খেয়াঘাটে টোলের নামে চাঁদা : নীরব প্রশাসন

ঢাকা-শরীয়তপুর নৌপথ

ঢাকা-শরীয়তপুর নৌপথে প্রায় ৬ বছর আগে টোল আদায় বন্ধের সিদ্ধান্ত নেয় নৌপরিবহন মন্ত্রণালয়। কিন্তু সেই সিদ্ধান্ত এখনো বাস্তবায়ন হয়নি। বরং যাত্রীদের কাছ থেকে কয়েক দফায় টোলের টাকা আদায় করা হচ্ছে। নৌ-পরিবহন মন্ত্রণালয়ের সিদ্ধান্ত অনুযায়ী লঞ্চঘাটের যাত্রীদের কাছ থেকে কোন টোল আদায় করা যাবে না। আর সেই নির্দেশনা উপেক্ষিত শরীয়তপুরের মঙ্গলমাঝি-ছাত্তার মাদবর লঞ্চঘাটে।

খেয়াঘাটের নামে লঞ্চযাত্রীদের কাছ থেকে চাঁদাবাজি করছে স্থানীয় প্রভাবশালী মহল। লঞ্চের পন্টুনে উঠতে খেয়াঘাটের নামে ১০ টাকা টোল এরপর বিআইডব্লিউটিএ’র লঞ্চ ভাড়ার সাথে নির্ধারিত টোল ৫ টাকা আদায় করা হচ্ছে। বিভিন্ন স্তরে টোল আদায়ে যাত্রী ভোগান্তি হলেও সমস্যা নিরসনে কোন উদ্যোগ নেই প্রশাসনের।

নৌ-পরিবহন মন্ত্রণালয়ের সভার কার্যবিরবণী সূত্রে জানা যায়, ২০১৫ সালের ১৬ মার্চ অনুষ্ঠিত সভার সিদ্ধান্ত অনুযায়ী জাজিরা উপজেলার মঙ্গলমাঝি লঞ্চঘাট অর্থাৎ পূর্ব নাওডোবা-মাওয়া আন্তঃজেলা খেয়াঘাট ইজারা না দিয়ে যাত্রী পারাপারে লঞ্চের টিকিটের সাথে ঘাটের টোল বাবদ যাত্রী প্রতি ২ টাকা হারে আদায় করে দৈনিক ভিত্তিতে লঞ্চ মালিক সমিতি বিআইডব্লিউটিএকে পরিশোধ করবে। আদায়কৃত অর্থের বাৎসরিক আয়ের ৩০ শতাংশ জাজিরা উপজেলা পরিষদকে প্রদান করবে।

জেলা প্রশাসক কার্যালয়ের রাজস্ব শাখা সূত্রে জানা যায়, শরীয়তপুর জেলার জাজিরা উপজেলার পূর্বনাওডোবা-মাওয়া আন্তঃজেলা খেয়াঘাট ভূমি মন্ত্রণালয়ের নীতিমালা অনুযায়ী প্রতি বছর ইজারা দেয়া হয়। বাংলা ১৪২৪ সনে সরকারি মূল্যে ইজারা দরপত্র দাখিলে কোন ব্যক্তি আগ্রহ প্রকাশ করেনি। ১৪২৮ সনে ৩৫ লাখ টাকায় ইজারা পান স্থানীয় আওয়ামী লীগ নেতা মনির খান। তার সাথে স্থানীয় যারা অংশিদার তারা প্রত্যেকেই প্রভাবশালী। আলতাফ খান, রাজ্জাক মাঝি, নেছার মাদবর, তুহিন ফরাজি, শামীম মোড়ল, মোসলেম মাদবর, মোকলেস মাদবর ও চুন্নু মাদবর। টোলের সেই অর্থ নেয়া হচ্ছে লঞ্চ যাত্রীদের কাছ থেকে। খেয়াঘাটের ইজারা নীতিমালা অনুযায়ী যাত্রী প্রতি ৫ টাকা নেয়ার কথা থাকলেও যাত্রী প্রতি কয়েক ধাপে নেয়া হচ্ছে বিভিন্ন অংকের অর্থ। অনিয়ম বন্ধে খেয়াঘাট ইজারা বর্হিভূত রাখার জন্য তৎকালিন জেলা প্রশাসক ভূমি মন্ত্রণালয় বরাবর চিঠি দেন। কিন্তু এখনও পর্যন্ত সেই চিঠির কোন উত্তর পায়নি জেলা প্রশাসন।

