পরিবহন ধর্মঘট, সারাদেশে দুর্ভোগ

জ্বালানি তেলের দাম বৃদ্ধির কারণে ভাড়া বৃদ্ধির দাবিতে সারাদেশে চলছে অনির্দিষ্টকালের যাত্রী ও পণ্যবাহী পরিবহন ধর্মঘট। এতে চরম ভোগান্তির শিকার হচ্ছে যাত্রীরা। বাস বন্ধ থাকায় ভিড় বেড়েছে লঞ্চ ও ট্রেন স্টেশনে। গণপরিবহন না থাকায় দুই-তিনগুণ ভাড়া নিচ্ছে রিকশা, মোটরসাইকেল ও সিএনজি। তবে যাত্রীদের জিম্মি করে পরিবহনে ভাড়া বৃদ্ধির অযুক্তিক দাবি মনে করছেন গণপরিবহন বিশেষজ্ঞরা।

জ্বালানি তেলের মূল্যবৃদ্ধির কারণে ভাড়া বাড়ানোর দাবিতে গতকাল সকাল ৬টা থেকে অনির্দিষ্টকালের ধর্মঘট পালন করছে পরিবহন মালিক ও শ্রমিকরা। এজন্য সারাদেশে বন্ধ রয়েছে বাস-মিনিবাস চলাচল। এছাড়া বঙ্গবন্ধু সেতুসহ দুটি সেতুর বর্ধিত টোল ও ডিজেলের দাম প্রত্যাহারের দাবিতে ধর্মঘট পালন করছে পণ্যপরিবহন মালিকরা। দূরপাল্লার বাস-মিনিবাস বন্ধ থাকায় গতকাল ট্রেন ও লঞ্চ টার্মিনালে ছিল যাত্রীদের প্রচ- ভিড়। বাসের ভাড়া বাড়ানোর জন্য যাত্রীদের জিম্মি করায় ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন অনেকেই। তবে গণপরিবহনের ভাড়া বৃদ্ধির বিষয়ে রোববার বৈঠক ডেকেছে সড়ক পরিবহন কর্তৃপক্ষ (বিআরটিএ)।

এ বিষয়ে বিআরটিএ’র চেয়ারম্যান নূর মোহাম্মদ মজুমদার সংবাদকে বলেন, ‘ডিজেলের দাম বৃদ্ধির প্রেক্ষিতে পরিবহন মালিকদের পক্ষ থেকে বাসে ভাড়া বৃদ্ধির জন্য একটি আবেদন করা হয়েছে। এই আবেদনের বিষয় নিয়ে রোববার একটি মিটিং করা হবে।’ সেখানে ভাড়া নির্ধারণের জন্য একটি কমিটি গঠন করা হবে বলে জানান তিনি।

ভাড়া বৃদ্ধি নামে যাত্রীদের জিম্মি করা অযৌক্তিক দাবি করে যাত্রী কল্যাণ সমিতির মহাসচিব মোজাম্মেল হক চৌধুরী বলেন, ‘ডিজেলের দাম বৃদ্ধির কারণে ঢাকার বিভিন্ন বাসের ভাড়া ইতোমধ্যে বাড়িয়ে দেয়া হয়েছে। এটা পুরোপুরি অযৌক্তিক। ডিজেলের দাম বৃদ্ধির প্রভাব সব কিছুর ওপর পড়বে। সাধারণের জীবন আরও নাজেহাল হয়ে যাবে। ডিজেলের মূল্য বৃদ্ধি দ্রুত প্রত্যাহার করতে হবে। নয়, এই ১৫ টাকার উছিলায় বাস মালিকরা যাত্রীদের কয়েকগুণ বেশি পকেট কাটবে।’

ধর্মঘটের কথা না জেনে বিপাকে যাত্রীরা

বাস বন্ধ থাকায় কিশোরগঞ্জ থেকে ভেঙে ভেঙে গতকাল ঢাকায় এসেছেন আব্বাস নামের এক শ্রমিক। পথে পথে নানা দুর্ভোগ ও ভোগান্তি পোহাতে হয়েছে তার। ২৫০ টাকার বাস ভাড়ার স্থলে তার খরচ হয়েছে ১২০০ টাকা। মাসের ২৫০০ টাকা বেতনে তিনি কাজ করেন রাজধানীর ইসলামপুরে একটি পলিথিন ফ্যাক্টরিতে।

