বাড়লো ডিজেলের দাম ধর্মঘটে পরিবহন

জ্বালানি তেলের দাম বাড়ানো ও বঙ্গবন্ধু সেতুসহ দুটি সেতুর টোল বৃদ্ধির কারণে সারাদেশে যাত্রী ও পণ্য পরিবহনে অনির্দিষ্টকাল ধর্মঘট পালনের ঘোষণা দিয়েছে মালিক ও শ্রমিকরা। যা আজ সকাল ৬টা থেকে শুরু হয়েছে।

তবে রাজধানীর বেশির ভাগ বাস-মিনিবাস সিএনজি চালিত হওয়ায় ঢাকার যাত্রীবাহী বাস বন্ধের বিষয়ে কোন সিদ্ধান্ত হয়নি। ডিজেল চালিত বাস মালিকরা কোন গাড়ি চালাবে না বলে জানান তারা।

গত বুধবার রাতে ডিজেল ও কেরোসিনের দাম প্রতি লিটারে ১৫ টাকা করে বাড়ানো হয়েছে। এতে প্রতি লিটার ডিজেল ও কেরোসিনের দাম ৬৫ টাকা থেকে বাড়িয়ে ৮০ টাকা করা হয়েছে। এর আগে গত মঙ্গলবার রাতে বঙ্গবন্ধু ও মুক্তারপুর সেতুর টোলের হার ২০-৩০ শতাংশ বাড়িয়েছে সেতু কর্তৃপক্ষ। যা অবিলম্বে কার্যকরের নির্দেশ দেয়া হয়েছে। কোন আলোচনা ছাড়া গুরুত্বপূর্ণ এই সেতু দুটি টোল বাড়ানোর ফলে পণ্য পরিবহনে ব্যয় অনেক বেড়ে যাবে বলে জানিয়েছেন ট্রাক কাভার্ডভ্যান মালিকরা।

ডিজেলের দাম বাড়ানোর প্রেক্ষাপটে বাস ভাড়া ‘যৌক্তিক হারে’ বাড়ানোর জন্য সরকারের কাছে আবেদন জানিয়েছে সড়ক পরিবহন মালিক সমিতি। গতকাল সমিতির পক্ষ থেকে একটি প্রস্তাব সড়ক পরিবহন কর্তৃপক্ষের (বিআরটিএ)’র চেয়ারম্যানের কাছে জমা দেয়া হয়েছে। বাস-ট্রাক মালিকদের আরেক সংগঠন বাস-ট্রাক ওনার্স অ্যাসোসিয়েশনও ভাড়া বাড়ানোর দাবি জানিয়েছেন।

তবে বর্ধিত টোল ও জ্বালানি তেলে দাম প্রত্যাহারের দাবি ট্রাক কাভার্ডভ্যান প্রাইম মুভার পণ্যবাহী মালিক অ্যাসোসিয়েশন। মালিক-শ্রমিক ঐক্যপরিষদের সভাপতি রুস্তম আলী সংবাদকে বলেন, ‘করোনার কারণে পণ্য পরিবহন মালিকদের পিঠ দেয়ালে ঠেকে গেছে। অর্থ সংকটের কারণে ট্রাক ও কাভার্ডভ্যান মালিকরা ব্যবসা ছেড়ে দিয়েছে। এর মধ্যে আবার সেতুর টোল ও ডিজেলের দাম বৃদ্ধি করা হয়েছে। আগে জ্বালানি তেলের দাম বৃদ্ধি করতে হলে গণশুনানি করা হতো। এবার কোন আলোচনা ছাড়াই তা বৃদ্ধি করা হয়েছে। তাই টোলের হার ও জ্বালানি তেলের দাম কমানোসহ দুই দফা দাবিতে এই অনির্দিষ্টকালীন ধর্মঘট পালনের ঘোষণা দেয়া হয়েছে।’

এর আগে ২০১৫ সালে গণপরিবহনের ভাড়া পুনর্নির্ধারণ করে সরকার। সে সময় দূরপাল্লার বাসের প্রতি কিলোমিটার ভাড়া নির্ধারণ করা হয় ১ টাকা ৪২ পয়সা। এছাড়া ঢাকা শহরে প্রতি কিলোমিটার ১ টাকা ৭০ পয়সা এবং চট্টগ্রাম মহানগরে প্রতি কিলোমিটার বাসের ভাড়া ১ টাকা ৬০ পয়সা নির্ধারণ করা হয়।