সরেজমিন মাঝিরঘাটে গিয়ে দেখা যায় পন্টুনে ওঠার আগেই বাঁশের ব্যারিকেড তৈরি করা হয়েছে। সেখানে যাত্রীদের সারিবদ্ধভাবে দাঁড়ানোর জন্য আদায়কারি চক্রের একজন যাত্রীদের সাথে উচ্চস্বরে চেচামেচি করে কথা বলছেন। এরপর যাত্রী প্রতি ১০ টাকা করে নেয়া হচ্ছে। যাদের সাথে মালামাল আছে তাদের একটু পাশে নিয়ে চলছে দর কষাকষি। চাহিদা মতো টাকা না দিলে করছে অপমান-অপদস্ত। এরপর গণমাধ্যমের উপস্থিতি টের পেয়ে শুরু হয় ৫ টাকা করে আদায়। সাথে রশিদও দেয়া হচ্ছে। রশিদে লেখা আছে লঞ্চ/ট্রলার পারাপারের ক্ষেত্রে। বাধ্য হয়েই সব মেনে নিয়ে লঞ্চে উঠছেন যাত্রীরা। সেখানেও আরেক ধাপ টোলের টাকা তা বৈধভাবেই লঞ্চ ভাড়ার সাথে দিতে হচ্ছে।

ইজারাদারের প্রতিনিধি ফজলু হাওলাদার সংবাদকে বলেন, এইডা খেয়াঘাটের টাকা। লঞ্চেরটা আলাদা আর ঘাটেরটা আলাদা। লঞ্চঘাটে বসে খেয়াঘাটের টোল আদায় করাতো অবৈধ তবে কেন তুলছেন? এমন প্রশ্নে তিনি বলেন, এটা জানে প্রশাসন। আমরা ইজারা আনছি। টোল উঠাই এতটুকুই জানি।

বিআইডব্লিউটিএ এর নৌ-নিরাপত্তা ও ট্রাফিক ব্যবস্থাপনা বিভাগ শরীয়তপুরের মঙ্গলমাঝি-ছাত্তার মাদবর লঞ্চঘাটের ঘাট ইনচার্জ ট্রাফিক সুপারভাইজার (টিএস) আব্দল্লাহ ইনাম বলেন, এই ঘাট বিআইডব্লিউটিএ-এর মালিকানাধীন। আর এটা ব্যবহারের জন্য যাত্রী প্রতি ৫ টাকা লঞ্চ ভাড়ার সাথে টোল আদায় করা হয়। এটি কোনো খেয়াঘাট নয়। এখান দিয়ে শুধু লঞ্চ যাত্রীরাই যাতায়াত করে। তবে কেন লঞ্চযাত্রীদের কাছ থেকে টোল আদায় হচ্ছে এমন প্রশ্নের উত্তরে ওই কর্মকর্তা সংবাদকে বলেন, টোল আদায়ের কাজটি হচ্ছে লঞ্চ ঘাটের সীমানার বাইরে। আমাদের করণীয় কিছু নেই।

জাজিরা উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা আশরাফুজ্জামান ভূইয়া সংবাদকে বলেন, এ সমস্যা সমাধানে প্রশাসন কাজ করে যাচ্ছে। অতিরিক্ত অর্থ আদায়ের অভিযোগ পাওয়ার সাথে সাথে আমরা অভিযান চালাই। ইজারাদারকে নীতিমালা মেনে টোল আদায়ের নির্দেশ দেয়া হয়েছে। এবার নির্দেশ অমান্য করলে এ ঘাটের ইজারা বাতিলের জন্য কর্তৃপক্ষ বরাবর চিঠি দেয়া হবে।

