দুর্বলতা ঘোচাতে চায় ফায়ার সার্ভিস

আধুনিক প্রশিক্ষণে মূল ফোকাস

যেকোন অগ্নিকাণ্ড, দুর্ঘটনা কিংবা প্রাকৃতিক দুর্যোগে অন্যতম ভরসার নাম ফায়ার সার্ভিস। ঘটনা ঘটার সঙ্গে সঙ্গে সবার আগে সবার পাশে দাঁড়ায় বাহিনীটির সদস্যরা। হতাহত ও ক্ষয়ক্ষতির পরিমাণ কমিয়ে আনতে নিজেদের জীবন বাজি রাখতেও কার্পণ্য করেন না তারা।

কিন্তু দেশে শিল্পায়ন ও নগরায়ণ বৃদ্ধির সঙ্গে তাল মিলিয়ে প্রত্যাশা জায়গায় পৌঁছতে পারেনি সংস্থাটি। জনবল সংকট, উন্নত প্রশিক্ষণ ও আধুনিক সরঞ্জামের অভাবে অনেক ক্ষেত্রেই ফুটে ওঠে দুর্বলতার ছাপ। বিশেষ করে, সুউচ্চ ভবন, কলকারখানা কিংবা কেমিক্যাল গোডাউনের মতো জায়গায় বড় অগ্নিকাণ্ড ও ভবন ধসের মতো ঘটনায় দুর্বলতাগুলো ভয়াবহ রূপ ধারণ করে। আগুন নিয়ন্ত্রণে আনতে ঘণ্টার পর ঘণ্টা সময় লাগায় একদিকে বাড়ছে মৃত্যুর মিছিল। অন্যদিকে বাড়ছে ক্ষয়ক্ষতির পরিমাণও।

যদিও এর জন্য কখনই নিজেদের দুর্বলতাকে দায়ী করে না সংস্থাটির কর্মকর্তারা। তাদের দাবি, আধুনিক সরঞ্জামের সংকটের কারণে নয়, হতাহত ও ক্ষয়ক্ষতি বৃদ্ধির পেছনে মানুষের সচেতনতার অভাবই দায়ী। অবশ্য ছোট অগ্নিকাণ্ডগুলো দ্রুত সময়ের মধ্যে সহজেই নিয়ন্ত্রণে আনতে দেখা গেছে সংস্থাটিকে।

ফায়ার সার্ভিস সদরদপ্তর সূত্র জানায়, ২০২০ সালে সারাদেশে ২১ হাজার ৭৩টি অগ্নিকাণ্ডের ঘটনা ঘটেছে। এরমধ্যে সবচেয়ে বেশি বৈদ্যুতিক গোলযোগ থেকে ৭ হাজার ৭২৯টি অগ্নিকাণ্ডের ঘটনা ঘটেছে। চুলার আগুন থেকে ৩ হাজার ৫৬৪টি, বিড়ি-সিগারেটের টুকরো থেকে ৩ হাজার ৪৬৪টি, মেশিনের মিস ফায়ার থেকে ১৭৩টি, গ্যাস সিলিন্ডার ও বয়লার বিস্ফোরণে ১৩৫টি, গ্যাস লাইনের লিকেজ থেকে ৭২২টি অগ্নিকাণ্ডের ঘটনা ঘটেছে। এসব অগ্নিকাণ্ডের ঘটনায় ১৫৪ জন মানুষ নিহত হয়েছেন। আহত হয়েছেন ২৯৩ জন পুরুষ, ৭৮ জন নারী এবং ফায়ার সার্ভিসের ১৫ জন কর্মকর্তা কর্মচারী। এসব ঘটনায় মোট ক্ষতির পরিমাণ ২৪৬ কোটি ৬৫ লাখ হাজার কোটি টাকা। মোট উদ্ধারের পরিমাণ এক হাজার ৪২৬ কোটি ১৮ লাখ টাকারও বেশি।

