ধারাবাহিক উপন্যাস : বাইশ

শিকিবু

আবুল কাসেম

(পূর্ব প্রকাশের পর)

ঊনচল্লিশ.

ইঝোমি প্রিন্স অতসুমিচিকে কাছে পেয়ে বললেন, সম্রাটের সঙ্গে আপনার ভাব রয়েছে, কেন আপনি সুবিধাজনক কিছু অর্জন করতে পারছেন না।

আমি সুবিধাজনক অবস্থানে তো আছিই।

ভুল। অন্যদের সমান সুবিধায় থাকলে চলবে কেন?

দেখ, তুমি আমার পরলোকগত ভাই তামেতাকার কথা ভাবো। তার কোনো পদ ছিল না। সমাজ ছিল না, সম্রাটের প্রিন্সদের জন্য দেয়া নির্ধারিত ভাতা নিয়ে চলতো, আমি সেরকম না। কাজ তো করছি। যোগ্যতা নিয়েই চলছি।

যোগ্যতা নিয়ে আরো ওপরে ওঠে যাওয়া উচিত।

তুমি হাসালে আমাকে।

আপনি বললে আমি চেষ্টা করতে পারি।

কী করবে?

প্রয়োজনে ষড়যন্ত্র, আপনার জন্য আমি সব করতে পারি।

আমি জানি একসময় তোমার সম্রাটের প্রাসাদে আসা-যাওয়া ছিল। তোমার নানা, বাবা গভর্নর ছিলেন। বাবা এখন প্রাসাদে গুরুত্বপূর্ণ পদে।

আমার স্বামীও তো গভর্নর ছিলেন, সে কথা বলেননি কেন?

বলিনি কারণ তোমার মন খারাপ হবে।

আমার মন শুধু আপনার জন্যই খারাপ হয়। প্রাসাদে কি আবার যাওয়া আসা শুরু করবো?

এখন না। যখন প্রয়োজন হয় বলব। শুনেছি সামুরাই জেনারেলদের সঙ্গেও তোমার ভালো যোগাযোগ আছে।

আছে তো, সে শক্তিতেই তো আপনার জন্য কিছু করতে চাইছি। বলে হাসলেন ইঝোামি।

কথাটা প্রিন্সের ভালো লাগেনি। কিন্তু প্রতিক্রিয়াটা এখনই দেখালেন না। ভাবলেন লোকমুখে যা শুনছেন তাহলে তা সত্য?

ইঝোমি বললেন, পুরো সাম্রাজ্যে সামুরাইদের প্রভাব রয়েছে, না?

রয়েছে। তবে তোমার ওপর একটু বেশি। বলতে গিয়েও একথা বললেন না প্রিন্স। বললেন, তারা সাম্রাজ্যের কর্মচারী, মালিক না। মালিক আমরা।

ফুজিওয়ারা নতুন স্বামী প্রদেশে চলে যাওয়ায় কিছুটা হতোদ্যম শোনাগন। এক বিকেলে ভাবলেন প্রিন্সদের কেউ একজনকে বেছে নিলেই পারতেন এবং তা ভালো হতো। লোক দেখানো জাঁকজমকপূর্ণ প্রণয়বিলাসী বলে এরই মধ্যে সবার দৃষ্টি কেড়েছেন তিনি। তবে মুর্খরা বলে রাজপুরুষদের কেউ বা কোনো প্রিন্স এগিয়ে আসেননি। সম্রাজ্ঞী তেইশিও যে তার ওপর খুব খুশি তা কিন্তু নয়, লেখিকা হিসেবে স্বনামধন্য বলে সব সহ্য করে যান। তার এই ভাবমূর্তিটা লেখক সুনামকেও মাঝে-মধ্যে অতিক্রম করে যায়।

