জেলহত্যা : নেপথ্যের কুশীলব কারা, তা জানতে চান সন্তানেরা

গতকাল ছিল জেলহত্যা দিবস। এ দিন সকালে রাজধানীর নাজিম উদ্দিন রোডে পুরাতন কারাগারে বঙ্গবন্ধু ও জাতীয় চার নেতার প্রতিকৃতিতে শ্রদ্ধা নিবেদনের পর দুঃখ প্রকাশ করে তাজউদ্দীন আহমদের মেয়ে সংসদ সদস্য সিমিন হোসেন রিমি বলেন, ‘জেলহত্যা এমন নয় যে, গুলি করল আর চলে গেল। এর পেছনের কারিগর ও কুশীলব কারা তা জানার জন্য সেই সময় একটা তদন্ত কমিশন গঠন করা হয়েছিল। তার রিপোর্ট আমরা জানি না।

একটা স্বাধীন কমিশন গঠন করার দাবি জানিয়ে সিমিন আরও বলেন, ‘একজন সচেতন নাগরিক হিসেবে আমি মনে করি, এ ধরনের নেতাদের হাত ধরে দেশের চেহারা বদলে যায়, রাষ্ট্রের চিন্তাধারা বদলে যায়। এসব তথ্য অনুপ্রেরণার জন্য যথাযথ মর্যাদার সঙ্গে নাগরিকদের জানানো উচিত। তাদের আড়ালে রেখে কোন দিন আমরা সোনার বাংলা গড়তে পারব না।’

এদিন মুক্তিযুদ্ধে জাতীয় চার নেতার অবদান নতুন প্রজন্মকে সঠিকভাবে জানাতে পাঠ্যপুস্তকে তাদের জীবনী অন্তর্ভুক্ত করার দাবি জানিয়ে ১৯৭৫ সালের ৩ নভেম্বর জেলখানায় তাদের হত্যা করার জঘন্যতম ঘটনায় জড়িতদের চিহ্নিত করে স্বাধীন কমিশন গঠনেরও আহ্বান জানান পিতা হারানো সন্তানেরা।

তানজিম আহমেদ সোহেল তাজ বলেন, ‘আমরা চাই একটি সুন্দর বাংলাদেশ। দেশের দুর্যোগপূর্ণ মুহূর্তে জাতীয় চার নেতা দৃঢ়তার সঙ্গে নেতৃত্ব দিয়েছিলেন মহান মুক্তিযুদ্ধে এবং আমাদের স্বাধীনতা ছিনিয়ে এনেছিলেন। বঙ্গবন্ধুকে সপরিবারে নির্মমভাবে হত্যার পর কেন্দ্রীয় কারাগারে চার নেতাকে হত্যা করা হয়। স্বাভাবিকভাবেই এ ঘটনার বিচার ও খুনিদের শাস্তি চায় আমাদের পরিবার।’

তাজউদ্দীন আহমদের ছেলে তানজিম আহমদ সোহেল তাজ বলেন, ‘শুধু একটি দিবস নয়, স্কুল-কলেজ-বিশ্ববিদ্যালয়ের বইয়ে চার নেতার জীবনী তুলে ধরতে পারলে নতুন প্রজন্ম অনুপ্রাণিত হবে। এটাই আমাদের চাওয়া, আমাদের তো আর চাওয়া-পাওয়ার কিছু নেই।’ সৈয়দ এম মনসুর আলীর ছেলে রেজাউল করিম বলেন, ‘চার নেতা হত্যাকা-ের ৪০ বছর পর তদন্ত কমিশনসহ বিভিন্ন দাবি উঠছে। জেলখানায় তৎকালীন অবৈধ প্রেসিডেন্ট খন্দকার মোশতাক আহমেদের নির্দেশে এই হত্যাকা- সংগঠিত হয়। সেই সময় একটি তদন্ত কমিশন গঠন হয়েছিল, এর পূর্ণাঙ্গ রিপোর্ট কেউ জানতে পারেনি এখনও। তৎকালীন জেল কর্তৃপক্ষের কী ভূমিকা ছিল তাও আমরা জানতে চাই।’

এদিকে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খাঁন কামাল জানিয়েছেন, ১৯৭৫ সালের ৩ নভেম্বর জেলখানায় জাতীয় চার নেতাকে হত্যার ঘটনায় বিচারের রায় কার্যকরে সর্বোচ্চ চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে সরকার। পুরাতন কারাগারে জাতীয় চার নেতার প্রতিকৃতিতে শ্রদ্ধা নিবেদনের পর তিনি বলেন, ‘জেলখানা পৃথিবীতে সবচেয়ে নিরাপদ স্থান। সেক্ষেত্রে কীভাবে আইন ভঙ্গ করে এই হত্যাকা- হয়েছে সবাই জানে। বঙ্গবন্ধু হত্যাকা-ের বিচার হয়েছে এবং রায় আংশিক কার্যকর হয়েছে। আর পলাতক আসামিদের আমরা খুঁজে বেড়াচ্ছি। আমরা নিজেদের আওতায় আসামিদের পেলে ফাঁসির রায় কার্যকর হবে। জেলহত্যার রায় কার্যকরের জন্য আমরা সর্বোচ্চ প্রচেষ্টা চালাচ্ছি।’

