাবজ্জীবন কারাদন্ড বহাল থাকে। কিন্তু রাষ্ট্রপক্ষ হাইকোর্টের রায়ের বিরুদ্ধে আপিল করলে ২০১৩ সালের ১৫ এপ্রিল সুপ্রিম কোর্টের আপিল বিভাগ রায়ে ঢাকা মহানগর দায়রা জজ আদালতের দেয়া তিন জনের মৃত্যুদন্ড এবং ১২ জনের যাবজ্জীবন কারাদন্ড বহাল রাখে। ২০১৫ সালে চূড়ান্ত রায় প্রকাশ করা হয়।

জেলহত্যা মামলার ১০ জন আসামি এখনও পলাতক। তারা হলেন, মৃত্যুদন্ড প্রাপ্ত মোসলেম উদ্দিন, আপিল বিভাগের রায়ে মৃত্যুদন্ড মারফত আলী শাহ ও আবুল হাসেম মৃধা, যাবজ্জীবন কারাদন্ড প্রাপ্ত খন্দকার আবদুর রশিদ, শরিফুল হক ডালিম, এমএইচএম বি নূর চৌধুরী, এএম রাশেদ চৌধুরী, আহমদ শরিফুল হোসেন, ও নাজমুল হোসেন আনসার।