স্বামী প্রদেশে অবস্থান করায় আবার তার প্রণয়বিলাস বাগান বিলাসের মতো প্রাসাদে ডালপালা ছড়ায়, তবে তা অতি সাবধানে। বাবা দুটি প্রদেশে গভর্নর ছিলেন, প্রাসাদেও ছিলেন কিছু কাল, ঐ দিকটির প্রতি লক্ষ রাখতে হয়। মাঝে মধ্যে মনে হয় কবি এবং গভর্নর বাবার ভাবমূর্তির জন্য কি জীবন উপভোগ করা যাবে না? বাবা অবশ্য মারা গেছেন ষোলো বছর হয়ে গেছে।

শোনাগন সম্রাজ্ঞী শোশির দরবারে শুধু ইমনের ওখানে যান। ইমনকে পছন্দ করেন। তার কাছে নানা তদ্বিরও করেন। তবে তিনি জানেন এই দরবারের মূল নিয়ন্ত্রণ সম্রাজ্ঞী শোশি কিংবা অন্য কারো কাছে নয়, স্বয়ং প্রধানমন্ত্রী মিচিনাগার হাতে। আর মিচিনাগার প্রধান অপছন্দের মানুষ সম্রাজ্ঞী তেইশি এবং সেই শোনাগন।

তাই তাকে আরো সাবধানে পা ফেলতে হয়। তেইশির দুই চাচা শুভার্থীর আশীর্বাদে এরা এক সময় খুব ক্ষমতাশালী ছিলেন। মিচিনাগারা ছিলেন বড় বেকায়দায়। এখন ক্ষমতা তাদের হাতেই এবং শোনাগন বেকায়দায়। সম্রাটই ভরসা এদের। সম্রাটের মনোভাবে কোনো পরিবর্তন আসতে পারে এমন কাজ থেকেও দূরে থাকতে হয় তাদের। ইদানীং রাজমাতা সেনশিও যেন এদেরকে পছন্দ করছেন না।

তেইশি মাঝে মধ্যেই স্বপ্ন দেখেন, তিনি সম্রাটের মাতা হয়ে গেছেন। ভাবনার মধ্যেও যেন সেই সুখ। শোনাগনকে তা বলেনও, দেখো সেদিন খুব দূরে নয়, যখন আমরা পূর্ণ ক্ষমতার মালিক হবো। শোশি তাকাকুরা উড়ে যাবে। কোথায় যাবে বলতে পারছি না। প্রিন্স অতসুইয়াসু বেঁচে থাকলেই হয়। তার নিরপত্তার দিকে দৃষ্টি রাখো সবাই।

অনেক ভেবেচিন্তে মিচিনাগা গেছেন প্রাক্তন সম্রাট রেইঝেই এর প্রাসাদে। নিজের অস্তিত্ব রক্ষা করতে হলে আগেভাগেই ভেবে সব ঠিকঠাক করে রাখা বুদ্ধিমানের কাজ।

রেইঝেই তাকে দেখেই বুঝলেন কোনো না কোনো মতলবে এসেছে। মেঝেতে বসলেন দুজন পদ্মাসন করে।

তুমি কেমন আছো মিচিনাগা?

আছি, ভালো আছি মহামান্য সম্রাট।

আরে এখনো মহামান্য বলার কি আর প্রয়োজন আছে।

আপনি সবসময়ই মহামান্য।

এখন বল কি হেতু আগামন?

আপনাকে দেখতে এলাম, আশীর্বাদ নিতে এলাম। এ কথা বলে মিচিনাগা প্রাক্তন সম্রাটের কাছে চলে এলেন। অনুচ্চস্বরে বললেন, এখানে তো এরকম রীতি চালু আছে যে, সম্রাটপুত্র সম্রাট না হয়েও অন্য কোনো প্রিন্স যোগ্য বিবেচনায় সম্রাট হতে পারেন।

এরকম দৃষ্টান্ত তো আছে। কিন্তু কেন এ ভাবনা?

মানুষের জীবন মৃত্যু অনিশ্চিত। সম্রাট এখন মারা গেলে কে সম্রাট হবেন?

কেন, সম্রাট ইচিজোর তো পুত্র রয়েছে অতসুইয়াসু।

দুধের একটা শিশু তাকে সম্রাট মানতে হবে?

কেন? ইচিজো সম্রাট হবার সময় বয়স কত ছিল?

