জলবায়ু সম্মেলনে অংশ নেননি রাশিয়া, চীনের দুই নেতা

পুতিন-জিনপিংয়ের কঠোর সমালোচনায় বাইডেন

জলবায়ু সম্মেলনকে কেন্দ্র করে বিক্ষোভের ফলে বন্ধ গাড়ি, পরিবহন সংকটে গ্লাসগো

জলবায়ু সংকট থেকে বিশ্বকে বাঁচানোতে স্কটল্যান্ডের গ্লাসগোতে চলছে জাতিসংঘের জলবায়ু বিষয়ক শীর্ষ সম্মেলন কপ২৬। এতে সরাসরি অংশ না নেওয়ায় রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট ভøাদিমির পুতিন ও চীনের প্রেসিডেন্ট শি জিনপিংয়ের কঠোর সমালোচনা করেছেন মার্কিন প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন। সম্মেলনে দেয়া এক ভাষণে বাইডেন এই সমালোচনা করেন।

বৈশ্বিক উষ্ণতা নিয়ন্ত্রণে আনার লক্ষ্যে বিশ্বের বিভিন্ন দেশের সরকার, রাষ্ট্রপ্রধান ও বিভিন্ন সংস্থার ২৫ হাজারের বেশি সদস্যের অংশগ্রহণে স্কটল্যান্ডের গ্লাসগোয় গত রোববার এই সম্মেলন শুরু হয়। এক প্রতিবেদনে এ তথ্য জানিয়েছে বিবিসি।

ওই ভাষণে প্রেসিডেন্ট বাইডেন বলেন, বর্তমান বৈশ্বিক পরিস্থিতিতে জলবায়ু পরিবর্তন এবং এ সংক্রান্ত সংকট মোকাবিলা একটি গুরুত্বপূর্ণ ইস্যু হলেও কপ-২৬ সম্মেলনে অংশ নেয়নি চীন। তিনি আরও বলেন, রাশিয়া ও পুতিনও এই একই কাজ করেছে। রাশিয়া ও চীন দেশই সেখানে প্রতিনিধি দল পাঠিয়েছে।

আগামী ১৪ নভেম্বর পর্যন্ত তারা সেখানে অবস্থান করবেন এবং বিভিন্ন আলোচনায় অংশ নেবেন। জো বাইডেন বলেন, বিশ্বের মোড়ল হিসেবে চীন নতুন ভূমিকায় অবতীর্ণ হয়েছে বলে অন্যান্য দেশগুলোর সামনে নিজেকে উপস্থাপন করছে বেইজিং। কিন্তু জলবায়ু সম্মেলনে প্রেসিডেন্ট শি জিনপিংয়ের অনুপস্থিতি একটি বড় ভুল।

এদিন রুশ প্রেসিডেন্টের সমালোচনায়ও মুখর হন জো বাইডেন। তিনি বলেন, রাশিয়ার বনাঞ্চলগুলো পুড়ছে এবং সেসব বিষয়ে রুশ প্রেসিডেন্ট নিশ্চুপ রয়েছেন।

বিশ্বের সব দেশের মধ্যে সবচেয়ে বেশি কার্বন নিঃসরণকারী দেশ হচ্ছে চীন। এর পরের অবস্থানেই রয়েছে যুক্তরাষ্ট্র। ভারত ও ইউরোপীয় ইউনিয়নের (ইইউ) পর পঞ্চম অবস্থানে রয়েছে রাশিয়া।

জলবায়ু পরিবর্তনের ফলে নিয়মিত ভাবে দাবদাহ, ঘূর্ণিঝড় ও জলোচ্ছ্বাসের মতো প্রাকৃতিক দুর্যোগ বাড়ছে। একইসঙ্গে বাড়ছে সমুদ্রপৃষ্ঠের উচ্চতাও। এই পরিস্থিতিতে স্কটল্যান্ডের গ্লাসগোয় চলমান জাতিসংঘের জলবায়ু সম্মেলনে রুশ ও চীনা প্রেসিডেন্টের অংশ না নেয়ার ফলে সংকট আরও গভীর হতে পারে বলে মনে করছেন অনেকে।