বিআরটিএর চেয়ারম্যানের কাছে পাঠানো পরিবহন মালিক সমিতির আবেদনে বলা হয়, ঢাকা ও চট্টগ্রাম মহানগরসহ সারাদেশের দূরপাল্লার রুটে গত ৮ বছর কোন ভাড়া বাড়ানো হয়নি। কিন্তু এ সময়ে গাড়ির চেসিস, টায়ার, টিউব, খুচরা যন্ত্রাংশ এবং সব ধরনের কর ও ফি বেড়েছে। এ কারণে গাড়ির পরিচালন ব্যয় ‘কয়েকগুণ’ বেড়ে গেছে।

সমিতির মহাসচিব খন্দকার এনায়েত উল্যাহ স্বাক্ষরিত চিঠিতে বলা হয়, ‘বাস ভাড়া বৃদ্ধির জন্য আমরা আপনাদের বার বার আবেদন করেছি। কিন্তু এ ব্যাপারে কোন পদক্ষেপ নেয়া হয়নি। এর মধ্যে জ্বালানি মন্ত্রণালয়ের প্রজ্ঞাপনের মাধ্যমে অস্বাভাবিক হারে ডিজেলের মূল্য প্রতি লিটারে ১৫ টাকা বাড়ানো হয়েছে।’

পরিবহন মালিকরা বলছেন, ডিজেলের দাম বাড়ায় গাড়ি চালিয়ে মালিকদের কোন লাভ হবে না। তেলের দাম ওঠাতেই ‘হিমশিম’ খেতে হবে। এ অবস্থায় সারাদেশের মালিকরা মনে করে, অবিলম্বে বাস ভাড়া না বাড়ানো হলে গাড়ি চালানো কোনভাবেই সম্ভব হবে না।

এ বিষয়ে বাস-ট্রাক ওনার্স অ্যাসোসিয়েশনের সহ-সভাপতি ও শ্যামলী পরিবহনের ব্যবস্থাপনা পরিচালক রমেশ চন্দ্র ঘোষ সংবাদকে বলেন, ‘শুক্রবার সকাল ৬টা থেকে শ্যামলী পরিবহনের গাড়ি না চালানো সিদ্ধান্ত নেয়া হয়েছে। কারণ প্রতি লিটাল ডিজেলের দাম ১৫ টাকা বৃদ্ধির কারণে প্রতিটি গাড়ির জন্য অতিরিক্ত

৩ হাজার টাকা বেশি প্রয়োজন। বিদ্যমান ভাড়ায় গাড়ি চালানে এই টাকা লোকসান দিতে হবে। তাই দূরপাল্লার বাস মালিকরা নিজ ইচ্ছায় শুক্রবার সকাল থেকে কোন গাড়ি চালাবে না। ভাড়া বৃদ্ধির সরকারি কোন নির্দেশনা ছাড়া বেশি ভাড়া নিতে সমিতির পক্ষ থেকে নিষেধ করা হয়েছে।’

জ্বালানি তেলের দাম বৃদ্ধির অযুহাতে কোন ঘোষণা ছাড়া ঢাকা-নারায়ণগঞ্জসহ বিভিন্ন রুটের বাস-মিনিবাসের ভাড়া বৃদ্ধি করেছে মালিকরা। এ নিয়ে গতকাল রাজধানীর বিভিন্ন রুটে যাত্রী ও বাস চালকের সহযোগীদের মধ্যে বাক-বিতন্ডার ঘটনা ঘটে। কোন ঘোষণা ছাড়াই ঢাকা-নারায়ণগঞ্জ রুটের প্রতিটি বাসের ভাড়া ১০-১৪ টাকা বৃদ্ধি করা হয়েছে বলে যাত্রীরা জানান।

যাত্রীরা বলেন, রাজধানীর গুলিস্তান থেকে নারায়ণগঞ্জের উৎসব, বন্ধন, হিমাচল পরিবহনে আগে ভাড়া ছিল ৩৬ টাকা। সে ভাড়া বৃহস্পতিবার থেকে ৫০ টাকা নেয়া হচ্ছে। এসি বাস সার্ভিস শীতল পরিবহনের ভাড়া ছিল ৫৫ টাকা, এটি বাড়িয়ে করা হয়েছে ৬৫ টাকা।

আনোয়ার হোসেন নামের এক যাত্রী বলেন, ‘আমার তো টিকিট কাটতে এসে চোখ কপালে ওঠে গেছে। এক লাফে ১৪ টাকা ভাড়া বৃদ্ধি! আসলে আমরা তো আর মানুষ না। যে যেভাবে ইচ্ছা সব বাড়িয়ে দিচ্ছে। এখন আর দেশে কোন নিয়ম নেই।’