ফায়ার সার্ভিসের কর্মকর্তারা জানান, অগ্নিকাণ্ডের পর দ্রুত সময়ের মধ্যে নির্বাপনের জন্য আধুনিক ফায়ার স্টেশন নির্মাণের পাশাপাশি বাড়ানো হচ্ছে ফায়ার স্টেশনের সংখ্যা। ১০ বছর আগে সারাদেশে ২০৪টি ফায়ার স্টেশন থাকলেও বর্তমানে সারাদেশে ফায়ার স্টেশনের সংখ্যা ৪৫৬টি। পাশাপাশি ঢাকা, গাজীপুর নারায়ণগঞ্জ ও রূপপুরসহ বিভিন্ন জায়গায় নির্মাণ করা হচ্ছে ১১টি আধুনিক ফায়ার স্টেশন।

কর্তকর্মাদের দাবি, ফায়ার স্টেশনের সংখ্যা বাড়লেও সেই অনুপাতে বাড়েনি জনবল ও আধুনিক সরঞ্জাম। বর্তমানে সংস্থাটি জনবল রয়েছে ১৩ হাজার ৪৭৩ জন। যা প্রয়োজনের তুলনায় খুবই কম। জানা গেছে, প্রথম শ্রেণীর ফায়ার স্টেশনগুলোতে ৩৫ জন করে জনবল থাকার কথা। এরমধ্যে ফায়ারম্যান থাকার কথা ২২ জন। কিন্তু বাস্তবে ১৫-১৬ জনের বেশি ফায়ারম্যান নেই প্রথম শ্রেণীর স্টেশনেও। দ্বিতীয় শ্রেণীর ফায়ার স্টেশনের অবস্থা আরও করুণ। ফায়ার সার্ভিসের সংকট কাটাতে কমপক্ষে ৩০ হাজার জনবল দরকার বলে মনে করেন শীর্ষ কর্মকর্তারা।

ফায়ার সার্ভিস সূত্রে জানা গেছে, আধুনিক সরঞ্জামের সংখ্যা বৃদ্ধি পেলেও প্রয়োজনের তুলনায় তা অপ্রতুল। বর্তমানে সারাদেশে ল্যাডার (মই) রয়েছে ২১টি। ঢাকায় রয়েছে মাত্র ১১টি। এরমধ্যে সম্প্রতি সর্বোচ্চ ৬৪ মিটারের ৫টি ল্যাডার যুক্ত হয়েছে। এগুলো ২২ তলা পর্যন্ত আগুন নির্বাপনে সক্ষম। এছাড়াও ৫৪ মিটার ও ২৭ মিটারের ল্যাডার রয়েছে। বিশেষায়িত গাড়িও বাড়ানো হচ্ছে।

ফায়ার সার্ভিসে বিশেষায়িত গাড়ি এখন প্রায় ৬শটি। এছাড়াও রাতে অভিযান পরিচালনার জন্য হেভি ডিউটি লাইট ইউনিট, রিমোট কন্ট্রোল অপারেশন ভিহাইক্যাল, ক্যামিকেলে আগুন নির্বাপনে সক্ষম ৫টি অত্যাধুনিক গাড়ি, ওয়াটার রেস্কিউয়ের জন্য রাবার বোট, বহুতল ভবনে রেস্কিউ করার জন্য ৩০ মিটার গভীরে কাজ করতে সক্ষম হ্যামার যোগ করে দুর্বলতা কাটানোর চেষ্টা করা হচ্ছে।

ফায়ার সার্ভিস অ্যান্ড সিভিল ডিফেন্স অধিদপ্তরের মহাপরিচালক (ডিজি) ব্রিগেডিয়ার জেনারেল মো. সাজ্জাদ হোসাইন বলেন, অতীতের তুলনায় ফায়ার সার্ভিসের স্বক্ষমতা অনেক বৃদ্ধি পেয়েছে। আন্তর্জাতিক মানের সব ধরনের সরঞ্জাম আমাদের আছে। যদি পার্শ্ববর্তী রাষ্ট্রগুলোর সঙ্গে তুলনা করা হয়, সেদিক থেকেও আমরা পিছিয়ে নেই। তবে, প্রশিক্ষণের বেলায় অনেক ঘাটতি রয়েছে, এটা সত্য। এজন্য প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নির্দেশে মুন্সীগঞ্জে বঙ্গবন্ধু ফায়ার একাডেমি প্রতিষ্ঠা করা হচ্ছে। আমাদের পরবর্তী মূল ফোকাস হচ্ছে, ফায়ার একাডেমির মাধ্যমে দক্ষ জনবল গড়ে তোলা।

