ইউপি নির্বাচন নিয়ে সহিংসতা

নরসিংদীতে প্রতিপক্ষের গুলিতে নিহত ৪

নরসিংদীতে আধিপত্য বিস্তার ও ইউনিয়ন পরিষদ (ইউপি) নির্বাচনকে কেন্দ্র করে প্রতিপক্ষের গুলিতে ৪ জন নিহত এবং অন্ততঃ ৩০ জন আহত হয়েছে। গতকাল ভোরে সদর উপজেলার চরাঞ্চলের আলোকবালী ইউনিয়নের নেকজানপুর গ্রামে এই হামলার ঘটনা ঘটেছে। ঘটনাস্থলে নিহতরা হলো- রিপন মোল্লা গ্রুপের আশরাফুল ইসলাম (১৮), আমির হোসেন (৫০) ও খুরশেদা বেগম ওরফে খুশু বেগম (৬০) এবং ঢাকায় নেয়ার পথে খায়রুল ইসলাম (৪০)। গুরুতর আহত অবস্থায় আকাশ (১২), হানিফ (৪০), বাদশা (৩৫), আবুল খায়ের (৪০), হোসেন (৫০), মাছুম (২০), আলতা হোসেনকে (২৫) উন্নত চিকিৎসার জন্য ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে পাঠানো হয়েছে। অন্য আহতদের নরসিংদী সদর হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে।

এলাকাবাসী এবং নিহতের স্বজনরা জানান, এলাকায় আধিপত্য বিস্তার নিয়ে আলোকবালী ইউনিয়নে আওয়ামী লীগের দুই গ্রুপের মধ্যে বিরোধ চলে আসছিল। আসন্ন ইউপি নির্বাচনে আধিপত্য বিস্তার নিয়ে দুই পক্ষের মধ্যে এই বিরোধ আরও বেড়ে যায়। আলোকবালী ইউনিয়নের ৫নং ওয়ার্ডের নেকজানপুর এলাকায় দুই ইউপি মেম্বার প্রার্থী আবুল খায়ের ও রিপন মোল্লার মধ্যে এলাকায় আধিপত্য বিস্তার নিয়ে পূর্ব বিরোধ চরম আকার ধার করে। বৃহস্পতিবার ভোরে রিপন মোল্লা সমর্থক প্রায় শতাধিক লোক আগ্নেয়াস্ত্রসহ বিভিন্ন দেশীয় অস্ত্রশস্ত্রে সজ্জিত হয়ে আবুল খায়েরের সমর্থক হাসেনের বাড়িতে হামলা চালায় এবং অগ্নিসংযোগ করে। এ সময় বাড়িতে আগুন ধাউ ধাউ করে জ্বলে উঠলে ঘরে আত্মগোপনে থাকা আবুল খায়ের সমর্থকরা আগুনের হাত থেকে রক্ষা পেতে ঘর থেকে বের হলেই প্রতিপক্ষ রিপন মোল্লা গ্রুপের লোকজন বেপরোয়া গুলি ছুড়তে থাকে। এতে ঘটনাস্থলেই তিন জন এবং ঢাকা নেয়ার পথে ১ জন নিহত এবং ৩০ জন আহত হয়। তাদের সবাই গুলিবিদ্ধ হয়ে হতাহত হয়েছে।

আওয়ামী লীগের অভ্যন্তরীণ কোন্দলের প্রতি ক্ষোভ প্রকাশ করে এলাকার একাধিক ব্যক্তি জানান, বেশ কদিন ধরেই ইউপি নির্বাচনকে কেন্দ্র করে উভয় পক্ষের মধ্যে আধিপত্য বিস্তারের লক্ষ্যে সংঘর্ষের প্রস্তুতি চলছিল। এতে আবুল খায়ের গ্রুপ টের পেয়ে সংঘর্ষ থেকে নিজেদের রক্ষার জন্য হাসেনের বাড়িতে আত্মগোপন করে। অপর পক্ষ একই এলাকার নেকজানপুর গ্রামের কাইয়ূমের বাড়িতে বুধবার গোপন বৈঠকে মিলিত হয়। সেখানে নরসিংদী সদর মডেল থানার তিনজন পুলিশ সদস্য ছিল বলে জানা গেছে।

খবর পেয়ে নরসিংদী জেলা প্রশাসক আবু নইম মোহাম্মদ মারুফ খান ও পুলিশ সুপার কাজী আশরাফুল আজীম পিপিএম ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেছেন বলে জানা গেছে।