বৃহস্পতিবার, ০৪ নভেম্বর ২০২১ , ১৯ কার্তিক ১৪২৮ ২৭ রবিউল আউয়াল ১৪৪৩

খেয়াঘাটে টোলের নামে চাঁদা : নীরব প্রশাসন

ঢাকা-শরীয়তপুর নৌপথ

প্রতিনিধি, জাজিরা (শরীয়তপুর)

ঢাকা-শরীয়তপুর নৌপথে প্রায় ৬ বছর আগে টোল আদায় বন্ধের সিদ্ধান্ত নেয় নৌপরিবহন মন্ত্রণালয়। কিন্তু সেই সিদ্ধান্ত এখনো বাস্তবায়ন হয়নি। বরং যাত্রীদের কাছ থেকে কয়েক দফায় টোলের টাকা আদায় করা হচ্ছে। নৌ-পরিবহন মন্ত্রণালয়ের সিদ্ধান্ত অনুযায়ী লঞ্চঘাটের যাত্রীদের কাছ থেকে কোন টোল আদায় করা যাবে না। আর সেই নির্দেশনা উপেক্ষিত শরীয়তপুরের মঙ্গলমাঝি-ছাত্তার মাদবর লঞ্চঘাটে।

খেয়াঘাটের নামে লঞ্চযাত্রীদের কাছ থেকে চাঁদাবাজি করছে স্থানীয় প্রভাবশালী মহল। লঞ্চের পন্টুনে উঠতে খেয়াঘাটের নামে ১০ টাকা টোল এরপর বিআইডব্লিউটিএ’র লঞ্চ ভাড়ার সাথে নির্ধারিত টোল ৫ টাকা আদায় করা হচ্ছে। বিভিন্ন স্তরে টোল আদায়ে যাত্রী ভোগান্তি হলেও সমস্যা নিরসনে কোন উদ্যোগ নেই প্রশাসনের।

নৌ-পরিবহন মন্ত্রণালয়ের সভার কার্যবিরবণী সূত্রে জানা যায়, ২০১৫ সালের ১৬ মার্চ অনুষ্ঠিত সভার সিদ্ধান্ত অনুযায়ী জাজিরা উপজেলার মঙ্গলমাঝি লঞ্চঘাট অর্থাৎ পূর্ব নাওডোবা-মাওয়া আন্তঃজেলা খেয়াঘাট ইজারা না দিয়ে যাত্রী পারাপারে লঞ্চের টিকিটের সাথে ঘাটের টোল বাবদ যাত্রী প্রতি ২ টাকা হারে আদায় করে দৈনিক ভিত্তিতে লঞ্চ মালিক সমিতি বিআইডব্লিউটিএকে পরিশোধ করবে। আদায়কৃত অর্থের বাৎসরিক আয়ের ৩০ শতাংশ জাজিরা উপজেলা পরিষদকে প্রদান করবে।

জেলা প্রশাসক কার্যালয়ের রাজস্ব শাখা সূত্রে জানা যায়, শরীয়তপুর জেলার জাজিরা উপজেলার পূর্বনাওডোবা-মাওয়া আন্তঃজেলা খেয়াঘাট ভূমি মন্ত্রণালয়ের নীতিমালা অনুযায়ী প্রতি বছর ইজারা দেয়া হয়। বাংলা ১৪২৪ সনে সরকারি মূল্যে ইজারা দরপত্র দাখিলে কোন ব্যক্তি আগ্রহ প্রকাশ করেনি। ১৪২৮ সনে ৩৫ লাখ টাকায় ইজারা পান স্থানীয় আওয়ামী লীগ নেতা মনির খান। তার সাথে স্থানীয় যারা অংশিদার তারা প্রত্যেকেই প্রভাবশালী। আলতাফ খান, রাজ্জাক মাঝি, নেছার মাদবর, তুহিন ফরাজি, শামীম মোড়ল, মোসলেম মাদবর, মোকলেস মাদবর ও চুন্নু মাদবর। টোলের সেই অর্থ নেয়া হচ্ছে লঞ্চ যাত্রীদের কাছ থেকে। খেয়াঘাটের ইজারা নীতিমালা অনুযায়ী যাত্রী প্রতি ৫ টাকা নেয়ার কথা থাকলেও যাত্রী প্রতি কয়েক ধাপে নেয়া হচ্ছে বিভিন্ন অংকের অর্থ। অনিয়ম বন্ধে খেয়াঘাট ইজারা বর্হিভূত রাখার জন্য তৎকালিন জেলা প্রশাসক ভূমি মন্ত্রণালয় বরাবর চিঠি দেন। কিন্তু এখনও পর্যন্ত সেই চিঠির কোন উত্তর পায়নি জেলা প্রশাসন।

