নওগাঁয় সনদ জাল করে বীর মুক্তিযোদ্ধার ভাতা নিচ্ছেন ভুয়া মুক্তিযোদ্ধা পরিবার

নওগাঁর রাণীনগরে প্রকৃত মুক্তিযোদ্ধা ছোট ভাইয়ের মুক্তিযোদ্ধার কাগজপত্রে তার বড় ভাই নিজের নাম সংযুক্ত করে মুক্তিযোদ্ধা হিসেবে গেজেটভুক্ত হয়েছেন বলে অভিযোগ পাওয়া গেছে। প্রকৃত ও ভুয়া মুক্তিযোদ্ধা হিসেবে বিতর্ক ওঠা ওই দুই সহোদরের বাড়ি রাণীনগর উপজেলার ভবানীপুর গ্রামে। তারা হলেন, ওই গ্রামের মৃত কফিল উদ্দিন সরদারের ছেলে লখিন সরদার ও জাহের আলী সরদার(জার্মান)।

সম্প্রতি প্রয়াত জাহের আলীর স্ত্রী রেনুকা বেওয়া তার স্বামীকে প্রকৃত মুক্তিযোদ্ধা দাবি করে গেজেট সংশোধনের আবেদন করেন রাণীনগর ইউএনও’র কাছে । আবেদনে তিনি উল্লেখ করেছেন ৩০৮৪ নম্বর গেজেটে তাঁর স্বামী মুক্তিযোদ্ধা জাহের আলীর পরিবর্তে তার বড় ভাই লখিন উদ্দিন সরদারের নাম যোগসাজসে অন্তর্ভুক্ত করা হয়েছে।

জাহের আলীর পরিবারের দাবী, জাহের আলীর রয়েছে মুক্তিযুদ্ধের সর্বাধিনায়ক জেনারেল আতাউল গনি ওসমানীর দেওয়া মুক্তিযোদ্ধা সনদ, অস্ত্র জমা দানের সনদপত্র, লালবার্তাতে তার নাম রয়েছে। এ ছাড়া নওগাঁ জেলা মুক্তিযোদ্ধা তালিকায় তার নাম রয়েছে ২০৫ নম্বরে। অথচ এসবের কোন কিছুই নেই লখিন উদ্দিন সরদারের।

মুক্তিযোদ্ধা জাহির আলীর সহযোদ্ধা মুক্তিযোদ্ধা সিরাজুল ইসলাম,ইয়াছিন আলী মৃধা,আব্দুল মতিন,মজিবর রহমমানসহ বেশকিছু মুক্তিযোদ্ধা জানান, লখিন উদ্দিন সরদারের ছোট ভাই জাহের আলী সরদার প্রকৃত এবং সম্মুখসারির মুক্তিযোদ্ধা। ২০১৬ সালের ১৬ ফেব্রুয়ারি মৃত্যু বরণকারী পুলিশের সাবেক সদস্য (ব্যালিয়ন নং-৯৫০) মুক্তিযোদ্ধা জাহের আলীর নিকট তাঁরা প্রায় সকলেই দেশের ভিতরে এবং ভারতে মুক্তিযুদ্ধে অস্ত্র পরিচালনার প্রশিক্ষণ নিয়েছেন। ২০০৫ সালের ২৯ নভেম্বর মুক্তিযোদ্ধা গেজেটে নাম প্রকাশের জন্য মুক্তিযুদ্ধবিষয়ক মন্ত্রণালয়ের সচিব বরাবর তিনি একটি আবেদন করেন। এরপর তার আবেদনের প্রেক্ষিতে মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ক মন্ত্রণালয় থেকে গেজেটভুক্তির জন্য তথ্য চেয়ে উপজেলা প্রসাশনের মাধ্যমে তার গ্রামের ঠিকানায় একটি নোটিশ আসে। কিন্তু মুক্তিযোদ্ধা যাচাই-বাছাই এবং সংশোধনীর অনেক আগে থেকেই মুক্তিযোদ্ধা জাহের আলীর পরিবার গ্রামের বাড়ি ছেড়ে নওগাঁ শহরের আরজি নওগাঁ মৈত্র পাড়া এলাকায় স্থায়ীভাবে বসবাস করে আসছেন। গ্রামের বাড়িতে তাদের অনুপস্থিতিতে নোটিশটি গ্রহণ করেন আশির দশকে মৃত. লখিন উদ্দিন সরদারের স্ত্রী সাজেদা বেওয়া। তিনি কৌশলে প্রকৃত মুক্তিযোদ্ধা জাহের আলীর পরিবারের কাছে বিষয়টি গোপন করে অফিসে যোগাযোগ করে মুক্তিযোদ্ধা জাহের আলীর নামের পরিবর্তে নিজের স্বামীর নাম মৃত. লখিন উদ্দিন সরদারের নাম মুক্তিযোদ্ধার গেজেটে অর্ন্তভুক্ত করে নিয়েছেন। পিতা-মাতার নাম এবং ঠিকানা একই হওয়ায় নাম ভুল হয়েছে মর্মে সংশোধনীর আবেদন করে খুব সহজে এই কাজটি করা সম্ভব হয়েছে বলে জানান মুক্তিযোদ্ধাসহ স্থানীয়রা।