অসুস্থতার কারণে গত এক সপ্তাহে আগে বাড়িতে যান তিনি। কি কারণে ঢাকায় গাড়ি বন্ধ রয়েছে এটা জানে না আব্বাস। সুস্থ হলেও এখনও শরীর অনেক দুর্বল। ভেঙে ভেঙে ঢাকা যাত্রাবাড়ী পর্যন্ত আসতে তার শরীর অনেক ক্লান্ত হয়ে গেছে। তাই ফুটপাতে বসে একটু জিরিয়ে নিচ্ছেন তিনি।

কাছে গিয়ে জানতে চাইলে আব্বাস বলেন, ‘ভাই, শরীর খুব ক্লান্ত। কিশোরগঞ্জ থেকে মাইক্রোবাসে ১০০০ টাকা দিয়ে কাঁচপুর পর্যন্ত এসেছি। সেখান থেকে সিএনজি ও রিকশায় যাত্রাবাড়ী পর্যন্ত আসতে ২০০ টাকা খরচ হয়েছে। এখন চকবাজার ইসলামপুরে যাব, সঙ্গে কোন টাকা নেই। তাই একটু জিরিয়ে হেঁটেই যাব ভাবছি।’

একই অবস্থা বরিশাল থেকে ঢাকায় আমিনুল ইসলাম নামের অপর এক যাত্রীর। পরিবহন ধর্মঘটের কথা জানেন না তিনি। গতকাল সকালে সদরঘাটে লঞ্চ থেকে নেমে দেখেন বাস চলে না। রিকশা ও সিএনজিতে যে পরিমাণ ভাড়া চায়। তা সামর্থ্য নেই। তাই বাধ্য হয়ে গুলিস্তান পর্যন্ত হেঁটে এসেছেন তিনি। মোটরসাইকেলে ৩০০ টাকা দিয়ে তাকে মিরপুর যেতে দেখা গেছে।

গণপরিবহন বন্ধ থাকায় ভোগান্তিতে যাত্রীদের

গতকাল সকাল থেকে রাজধানীতে কোন বাস চলতে দেখা যায়নি। ঢাকা থেকে ছেড়ে যেতে দেখা যায়নি দূরপাল্লার কোন পরিবহন। তবে অতিরিক্ত ভাড়ায় প্রাইভেটকার ও মাইক্রোবাসে যাত্রী পরিবহন করতে দেখা গেছে। রাজধানীর অভ্যন্তরে রিকশা, সিএনজি, মোটরসাইকেল ও লেগুনা চলাচল করতে দেখা গেছে। বাস বন্ধ থাকায় এ সব পরিবহনে দুই-তিন গুণ ভাড়া নেয়ার অভিযোগ করেন যাত্রীরা।

সরেজমিন রাজধানীর বিভিন্ন বাস টার্মিনাল ঘুরে দেখা গেছে, গতকাল সকালে বন্ধ ছিল সব দূরপাল্লার বাস। রাজধানীর সায়দাবাদ, গাবতলী ও মহাখালী বাস টার্মিনালে থাকা অধিকাংশ বাস কোম্পানির কাউন্টার ছিল বন্ধ। কিছু কিছু কাউন্টার খোলা থাকলেও বাসের পরিবর্তে মাইক্রোবাস ও প্রাইভেটকারের টিকিট বিক্রয় করতে দেখা গেছে। বাস না থাকায় রাজধানীর অভ্যন্তরীণ যাত্রীদেরও ভোগান্তি পোহাতে হয়েছে বলে যাত্রীরা জানান।

গাবতলী থেকে ব্যক্তিগত গাড়ি ও মোটরসাইকেলে করে অনেক যাত্রীকে মানিকগঞ্জের পাটুরিয়ার উদ্দেশে যেতে দেখা গেছে। ব্যক্তিগত গাড়িতে গাবতলী থেকে পাটুরিয়া পর্যন্ত জনপ্রতি ভাড়া নেয়া হয় ৪০০ থেকে ৫০০ টাকা। মোটরসাইকেলেও প্রায় একই ভাড়া হয় বলে যাত্রীরা জানান।

ধর্মঘটের মধ্যেও দুই-একটি বাস চলতে দেখা গেছে। কিন্তু যাত্রীদের কাছ থেকে দুই-তিনগুণ ভাড়া নেয়া হয় বলে যাত্রীরা জানান। যাত্রাবাড়ী-সাভার রুটে চলাচলকারী মৌমিতা নামের একটি বাস ১০০ টাকার ভাড়া ৩০০ টাকা নেয়ার অভিযোগ করেন যাত্রীরা। এ বিষয়ে বাসচালক মামুন মিয়া বলেন, ‘মালিক সমিতির বাস চালানোয় নিষেধ আছে। তাই তারা সরাসরি পাটুরিয়া যাবেন না। মানিকগঞ্জের সিঙ্গাইর উপজেলার ভেতর দিয়ে ঘাটে যাবেন। তাই ভাড়া একটু বেশি নেয়া হয়েছে।’