মিচিনাগা চুপ করে আছেন। তুমি না বললেও তার বয়স ছিল ছয়। বলে মজার হাসি হাসলেন রেইঝেই।

আমি মেনে নিতে পারবো না।

বল যে, সে সম্রাট হলে তোমাদের প্রাসাদে স্থান হবে না।

এত শক্ত কথা বললেন?

বাস্তবতা হচ্ছে তাই। যাক, তুমি কি বলতে চাও বল?

আপনার পুত্র সানজু হবে পরবর্তী সম্রাট। আপনি ব্যবস্থা নিন।

কী বলছ তুমি? তুমি ঠিক আছো? আসলে তা আগেই ঠিক করা আছে। মজা করছেন তিনি।

আমি ভেবে চিন্তেই বলেছি। কাজান সম্রাট ছিলেন। সিংহাসন ছেড়ে ছিলেন। ইচিজো সম্রাট হলেন। তখনই তার সম্রাট হওয়া উচিত ছিল।

নানা রকম হিসাব নিকাশ আছে মিচিনাগা। এখনই এসব নিয়ে ভাবতে যেও না।

না, সান। এখনই ভাবতে হবে। আপনি সদয় সম্মতি দিলে আমি প্রিন্স সানজুর সঙ্গে কথা বলব।

সে তো সম্রাট হবার যোগ্যতা রাখে না।

এটা কী বলছেন আপনি? গদিই তাকে যোগ্য করে তুলবে। আর আমরা আছি কী জন্য?

প্রিন্স অতসুমিচি হচ্ছে যোগ্য।

তার নানা দুর্নাম হয়ে গেছে। এছাড়া সে আপনার কনিষ্ঠপুত্র। সানজুকে তো আপনি স্নেহও করেন বেশি।

ব্যর্থ হলে ইতিহাসে লেখা হবে আমার অযোগ্য ছেলে সিংহাসন রক্ষা করতে পারেনি। এখন থাক এসব চিন্তা, তুমি পরে এ বিষয়ে কথা বলো।

মিচিনাগা চলে গেলেন। তবে হাল ছাড়লেন না। এছাড়া সবাই জানে মিচিনাগা যা একবার চান, তা করেই তবে ছাড়েন। একবার যখন মুখ থেকে বের হয়ে গেছে, তা হতেই হবে। যাবার কালে অনুনয় করে বলে গেলেন, ব্যাপারটা অত্যন্ত গোপনীয়, আমাদের মধ্যেই যেন সীমাবদ্ধ থাকে। নিশ্চয়ই, নিশ্চয়ই। বলে কৌতুকের হাসি হাসলেন।

ব্যাপারটা নিয়ে আসলেই চিন্তিত মিচিনাগা। প্রাক্তন সম্রাট রেইঝেন সম্মতি দিলে চিন্তামুক্ত থাকতে পারতেন। এ নিয়ে তিনি রেইঝেই-এর কথা বলেছেন, তা নিয়ে চিন্তা হচ্ছে না। কারণ প্রাক্তন সম্রাট রেইঝেই অত্যন্ত ব্যক্তিত্ববান মানুষ। কখনোই মুখ খুলবেন না।

মিচিনাগা চলে আসার পর প্রস্তাবটি নিয়ে খুব ভাবলেন রেইঝেই। সানজু বললে রাজী হয়ে যাবে। অতসুমিচি আসলেই দুর্নাম কুড়িয়ে ফেলেছে। এখনো আছে ওই মেয়েটির সঙ্গে সম্পর্কযুক্ত হয়ে। সব কথাই কানে আসে। অথচ এই মেয়েটিকে তামেতাকার কথা ভেবে প্রশ্রয় দিয়েছিলেন। স্নেহও করতেন। কিন্তু মেয়েটি তার বিশ্বাস নষ্ট করল। সম্রাট ইচিজোর পুত্র এখনো বেশ ছোট। প্রস্তাবটা ভেবে দেখাই বোধহয় ঠিক হবে। (ক্রমশ...)