নরসিংদীর অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (অপরাধ) সাহেব আলী পাঠান জানিয়েছেন, ঘটনাস্থলে অতিরিক্ত পুলিশ মোতায়েন করা হয়েছে। পরিস্থিতি শান্ত রয়েছে। সদর থানায় মামলার প্রস্তুতি চলছে। তবে এখনও পর্যন্ত কাউকে গ্রেপ্তার করা যায়নি। হামলাকারীরা এলাকা ছেড়ে পালিয়ে গেছে।

নরসিংদী সদর হাসপাতাল মর্গে নিহতদের লাশ ময়নাতদন্ত শেষে পরিবারের কাছে হস্তান্তর করা হয়েছে। ইতোপূর্বে একই এলাকায় গত ২৬ অক্টোবর নির্বাচনী সহিংসতায় দুই জন গুলিবিদ্ধসহ ২০ জন আহত হয়।

এদিকে, বাগেরহাট প্রতিনিধি জানান, বাগেরহাটের মোরেলগঞ্জ উপজেলার খাউলিয়া ইউনিয়নে নির্বাচন পরবর্তী সহিংসতা অব্যাহত রয়েছে। পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে নবনির্বাচিত ইউপি সদস্য বিটুল বিশ্বাসকে গতকাল আটক করে জেলহাজতে পাঠিয়েছে পুলিশ। এ ঘটনায় থানায় মামলা দায়ের হয়েছে। গত মঙ্গলবার এ ইউনিয়নে সাধারণ নির্বাচন সম্পন্ন হয়েছে। নির্বাচনের পরেও প্রতিপক্ষের ওপর মারপিট, হামলা অব্যাহত রয়েছে।

গত দুদিনে বিজয়ী ও পরাজিত প্রার্থীদের কর্মীদের হামলায় কমপক্ষে ১০ জন আহত হয়েছেন। অভিযোগে জানা গেছে, বুধবার দুপুরে খাউলিয়া ইউনিয়নের পশ্চিম বরিশাল গ্রামের বিজয়ী মেম্বর প্রার্থী বিটুল বিশ্বাস ও তার কর্মীরা পরাজিত প্রার্থী চাঁনমিয়া হাওলদারের কর্মী দিনমজুর রহিম কাজী, আসাদ কাজী, কবির কাজী, সালমান কাজী ও আমীর আলী তালুকদারকে মারপিট করে।

এদের মধ্যে গুরুতর জখমি রহিম কাজীকে মোড়েলগঞ্জ হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে। একই দিন আমতলী গ্রামের পরাজিত মেম্বর প্রার্থী নাজির গাজীর কর্মীরা প্রতিপক্ষের আবদুর রহমান মাঝিকে হাতুড়িপেটা করে রাস্তার পাশে ফেলে রাখে। এদিন রাত ৮টার দিকে পশুরবুনিয়া গ্রামের বিজয়ী প্রার্থী মশিউর রহমানের কর্মীরা প্রতিপক্ষের কর্মী জালাল শেখকে (৬৫) পিটিয়ে হাসপাতালে পাঠায়। পশ্চিম খাউলিয়া গ্রামে বিদ্রোহী প্রার্থীর কর্মী সন্দেহে পিটিয়ে আহত করা হয়েছে ইউনিয়ন তাঁতীলীগ সাধারণ সম্পাদক মাসুদ শেখকে।

এছাড়া পরাজিত বিদ্রোহী প্রার্থী বীর মুক্তিযোদ্ধা অধ্যক্ষ আবদুল হাই খানের অনেক কর্মী বাড়িঘর ছেড়ে পালিয়ে বেড়াচ্ছেন বলে হাই খান দাবি করেছেন। এ বিষয়ে থানার ওসি (তদন্ত) তুহিন মন্ডল বলেন, খাউলিয়া ইউনিয়নে নির্বাচন পরবর্তী কিছু বিচ্ছিন্ন ঘটনার খবর পেয়েছি। একটি ঘটনার বিষয়ে লিখিত অভিযোগ পেয়ে মামলা রেকর্ড করা হয়েছে। আসামি বিজয়ী প্রার্থী বিটুল বিশ্বাসকে আটক করে জেলহাজতে পাঠানো হয়েছে। এখন পরিস্থিতি শান্ত আছে।