এক প্রশ্নের জবাবে ফায়ার ডিজি বলেন, বর্তমানে ৬৮ মিটার বা ২২ তলা পর্যন্ত অগ্নি নির্বাপনের সক্ষমতা আমাদের রয়েছে। তবে, ক্ষয়ক্ষতি বাড়ার আগে আগুন নিয়ন্ত্রণে আনতে হলে, আগুনের সূত্রপাতের ১৫ মিনিটের মধ্যে নির্বাপন কাজ শুরু করতে হয়। কিন্তু যানজট ও সরু রাস্তার জন্য আমরা সময় মতো পৌঁছতে পারি না। ভবনগুলোও বিল্ডিং কোড না মানা এবং নিজস্ব কোন অগ্নিনির্বাপন ব্যবস্থা না থাকায় হতাহত ও ক্ষয়ক্ষতির পরিমাণ বৃদ্ধি পাচ্ছে। এটা নিশ্চিতভাবে বলতে পারি, সরঞ্জাম আছে পর্যাপ্ত। কিন্তু সেগুলো ব্যবহারের সুযোগ পাওয়া যাচ্ছে না।

বড় অগ্নিকাণ্ডে ফুটে ওঠে দুর্বলতা

সম্প্রতি কয়েক বছরে বিভিন্ন বহুতল ভবন, কলকারখানা ও ক্যামিকেল গোডাউনে অগ্নিকাণ্ডের ঘটনায় দুর্বলতা ফুটে ওঠে ফায়ার সার্ভিসের। আগুন নিয়ন্ত্রণে ঘণ্টার পর ঘণ্টা সময় লাগায় বিক্ষোভ করতে দেখা গেছে হতাহতদের পরিবার ও স্থানীয়দের। বিশেষ করে গত ৮ জুলাই বিকেলে নারায়ণগঞ্জের রূপগঞ্জে সজীব গ্রুপের হাশেম ফুড অ্যান্ড বেভারেজ কারখানায় আগুন নিয়ন্ত্রণে আনতে ২৯ ঘণ্টা সময় লাগে ফায়ার সার্ভিসের।

ততক্ষণে ৬তলা ভবনের পুরোটাই আগুনের তাণ্ডবে ধ্বংলীলায় পরিণত হয়। ৪র্থ তলায় আগুন ছড়াতে কয়েকঘণ্টা সময় লাগলেও সেখানে আটকা পড়া ৪৯ শ্রমিক পুড়ে অঙ্গার হয়ে যায়। এছাড়াও গত বছরের গত ৫ নভেম্বর রাজধানীর ডেমরায় কোনাপাড়া মাদ্রাসা রোডে পাশা টাওয়ারের ১০তলা ভবন এবং ২০১৯ সালে পুরান ঢাকার চকবাজারের চুড়িহাট্টার ভয়াবহ অগ্নিকাণ্ড এবং একই বছরের ২৮ মার্চ বনানীর এফ আর টাওয়ারের অগ্নিকাণ্ড নিয়ন্ত্রণেও হিমশিম খেতে দেখা যায় ফায়ার সার্ভিসকে।

ফায়ার সার্ভিসের মিডিয়া সেলের কর্মকর্তা মো. রায়হান বলেন, আগুনের সূত্রপাতের সময় নিয়ন্ত্রণ করা না গেলে সময়ের সঙ্গে ভয়াবহ রূপ ধারণ করে। তখন নিয়ন্ত্রণে আনতে বেগ পেতে হয়। তবে, আগুনের ব্যপ্তি বুঝে সর্বোচ্চ চেষ্টা করা হয়। অনেক ঘটনায় ফায়ারম্যানদের প্রাণহানির ঘটনাও ঘটে।