বিক্ষোভে বন্ধ পরিবহন

ইলেকট্রনিক পরিবহন ব্যবস্থা গড়ে তুলে কার্বন নিঃসরণ কমানোসহ নানা দাবি নিয়ে সম্মেলনস্থলের বাইরে সরব বিক্ষোভকারীরা। এমনকি বিক্ষোভকারীদের আন্দোলনের ফলে সব ধরনের ফুয়েল ব্যবহারকারী পরিবহন তুলে নেওয়া হয়েছে। ফলে গ্লাসগো শহরে কমেছে পরিবহন সংখ্যা। নানা রুটের সিডিউল পরিবর্তন হওয়ায় বিপাকে পড়েছেন অংশগ্রহণকারীরা।

গ্লাসগো সিটি সেন্টার থেকে ভেন্যুতে যাতায়াত করা গ্লাসগো এক্স১৯ বাসটি বন্ধ করে দেয়া হয়েছে। তবে মেইল করে বিষয়টি অংশগ্রহণকারীদের জানিয়েছেন ইভেন্ট আয়োজকরা।

এমনকি জলবায়ু পরিবর্তন মোকাবিলায় ধনী দেশগুলোর ব্যর্থতার নানা চিত্র তুলে ধরে প্রতিবাদ-বিক্ষোভ করা হয়। একদল অবসরপ্রাপ্ত স্কটিশ নাগরিক পৃথিবীকে বাঁচানোর আকুতি জানিয়ে গলায় ঝুলিয়ে রেখেছিলেন প্ল্যাকার্ড ও পোস্টার। তাতে লেখা, ‘লাভ অ্যান্ড গ্রিফ আর্থ’।

গ্লাসগোতে হাজারো পরিবেশকর্মী ও ব্যবসায়ী জড়ো হয়েছেন। তারা নানা অনুষ্ঠান, আয়োজন, নেটওয়ার্কিং ও বিক্ষোভের মতো কর্মসূচিতে অংশ নিয়েছেন। মূলত তারা জীবাশ্ম জ্বালানির ব্যবহার অবিলম্বে বন্ধের আহ্বান করছেন। সেভ আওয়ার আর্থ স্লোগানে মুখরিত গ্লাসগোর মূল ক্যাম্পাস।

তাদের দাবিগুলোর মধ্যে রয়েছে দ্রুত গাড়িতে তেল জ্বালানি নিষিদ্ধ করা, কয়লাভিত্তিক বিদ্যুৎ থেকে দ্রুত সরে আসা, বৃক্ষনিধন কমানো। জলবায়ু পরিবর্তনের নেতিবাচক প্রভাব থেকে উপকূলবাসীকে রক্ষা করা। অ্যামাজন পৃথিবীর সবচেয়ে বড় জঙ্গল। এটিকে পৃথিবীর ফুসফুস বলা হয়। এই বনকে রক্ষা করার আকুতি জানিয়েছেন একদল ব্রাজিলিয়ান অবজার্ভার।

গভীর অ্যামাজন জঙ্গলে এখনো সভ্যতার আলো ছাড়া বাস করে প্রাচীন উপজাতীয় মানবগোষ্ঠী। এসব উপজাতীয় মানব গোষ্ঠীর বেশে প্রতিবাদকরীদের অনেকে অংশ নিয়েছেন জলবায়ু সম্মেলনে। স্কটিশ ইভেন্ট সেন্টার, এসইসির বিশাল এলাকার এক পাড়ে গ্রিন জোনে চলছে জলবায়ু সম্মেলনের মূল আয়োজন এবং বিভিন্ন গ্রুপে বিশেষজ্ঞদের আলোচনা ও দর-কষাকষি। তাছাড়া বিভিন্ন দেশ ও সংস্থার

নিজস্ব প্যাভিলিয়নে আলাদা আলাদা আয়োজনে একই সঙ্গে চলছে সভা ও সেমিনার।

এর বাইরে বিক্ষোভ করছেন পরিবেশবাদীরা। বিক্ষোভকারীদের দাবি পরিবেশ ধ্বংসকারী উন্নয়ন তারা চান না। প্রকৃতিকে আঁকড়ে বাঁচতে চান। জলবায়ু শীর্ষ সম্মেলনে দ্বীপ রাষ্ট্রগুলোর বিপন্ন আকুতি শোনা গেল। প্রবল ঝুঁকিতে থাকা দেশগুলোয় উন্নয়নের চেয়ে পরিবেশ রক্ষায় নজর দিতে বলেছে ধনী দেশগুলোকে।