শুক্রবার, ০৫ নভেম্বর ২০২১ , ২০ কার্তিক ১৪২৮ ২৮ রবিউল আউয়াল ১৪৪৩

ইউপি নির্বাচন নিয়ে সহিংসতা

নরসিংদীতে প্রতিপক্ষের গুলিতে নিহত ৪

আবদুল হান্নান ভূঁইয়া, নরসিংদী

image

মোরেলগঞ্জে নির্বাচন-পরবর্তী সহিংসতায় আহত (বাম থেকে) রহিম কাজী, জালাল শেখ ও আবদুর রহমান মাঝি -সংবাদ

নরসিংদীতে আধিপত্য বিস্তার ও ইউনিয়ন পরিষদ (ইউপি) নির্বাচনকে কেন্দ্র করে প্রতিপক্ষের গুলিতে ৪ জন নিহত এবং অন্ততঃ ৩০ জন আহত হয়েছে। গতকাল ভোরে সদর উপজেলার চরাঞ্চলের আলোকবালী ইউনিয়নের নেকজানপুর গ্রামে এই হামলার ঘটনা ঘটেছে। ঘটনাস্থলে নিহতরা হলো- রিপন মোল্লা গ্রুপের আশরাফুল ইসলাম (১৮), আমির হোসেন (৫০) ও খুরশেদা বেগম ওরফে খুশু বেগম (৬০) এবং ঢাকায় নেয়ার পথে খায়রুল ইসলাম (৪০)। গুরুতর আহত অবস্থায় আকাশ (১২), হানিফ (৪০), বাদশা (৩৫), আবুল খায়ের (৪০), হোসেন (৫০), মাছুম (২০), আলতা হোসেনকে (২৫) উন্নত চিকিৎসার জন্য ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে পাঠানো হয়েছে। অন্য আহতদের নরসিংদী সদর হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে।

এলাকাবাসী এবং নিহতের স্বজনরা জানান, এলাকায় আধিপত্য বিস্তার নিয়ে আলোকবালী ইউনিয়নে আওয়ামী লীগের দুই গ্রুপের মধ্যে বিরোধ চলে আসছিল। আসন্ন ইউপি নির্বাচনে আধিপত্য বিস্তার নিয়ে দুই পক্ষের মধ্যে এই বিরোধ আরও বেড়ে যায়। আলোকবালী ইউনিয়নের ৫নং ওয়ার্ডের নেকজানপুর এলাকায় দুই ইউপি মেম্বার প্রার্থী আবুল খায়ের ও রিপন মোল্লার মধ্যে এলাকায় আধিপত্য বিস্তার নিয়ে পূর্ব বিরোধ চরম আকার ধার করে। বৃহস্পতিবার ভোরে রিপন মোল্লা সমর্থক প্রায় শতাধিক লোক আগ্নেয়াস্ত্রসহ বিভিন্ন দেশীয় অস্ত্রশস্ত্রে সজ্জিত হয়ে আবুল খায়েরের সমর্থক হাসেনের বাড়িতে হামলা চালায় এবং অগ্নিসংযোগ করে। এ সময় বাড়িতে আগুন ধাউ ধাউ করে জ্বলে উঠলে ঘরে আত্মগোপনে থাকা আবুল খায়ের সমর্থকরা আগুনের হাত থেকে রক্ষা পেতে ঘর থেকে বের হলেই প্রতিপক্ষ রিপন মোল্লা গ্রুপের লোকজন বেপরোয়া গুলি ছুড়তে থাকে। এতে ঘটনাস্থলেই তিন জন এবং ঢাকা নেয়ার পথে ১ জন নিহত এবং ৩০ জন আহত হয়। তাদের সবাই গুলিবিদ্ধ হয়ে হতাহত হয়েছে।

আওয়ামী লীগের অভ্যন্তরীণ কোন্দলের প্রতি ক্ষোভ প্রকাশ করে এলাকার একাধিক ব্যক্তি জানান, বেশ কদিন ধরেই ইউপি নির্বাচনকে কেন্দ্র করে উভয় পক্ষের মধ্যে আধিপত্য বিস্তারের লক্ষ্যে সংঘর্ষের প্রস্তুতি চলছিল। এতে আবুল খায়ের গ্রুপ টের পেয়ে সংঘর্ষ থেকে নিজেদের রক্ষার জন্য হাসেনের বাড়িতে আত্মগোপন করে। অপর পক্ষ একই এলাকার নেকজানপুর গ্রামের কাইয়ূমের বাড়িতে বুধবার গোপন বৈঠকে মিলিত হয়। সেখানে নরসিংদী সদর মডেল থানার তিনজন পুলিশ সদস্য ছিল বলে জানা গেছে।