বৃহস্পতিবার, ০৪ নভেম্বর ২০২১ , ১৯ কার্তিক ১৪২৮ ২৭ রবিউল আউয়াল ১৪৪৩

ধারাবাহিক উপন্যাস : বাইশ

শিকিবু

আবুল কাসেম

image

(পূর্ব প্রকাশের পর)

ঊনচল্লিশ.

ইঝোমি প্রিন্স অতসুমিচিকে কাছে পেয়ে বললেন, সম্রাটের সঙ্গে আপনার ভাব রয়েছে, কেন আপনি সুবিধাজনক কিছু অর্জন করতে পারছেন না।

আমি সুবিধাজনক অবস্থানে তো আছিই।

ভুল। অন্যদের সমান সুবিধায় থাকলে চলবে কেন?

দেখ, তুমি আমার পরলোকগত ভাই তামেতাকার কথা ভাবো। তার কোনো পদ ছিল না। সমাজ ছিল না, সম্রাটের প্রিন্সদের জন্য দেয়া নির্ধারিত ভাতা নিয়ে চলতো, আমি সেরকম না। কাজ তো করছি। যোগ্যতা নিয়েই চলছি।

যোগ্যতা নিয়ে আরো ওপরে ওঠে যাওয়া উচিত।

তুমি হাসালে আমাকে।

আপনি বললে আমি চেষ্টা করতে পারি।

কী করবে?

প্রয়োজনে ষড়যন্ত্র, আপনার জন্য আমি সব করতে পারি।

আমি জানি একসময় তোমার সম্রাটের প্রাসাদে আসা-যাওয়া ছিল। তোমার নানা, বাবা গভর্নর ছিলেন। বাবা এখন প্রাসাদে গুরুত্বপূর্ণ পদে।

আমার স্বামীও তো গভর্নর ছিলেন, সে কথা বলেননি কেন?

বলিনি কারণ তোমার মন খারাপ হবে।

আমার মন শুধু আপনার জন্যই খারাপ হয়। প্রাসাদে কি আবার যাওয়া আসা শুরু করবো?

এখন না। যখন প্রয়োজন হয় বলব। শুনেছি সামুরাই জেনারেলদের সঙ্গেও তোমার ভালো যোগাযোগ আছে।

আছে তো, সে শক্তিতেই তো আপনার জন্য কিছু করতে চাইছি। বলে হাসলেন ইঝোামি।

কথাটা প্রিন্সের ভালো লাগেনি। কিন্তু প্রতিক্রিয়াটা এখনই দেখালেন না। ভাবলেন লোকমুখে যা শুনছেন তাহলে তা সত্য?

ইঝোমি বললেন, পুরো সাম্রাজ্যে সামুরাইদের প্রভাব রয়েছে, না?

রয়েছে। তবে তোমার ওপর একটু বেশি। বলতে গিয়েও একথা বললেন না প্রিন্স। বললেন, তারা সাম্রাজ্যের কর্মচারী, মালিক না। মালিক আমরা।

ফুজিওয়ারা নতুন স্বামী প্রদেশে চলে যাওয়ায় কিছুটা হতোদ্যম শোনাগন। এক বিকেলে ভাবলেন প্রিন্সদের কেউ একজনকে বেছে নিলেই পারতেন এবং তা ভালো হতো। লোক দেখানো জাঁকজমকপূর্ণ প্রণয়বিলাসী বলে এরই মধ্যে সবার দৃষ্টি কেড়েছেন তিনি। তবে মুর্খরা বলে রাজপুরুষদের কেউ বা কোনো প্রিন্স এগিয়ে আসেননি। সম্রাজ্ঞী তেইশিও যে তার ওপর খুব খুশি তা কিন্তু নয়, লেখিকা হিসেবে স্বনামধন্য বলে সব সহ্য করে যান। তার এই ভাবমূর্তিটা লেখক সুনামকেও মাঝে-মধ্যে অতিক্রম করে যায়।