শুক্রবার, ০৫ নভেম্বর ২০২১ , ২০ কার্তিক ১৪২৮ ২৮ রবিউল আউয়াল ১৪৪৩

বাড়লো ডিজেলের দাম ধর্মঘটে পরিবহন

ইবরাহীম মাহমুদ আকাশ

image

জ্বালানি তেলের দাম বাড়ানো ও বঙ্গবন্ধু সেতুসহ দুটি সেতুর টোল বৃদ্ধির কারণে সারাদেশে যাত্রী ও পণ্য পরিবহনে অনির্দিষ্টকাল ধর্মঘট পালনের ঘোষণা দিয়েছে মালিক ও শ্রমিকরা। যা আজ সকাল ৬টা থেকে শুরু হয়েছে।

তবে রাজধানীর বেশির ভাগ বাস-মিনিবাস সিএনজি চালিত হওয়ায় ঢাকার যাত্রীবাহী বাস বন্ধের বিষয়ে কোন সিদ্ধান্ত হয়নি। ডিজেল চালিত বাস মালিকরা কোন গাড়ি চালাবে না বলে জানান তারা।

গত বুধবার রাতে ডিজেল ও কেরোসিনের দাম প্রতি লিটারে ১৫ টাকা করে বাড়ানো হয়েছে। এতে প্রতি লিটার ডিজেল ও কেরোসিনের দাম ৬৫ টাকা থেকে বাড়িয়ে ৮০ টাকা করা হয়েছে। এর আগে গত মঙ্গলবার রাতে বঙ্গবন্ধু ও মুক্তারপুর সেতুর টোলের হার ২০-৩০ শতাংশ বাড়িয়েছে সেতু কর্তৃপক্ষ। যা অবিলম্বে কার্যকরের নির্দেশ দেয়া হয়েছে। কোন আলোচনা ছাড়া গুরুত্বপূর্ণ এই সেতু দুটি টোল বাড়ানোর ফলে পণ্য পরিবহনে ব্যয় অনেক বেড়ে যাবে বলে জানিয়েছেন ট্রাক কাভার্ডভ্যান মালিকরা।

ডিজেলের দাম বাড়ানোর প্রেক্ষাপটে বাস ভাড়া ‘যৌক্তিক হারে’ বাড়ানোর জন্য সরকারের কাছে আবেদন জানিয়েছে সড়ক পরিবহন মালিক সমিতি। গতকাল সমিতির পক্ষ থেকে একটি প্রস্তাব সড়ক পরিবহন কর্তৃপক্ষের (বিআরটিএ)’র চেয়ারম্যানের কাছে জমা দেয়া হয়েছে। বাস-ট্রাক মালিকদের আরেক সংগঠন বাস-ট্রাক ওনার্স অ্যাসোসিয়েশনও ভাড়া বাড়ানোর দাবি জানিয়েছেন।

তবে বর্ধিত টোল ও জ্বালানি তেলে দাম প্রত্যাহারের দাবি ট্রাক কাভার্ডভ্যান প্রাইম মুভার পণ্যবাহী মালিক অ্যাসোসিয়েশন। মালিক-শ্রমিক ঐক্যপরিষদের সভাপতি রুস্তম আলী সংবাদকে বলেন, ‘করোনার কারণে পণ্য পরিবহন মালিকদের পিঠ দেয়ালে ঠেকে গেছে। অর্থ সংকটের কারণে ট্রাক ও কাভার্ডভ্যান মালিকরা ব্যবসা ছেড়ে দিয়েছে। এর মধ্যে আবার সেতুর টোল ও ডিজেলের দাম বৃদ্ধি করা হয়েছে। আগে জ্বালানি তেলের দাম বৃদ্ধি করতে হলে গণশুনানি করা হতো। এবার কোন আলোচনা ছাড়াই তা বৃদ্ধি করা হয়েছে। তাই টোলের হার ও জ্বালানি তেলের দাম কমানোসহ দুই দফা দাবিতে এই অনির্দিষ্টকালীন ধর্মঘট পালনের ঘোষণা দেয়া হয়েছে।’

এর আগে ২০১৫ সালে গণপরিবহনের ভাড়া পুনর্নির্ধারণ করে সরকার। সে সময় দূরপাল্লার বাসের প্রতি কিলোমিটার ভাড়া নির্ধারণ করা হয় ১ টাকা ৪২ পয়সা। এছাড়া ঢাকা শহরে প্রতি কিলোমিটার ১ টাকা ৭০ পয়সা এবং চট্টগ্রাম মহানগরে প্রতি কিলোমিটার বাসের ভাড়া ১ টাকা ৬০ পয়সা নির্ধারণ করা হয়।

