কুমিল্লায় দুই নারীকে হত্যার পর সিরিয়াল কিলার মুন্না গ্রেপ্তার

নারীদের প্রেমের ফাঁদে ফেলে টাকা হাতিয়ে নিতো মুন্না (২৩)। পরে বিয়ের প্রলোভনে তাদের ডেকে নিয়ে প্রথমে ধর্ষণ এবং পরে গলায় ওড়না পেঁচিয়ে শ্বাসরোধে হত্যা, অতপর বস্তায় ভরে লাশ ফেলে দিতো মহাসড়কের পাশে বা জঙ্গলে। মাত্র দেড় মাসের মধ্যে একইভাবে প্রেম, ধর্ষণ ও হত্যা করেছে দুজন নারীকে। পুলিশ ব্যুরো অব ইনভেস্টিগেশন-পিবিআই বলছে, মুন্না নামের এই সিরিয়াল কিলারের টার্গেট ছিল আরও কয়েকজন সুন্দরী নারী।

সে কখনও গাড়ির হেলপার, কখনও বেকারির কারিগর। কিন্তু নারীদের কাছে ভিন্ন পরিচয়ে সম্পর্ক সৃষ্টি করে মোটা অঙ্কের টাকা হাতিয়ে নিত। ঘাতক মুন্নার পুরো নাম আবদুল্লাহ আনসারী ওরফে মুন্না। সে কুমিল্লার দাউদকান্দি উপজেলার বারকোটা গ্রামের শহিদ উল্লাহ ভূইয়ার ছেলে। ছোটবেলা থেকেই মুন্না নানা অপকর্মে জড়িয়ে যায়।

পুলিশ বলছে, প্রেমের সম্পর্ক করে ধর্ষণ ও হত্যা নেশায় পরিণত হচ্ছিল তার। সে একজন সিরিয়াল কিলার। এ দু’জন ছাড়া আর কাউকে এভাবে হত্যা করেছে কি-না আমরা সব স্থানে তা যাচাই করে দেখছি।

এরই মধ্যে মুন্নার হাতে দুই নারী খুন হওয়ার রহস্য উন্মোচন করেছে পিবিআই। দুটো হত্যার ঘটনাই ছিল একেবারেই ক্লু-লেস। গতকাল পিবিআই কুমিল্লার পক্ষ থেকে দেয়া এক প্রেস বিজ্ঞপ্তিতে এসব তথ্য জানান পিবিআই কুমিল্লার পুলিশ সুপার মো. মিজানুর রহমান।

পিবিআই সূত্রে জানা যায়, হত্যাকান্ডের শিকার নারীরা হলেন জেলার দাউদকান্দির বানিয়াপাড়া গ্রামের আমির হোসেনের মেয়ে পান্না আক্তার (২৮) ও কুমিল্লা সদর উপজেলার আমতলী গ্রামের সফিকুল ইসলামের মেয়ে লাইলী বেগম রিমা (২৬)। এদের মধ্যে দুই সন্তানের জননী পান্না আক্তারকে গত ২৪ অক্টোবর হত্যা করা হয় এবং এক সন্তানের জননী লাইলীকে গত ২ সেপ্টেম্বর হত্যা করা হয়। অভিযোগ পেয়ে তদন্ত শুরু করে পিবিআই।

তথ্য-প্রযুক্তির সহায়তায় একটি হত্যা মামলায় মুন্নাকে গ্রেপ্তারের পর তার কাছ থেকে অপর হত্যাকান্ডের তথ্য পায় পিবিআই। মুন্নার সহযোগী দ্বীন ইসলাম দ্বীনু (১৯) মাইক্রোবাস চালক। তার গাড়িতে করেই ওই নারীদের লাশগুলো ফেলা হয়েছে। তাকেও গ্রেপ্তার করেছে পিবিআই। দ্বীনু কুমিল্লা সদরের দুর্গাপুর গ্রামের মোস্তফা মিয়ার ছেলে।