আলিম নামের এক যাত্রী বলেন, ‘ফরিদপুরে চাকরি হয়েছে তার। চাকরিতে যোগ দিতে শুক্রবার সেখানে যেতে হবে। কিন্তু বাস বন্ধ। বিকল্প উপায়ে যেতে কয়েক গুণ বেশি ভাড়া লাগবে। তবে এই পরিমাণ টাকা তার হাতে নেই।’

বাস মালিক সংগঠনের পক্ষ থেকে আনুষ্ঠানিকভাবে ধর্মঘট ঘোষণা করা হয়নি। অনানুষ্ঠানিকভাবে বাস, ট্রাকসহ বাণিজ্যিক যানবাহন না চালানোর সিদ্ধান্ত নেন তারা। সরকারিভাবে ভাড়া বাড়ানোর দাবিতে গতকাল সকাল ছয়টা থেকে অনির্দিষ্টকালের জন্য সারাদেশে গণপরিবহন ও পণ্যবাহী যানবাহন বন্ধ থাকবে বলে জানান মালিক ও শ্রমিকরা।

মিরপুরের একটি শপিং মলের বিক্রয়কর্মী তরিকুল ইসলাম বলেন, ‘এভাবে হুটহাট বাস বন্ধ করে দেয়া তো ঠিক না। সমস্যা হলে তারা আলোচনা করে সমাধান করুক, আমাদের জিম্মি করছে কেন?’

গতকাল অফিস-আদালত বন্ধ থাকলেও সাত কলেজের ভর্তি পরীক্ষায় অংশ নিতে ২০ হাজারের বেশি শিক্ষার্থীকে রাস্তায় বের হতে হয়েছে। এছাড়া বিভিন্ন সরকারি দপ্তরের নিয়োগ পরীক্ষা ছিল গতকাল। ফলে চাকরিপ্রত্যাশীদেরও যানবাহন সংকটে ভোগান্তি পোহাতে হয়েছে বলে যাত্রীরা জানান। এই জনভোগান্তির কথা বিবেচনা করে পরিবহন মালিক-শ্রমিকদের অনির্দিষ্টকালের ধর্মঘট প্রত্যাহারের আহ্বান জানিয়েছেন সড়ক পরিবহন ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের।

এ বিষয়ে সড়ক পরিবহন মালিক সমিতির মহাসচিব খন্দকার এনায়েত উল্লাহ বলেন, ‘শিক্ষার্থীসহ সাধারণ মানুষের দুর্ভোগের বিষয়টি আমরা বুঝি। তাদের প্রতি আমাদের সিমপ্যাথি আছে। কিন্তু পরিবহন মালিকদের তো আর উপায় নাই।’

গতকাল সকালে সরকারি ব্যাংকের নিয়োগ পরীক্ষা দিতে বাড্ডায় যেতে বকশিবাজারে যানবাহনের জন্য অপেক্ষা করতে দেখা গেছে মারুফ হোসেন নামের এক যাত্রীকে। তিনি বলেন, ‘প্রায় এক ঘণ্টা দাঁড়িয়ে থেকেও কোন বাহনে ওঠতে পারেননি।’

image

হঠাৎ পরিবহন ধর্মঘট ডাকায় সারাদেশে সাধারণ মানুষ চরম দুর্ভোগে পড়ে। গতকাল ছুটির দিন থাকার পরও রাজধানীতে যাত্রীদের সীমাহীন ভোগান্তি -সংবাদ

আরও খবর
বিপাকে সাত কলেজের ভর্তি পরীক্ষার্থীরা
জনগণের দুর্ভোগ, ধর্মঘট প্রত্যাহারের আহ্বান সড়কমন্ত্রীর
লঞ্চভাড়া দ্বিগুণ করার প্রস্তাব মালিকদের
১২ নভেম্বর পর্যন্ত কমিউনিটি ক্লিনিক টিকাদান চলবে
সুবর্ণচরে আ’লীগ নেতা হত্যা নরসিংদীর চরাঞ্চলে ফের সংঘর্ষ
নাসিরনগরে মন্দিরে হামলা মামলার ৩ আসামি চেয়ারম্যান প্রার্থী
ইউপি নির্বাচনে বিশৃঙ্খলা করলে ছাড় নেই : ইসি
জ্বালানির মূল্যবৃদ্ধিতে জনজীবনে দুর্গতির শেষ থাকবে না মির্জা ফখরুল
সোয়ারীঘাটে জুতা কারখানায় আগুন, নিহত ৫