বিআরটিএর চেয়ারম্যানের কাছে পাঠানো পরিবহন মালিক সমিতির আবেদনে বলা হয়, ঢাকা ও চট্টগ্রাম মহানগরসহ সারাদেশের দূরপাল্লার রুটে গত ৮ বছর কোন ভাড়া বাড়ানো হয়নি। কিন্তু এ সময়ে গাড়ির চেসিস, টায়ার, টিউব, খুচরা যন্ত্রাংশ এবং সব ধরনের কর ও ফি বেড়েছে। এ কারণে গাড়ির পরিচালন ব্যয় ‘কয়েকগুণ’ বেড়ে গেছে।

সমিতির মহাসচিব খন্দকার এনায়েত উল্যাহ স্বাক্ষরিত চিঠিতে বলা হয়, ‘বাস ভাড়া বৃদ্ধির জন্য আমরা আপনাদের বার বার আবেদন করেছি। কিন্তু এ ব্যাপারে কোন পদক্ষেপ নেয়া হয়নি। এর মধ্যে জ্বালানি মন্ত্রণালয়ের প্রজ্ঞাপনের মাধ্যমে অস্বাভাবিক হারে ডিজেলের মূল্য প্রতি লিটারে ১৫ টাকা বাড়ানো হয়েছে।’

পরিবহন মালিকরা বলছেন, ডিজেলের দাম বাড়ায় গাড়ি চালিয়ে মালিকদের কোন লাভ হবে না। তেলের দাম ওঠাতেই ‘হিমশিম’ খেতে হবে। এ অবস্থায় সারাদেশের মালিকরা মনে করে, অবিলম্বে বাস ভাড়া না বাড়ানো হলে গাড়ি চালানো কোনভাবেই সম্ভব হবে না।

এ বিষয়ে বাস-ট্রাক ওনার্স অ্যাসোসিয়েশনের সহ-সভাপতি ও শ্যামলী পরিবহনের ব্যবস্থাপনা পরিচালক রমেশ চন্দ্র ঘোষ সংবাদকে বলেন, ‘শুক্রবার সকাল ৬টা থেকে শ্যামলী পরিবহনের গাড়ি না চালানো সিদ্ধান্ত নেয়া হয়েছে। কারণ প্রতি লিটাল ডিজেলের দাম ১৫ টাকা বৃদ্ধির কারণে প্রতিটি গাড়ির জন্য অতিরিক্ত

৩ হাজার টাকা বেশি প্রয়োজন। বিদ্যমান ভাড়ায় গাড়ি চালানে এই টাকা লোকসান দিতে হবে। তাই দূরপাল্লার বাস মালিকরা নিজ ইচ্ছায় শুক্রবার সকাল থেকে কোন গাড়ি চালাবে না। ভাড়া বৃদ্ধির সরকারি কোন নির্দেশনা ছাড়া বেশি ভাড়া নিতে সমিতির পক্ষ থেকে নিষেধ করা হয়েছে।’

জ্বালানি তেলের দাম বৃদ্ধির অযুহাতে কোন ঘোষণা ছাড়া ঢাকা-নারায়ণগঞ্জসহ বিভিন্ন রুটের বাস-মিনিবাসের ভাড়া বৃদ্ধি করেছে মালিকরা। এ নিয়ে গতকাল রাজধানীর বিভিন্ন রুটে যাত্রী ও বাস চালকের সহযোগীদের মধ্যে বাক-বিতন্ডার ঘটনা ঘটে। কোন ঘোষণা ছাড়াই ঢাকা-নারায়ণগঞ্জ রুটের প্রতিটি বাসের ভাড়া ১০-১৪ টাকা বৃদ্ধি করা হয়েছে বলে যাত্রীরা জানান।

যাত্রীরা বলেন, রাজধানীর গুলিস্তান থেকে নারায়ণগঞ্জের উৎসব, বন্ধন, হিমাচল পরিবহনে আগে ভাড়া ছিল ৩৬ টাকা। সে ভাড়া বৃহস্পতিবার থেকে ৫০ টাকা নেয়া হচ্ছে। এসি বাস সার্ভিস শীতল পরিবহনের ভাড়া ছিল ৫৫ টাকা, এটি বাড়িয়ে করা হয়েছে ৬৫ টাকা।

আনোয়ার হোসেন নামের এক যাত্রী বলেন, ‘আমার তো টিকিট কাটতে এসে চোখ কপালে ওঠে গেছে। এক লাফে ১৪ টাকা ভাড়া বৃদ্ধি! আসলে আমরা তো আর মানুষ না। যে যেভাবে ইচ্ছা সব বাড়িয়ে দিচ্ছে। এখন আর দেশে কোন নিয়ম নেই।’