জেলায়ও শিশুদের টিকাদান শুরু

২১ জেলায় ৮০ লাখ শিক্ষার্থী টিকা পাবে

জেলা পর্যায়েও শিক্ষার্থীদের টিকাদান কর্মসূচি শুরু হয়েছে। গত দুদিনে মানিকগঞ্জ, মুন্সিগঞ্জ ও কিশোরগঞ্জে শিক্ষার্থীদের টিকাদান শুরু হয়েছে। চলতি মাসেই আরও ১৮ জেলায় শিক্ষার্থীদের টিকাদান কর্মসূচি শুরু হচ্ছে। এই পর্যায়ে প্রতিটি বিভাগে ন্যূনতম একটি হলেও জেলায় করোনাভাইরাসের এই টিকা শিক্ষার্থীদের দেয়া হবে। ওই ২১ জেলায় ১২ থেকে ১৭ বছর বয়সী প্রায় ৮০ লাখ শিক্ষার্থী টিকার আওতায় আসছে।

গত ১ নভেম্বর থেকে শুধুমাত্র ঢাকা মহানগরীর শিক্ষার্থীদের এই টিকাদান শুরু হয়েছে। স্কুল-কলেজ পর্যায়ের ১২ থেকে ১৭ বছর বয়সী শিক্ষার্থীদের সরকার ফাইজারের টিকা দেয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছে।

স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা জানিয়েছেন, স্বাস্থ্য বিভাগের কাছে এই মুহূর্তে ফাইজার-বায়োএনটেকের পর্যাপ্ত টিকা মজুদ রয়েছে। কিন্তু কোল্ডস্টোরেজ সীমাবদ্ধতার কারণে সারাদেশে একযুগে এই টিকায় কর্মসূচি সম্প্রসারণ সম্ভব নয়। এ কারণে ধাপে ধাপে জেলা পর্যায়ের শিক্ষার্থীদের টিকাদানের উদ্যোগ নেয়া হয়েছে।

তাছাড়া মজুদ থাকা টিকার প্রয়োগ না করে বাড়তি টিকাও (ফাইজার) গ্রহণ করা যাচ্ছে না। আবার সব শিক্ষার্থী টিকার আওতায় না আসা পর্যন্ত সারাদেশের শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে পুরোদমে ক্লাস শুরু করা যাচ্ছে না। এসব কারণেই শিক্ষার্থীদের টিকাদান কর্মসূচি দ্রুত সম্প্রসারণের উদ্যোগ নিয়েছে স্বাস্থ্য বিভাগ।

জেলা পর্যায়ে শিক্ষার্থীদের টিকাদান কর্মসূচি শুরু হয়েছে বলে জানিয়েছেন স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের পরিচালক (টিকাদান কর্মসূচি) প্রফেসর ডা. শামসুল হক। তিনি গতকাল রাতে সংবাদকে জানিয়েছেন, ‘গত দুদিনে আমরা মুন্সিগঞ্জ, মানিকগঞ্জ ও কিশোরগঞ্জে শিক্ষার্থীদের টিকা দিয়েছি। একসঙ্গে ২১ জেলায় শিক্ষার্থীদের টিকা দিতে হবে, সেজন্য অপেক্ষা করার প্রয়োজন নেই। আমরা বলে দিয়েছি, যেসব জেলায় প্রস্তুতি সম্পন্ন হয়েছে সেখানে যাতে টিকা দেয়া শুরু করা হয়।’

১ নভেম্বর ঢাকায় শিক্ষার্থীদের টিকা কর্মসূচি উদ্বোধন করে স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণ মন্ত্রী জাহিদ মালেক বলেছেন, ‘১২-১৭ বছর বয়সী শিক্ষার্থীদের টিকা দিতে প্রয়োজন তিন কোটি টিকা। ইতোমধ্যে দুই কোটি টিকা নিশ্চিত করা আছে। বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা আরও বেশি পরিমাণে ফাইজার ও মডার্নার টিকা দেবে আমাদের।’

স্বাস্থ্য বিভাগের কাছে ‘ফাইজারের অনেক’ টিকা রয়েছে জানিয়ে স্বাস্থ্যমন্ত্রী বলেন, ‘আমরা ৯৬ লাখ টিকা পেয়েছি এবং হাতে আছে প্রায় ৮২ লাখ। আমাদের প্রতিশ্রুতির আরও ৯২ লাখ আছে।’