ফায়ার সপ্তাহ শুরু আজ

‘মুজিব বর্ষে শপথ করি, দুর্যোগে জীবন-সম্পদ রক্ষা করি’ - এই প্রতিপাদ্য সামনে রেখে আজ বৃহস্পতিবার থেকে সারাদেশে শুরু হচ্ছে ফায়ার সার্ভিস ও সিভিল ডিফেন্স সপ্তাহ-২০২১। রাজধানীর মিরপুরস্থ ফায়ার সার্ভিস ট্রেনিং কমপ্লেক্সের প্যারেড গ্রাউন্ডে সকাল ১১টায় এ উপলক্ষে আয়োজিত উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত থাকবেন স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান। ফায়ার সপ্তাহ উপলক্ষে রাষ্ট্রপতি ও প্রধানমন্ত্রী পৃথক বাণী দিয়েছেন। ফায়ার সপ্তাহ আগামী শনিবার শেষ হবে।

ফায়ার পদক পাচ্ছেন ৩৭ কর্মকর্তা-কর্মচারী

এদিকে ফায়ার সার্ভিস ও সিভিল ডিফেন্স অধিদপ্তরের ৩৭ জন কর্মকর্তা/কর্মচারীকে তাদের সাহসিকতা, ঝুঁকিপূর্ণ ও সেবামূলক কাজের স্বীকৃতিস্বরূপ এবার প্রেসিডেন্ট ফায়ার সার্ভিস ও সিভিল ডিফেন্স পদক, প্রেসিডেন্ট ফায়ার সার্ভিস ও সিভিল ডিফেন্স (সেবা) পদক এবং বাংলাদেশ ফায়ার সার্ভিস ও সিভিল ডিফেন্স পদক, বাংলাদেশ ফায়ার সার্ভিস ও সিভিল ডিফেন্স (সেবা) পদক প্রদান করা হবে। আজ বৃহস্পতিবার তাদের হাতে পদক তুলে দেয়া হবে।

বৃহস্পতিবার, ০৪ নভেম্বর ২০২১ , ১৯ কার্তিক ১৪২৮ ২৭ রবিউল আউয়াল ১৪৪৩

ফায়ার সার্ভিস সপ্তাহ শুরু হচ্ছে আজ

দুর্বলতা ঘোচাতে চায় ফায়ার সার্ভিস

আধুনিক প্রশিক্ষণে মূল ফোকাস

মাসুদ রানা

যেকোন অগ্নিকাণ্ড, দুর্ঘটনা কিংবা প্রাকৃতিক দুর্যোগে অন্যতম ভরসার নাম ফায়ার সার্ভিস। ঘটনা ঘটার সঙ্গে সঙ্গে সবার আগে সবার পাশে দাঁড়ায় বাহিনীটির সদস্যরা। হতাহত ও ক্ষয়ক্ষতির পরিমাণ কমিয়ে আনতে নিজেদের জীবন বাজি রাখতেও কার্পণ্য করেন না তারা।

কিন্তু দেশে শিল্পায়ন ও নগরায়ণ বৃদ্ধির সঙ্গে তাল মিলিয়ে প্রত্যাশা জায়গায় পৌঁছতে পারেনি সংস্থাটি। জনবল সংকট, উন্নত প্রশিক্ষণ ও আধুনিক সরঞ্জামের অভাবে অনেক ক্ষেত্রেই ফুটে ওঠে দুর্বলতার ছাপ। বিশেষ করে, সুউচ্চ ভবন, কলকারখানা কিংবা কেমিক্যাল গোডাউনের মতো জায়গায় বড় অগ্নিকাণ্ড ও ভবন ধসের মতো ঘটনায় দুর্বলতাগুলো ভয়াবহ রূপ ধারণ করে। আগুন নিয়ন্ত্রণে আনতে ঘণ্টার পর ঘণ্টা সময় লাগায় একদিকে বাড়ছে মৃত্যুর মিছিল। অন্যদিকে বাড়ছে ক্ষয়ক্ষতির পরিমাণও।