খবর পেয়ে নরসিংদী জেলা প্রশাসক আবু নইম মোহাম্মদ মারুফ খান ও পুলিশ সুপার কাজী আশরাফুল আজীম পিপিএম ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেছেন বলে জানা গেছে।

নরসিংদীর অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (অপরাধ) সাহেব আলী পাঠান জানিয়েছেন, ঘটনাস্থলে অতিরিক্ত পুলিশ মোতায়েন করা হয়েছে। পরিস্থিতি শান্ত রয়েছে। সদর থানায় মামলার প্রস্তুতি চলছে। তবে এখনও পর্যন্ত কাউকে গ্রেপ্তার করা যায়নি। হামলাকারীরা এলাকা ছেড়ে পালিয়ে গেছে।

নরসিংদী সদর হাসপাতাল মর্গে নিহতদের লাশ ময়নাতদন্ত শেষে পরিবারের কাছে হস্তান্তর করা হয়েছে। ইতোপূর্বে একই এলাকায় গত ২৬ অক্টোবর নির্বাচনী সহিংসতায় দুই জন গুলিবিদ্ধসহ ২০ জন আহত হয়।

এদিকে, বাগেরহাট প্রতিনিধি জানান, বাগেরহাটের মোরেলগঞ্জ উপজেলার খাউলিয়া ইউনিয়নে নির্বাচন পরবর্তী সহিংসতা অব্যাহত রয়েছে। পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে নবনির্বাচিত ইউপি সদস্য বিটুল বিশ্বাসকে গতকাল আটক করে জেলহাজতে পাঠিয়েছে পুলিশ। এ ঘটনায় থানায় মামলা দায়ের হয়েছে। গত মঙ্গলবার এ ইউনিয়নে সাধারণ নির্বাচন সম্পন্ন হয়েছে। নির্বাচনের পরেও প্রতিপক্ষের ওপর মারপিট, হামলা অব্যাহত রয়েছে।

গত দুদিনে বিজয়ী ও পরাজিত প্রার্থীদের কর্মীদের হামলায় কমপক্ষে ১০ জন আহত হয়েছেন। অভিযোগে জানা গেছে, বুধবার দুপুরে খাউলিয়া ইউনিয়নের পশ্চিম বরিশাল গ্রামের বিজয়ী মেম্বর প্রার্থী বিটুল বিশ্বাস ও তার কর্মীরা পরাজিত প্রার্থী চাঁনমিয়া হাওলদারের কর্মী দিনমজুর রহিম কাজী, আসাদ কাজী, কবির কাজী, সালমান কাজী ও আমীর আলী তালুকদারকে মারপিট করে।

এদের মধ্যে গুরুতর জখমি রহিম কাজীকে মোড়েলগঞ্জ হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে। একই দিন আমতলী গ্রামের পরাজিত মেম্বর প্রার্থী নাজির গাজীর কর্মীরা প্রতিপক্ষের আবদুর রহমান মাঝিকে হাতুড়িপেটা করে রাস্তার পাশে ফেলে রাখে। এদিন রাত ৮টার দিকে পশুরবুনিয়া গ্রামের বিজয়ী প্রার্থী মশিউর রহমানের কর্মীরা প্রতিপক্ষের কর্মী জালাল শেখকে (৬৫) পিটিয়ে হাসপাতালে পাঠায়। পশ্চিম খাউলিয়া গ্রামে বিদ্রোহী প্রার্থীর কর্মী সন্দেহে পিটিয়ে আহত করা হয়েছে ইউনিয়ন তাঁতীলীগ সাধারণ সম্পাদক মাসুদ শেখকে।

এছাড়া পরাজিত বিদ্রোহী প্রার্থী বীর মুক্তিযোদ্ধা অধ্যক্ষ আবদুল হাই খানের অনেক কর্মী বাড়িঘর ছেড়ে পালিয়ে বেড়াচ্ছেন বলে হাই খান দাবি করেছেন। এ বিষয়ে থানার ওসি (তদন্ত) তুহিন মন্ডল বলেন, খাউলিয়া ইউনিয়নে নির্বাচন পরবর্তী কিছু বিচ্ছিন্ন ঘটনার খবর পেয়েছি। একটি ঘটনার বিষয়ে লিখিত অভিযোগ পেয়ে মামলা রেকর্ড করা হয়েছে। আসামি বিজয়ী প্রার্থী বিটুল বিশ্বাসকে আটক করে জেলহাজতে পাঠানো হয়েছে। এখন পরিস্থিতি শান্ত আছে।