সরেজমিন মাঝিরঘাটে গিয়ে দেখা যায় পন্টুনে ওঠার আগেই বাঁশের ব্যারিকেড তৈরি করা হয়েছে। সেখানে যাত্রীদের সারিবদ্ধভাবে দাঁড়ানোর জন্য আদায়কারি চক্রের একজন যাত্রীদের সাথে উচ্চস্বরে চেচামেচি করে কথা বলছেন। এরপর যাত্রী প্রতি ১০ টাকা করে নেয়া হচ্ছে। যাদের সাথে মালামাল আছে তাদের একটু পাশে নিয়ে চলছে দর কষাকষি। চাহিদা মতো টাকা না দিলে করছে অপমান-অপদস্ত। এরপর গণমাধ্যমের উপস্থিতি টের পেয়ে শুরু হয় ৫ টাকা করে আদায়। সাথে রশিদও দেয়া হচ্ছে। রশিদে লেখা আছে লঞ্চ/ট্রলার পারাপারের ক্ষেত্রে। বাধ্য হয়েই সব মেনে নিয়ে লঞ্চে উঠছেন যাত্রীরা। সেখানেও আরেক ধাপ টোলের টাকা তা বৈধভাবেই লঞ্চ ভাড়ার সাথে দিতে হচ্ছে।

ইজারাদারের প্রতিনিধি ফজলু হাওলাদার সংবাদকে বলেন, এইডা খেয়াঘাটের টাকা। লঞ্চেরটা আলাদা আর ঘাটেরটা আলাদা। লঞ্চঘাটে বসে খেয়াঘাটের টোল আদায় করাতো অবৈধ তবে কেন তুলছেন? এমন প্রশ্নে তিনি বলেন, এটা জানে প্রশাসন। আমরা ইজারা আনছি। টোল উঠাই এতটুকুই জানি।

বিআইডব্লিউটিএ এর নৌ-নিরাপত্তা ও ট্রাফিক ব্যবস্থাপনা বিভাগ শরীয়তপুরের মঙ্গলমাঝি-ছাত্তার মাদবর লঞ্চঘাটের ঘাট ইনচার্জ ট্রাফিক সুপারভাইজার (টিএস) আব্দল্লাহ ইনাম বলেন, এই ঘাট বিআইডব্লিউটিএ-এর মালিকানাধীন। আর এটা ব্যবহারের জন্য যাত্রী প্রতি ৫ টাকা লঞ্চ ভাড়ার সাথে টোল আদায় করা হয়। এটি কোনো খেয়াঘাট নয়। এখান দিয়ে শুধু লঞ্চ যাত্রীরাই যাতায়াত করে। তবে কেন লঞ্চযাত্রীদের কাছ থেকে টোল আদায় হচ্ছে এমন প্রশ্নের উত্তরে ওই কর্মকর্তা সংবাদকে বলেন, টোল আদায়ের কাজটি হচ্ছে লঞ্চ ঘাটের সীমানার বাইরে। আমাদের করণীয় কিছু নেই।

জাজিরা উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা আশরাফুজ্জামান ভূইয়া সংবাদকে বলেন, এ সমস্যা সমাধানে প্রশাসন কাজ করে যাচ্ছে। অতিরিক্ত অর্থ আদায়ের অভিযোগ পাওয়ার সাথে সাথে আমরা অভিযান চালাই। ইজারাদারকে নীতিমালা মেনে টোল আদায়ের নির্দেশ দেয়া হয়েছে। এবার নির্দেশ অমান্য করলে এ ঘাটের ইজারা বাতিলের জন্য কর্তৃপক্ষ বরাবর চিঠি দেয়া হবে।