সাজেদা বেওয়া বলেন, এ বিষয়ে আমার কাছে কোন কাগজপত্র নেই। যুদ্ধ করেছেন বলেই আমার স্বামী লখিন সরদারের নাম মন্ত্রণালয় থেকেই গেজেটভুক্ত হয়ে এসেছে।

নওগাঁ জেলা মুক্তিযোদ্ধা ইউনিটের সাবেক কমান্ডার হারুন-অল-রশিদ বলেন, বিগত দিনে অনেকবার মুক্তিযোদ্ধা যাচাই বাছাইয়ের সুযোগ এসেছিল। তিনি বা তার পরিবার আমার সাথে কোন প্রকার যোগাযোগ করেছে বলে আমার জানা নেই। পরবর্তীতে আবারও যদি যাচাই বাছাই কিংবা নাম সংশোধনের সুযোগ আসে তখন তাদের বিষয়টি সমাধানের চেষ্টা করবো।

রাণীনগর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা সুশান্ত কুমার মাহাতো বলেন, প্রয়াত জাহের আলীর স্ত্রী রেনুকা বেওয়ার অভিযোগ পেয়েছি। প্রয়োজনীয় পদক্ষেপের জন্য এটি যথাযথ কর্তৃপক্ষের নিকট প্রেরণ করা হয়েছে।

আরও খবর
সুবর্ণচরে তুচ্ছ ঘটনায় শিক্ষার্থীদের মধ্যে সংঘর্ষ আহত ১০
সেন্টমার্টিনে ধরা পড়েছে ২০৩টি লাল কোরাল
টঙ্গীতে পাঁচ ঘর পুড়ে ছাই
গোয়ালন্দে প্রতারণা করে প্রতিবন্ধীর জমি হাতিয়ে নেয়ার অভিযোগ কাউন্সিলরের বিরুদ্ধে
বরিশালে বিএনপির তিন সাংগঠনিক কমিটি ঘোষণা
রুমায় ৩শ ৩৪ বস্তা চাল চুরির অভিযোগ চেয়ারম্যানের বিরুদ্ধে
সাগরে কাঙ্খিত ইলিশ না পেয়ে ঘাটে ফিরছেন হতাশ জেলেরা
সীতাকুন্ডে স্ত্রী হত্যাকারী স্বামীর মৃত্যু
সৈয়দপুরে সর্বস্ব পুঁড়ে ছাঁই ৩ পরিবারের
বিজিএমইএ পরিশোধ করবে শ্রমিকের সব দেনা-পাওনা
চাটখিল অডিটোরিয়াম সংস্কারের অভাবে ব্যবহারের অনুপযোগী
গোবিন্দগঞ্জের সরকারি পুকুর সংস্কারে অনিয়মের অভিযোগ

শুক্রবার, ০৫ নভেম্বর ২০২১ , ২০ কার্তিক ১৪২৮ ২৮ রবিউল আউয়াল ১৪৪৩

নওগাঁয় সনদ জাল করে বীর মুক্তিযোদ্ধার ভাতা নিচ্ছেন ভুয়া মুক্তিযোদ্ধা পরিবার

জেলা বার্তা পরিবেশক, নওগাঁ

নওগাঁর রাণীনগরে প্রকৃত মুক্তিযোদ্ধা ছোট ভাইয়ের মুক্তিযোদ্ধার কাগজপত্রে তার বড় ভাই নিজের নাম সংযুক্ত করে মুক্তিযোদ্ধা হিসেবে গেজেটভুক্ত হয়েছেন বলে অভিযোগ পাওয়া গেছে। প্রকৃত ও ভুয়া মুক্তিযোদ্ধা হিসেবে বিতর্ক ওঠা ওই দুই সহোদরের বাড়ি রাণীনগর উপজেলার ভবানীপুর গ্রামে। তারা হলেন, ওই গ্রামের মৃত কফিল উদ্দিন সরদারের ছেলে লখিন সরদার ও জাহের আলী সরদার(জার্মান)।

সম্প্রতি প্রয়াত জাহের আলীর স্ত্রী রেনুকা বেওয়া তার স্বামীকে প্রকৃত মুক্তিযোদ্ধা দাবি করে গেজেট সংশোধনের আবেদন করেন রাণীনগর ইউএনও’র কাছে । আবেদনে তিনি উল্লেখ করেছেন ৩০৮৪ নম্বর গেজেটে তাঁর স্বামী মুক্তিযোদ্ধা জাহের আলীর পরিবর্তে তার বড় ভাই লখিন উদ্দিন সরদারের নাম যোগসাজসে অন্তর্ভুক্ত করা হয়েছে।