পুলিশ সুপার মো. মিজানুর রহমান বলেন, পান্না আক্তারের হত্যার ঘটনায় গত ২৫ অক্টোবর সদর দক্ষিণ থানায় অজ্ঞাতনামা আসামিদের বিরুদ্ধে হত্যা মামলা দায়ের করার পর আমরা মামলাটির ছায়া তদন্ত শুরু করি। পরবর্তীতে পিবিআই প্রধান ডিআইজি বনজ কুমার মজুমদারের নির্দেশনায় মামলাটি তদন্তের উদ্যোগ গ্রহণ করি। তথ্য-প্রযুক্তির সহায়তায় গত ৩১ অক্টোবর নগরীর রেইসকোর্স এলাকা থেকে সিরিয়াল কিলার মুন্নাকে গ্রেপ্তার করি। তার দেয়া তথ্যমতে ওইদিন রাতে তার সহযোগী দ্বীনুকে গ্রেপ্তার করা হয়।

প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে তারা দু’জনই হত্যাকান্ডের কথা স্বীকার করেছে। এরপর আমরা মুন্নার মোবাইল নম্বরের সঙ্গে লাইলী বেগম রিমার মোবাইল নম্বরের যোগসূত্র খুঁজে পাই। লাইলীর পরিবার তার নিখোঁজের ঘটনায় একটি অপহরণ মামলা করেছিল আদালতে, সেটিও আমরা তদন্ত করছি। কয়েক দফা জিজ্ঞাসাবাদে মুন্না দুটো হত্যাকান্ডের কথাই স্বীকার করেছে। উভয়ে গত সোমবার বিকেলে আদালতে স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি দেয়ার পর জেলহাজতে প্রেরণ করা হয়। সিরিয়াল কিলার প্রসঙ্গে পুলিশ সুপার বলেন, মুন্না মেয়েদের সঙ্গে প্রেমের সম্পর্ক তৈরি করে ধর্ষণ এবং পরে হত্যা নেশায় পরিণত হচ্ছিল। সে একজন সিরিয়াল কিলার।

এ দু’জন ছাড়া আর কাউকে এভাবে হত্যা করেছে কি-না আমরা সব স্থানে তা যাচাই করে দেখছি। তাকে গ্রেপ্তার করতে না পারলে কিছুদিনের মধ্যে হয়তো আরও কয়েকটি হত্যাকান্ড ঘটাতো। তার সঙ্গে আরও অন্তত তিনজন নারীর একইভাবে প্রেমের সম্পর্ক গড়ে উঠার প্রমাণ পাওয়া গেছে। যারা ছিল মুন্নার পরবর্তী টার্গেট। কিন্তু পিবিআই তাকে গ্রেপ্তারের পর ওই নারীরা রক্ষা পেয়েছেন।

পুলিশ সুপার আরও বলেন, প্রায় ২০ বছর আগে মুন্নার মা ঝর্ণা বেগম মারা যান। বাবার সঙ্গে তার সম্পর্ক নেই। ছোটবেলা থেকেই মুন্না কুমিল্লা নগরীর বিভিন্ন মানুষের আশ্রয়ে বড় হয়েছে। কুমিল্লা নগরীর পুলিশ লাইন এলাকায় একটি ফাস্টফুড দোকানের কর্মচারী হিসেবে কাজ করতো। জিজ্ঞাসাবাদে মুন্না জানিয়েছে ওই নারীদের সঙ্গে প্রথমে মোবাইলে প্রেমের সম্পর্ক করে।

পরে তাদের বিয়ের প্রলোভনে ডেকে এনে প্রথম ধর্ষণ এবং পরে গলায় ওড়না পেঁচিয়ে শ্বাসরোধে হত্যার পর বস্তায় ভরে লাশ ফেলে দিতেন মহাসড়কের পাশে। দ্বীনুর মাইক্রোবাসে করে পান্নার লাশ ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়কের পাশে কুমিল্লার সদর দক্ষিণ থানার গোপিনাথপুর এলাকায় ফেলে দেয়া এবং লাইলীর লাশ ফেনী সদরের শর্শদী এলাকায় ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়কের পাশে জঙ্গলে ফেলে দেয়া হয়। লাশ উদ্ধারের ঘটনায় ফেনী সদর থানায় অজ্ঞাতনামা আসামিদের বিরুদ্ধে একটি হত্যা মামলা করেছিল পুলিশ।