বৃহস্পতিবার, ০৪ নভেম্বর ২০২১ , ১৯ কার্তিক ১৪২৮ ২৭ রবিউল আউয়াল ১৪৪৩

জেলহত্যা : নেপথ্যের কুশীলব কারা, তা জানতে চান সন্তানেরা

গতকাল ছিল জেলহত্যা দিবস। এ দিন সকালে রাজধানীর নাজিম উদ্দিন রোডে পুরাতন কারাগারে বঙ্গবন্ধু ও জাতীয় চার নেতার প্রতিকৃতিতে শ্রদ্ধা নিবেদনের পর দুঃখ প্রকাশ করে তাজউদ্দীন আহমদের মেয়ে সংসদ সদস্য সিমিন হোসেন রিমি বলেন, ‘জেলহত্যা এমন নয় যে, গুলি করল আর চলে গেল। এর পেছনের কারিগর ও কুশীলব কারা তা জানার জন্য সেই সময় একটা তদন্ত কমিশন গঠন করা হয়েছিল। তার রিপোর্ট আমরা জানি না।

একটা স্বাধীন কমিশন গঠন করার দাবি জানিয়ে সিমিন আরও বলেন, ‘একজন সচেতন নাগরিক হিসেবে আমি মনে করি, এ ধরনের নেতাদের হাত ধরে দেশের চেহারা বদলে যায়, রাষ্ট্রের চিন্তাধারা বদলে যায়। এসব তথ্য অনুপ্রেরণার জন্য যথাযথ মর্যাদার সঙ্গে নাগরিকদের জানানো উচিত। তাদের আড়ালে রেখে কোন দিন আমরা সোনার বাংলা গড়তে পারব না।’

এদিন মুক্তিযুদ্ধে জাতীয় চার নেতার অবদান নতুন প্রজন্মকে সঠিকভাবে জানাতে পাঠ্যপুস্তকে তাদের জীবনী অন্তর্ভুক্ত করার দাবি জানিয়ে ১৯৭৫ সালের ৩ নভেম্বর জেলখানায় তাদের হত্যা করার জঘন্যতম ঘটনায় জড়িতদের চিহ্নিত করে স্বাধীন কমিশন গঠনেরও আহ্বান জানান পিতা হারানো সন্তানেরা।

তানজিম আহমেদ সোহেল তাজ বলেন, ‘আমরা চাই একটি সুন্দর বাংলাদেশ। দেশের দুর্যোগপূর্ণ মুহূর্তে জাতীয় চার নেতা দৃঢ়তার সঙ্গে নেতৃত্ব দিয়েছিলেন মহান মুক্তিযুদ্ধে এবং আমাদের স্বাধীনতা ছিনিয়ে এনেছিলেন। বঙ্গবন্ধুকে সপরিবারে নির্মমভাবে হত্যার পর কেন্দ্রীয় কারাগারে চার নেতাকে হত্যা করা হয়। স্বাভাবিকভাবেই এ ঘটনার বিচার ও খুনিদের শাস্তি চায় আমাদের পরিবার।’

তাজউদ্দীন আহমদের ছেলে তানজিম আহমদ সোহেল তাজ বলেন, ‘শুধু একটি দিবস নয়, স্কুল-কলেজ-বিশ্ববিদ্যালয়ের বইয়ে চার নেতার জীবনী তুলে ধরতে পারলে নতুন প্রজন্ম অনুপ্রাণিত হবে। এটাই আমাদের চাওয়া, আমাদের তো আর চাওয়া-পাওয়ার কিছু নেই।’ সৈয়দ এম মনসুর আলীর ছেলে রেজাউল করিম বলেন, ‘চার নেতা হত্যাকা-ের ৪০ বছর পর তদন্ত কমিশনসহ বিভিন্ন দাবি উঠছে। জেলখানায় তৎকালীন অবৈধ প্রেসিডেন্ট খন্দকার মোশতাক আহমেদের নির্দেশে এই হত্যাকা- সংগঠিত হয়। সেই সময় একটি তদন্ত কমিশন গঠন হয়েছিল, এর পূর্ণাঙ্গ রিপোর্ট কেউ জানতে পারেনি এখনও। তৎকালীন জেল কর্তৃপক্ষের কী ভূমিকা ছিল তাও আমরা জানতে চাই।’

এদিকে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খাঁন কামাল জানিয়েছেন, ১৯৭৫ সালের ৩ নভেম্বর জেলখানায় জাতীয় চার নেতাকে হত্যার ঘটনায় বিচারের রায় কার্যকরে সর্বোচ্চ চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে সরকার। পুরাতন কারাগারে জাতীয় চার নেতার প্রতিকৃতিতে শ্রদ্ধা নিবেদনের পর তিনি বলেন, ‘জেলখানা পৃথিবীতে সবচেয়ে নিরাপদ স্থান। সেক্ষেত্রে কীভাবে আইন ভঙ্গ করে এই হত্যাকা- হয়েছে সবাই জানে। বঙ্গবন্ধু হত্যাকা-ের বিচার হয়েছে এবং রায় আংশিক কার্যকর হয়েছে। আর পলাতক আসামিদের আমরা খুঁজে বেড়াচ্ছি। আমরা নিজেদের আওতায় আসামিদের পেলে ফাঁসির রায় কার্যকর হবে। জেলহত্যার রায় কার্যকরের জন্য আমরা সর্বোচ্চ প্রচেষ্টা চালাচ্ছি।’