জাহের আলীর পরিবারের দাবী, জাহের আলীর রয়েছে মুক্তিযুদ্ধের সর্বাধিনায়ক জেনারেল আতাউল গনি ওসমানীর দেওয়া মুক্তিযোদ্ধা সনদ, অস্ত্র জমা দানের সনদপত্র, লালবার্তাতে তার নাম রয়েছে। এ ছাড়া নওগাঁ জেলা মুক্তিযোদ্ধা তালিকায় তার নাম রয়েছে ২০৫ নম্বরে। অথচ এসবের কোন কিছুই নেই লখিন উদ্দিন সরদারের।

মুক্তিযোদ্ধা জাহির আলীর সহযোদ্ধা মুক্তিযোদ্ধা সিরাজুল ইসলাম,ইয়াছিন আলী মৃধা,আব্দুল মতিন,মজিবর রহমমানসহ বেশকিছু মুক্তিযোদ্ধা জানান, লখিন উদ্দিন সরদারের ছোট ভাই জাহের আলী সরদার প্রকৃত এবং সম্মুখসারির মুক্তিযোদ্ধা। ২০১৬ সালের ১৬ ফেব্রুয়ারি মৃত্যু বরণকারী পুলিশের সাবেক সদস্য (ব্যালিয়ন নং-৯৫০) মুক্তিযোদ্ধা জাহের আলীর নিকট তাঁরা প্রায় সকলেই দেশের ভিতরে এবং ভারতে মুক্তিযুদ্ধে অস্ত্র পরিচালনার প্রশিক্ষণ নিয়েছেন। ২০০৫ সালের ২৯ নভেম্বর মুক্তিযোদ্ধা গেজেটে নাম প্রকাশের জন্য মুক্তিযুদ্ধবিষয়ক মন্ত্রণালয়ের সচিব বরাবর তিনি একটি আবেদন করেন। এরপর তার আবেদনের প্রেক্ষিতে মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ক মন্ত্রণালয় থেকে গেজেটভুক্তির জন্য তথ্য চেয়ে উপজেলা প্রসাশনের মাধ্যমে তার গ্রামের ঠিকানায় একটি নোটিশ আসে। কিন্তু মুক্তিযোদ্ধা যাচাই-বাছাই এবং সংশোধনীর অনেক আগে থেকেই মুক্তিযোদ্ধা জাহের আলীর পরিবার গ্রামের বাড়ি ছেড়ে নওগাঁ শহরের আরজি নওগাঁ মৈত্র পাড়া এলাকায় স্থায়ীভাবে বসবাস করে আসছেন। গ্রামের বাড়িতে তাদের অনুপস্থিতিতে নোটিশটি গ্রহণ করেন আশির দশকে মৃত. লখিন উদ্দিন সরদারের স্ত্রী সাজেদা বেওয়া। তিনি কৌশলে প্রকৃত মুক্তিযোদ্ধা জাহের আলীর পরিবারের কাছে বিষয়টি গোপন করে অফিসে যোগাযোগ করে মুক্তিযোদ্ধা জাহের আলীর নামের পরিবর্তে নিজের স্বামীর নাম মৃত. লখিন উদ্দিন সরদারের নাম মুক্তিযোদ্ধার গেজেটে অর্ন্তভুক্ত করে নিয়েছেন। পিতা-মাতার নাম এবং ঠিকানা একই হওয়ায় নাম ভুল হয়েছে মর্মে সংশোধনীর আবেদন করে খুব সহজে এই কাজটি করা সম্ভব হয়েছে বলে জানান মুক্তিযোদ্ধাসহ স্থানীয়রা।

সাজেদা বেওয়া বলেন, এ বিষয়ে আমার কাছে কোন কাগজপত্র নেই। যুদ্ধ করেছেন বলেই আমার স্বামী লখিন সরদারের নাম মন্ত্রণালয় থেকেই গেজেটভুক্ত হয়ে এসেছে।

নওগাঁ জেলা মুক্তিযোদ্ধা ইউনিটের সাবেক কমান্ডার হারুন-অল-রশিদ বলেন, বিগত দিনে অনেকবার মুক্তিযোদ্ধা যাচাই বাছাইয়ের সুযোগ এসেছিল। তিনি বা তার পরিবার আমার সাথে কোন প্রকার যোগাযোগ করেছে বলে আমার জানা নেই। পরবর্তীতে আবারও যদি যাচাই বাছাই কিংবা নাম সংশোধনের সুযোগ আসে তখন তাদের বিষয়টি সমাধানের চেষ্টা করবো।

রাণীনগর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা সুশান্ত কুমার মাহাতো বলেন, প্রয়াত জাহের আলীর স্ত্রী রেনুকা বেওয়ার অভিযোগ পেয়েছি। প্রয়োজনীয় পদক্ষেপের জন্য এটি যথাযথ কর্তৃপক্ষের নিকট প্রেরণ করা হয়েছে।