যদিও এর জন্য কখনই নিজেদের দুর্বলতাকে দায়ী করে না সংস্থাটির কর্মকর্তারা। তাদের দাবি, আধুনিক সরঞ্জামের সংকটের কারণে নয়, হতাহত ও ক্ষয়ক্ষতি বৃদ্ধির পেছনে মানুষের সচেতনতার অভাবই দায়ী। অবশ্য ছোট অগ্নিকাণ্ডগুলো দ্রুত সময়ের মধ্যে সহজেই নিয়ন্ত্রণে আনতে দেখা গেছে সংস্থাটিকে।

ফায়ার সার্ভিস সদরদপ্তর সূত্র জানায়, ২০২০ সালে সারাদেশে ২১ হাজার ৭৩টি অগ্নিকাণ্ডের ঘটনা ঘটেছে। এরমধ্যে সবচেয়ে বেশি বৈদ্যুতিক গোলযোগ থেকে ৭ হাজার ৭২৯টি অগ্নিকাণ্ডের ঘটনা ঘটেছে। চুলার আগুন থেকে ৩ হাজার ৫৬৪টি, বিড়ি-সিগারেটের টুকরো থেকে ৩ হাজার ৪৬৪টি, মেশিনের মিস ফায়ার থেকে ১৭৩টি, গ্যাস সিলিন্ডার ও বয়লার বিস্ফোরণে ১৩৫টি, গ্যাস লাইনের লিকেজ থেকে ৭২২টি অগ্নিকাণ্ডের ঘটনা ঘটেছে। এসব অগ্নিকাণ্ডের ঘটনায় ১৫৪ জন মানুষ নিহত হয়েছেন। আহত হয়েছেন ২৯৩ জন পুরুষ, ৭৮ জন নারী এবং ফায়ার সার্ভিসের ১৫ জন কর্মকর্তা কর্মচারী। এসব ঘটনায় মোট ক্ষতির পরিমাণ ২৪৬ কোটি ৬৫ লাখ হাজার কোটি টাকা। মোট উদ্ধারের পরিমাণ এক হাজার ৪২৬ কোটি ১৮ লাখ টাকারও বেশি।

ফায়ার সার্ভিসের কর্মকর্তারা জানান, অগ্নিকাণ্ডের পর দ্রুত সময়ের মধ্যে নির্বাপনের জন্য আধুনিক ফায়ার স্টেশন নির্মাণের পাশাপাশি বাড়ানো হচ্ছে ফায়ার স্টেশনের সংখ্যা। ১০ বছর আগে সারাদেশে ২০৪টি ফায়ার স্টেশন থাকলেও বর্তমানে সারাদেশে ফায়ার স্টেশনের সংখ্যা ৪৫৬টি। পাশাপাশি ঢাকা, গাজীপুর নারায়ণগঞ্জ ও রূপপুরসহ বিভিন্ন জায়গায় নির্মাণ করা হচ্ছে ১১টি আধুনিক ফায়ার স্টেশন।

কর্তকর্মাদের দাবি, ফায়ার স্টেশনের সংখ্যা বাড়লেও সেই অনুপাতে বাড়েনি জনবল ও আধুনিক সরঞ্জাম। বর্তমানে সংস্থাটি জনবল রয়েছে ১৩ হাজার ৪৭৩ জন। যা প্রয়োজনের তুলনায় খুবই কম। জানা গেছে, প্রথম শ্রেণীর ফায়ার স্টেশনগুলোতে ৩৫ জন করে জনবল থাকার কথা। এরমধ্যে ফায়ারম্যান থাকার কথা ২২ জন। কিন্তু বাস্তবে ১৫-১৬ জনের বেশি ফায়ারম্যান নেই প্রথম শ্রেণীর স্টেশনেও। দ্বিতীয় শ্রেণীর ফায়ার স্টেশনের অবস্থা আরও করুণ। ফায়ার সার্ভিসের সংকট কাটাতে কমপক্ষে ৩০ হাজার জনবল দরকার বলে মনে করেন শীর্ষ কর্মকর্তারা।