টিকাদানের লক্ষ্যে মাধ্যমিক ও উচ্চ শিক্ষা অধিদপ্তর (মাউশি) ইতোমধ্যে (ঢাকা মহানগর ছাড়া) ২১টি জেলায় ১২ থেকে ১৭ বছর বয়সী প্রায় ৮০ লাখ শিক্ষার্থীর তথ্য পেয়েছে। তবে মাদ্রাসা শিক্ষা অধিদপ্তর এবং কারিগরি শিক্ষা অধিদপ্তর এখনও সারাদেশের টিকা নেয়ার উপযোগী শিক্ষার্থীর তথ্য সংগ্রহ করতে পারেনি।

মাদ্রাসা শিক্ষা অধিদপ্তরের সংশ্লিষ্ট একাধিক কর্মকর্তা জানিয়েছেন, তারা এখন পর্যন্ত ঢাকা মহানগরীতে মাত্র ১২ হাজার শিক্ষার্থীর তথ্য পেয়েছে। নিদিষ্ট ২১টি জেলার শিক্ষার্থীর তথ্য গতকাল পর্যন্ত সংগ্রহ করতে পারেনি সংস্থাটি।

২১ জেলায় টিকা পাবে ৮০ লাখ শিক্ষার্থী

স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের স্বাস্থ্য সেবা বিভাগ সূত্রে জানা গেছে, মাউশির সঙ্গে সমন্বয় করে রাজধানীর বাইরে প্রথম পর্যায়ে ২১টি জেলা নির্ধারণ করা হয়েছে। জেলাগুলো হলো- ঢাকা বিভাগের গাজীপুর, টাঙ্গাইল, নরসিংদী, মানিকগঞ্জ ও নারায়ণগঞ্জ, চট্টগ্রাম বিভাগের চাঁদপুর, কুমিল্লা, নোয়াখালী, চট্টগ্রাম ও লক্ষ্মীপুর, সিলেট বিভাগের হবিগঞ্জ, সিলেট ও সুনামগঞ্জ, বরিশাল বিভাগের ভোলা, বরিশাল ও ঝালকাঠি, খুলনা বিভাগের যশোর ও সাতক্ষীরা এবং রাজশাহী, ময়মনসিংহ ও রংপুরে শিক্ষার্থীদের টিকাদান শুরু হবে।

শিক্ষার্থীদের টিকাদান কর্মসূচি সমন্বয়কের দায়িত্ব পালন করছেন মাউশির কলেজ ও প্রশাসন শাখার পরিচালক অধ্যাপক শাহেদুল খবির চৌধুরী গতকাল সংবাদকে বলেন, ‘২১ জেলায় ১২ থেকে ১৭ বছর বয়সী শিক্ষার্থীর পূর্ণাঙ্গ তথ্য এখনও আমাদের হাতে আসেনি। তবে এখন পর্যন্ত যেসব তথ্য এসেছে তাতে শিক্ষার্থীর সংখ্যা ৮০ লাখের কাছাকাছি হতে পারে।’

গত ১৪ অক্টোবর মানিকগঞ্জের কয়েকটি স্কুলের ১২০ শিক্ষার্থীকে পরীক্ষামূলকভাবে ফাইজারের টিকার প্রথম ডোজ দেয়া হয়। এরপর গত ১ নভেম্বর ঢাকা মহানগরীতে শিক্ষার্থীদের টিকাদান শুরু হয়।

ঢাকায় টিকাদানের লক্ষ্যে মাউশির পক্ষ্য থেকে ইতোমধ্যে চার লাখ ৮০ হাজার শিক্ষার্থীর তথ্য সরকারের আইসিটি ও স্বাস্থ্য বিভাগকে দেয়া হয়েছে, নিবন্ধন চলমান রয়েছে। আর মাদ্রাসা ও কারিগরি কলেজের শিক্ষার্থী মিলিয়ে ঢাকা মহানগরীতে ১২ থেকে ১৭ বছর বয়সী শিক্ষার্থীর সংখ্যা প্রায় পাঁচ লাখের মতো হতে পারে বলে শিক্ষা প্রশাসনের কর্মকর্তারা ধারণা করছেন।