বৃহস্পতিবার, ০৪ নভেম্বর ২০২১ , ১৯ কার্তিক ১৪২৮ ২৭ রবিউল আউয়াল ১৪৪৩

জলবায়ু সম্মেলনে অংশ নেননি রাশিয়া, চীনের দুই নেতা

পুতিন-জিনপিংয়ের কঠোর সমালোচনায় বাইডেন

জলবায়ু সম্মেলনকে কেন্দ্র করে বিক্ষোভের ফলে বন্ধ গাড়ি, পরিবহন সংকটে গ্লাসগো

image

জলবায়ু সংকট থেকে বিশ্বকে বাঁচানোতে স্কটল্যান্ডের গ্লাসগোতে চলছে জাতিসংঘের জলবায়ু বিষয়ক শীর্ষ সম্মেলন কপ২৬। এতে সরাসরি অংশ না নেওয়ায় রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট ভøাদিমির পুতিন ও চীনের প্রেসিডেন্ট শি জিনপিংয়ের কঠোর সমালোচনা করেছেন মার্কিন প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন। সম্মেলনে দেয়া এক ভাষণে বাইডেন এই সমালোচনা করেন।

বৈশ্বিক উষ্ণতা নিয়ন্ত্রণে আনার লক্ষ্যে বিশ্বের বিভিন্ন দেশের সরকার, রাষ্ট্রপ্রধান ও বিভিন্ন সংস্থার ২৫ হাজারের বেশি সদস্যের অংশগ্রহণে স্কটল্যান্ডের গ্লাসগোয় গত রোববার এই সম্মেলন শুরু হয়। এক প্রতিবেদনে এ তথ্য জানিয়েছে বিবিসি।

ওই ভাষণে প্রেসিডেন্ট বাইডেন বলেন, বর্তমান বৈশ্বিক পরিস্থিতিতে জলবায়ু পরিবর্তন এবং এ সংক্রান্ত সংকট মোকাবিলা একটি গুরুত্বপূর্ণ ইস্যু হলেও কপ-২৬ সম্মেলনে অংশ নেয়নি চীন। তিনি আরও বলেন, রাশিয়া ও পুতিনও এই একই কাজ করেছে। রাশিয়া ও চীন দেশই সেখানে প্রতিনিধি দল পাঠিয়েছে।

আগামী ১৪ নভেম্বর পর্যন্ত তারা সেখানে অবস্থান করবেন এবং বিভিন্ন আলোচনায় অংশ নেবেন। জো বাইডেন বলেন, বিশ্বের মোড়ল হিসেবে চীন নতুন ভূমিকায় অবতীর্ণ হয়েছে বলে অন্যান্য দেশগুলোর সামনে নিজেকে উপস্থাপন করছে বেইজিং। কিন্তু জলবায়ু সম্মেলনে প্রেসিডেন্ট শি জিনপিংয়ের অনুপস্থিতি একটি বড় ভুল।

এদিন রুশ প্রেসিডেন্টের সমালোচনায়ও মুখর হন জো বাইডেন। তিনি বলেন, রাশিয়ার বনাঞ্চলগুলো পুড়ছে এবং সেসব বিষয়ে রুশ প্রেসিডেন্ট নিশ্চুপ রয়েছেন।

বিশ্বের সব দেশের মধ্যে সবচেয়ে বেশি কার্বন নিঃসরণকারী দেশ হচ্ছে চীন। এর পরের অবস্থানেই রয়েছে যুক্তরাষ্ট্র। ভারত ও ইউরোপীয় ইউনিয়নের (ইইউ) পর পঞ্চম অবস্থানে রয়েছে রাশিয়া।

জলবায়ু পরিবর্তনের ফলে নিয়মিত ভাবে দাবদাহ, ঘূর্ণিঝড় ও জলোচ্ছ্বাসের মতো প্রাকৃতিক দুর্যোগ বাড়ছে। একইসঙ্গে বাড়ছে সমুদ্রপৃষ্ঠের উচ্চতাও। এই পরিস্থিতিতে স্কটল্যান্ডের গ্লাসগোয় চলমান জাতিসংঘের জলবায়ু সম্মেলনে রুশ ও চীনা প্রেসিডেন্টের অংশ না নেয়ার ফলে সংকট আরও গভীর হতে পারে বলে মনে করছেন অনেকে।