ফায়ার সার্ভিস সূত্রে জানা গেছে, আধুনিক সরঞ্জামের সংখ্যা বৃদ্ধি পেলেও প্রয়োজনের তুলনায় তা অপ্রতুল। বর্তমানে সারাদেশে ল্যাডার (মই) রয়েছে ২১টি। ঢাকায় রয়েছে মাত্র ১১টি। এরমধ্যে সম্প্রতি সর্বোচ্চ ৬৪ মিটারের ৫টি ল্যাডার যুক্ত হয়েছে। এগুলো ২২ তলা পর্যন্ত আগুন নির্বাপনে সক্ষম। এছাড়াও ৫৪ মিটার ও ২৭ মিটারের ল্যাডার রয়েছে। বিশেষায়িত গাড়িও বাড়ানো হচ্ছে।

ফায়ার সার্ভিসে বিশেষায়িত গাড়ি এখন প্রায় ৬শটি। এছাড়াও রাতে অভিযান পরিচালনার জন্য হেভি ডিউটি লাইট ইউনিট, রিমোট কন্ট্রোল অপারেশন ভিহাইক্যাল, ক্যামিকেলে আগুন নির্বাপনে সক্ষম ৫টি অত্যাধুনিক গাড়ি, ওয়াটার রেস্কিউয়ের জন্য রাবার বোট, বহুতল ভবনে রেস্কিউ করার জন্য ৩০ মিটার গভীরে কাজ করতে সক্ষম হ্যামার যোগ করে দুর্বলতা কাটানোর চেষ্টা করা হচ্ছে।

ফায়ার সার্ভিস অ্যান্ড সিভিল ডিফেন্স অধিদপ্তরের মহাপরিচালক (ডিজি) ব্রিগেডিয়ার জেনারেল মো. সাজ্জাদ হোসাইন বলেন, অতীতের তুলনায় ফায়ার সার্ভিসের স্বক্ষমতা অনেক বৃদ্ধি পেয়েছে। আন্তর্জাতিক মানের সব ধরনের সরঞ্জাম আমাদের আছে। যদি পার্শ্ববর্তী রাষ্ট্রগুলোর সঙ্গে তুলনা করা হয়, সেদিক থেকেও আমরা পিছিয়ে নেই। তবে, প্রশিক্ষণের বেলায় অনেক ঘাটতি রয়েছে, এটা সত্য। এজন্য প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নির্দেশে মুন্সীগঞ্জে বঙ্গবন্ধু ফায়ার একাডেমি প্রতিষ্ঠা করা হচ্ছে। আমাদের পরবর্তী মূল ফোকাস হচ্ছে, ফায়ার একাডেমির মাধ্যমে দক্ষ জনবল গড়ে তোলা।

এক প্রশ্নের জবাবে ফায়ার ডিজি বলেন, বর্তমানে ৬৮ মিটার বা ২২ তলা পর্যন্ত অগ্নি নির্বাপনের সক্ষমতা আমাদের রয়েছে। তবে, ক্ষয়ক্ষতি বাড়ার আগে আগুন নিয়ন্ত্রণে আনতে হলে, আগুনের সূত্রপাতের ১৫ মিনিটের মধ্যে নির্বাপন কাজ শুরু করতে হয়। কিন্তু যানজট ও সরু রাস্তার জন্য আমরা সময় মতো পৌঁছতে পারি না। ভবনগুলোও বিল্ডিং কোড না মানা এবং নিজস্ব কোন অগ্নিনির্বাপন ব্যবস্থা না থাকায় হতাহত ও ক্ষয়ক্ষতির পরিমাণ বৃদ্ধি পাচ্ছে। এটা নিশ্চিতভাবে বলতে পারি, সরঞ্জাম আছে পর্যাপ্ত। কিন্তু সেগুলো ব্যবহারের সুযোগ পাওয়া যাচ্ছে না।