বৃহস্পতিবার, ০৪ নভেম্বর ২০২১ , ১৯ কার্তিক ১৪২৮ ২৭ রবিউল আউয়াল ১৪৪৩

জেলায়ও শিশুদের টিকাদান শুরু

২১ জেলায় ৮০ লাখ শিক্ষার্থী টিকা পাবে

রাকিব উদ্দিন

জেলা পর্যায়েও শিক্ষার্থীদের টিকাদান কর্মসূচি শুরু হয়েছে। গত দুদিনে মানিকগঞ্জ, মুন্সিগঞ্জ ও কিশোরগঞ্জে শিক্ষার্থীদের টিকাদান শুরু হয়েছে। চলতি মাসেই আরও ১৮ জেলায় শিক্ষার্থীদের টিকাদান কর্মসূচি শুরু হচ্ছে। এই পর্যায়ে প্রতিটি বিভাগে ন্যূনতম একটি হলেও জেলায় করোনাভাইরাসের এই টিকা শিক্ষার্থীদের দেয়া হবে। ওই ২১ জেলায় ১২ থেকে ১৭ বছর বয়সী প্রায় ৮০ লাখ শিক্ষার্থী টিকার আওতায় আসছে।

গত ১ নভেম্বর থেকে শুধুমাত্র ঢাকা মহানগরীর শিক্ষার্থীদের এই টিকাদান শুরু হয়েছে। স্কুল-কলেজ পর্যায়ের ১২ থেকে ১৭ বছর বয়সী শিক্ষার্থীদের সরকার ফাইজারের টিকা দেয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছে।

স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা জানিয়েছেন, স্বাস্থ্য বিভাগের কাছে এই মুহূর্তে ফাইজার-বায়োএনটেকের পর্যাপ্ত টিকা মজুদ রয়েছে। কিন্তু কোল্ডস্টোরেজ সীমাবদ্ধতার কারণে সারাদেশে একযুগে এই টিকায় কর্মসূচি সম্প্রসারণ সম্ভব নয়। এ কারণে ধাপে ধাপে জেলা পর্যায়ের শিক্ষার্থীদের টিকাদানের উদ্যোগ নেয়া হয়েছে।

তাছাড়া মজুদ থাকা টিকার প্রয়োগ না করে বাড়তি টিকাও (ফাইজার) গ্রহণ করা যাচ্ছে না। আবার সব শিক্ষার্থী টিকার আওতায় না আসা পর্যন্ত সারাদেশের শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে পুরোদমে ক্লাস শুরু করা যাচ্ছে না। এসব কারণেই শিক্ষার্থীদের টিকাদান কর্মসূচি দ্রুত সম্প্রসারণের উদ্যোগ নিয়েছে স্বাস্থ্য বিভাগ।

জেলা পর্যায়ে শিক্ষার্থীদের টিকাদান কর্মসূচি শুরু হয়েছে বলে জানিয়েছেন স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের পরিচালক (টিকাদান কর্মসূচি) প্রফেসর ডা. শামসুল হক। তিনি গতকাল রাতে সংবাদকে জানিয়েছেন, ‘গত দুদিনে আমরা মুন্সিগঞ্জ, মানিকগঞ্জ ও কিশোরগঞ্জে শিক্ষার্থীদের টিকা দিয়েছি। একসঙ্গে ২১ জেলায় শিক্ষার্থীদের টিকা দিতে হবে, সেজন্য অপেক্ষা করার প্রয়োজন নেই। আমরা বলে দিয়েছি, যেসব জেলায় প্রস্তুতি সম্পন্ন হয়েছে সেখানে যাতে টিকা দেয়া শুরু করা হয়।’

১ নভেম্বর ঢাকায় শিক্ষার্থীদের টিকা কর্মসূচি উদ্বোধন করে স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণ মন্ত্রী জাহিদ মালেক বলেছেন, ‘১২-১৭ বছর বয়সী শিক্ষার্থীদের টিকা দিতে প্রয়োজন তিন কোটি টিকা। ইতোমধ্যে দুই কোটি টিকা নিশ্চিত করা আছে। বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা আরও বেশি পরিমাণে ফাইজার ও মডার্নার টিকা দেবে আমাদের।’

স্বাস্থ্য বিভাগের কাছে ‘ফাইজারের অনেক’ টিকা রয়েছে জানিয়ে স্বাস্থ্যমন্ত্রী বলেন, ‘আমরা ৯৬ লাখ টিকা পেয়েছি এবং হাতে আছে প্রায় ৮২ লাখ। আমাদের প্রতিশ্রুতির আরও ৯২ লাখ আছে।’