বুধবার, ০৩ নভেম্বর ২০২১ , ১৮ কার্তিক ১৪২৮ ২৬ রবিউল আউয়াল ১৪৪৩

কুমিল্লায় দুই নারীকে হত্যার পর সিরিয়াল কিলার মুন্না গ্রেপ্তার

জেলা বার্তা পরিবেশক, কুমিল্লা

নারীদের প্রেমের ফাঁদে ফেলে টাকা হাতিয়ে নিতো মুন্না (২৩)। পরে বিয়ের প্রলোভনে তাদের ডেকে নিয়ে প্রথমে ধর্ষণ এবং পরে গলায় ওড়না পেঁচিয়ে শ্বাসরোধে হত্যা, অতপর বস্তায় ভরে লাশ ফেলে দিতো মহাসড়কের পাশে বা জঙ্গলে। মাত্র দেড় মাসের মধ্যে একইভাবে প্রেম, ধর্ষণ ও হত্যা করেছে দুজন নারীকে। পুলিশ ব্যুরো অব ইনভেস্টিগেশন-পিবিআই বলছে, মুন্না নামের এই সিরিয়াল কিলারের টার্গেট ছিল আরও কয়েকজন সুন্দরী নারী।

সে কখনও গাড়ির হেলপার, কখনও বেকারির কারিগর। কিন্তু নারীদের কাছে ভিন্ন পরিচয়ে সম্পর্ক সৃষ্টি করে মোটা অঙ্কের টাকা হাতিয়ে নিত। ঘাতক মুন্নার পুরো নাম আবদুল্লাহ আনসারী ওরফে মুন্না। সে কুমিল্লার দাউদকান্দি উপজেলার বারকোটা গ্রামের শহিদ উল্লাহ ভূইয়ার ছেলে। ছোটবেলা থেকেই মুন্না নানা অপকর্মে জড়িয়ে যায়।

পুলিশ বলছে, প্রেমের সম্পর্ক করে ধর্ষণ ও হত্যা নেশায় পরিণত হচ্ছিল তার। সে একজন সিরিয়াল কিলার। এ দু’জন ছাড়া আর কাউকে এভাবে হত্যা করেছে কি-না আমরা সব স্থানে তা যাচাই করে দেখছি।

এরই মধ্যে মুন্নার হাতে দুই নারী খুন হওয়ার রহস্য উন্মোচন করেছে পিবিআই। দুটো হত্যার ঘটনাই ছিল একেবারেই ক্লু-লেস। গতকাল পিবিআই কুমিল্লার পক্ষ থেকে দেয়া এক প্রেস বিজ্ঞপ্তিতে এসব তথ্য জানান পিবিআই কুমিল্লার পুলিশ সুপার মো. মিজানুর রহমান।

পিবিআই সূত্রে জানা যায়, হত্যাকান্ডের শিকার নারীরা হলেন জেলার দাউদকান্দির বানিয়াপাড়া গ্রামের আমির হোসেনের মেয়ে পান্না আক্তার (২৮) ও কুমিল্লা সদর উপজেলার আমতলী গ্রামের সফিকুল ইসলামের মেয়ে লাইলী বেগম রিমা (২৬)। এদের মধ্যে দুই সন্তানের জননী পান্না আক্তারকে গত ২৪ অক্টোবর হত্যা করা হয় এবং এক সন্তানের জননী লাইলীকে গত ২ সেপ্টেম্বর হত্যা করা হয়। অভিযোগ পেয়ে তদন্ত শুরু করে পিবিআই।

তথ্য-প্রযুক্তির সহায়তায় একটি হত্যা মামলায় মুন্নাকে গ্রেপ্তারের পর তার কাছ থেকে অপর হত্যাকান্ডের তথ্য পায় পিবিআই। মুন্নার সহযোগী দ্বীন ইসলাম দ্বীনু (১৯) মাইক্রোবাস চালক। তার গাড়িতে করেই ওই নারীদের লাশগুলো ফেলা হয়েছে। তাকেও গ্রেপ্তার করেছে পিবিআই। দ্বীনু কুমিল্লা সদরের দুর্গাপুর গ্রামের মোস্তফা মিয়ার ছেলে।