শনিবার, ০৬ নভেম্বর ২০২১ , ২১ কার্তিক ১৪২৮ ২৯ রবিউল আউয়াল ১৪৪৩

পরিবহন ধর্মঘট, সারাদেশে দুর্ভোগ

নিজস্ব বার্তা পরিবেশক

image

হঠাৎ পরিবহন ধর্মঘট ডাকায় সারাদেশে সাধারণ মানুষ চরম দুর্ভোগে পড়ে। গতকাল ছুটির দিন থাকার পরও রাজধানীতে যাত্রীদের সীমাহীন ভোগান্তি -সংবাদ

জ্বালানি তেলের দাম বৃদ্ধির কারণে ভাড়া বৃদ্ধির দাবিতে সারাদেশে চলছে অনির্দিষ্টকালের যাত্রী ও পণ্যবাহী পরিবহন ধর্মঘট। এতে চরম ভোগান্তির শিকার হচ্ছে যাত্রীরা। বাস বন্ধ থাকায় ভিড় বেড়েছে লঞ্চ ও ট্রেন স্টেশনে। গণপরিবহন না থাকায় দুই-তিনগুণ ভাড়া নিচ্ছে রিকশা, মোটরসাইকেল ও সিএনজি। তবে যাত্রীদের জিম্মি করে পরিবহনে ভাড়া বৃদ্ধির অযুক্তিক দাবি মনে করছেন গণপরিবহন বিশেষজ্ঞরা।

জ্বালানি তেলের মূল্যবৃদ্ধির কারণে ভাড়া বাড়ানোর দাবিতে গতকাল সকাল ৬টা থেকে অনির্দিষ্টকালের ধর্মঘট পালন করছে পরিবহন মালিক ও শ্রমিকরা। এজন্য সারাদেশে বন্ধ রয়েছে বাস-মিনিবাস চলাচল। এছাড়া বঙ্গবন্ধু সেতুসহ দুটি সেতুর বর্ধিত টোল ও ডিজেলের দাম প্রত্যাহারের দাবিতে ধর্মঘট পালন করছে পণ্যপরিবহন মালিকরা। দূরপাল্লার বাস-মিনিবাস বন্ধ থাকায় গতকাল ট্রেন ও লঞ্চ টার্মিনালে ছিল যাত্রীদের প্রচ- ভিড়। বাসের ভাড়া বাড়ানোর জন্য যাত্রীদের জিম্মি করায় ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন অনেকেই। তবে গণপরিবহনের ভাড়া বৃদ্ধির বিষয়ে রোববার বৈঠক ডেকেছে সড়ক পরিবহন কর্তৃপক্ষ (বিআরটিএ)।

এ বিষয়ে বিআরটিএ’র চেয়ারম্যান নূর মোহাম্মদ মজুমদার সংবাদকে বলেন, ‘ডিজেলের দাম বৃদ্ধির প্রেক্ষিতে পরিবহন মালিকদের পক্ষ থেকে বাসে ভাড়া বৃদ্ধির জন্য একটি আবেদন করা হয়েছে। এই আবেদনের বিষয় নিয়ে রোববার একটি মিটিং করা হবে।’ সেখানে ভাড়া নির্ধারণের জন্য একটি কমিটি গঠন করা হবে বলে জানান তিনি।

ভাড়া বৃদ্ধি নামে যাত্রীদের জিম্মি করা অযৌক্তিক দাবি করে যাত্রী কল্যাণ সমিতির মহাসচিব মোজাম্মেল হক চৌধুরী বলেন, ‘ডিজেলের দাম বৃদ্ধির কারণে ঢাকার বিভিন্ন বাসের ভাড়া ইতোমধ্যে বাড়িয়ে দেয়া হয়েছে। এটা পুরোপুরি অযৌক্তিক। ডিজেলের দাম বৃদ্ধির প্রভাব সব কিছুর ওপর পড়বে। সাধারণের জীবন আরও নাজেহাল হয়ে যাবে। ডিজেলের মূল্য বৃদ্ধি দ্রুত প্রত্যাহার করতে হবে। নয়, এই ১৫ টাকার উছিলায় বাস মালিকরা যাত্রীদের কয়েকগুণ বেশি পকেট কাটবে।’