টিকাদানের লক্ষ্যে মাধ্যমিক ও উচ্চ শিক্ষা অধিদপ্তর (মাউশি) ইতোমধ্যে (ঢাকা মহানগর ছাড়া) ২১টি জেলায় ১২ থেকে ১৭ বছর বয়সী প্রায় ৮০ লাখ শিক্ষার্থীর তথ্য পেয়েছে। তবে মাদ্রাসা শিক্ষা অধিদপ্তর এবং কারিগরি শিক্ষা অধিদপ্তর এখনও সারাদেশের টিকা নেয়ার উপযোগী শিক্ষার্থীর তথ্য সংগ্রহ করতে পারেনি।

মাদ্রাসা শিক্ষা অধিদপ্তরের সংশ্লিষ্ট একাধিক কর্মকর্তা জানিয়েছেন, তারা এখন পর্যন্ত ঢাকা মহানগরীতে মাত্র ১২ হাজার শিক্ষার্থীর তথ্য পেয়েছে। নিদিষ্ট ২১টি জেলার শিক্ষার্থীর তথ্য গতকাল পর্যন্ত সংগ্রহ করতে পারেনি সংস্থাটি।

২১ জেলায় টিকা পাবে ৮০ লাখ শিক্ষার্থী

স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের স্বাস্থ্য সেবা বিভাগ সূত্রে জানা গেছে, মাউশির সঙ্গে সমন্বয় করে রাজধানীর বাইরে প্রথম পর্যায়ে ২১টি জেলা নির্ধারণ করা হয়েছে। জেলাগুলো হলো- ঢাকা বিভাগের গাজীপুর, টাঙ্গাইল, নরসিংদী, মানিকগঞ্জ ও নারায়ণগঞ্জ, চট্টগ্রাম বিভাগের চাঁদপুর, কুমিল্লা, নোয়াখালী, চট্টগ্রাম ও লক্ষ্মীপুর, সিলেট বিভাগের হবিগঞ্জ, সিলেট ও সুনামগঞ্জ, বরিশাল বিভাগের ভোলা, বরিশাল ও ঝালকাঠি, খুলনা বিভাগের যশোর ও সাতক্ষীরা এবং রাজশাহী, ময়মনসিংহ ও রংপুরে শিক্ষার্থীদের টিকাদান শুরু হবে।

শিক্ষার্থীদের টিকাদান কর্মসূচি সমন্বয়কের দায়িত্ব পালন করছেন মাউশির কলেজ ও প্রশাসন শাখার পরিচালক অধ্যাপক শাহেদুল খবির চৌধুরী গতকাল সংবাদকে বলেন, ‘২১ জেলায় ১২ থেকে ১৭ বছর বয়সী শিক্ষার্থীর পূর্ণাঙ্গ তথ্য এখনও আমাদের হাতে আসেনি। তবে এখন পর্যন্ত যেসব তথ্য এসেছে তাতে শিক্ষার্থীর সংখ্যা ৮০ লাখের কাছাকাছি হতে পারে।’

গত ১৪ অক্টোবর মানিকগঞ্জের কয়েকটি স্কুলের ১২০ শিক্ষার্থীকে পরীক্ষামূলকভাবে ফাইজারের টিকার প্রথম ডোজ দেয়া হয়। এরপর গত ১ নভেম্বর ঢাকা মহানগরীতে শিক্ষার্থীদের টিকাদান শুরু হয়।

ঢাকায় টিকাদানের লক্ষ্যে মাউশির পক্ষ্য থেকে ইতোমধ্যে চার লাখ ৮০ হাজার শিক্ষার্থীর তথ্য সরকারের আইসিটি ও স্বাস্থ্য বিভাগকে দেয়া হয়েছে, নিবন্ধন চলমান রয়েছে। আর মাদ্রাসা ও কারিগরি কলেজের শিক্ষার্থী মিলিয়ে ঢাকা মহানগরীতে ১২ থেকে ১৭ বছর বয়সী শিক্ষার্থীর সংখ্যা প্রায় পাঁচ লাখের মতো হতে পারে বলে শিক্ষা প্রশাসনের কর্মকর্তারা ধারণা করছেন।