পুলিশ সুপার মো. মিজানুর রহমান বলেন, পান্না আক্তারের হত্যার ঘটনায় গত ২৫ অক্টোবর সদর দক্ষিণ থানায় অজ্ঞাতনামা আসামিদের বিরুদ্ধে হত্যা মামলা দায়ের করার পর আমরা মামলাটির ছায়া তদন্ত শুরু করি। পরবর্তীতে পিবিআই প্রধান ডিআইজি বনজ কুমার মজুমদারের নির্দেশনায় মামলাটি তদন্তের উদ্যোগ গ্রহণ করি। তথ্য-প্রযুক্তির সহায়তায় গত ৩১ অক্টোবর নগরীর রেইসকোর্স এলাকা থেকে সিরিয়াল কিলার মুন্নাকে গ্রেপ্তার করি। তার দেয়া তথ্যমতে ওইদিন রাতে তার সহযোগী দ্বীনুকে গ্রেপ্তার করা হয়।

প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে তারা দু’জনই হত্যাকান্ডের কথা স্বীকার করেছে। এরপর আমরা মুন্নার মোবাইল নম্বরের সঙ্গে লাইলী বেগম রিমার মোবাইল নম্বরের যোগসূত্র খুঁজে পাই। লাইলীর পরিবার তার নিখোঁজের ঘটনায় একটি অপহরণ মামলা করেছিল আদালতে, সেটিও আমরা তদন্ত করছি। কয়েক দফা জিজ্ঞাসাবাদে মুন্না দুটো হত্যাকান্ডের কথাই স্বীকার করেছে। উভয়ে গত সোমবার বিকেলে আদালতে স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি দেয়ার পর জেলহাজতে প্রেরণ করা হয়। সিরিয়াল কিলার প্রসঙ্গে পুলিশ সুপার বলেন, মুন্না মেয়েদের সঙ্গে প্রেমের সম্পর্ক তৈরি করে ধর্ষণ এবং পরে হত্যা নেশায় পরিণত হচ্ছিল। সে একজন সিরিয়াল কিলার।

এ দু’জন ছাড়া আর কাউকে এভাবে হত্যা করেছে কি-না আমরা সব স্থানে তা যাচাই করে দেখছি। তাকে গ্রেপ্তার করতে না পারলে কিছুদিনের মধ্যে হয়তো আরও কয়েকটি হত্যাকান্ড ঘটাতো। তার সঙ্গে আরও অন্তত তিনজন নারীর একইভাবে প্রেমের সম্পর্ক গড়ে উঠার প্রমাণ পাওয়া গেছে। যারা ছিল মুন্নার পরবর্তী টার্গেট। কিন্তু পিবিআই তাকে গ্রেপ্তারের পর ওই নারীরা রক্ষা পেয়েছেন।

পুলিশ সুপার আরও বলেন, প্রায় ২০ বছর আগে মুন্নার মা ঝর্ণা বেগম মারা যান। বাবার সঙ্গে তার সম্পর্ক নেই। ছোটবেলা থেকেই মুন্না কুমিল্লা নগরীর বিভিন্ন মানুষের আশ্রয়ে বড় হয়েছে। কুমিল্লা নগরীর পুলিশ লাইন এলাকায় একটি ফাস্টফুড দোকানের কর্মচারী হিসেবে কাজ করতো। জিজ্ঞাসাবাদে মুন্না জানিয়েছে ওই নারীদের সঙ্গে প্রথমে মোবাইলে প্রেমের সম্পর্ক করে।

পরে তাদের বিয়ের প্রলোভনে ডেকে এনে প্রথম ধর্ষণ এবং পরে গলায় ওড়না পেঁচিয়ে শ্বাসরোধে হত্যার পর বস্তায় ভরে লাশ ফেলে দিতেন মহাসড়কের পাশে। দ্বীনুর মাইক্রোবাসে করে পান্নার লাশ ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়কের পাশে কুমিল্লার সদর দক্ষিণ থানার গোপিনাথপুর এলাকায় ফেলে দেয়া এবং লাইলীর লাশ ফেনী সদরের শর্শদী এলাকায় ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়কের পাশে জঙ্গলে ফেলে দেয়া হয়। লাশ উদ্ধারের ঘটনায় ফেনী সদর থানায় অজ্ঞাতনামা আসামিদের বিরুদ্ধে একটি হত্যা মামলা করেছিল পুলিশ।