ধর্মঘটের কথা না জেনে বিপাকে যাত্রীরা

বাস বন্ধ থাকায় কিশোরগঞ্জ থেকে ভেঙে ভেঙে গতকাল ঢাকায় এসেছেন আব্বাস নামের এক শ্রমিক। পথে পথে নানা দুর্ভোগ ও ভোগান্তি পোহাতে হয়েছে তার। ২৫০ টাকার বাস ভাড়ার স্থলে তার খরচ হয়েছে ১২০০ টাকা। মাসের ২৫০০ টাকা বেতনে তিনি কাজ করেন রাজধানীর ইসলামপুরে একটি পলিথিন ফ্যাক্টরিতে।

অসুস্থতার কারণে গত এক সপ্তাহে আগে বাড়িতে যান তিনি। কি কারণে ঢাকায় গাড়ি বন্ধ রয়েছে এটা জানে না আব্বাস। সুস্থ হলেও এখনও শরীর অনেক দুর্বল। ভেঙে ভেঙে ঢাকা যাত্রাবাড়ী পর্যন্ত আসতে তার শরীর অনেক ক্লান্ত হয়ে গেছে। তাই ফুটপাতে বসে একটু জিরিয়ে নিচ্ছেন তিনি।

কাছে গিয়ে জানতে চাইলে আব্বাস বলেন, ‘ভাই, শরীর খুব ক্লান্ত। কিশোরগঞ্জ থেকে মাইক্রোবাসে ১০০০ টাকা দিয়ে কাঁচপুর পর্যন্ত এসেছি। সেখান থেকে সিএনজি ও রিকশায় যাত্রাবাড়ী পর্যন্ত আসতে ২০০ টাকা খরচ হয়েছে। এখন চকবাজার ইসলামপুরে যাব, সঙ্গে কোন টাকা নেই। তাই একটু জিরিয়ে হেঁটেই যাব ভাবছি।’

একই অবস্থা বরিশাল থেকে ঢাকায় আমিনুল ইসলাম নামের অপর এক যাত্রীর। পরিবহন ধর্মঘটের কথা জানেন না তিনি। গতকাল সকালে সদরঘাটে লঞ্চ থেকে নেমে দেখেন বাস চলে না। রিকশা ও সিএনজিতে যে পরিমাণ ভাড়া চায়। তা সামর্থ্য নেই। তাই বাধ্য হয়ে গুলিস্তান পর্যন্ত হেঁটে এসেছেন তিনি। মোটরসাইকেলে ৩০০ টাকা দিয়ে তাকে মিরপুর যেতে দেখা গেছে।

গণপরিবহন বন্ধ থাকায় ভোগান্তিতে যাত্রীদের

গতকাল সকাল থেকে রাজধানীতে কোন বাস চলতে দেখা যায়নি। ঢাকা থেকে ছেড়ে যেতে দেখা যায়নি দূরপাল্লার কোন পরিবহন। তবে অতিরিক্ত ভাড়ায় প্রাইভেটকার ও মাইক্রোবাসে যাত্রী পরিবহন করতে দেখা গেছে। রাজধানীর অভ্যন্তরে রিকশা, সিএনজি, মোটরসাইকেল ও লেগুনা চলাচল করতে দেখা গেছে। বাস বন্ধ থাকায় এ সব পরিবহনে দুই-তিন গুণ ভাড়া নেয়ার অভিযোগ করেন যাত্রীরা।

সরেজমিন রাজধানীর বিভিন্ন বাস টার্মিনাল ঘুরে দেখা গেছে, গতকাল সকালে বন্ধ ছিল সব দূরপাল্লার বাস। রাজধানীর সায়দাবাদ, গাবতলী ও মহাখালী বাস টার্মিনালে থাকা অধিকাংশ বাস কোম্পানির কাউন্টার ছিল বন্ধ। কিছু কিছু কাউন্টার খোলা থাকলেও বাসের পরিবর্তে মাইক্রোবাস ও প্রাইভেটকারের টিকিট বিক্রয় করতে দেখা গেছে। বাস না থাকায় রাজধানীর অভ্যন্তরীণ যাত্রীদেরও ভোগান্তি পোহাতে হয়েছে বলে যাত্রীরা জানান।