বড় অগ্নিকাণ্ডে ফুটে ওঠে দুর্বলতা

সম্প্রতি কয়েক বছরে বিভিন্ন বহুতল ভবন, কলকারখানা ও ক্যামিকেল গোডাউনে অগ্নিকাণ্ডের ঘটনায় দুর্বলতা ফুটে ওঠে ফায়ার সার্ভিসের। আগুন নিয়ন্ত্রণে ঘণ্টার পর ঘণ্টা সময় লাগায় বিক্ষোভ করতে দেখা গেছে হতাহতদের পরিবার ও স্থানীয়দের। বিশেষ করে গত ৮ জুলাই বিকেলে নারায়ণগঞ্জের রূপগঞ্জে সজীব গ্রুপের হাশেম ফুড অ্যান্ড বেভারেজ কারখানায় আগুন নিয়ন্ত্রণে আনতে ২৯ ঘণ্টা সময় লাগে ফায়ার সার্ভিসের।

ততক্ষণে ৬তলা ভবনের পুরোটাই আগুনের তাণ্ডবে ধ্বংলীলায় পরিণত হয়। ৪র্থ তলায় আগুন ছড়াতে কয়েকঘণ্টা সময় লাগলেও সেখানে আটকা পড়া ৪৯ শ্রমিক পুড়ে অঙ্গার হয়ে যায়। এছাড়াও গত বছরের গত ৫ নভেম্বর রাজধানীর ডেমরায় কোনাপাড়া মাদ্রাসা রোডে পাশা টাওয়ারের ১০তলা ভবন এবং ২০১৯ সালে পুরান ঢাকার চকবাজারের চুড়িহাট্টার ভয়াবহ অগ্নিকাণ্ড এবং একই বছরের ২৮ মার্চ বনানীর এফ আর টাওয়ারের অগ্নিকাণ্ড নিয়ন্ত্রণেও হিমশিম খেতে দেখা যায় ফায়ার সার্ভিসকে।

ফায়ার সার্ভিসের মিডিয়া সেলের কর্মকর্তা মো. রায়হান বলেন, আগুনের সূত্রপাতের সময় নিয়ন্ত্রণ করা না গেলে সময়ের সঙ্গে ভয়াবহ রূপ ধারণ করে। তখন নিয়ন্ত্রণে আনতে বেগ পেতে হয়। তবে, আগুনের ব্যপ্তি বুঝে সর্বোচ্চ চেষ্টা করা হয়। অনেক ঘটনায় ফায়ারম্যানদের প্রাণহানির ঘটনাও ঘটে।

ফায়ার সপ্তাহ শুরু আজ

‘মুজিব বর্ষে শপথ করি, দুর্যোগে জীবন-সম্পদ রক্ষা করি’ - এই প্রতিপাদ্য সামনে রেখে আজ বৃহস্পতিবার থেকে সারাদেশে শুরু হচ্ছে ফায়ার সার্ভিস ও সিভিল ডিফেন্স সপ্তাহ-২০২১। রাজধানীর মিরপুরস্থ ফায়ার সার্ভিস ট্রেনিং কমপ্লেক্সের প্যারেড গ্রাউন্ডে সকাল ১১টায় এ উপলক্ষে আয়োজিত উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত থাকবেন স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান। ফায়ার সপ্তাহ উপলক্ষে রাষ্ট্রপতি ও প্রধানমন্ত্রী পৃথক বাণী দিয়েছেন। ফায়ার সপ্তাহ আগামী শনিবার শেষ হবে।

ফায়ার পদক পাচ্ছেন ৩৭ কর্মকর্তা-কর্মচারী

এদিকে ফায়ার সার্ভিস ও সিভিল ডিফেন্স অধিদপ্তরের ৩৭ জন কর্মকর্তা/কর্মচারীকে তাদের সাহসিকতা, ঝুঁকিপূর্ণ ও সেবামূলক কাজের স্বীকৃতিস্বরূপ এবার প্রেসিডেন্ট ফায়ার সার্ভিস ও সিভিল ডিফেন্স পদক, প্রেসিডেন্ট ফায়ার সার্ভিস ও সিভিল ডিফেন্স (সেবা) পদক এবং বাংলাদেশ ফায়ার সার্ভিস ও সিভিল ডিফেন্স পদক, বাংলাদেশ ফায়ার সার্ভিস ও সিভিল ডিফেন্স (সেবা) পদক প্রদান করা হবে। আজ বৃহস্পতিবার তাদের হাতে পদক তুলে দেয়া হবে।