স্বামী প্রদেশে অবস্থান করায় আবার তার প্রণয়বিলাস বাগান বিলাসের মতো প্রাসাদে ডালপালা ছড়ায়, তবে তা অতি সাবধানে। বাবা দুটি প্রদেশে গভর্নর ছিলেন, প্রাসাদেও ছিলেন কিছু কাল, ঐ দিকটির প্রতি লক্ষ রাখতে হয়। মাঝে মধ্যে মনে হয় কবি এবং গভর্নর বাবার ভাবমূর্তির জন্য কি জীবন উপভোগ করা যাবে না? বাবা অবশ্য মারা গেছেন ষোলো বছর হয়ে গেছে।

শোনাগন সম্রাজ্ঞী শোশির দরবারে শুধু ইমনের ওখানে যান। ইমনকে পছন্দ করেন। তার কাছে নানা তদ্বিরও করেন। তবে তিনি জানেন এই দরবারের মূল নিয়ন্ত্রণ সম্রাজ্ঞী শোশি কিংবা অন্য কারো কাছে নয়, স্বয়ং প্রধানমন্ত্রী মিচিনাগার হাতে। আর মিচিনাগার প্রধান অপছন্দের মানুষ সম্রাজ্ঞী তেইশি এবং সেই শোনাগন।

তাই তাকে আরো সাবধানে পা ফেলতে হয়। তেইশির দুই চাচা শুভার্থীর আশীর্বাদে এরা এক সময় খুব ক্ষমতাশালী ছিলেন। মিচিনাগারা ছিলেন বড় বেকায়দায়। এখন ক্ষমতা তাদের হাতেই এবং শোনাগন বেকায়দায়। সম্রাটই ভরসা এদের। সম্রাটের মনোভাবে কোনো পরিবর্তন আসতে পারে এমন কাজ থেকেও দূরে থাকতে হয় তাদের। ইদানীং রাজমাতা সেনশিও যেন এদেরকে পছন্দ করছেন না।

তেইশি মাঝে মধ্যেই স্বপ্ন দেখেন, তিনি সম্রাটের মাতা হয়ে গেছেন। ভাবনার মধ্যেও যেন সেই সুখ। শোনাগনকে তা বলেনও, দেখো সেদিন খুব দূরে নয়, যখন আমরা পূর্ণ ক্ষমতার মালিক হবো। শোশি তাকাকুরা উড়ে যাবে। কোথায় যাবে বলতে পারছি না। প্রিন্স অতসুইয়াসু বেঁচে থাকলেই হয়। তার নিরপত্তার দিকে দৃষ্টি রাখো সবাই।

অনেক ভেবেচিন্তে মিচিনাগা গেছেন প্রাক্তন সম্রাট রেইঝেই এর প্রাসাদে। নিজের অস্তিত্ব রক্ষা করতে হলে আগেভাগেই ভেবে সব ঠিকঠাক করে রাখা বুদ্ধিমানের কাজ।

রেইঝেই তাকে দেখেই বুঝলেন কোনো না কোনো মতলবে এসেছে। মেঝেতে বসলেন দুজন পদ্মাসন করে।

তুমি কেমন আছো মিচিনাগা?

আছি, ভালো আছি মহামান্য সম্রাট।

আরে এখনো মহামান্য বলার কি আর প্রয়োজন আছে।

আপনি সবসময়ই মহামান্য।

এখন বল কি হেতু আগামন?

আপনাকে দেখতে এলাম, আশীর্বাদ নিতে এলাম। এ কথা বলে মিচিনাগা প্রাক্তন সম্রাটের কাছে চলে এলেন। অনুচ্চস্বরে বললেন, এখানে তো এরকম রীতি চালু আছে যে, সম্রাটপুত্র সম্রাট না হয়েও অন্য কোনো প্রিন্স যোগ্য বিবেচনায় সম্রাট হতে পারেন।

এরকম দৃষ্টান্ত তো আছে। কিন্তু কেন এ ভাবনা?

মানুষের জীবন মৃত্যু অনিশ্চিত। সম্রাট এখন মারা গেলে কে সম্রাট হবেন?

কেন, সম্রাট ইচিজোর তো পুত্র রয়েছে অতসুইয়াসু।

দুধের একটা শিশু তাকে সম্রাট মানতে হবে?