বিক্ষোভে বন্ধ পরিবহন

ইলেকট্রনিক পরিবহন ব্যবস্থা গড়ে তুলে কার্বন নিঃসরণ কমানোসহ নানা দাবি নিয়ে সম্মেলনস্থলের বাইরে সরব বিক্ষোভকারীরা। এমনকি বিক্ষোভকারীদের আন্দোলনের ফলে সব ধরনের ফুয়েল ব্যবহারকারী পরিবহন তুলে নেওয়া হয়েছে। ফলে গ্লাসগো শহরে কমেছে পরিবহন সংখ্যা। নানা রুটের সিডিউল পরিবর্তন হওয়ায় বিপাকে পড়েছেন অংশগ্রহণকারীরা।

গ্লাসগো সিটি সেন্টার থেকে ভেন্যুতে যাতায়াত করা গ্লাসগো এক্স১৯ বাসটি বন্ধ করে দেয়া হয়েছে। তবে মেইল করে বিষয়টি অংশগ্রহণকারীদের জানিয়েছেন ইভেন্ট আয়োজকরা।

এমনকি জলবায়ু পরিবর্তন মোকাবিলায় ধনী দেশগুলোর ব্যর্থতার নানা চিত্র তুলে ধরে প্রতিবাদ-বিক্ষোভ করা হয়। একদল অবসরপ্রাপ্ত স্কটিশ নাগরিক পৃথিবীকে বাঁচানোর আকুতি জানিয়ে গলায় ঝুলিয়ে রেখেছিলেন প্ল্যাকার্ড ও পোস্টার। তাতে লেখা, ‘লাভ অ্যান্ড গ্রিফ আর্থ’।

গ্লাসগোতে হাজারো পরিবেশকর্মী ও ব্যবসায়ী জড়ো হয়েছেন। তারা নানা অনুষ্ঠান, আয়োজন, নেটওয়ার্কিং ও বিক্ষোভের মতো কর্মসূচিতে অংশ নিয়েছেন। মূলত তারা জীবাশ্ম জ্বালানির ব্যবহার অবিলম্বে বন্ধের আহ্বান করছেন। সেভ আওয়ার আর্থ স্লোগানে মুখরিত গ্লাসগোর মূল ক্যাম্পাস।

তাদের দাবিগুলোর মধ্যে রয়েছে দ্রুত গাড়িতে তেল জ্বালানি নিষিদ্ধ করা, কয়লাভিত্তিক বিদ্যুৎ থেকে দ্রুত সরে আসা, বৃক্ষনিধন কমানো। জলবায়ু পরিবর্তনের নেতিবাচক প্রভাব থেকে উপকূলবাসীকে রক্ষা করা। অ্যামাজন পৃথিবীর সবচেয়ে বড় জঙ্গল। এটিকে পৃথিবীর ফুসফুস বলা হয়। এই বনকে রক্ষা করার আকুতি জানিয়েছেন একদল ব্রাজিলিয়ান অবজার্ভার।

গভীর অ্যামাজন জঙ্গলে এখনো সভ্যতার আলো ছাড়া বাস করে প্রাচীন উপজাতীয় মানবগোষ্ঠী। এসব উপজাতীয় মানব গোষ্ঠীর বেশে প্রতিবাদকরীদের অনেকে অংশ নিয়েছেন জলবায়ু সম্মেলনে। স্কটিশ ইভেন্ট সেন্টার, এসইসির বিশাল এলাকার এক পাড়ে গ্রিন জোনে চলছে জলবায়ু সম্মেলনের মূল আয়োজন এবং বিভিন্ন গ্রুপে বিশেষজ্ঞদের আলোচনা ও দর-কষাকষি। তাছাড়া বিভিন্ন দেশ ও সংস্থার

নিজস্ব প্যাভিলিয়নে আলাদা আলাদা আয়োজনে একই সঙ্গে চলছে সভা ও সেমিনার।

এর বাইরে বিক্ষোভ করছেন পরিবেশবাদীরা। বিক্ষোভকারীদের দাবি পরিবেশ ধ্বংসকারী উন্নয়ন তারা চান না। প্রকৃতিকে আঁকড়ে বাঁচতে চান। জলবায়ু শীর্ষ সম্মেলনে দ্বীপ রাষ্ট্রগুলোর বিপন্ন আকুতি শোনা গেল। প্রবল ঝুঁকিতে থাকা দেশগুলোয় উন্নয়নের চেয়ে পরিবেশ রক্ষায় নজর দিতে বলেছে ধনী দেশগুলোকে।