গাবতলী থেকে ব্যক্তিগত গাড়ি ও মোটরসাইকেলে করে অনেক যাত্রীকে মানিকগঞ্জের পাটুরিয়ার উদ্দেশে যেতে দেখা গেছে। ব্যক্তিগত গাড়িতে গাবতলী থেকে পাটুরিয়া পর্যন্ত জনপ্রতি ভাড়া নেয়া হয় ৪০০ থেকে ৫০০ টাকা। মোটরসাইকেলেও প্রায় একই ভাড়া হয় বলে যাত্রীরা জানান।

ধর্মঘটের মধ্যেও দুই-একটি বাস চলতে দেখা গেছে। কিন্তু যাত্রীদের কাছ থেকে দুই-তিনগুণ ভাড়া নেয়া হয় বলে যাত্রীরা জানান। যাত্রাবাড়ী-সাভার রুটে চলাচলকারী মৌমিতা নামের একটি বাস ১০০ টাকার ভাড়া ৩০০ টাকা নেয়ার অভিযোগ করেন যাত্রীরা। এ বিষয়ে বাসচালক মামুন মিয়া বলেন, ‘মালিক সমিতির বাস চালানোয় নিষেধ আছে। তাই তারা সরাসরি পাটুরিয়া যাবেন না। মানিকগঞ্জের সিঙ্গাইর উপজেলার ভেতর দিয়ে ঘাটে যাবেন। তাই ভাড়া একটু বেশি নেয়া হয়েছে।’

আলিম নামের এক যাত্রী বলেন, ‘ফরিদপুরে চাকরি হয়েছে তার। চাকরিতে যোগ দিতে শুক্রবার সেখানে যেতে হবে। কিন্তু বাস বন্ধ। বিকল্প উপায়ে যেতে কয়েক গুণ বেশি ভাড়া লাগবে। তবে এই পরিমাণ টাকা তার হাতে নেই।’

বাস মালিক সংগঠনের পক্ষ থেকে আনুষ্ঠানিকভাবে ধর্মঘট ঘোষণা করা হয়নি। অনানুষ্ঠানিকভাবে বাস, ট্রাকসহ বাণিজ্যিক যানবাহন না চালানোর সিদ্ধান্ত নেন তারা। সরকারিভাবে ভাড়া বাড়ানোর দাবিতে গতকাল সকাল ছয়টা থেকে অনির্দিষ্টকালের জন্য সারাদেশে গণপরিবহন ও পণ্যবাহী যানবাহন বন্ধ থাকবে বলে জানান মালিক ও শ্রমিকরা।

মিরপুরের একটি শপিং মলের বিক্রয়কর্মী তরিকুল ইসলাম বলেন, ‘এভাবে হুটহাট বাস বন্ধ করে দেয়া তো ঠিক না। সমস্যা হলে তারা আলোচনা করে সমাধান করুক, আমাদের জিম্মি করছে কেন?’

গতকাল অফিস-আদালত বন্ধ থাকলেও সাত কলেজের ভর্তি পরীক্ষায় অংশ নিতে ২০ হাজারের বেশি শিক্ষার্থীকে রাস্তায় বের হতে হয়েছে। এছাড়া বিভিন্ন সরকারি দপ্তরের নিয়োগ পরীক্ষা ছিল গতকাল। ফলে চাকরিপ্রত্যাশীদেরও যানবাহন সংকটে ভোগান্তি পোহাতে হয়েছে বলে যাত্রীরা জানান। এই জনভোগান্তির কথা বিবেচনা করে পরিবহন মালিক-শ্রমিকদের অনির্দিষ্টকালের ধর্মঘট প্রত্যাহারের আহ্বান জানিয়েছেন সড়ক পরিবহন ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের।

এ বিষয়ে সড়ক পরিবহন মালিক সমিতির মহাসচিব খন্দকার এনায়েত উল্লাহ বলেন, ‘শিক্ষার্থীসহ সাধারণ মানুষের দুর্ভোগের বিষয়টি আমরা বুঝি। তাদের প্রতি আমাদের সিমপ্যাথি আছে। কিন্তু পরিবহন মালিকদের তো আর উপায় নাই।’

গতকাল সকালে সরকারি ব্যাংকের নিয়োগ পরীক্ষা দিতে বাড্ডায় যেতে বকশিবাজারে যানবাহনের জন্য অপেক্ষা করতে দেখা গেছে মারুফ হোসেন নামের এক যাত্রীকে। তিনি বলেন, ‘প্রায় এক ঘণ্টা দাঁড়িয়ে থেকেও কোন বাহনে ওঠতে পারেননি।’