কেন? ইচিজো সম্রাট হবার সময় বয়স কত ছিল?

মিচিনাগা চুপ করে আছেন। তুমি না বললেও তার বয়স ছিল ছয়। বলে মজার হাসি হাসলেন রেইঝেই।

আমি মেনে নিতে পারবো না।

বল যে, সে সম্রাট হলে তোমাদের প্রাসাদে স্থান হবে না।

এত শক্ত কথা বললেন?

বাস্তবতা হচ্ছে তাই। যাক, তুমি কি বলতে চাও বল?

আপনার পুত্র সানজু হবে পরবর্তী সম্রাট। আপনি ব্যবস্থা নিন।

কী বলছ তুমি? তুমি ঠিক আছো? আসলে তা আগেই ঠিক করা আছে। মজা করছেন তিনি।

আমি ভেবে চিন্তেই বলেছি। কাজান সম্রাট ছিলেন। সিংহাসন ছেড়ে ছিলেন। ইচিজো সম্রাট হলেন। তখনই তার সম্রাট হওয়া উচিত ছিল।

নানা রকম হিসাব নিকাশ আছে মিচিনাগা। এখনই এসব নিয়ে ভাবতে যেও না।

না, সান। এখনই ভাবতে হবে। আপনি সদয় সম্মতি দিলে আমি প্রিন্স সানজুর সঙ্গে কথা বলব।

সে তো সম্রাট হবার যোগ্যতা রাখে না।

এটা কী বলছেন আপনি? গদিই তাকে যোগ্য করে তুলবে। আর আমরা আছি কী জন্য?

প্রিন্স অতসুমিচি হচ্ছে যোগ্য।

তার নানা দুর্নাম হয়ে গেছে। এছাড়া সে আপনার কনিষ্ঠপুত্র। সানজুকে তো আপনি স্নেহও করেন বেশি।

ব্যর্থ হলে ইতিহাসে লেখা হবে আমার অযোগ্য ছেলে সিংহাসন রক্ষা করতে পারেনি। এখন থাক এসব চিন্তা, তুমি পরে এ বিষয়ে কথা বলো।

মিচিনাগা চলে গেলেন। তবে হাল ছাড়লেন না। এছাড়া সবাই জানে মিচিনাগা যা একবার চান, তা করেই তবে ছাড়েন। একবার যখন মুখ থেকে বের হয়ে গেছে, তা হতেই হবে। যাবার কালে অনুনয় করে বলে গেলেন, ব্যাপারটা অত্যন্ত গোপনীয়, আমাদের মধ্যেই যেন সীমাবদ্ধ থাকে। নিশ্চয়ই, নিশ্চয়ই। বলে কৌতুকের হাসি হাসলেন।

ব্যাপারটা নিয়ে আসলেই চিন্তিত মিচিনাগা। প্রাক্তন সম্রাট রেইঝেন সম্মতি দিলে চিন্তামুক্ত থাকতে পারতেন। এ নিয়ে তিনি রেইঝেই-এর কথা বলেছেন, তা নিয়ে চিন্তা হচ্ছে না। কারণ প্রাক্তন সম্রাট রেইঝেই অত্যন্ত ব্যক্তিত্ববান মানুষ। কখনোই মুখ খুলবেন না।

মিচিনাগা চলে আসার পর প্রস্তাবটি নিয়ে খুব ভাবলেন রেইঝেই। সানজু বললে রাজী হয়ে যাবে। অতসুমিচি আসলেই দুর্নাম কুড়িয়ে ফেলেছে। এখনো আছে ওই মেয়েটির সঙ্গে সম্পর্কযুক্ত হয়ে। সব কথাই কানে আসে। অথচ এই মেয়েটিকে তামেতাকার কথা ভেবে প্রশ্রয় দিয়েছিলেন। স্নেহও করতেন। কিন্তু মেয়েটি তার বিশ্বাস নষ্ট করল। সম্রাট ইচিজোর পুত্র এখনো বেশ ছোট। প্রস্তাবটা ভেবে দেখাই বোধহয় ঠিক হবে। (ক্রমশ...)