নাসিরনগরে মন্দিরে হামলা মামলার ৩ আসামি চেয়ারম্যান প্রার্থী

আর মাত্র পাঁচ দিন পর আগামী ১১ নভেম্বর ব্রাহ্মণবাড়িয়ার নাসিরনগরে ১৩টি ইউনিয়ন পরিষদে নির্বাচন অনুষ্ঠিত হবে। আসন্ন এই নির্বাচনে নাসিরনগরের চাঞ্চল্যকর গৌর মন্দিরে হামলা ও ভাঙচুর মামলার চার্জসিটভুক্ত ৩ আসামি এবার ইউনিয়ন পরিষদ নির্বাচনে চেয়ারম্যান পদে অংশগ্রহণ করছেন।

এরা হলেন, নাসিরনগর সদর ইউনিয়নের উপজেলা কৃষকলীগের আহ্বায়ক শেখ মো. আবদুল আহাদ, হরিপুুর ইউনিয়ন পরিষদে ইউনিয়ন আ.লীগের সভাপতি মো. ফারুক মিয়া ও গোকর্ন ইউনিয়ন পরিষদ নির্বাচনে উপজেলা বিএনপি সাবেক সাধারণ সম্পাদক এম.এ হান্নান। এই তিনজন প্রার্থী তাদের স্ব-স্ব ইউনিয়নে জোরেসোরে মাঠে নেমেছেন এবং নির্বাচনী প্রচারণা চালাচ্ছেন। তবে এই তিন প্রার্থী চেয়ারম্যান পদে নির্বাচিত হলে হিন্দু কমিউনিটির মধ্যে শঙ্কা বাড়ার কথা জানিয়েছেন মামলার বাদী। জানা যায় বিগত ২০১৬ সালের ৩০ অক্টোবর ব্রাহ্মণবাড়িয়ার নাসিরনগরে ফেইসবুকে গুজব রটিয়ে ব্রাহ্মণবাড়িয়া জেলার নাসিরনগরে হিন্দু সম্প্রদায়ের মন্দিরসহ শতাধিক বাড়িঘর ভাঙচুর ও অগ্নিসংযোগ করা হয়।

এই ঘটনায় নাসিরনগর গৌর মন্দির কমিটি সাধারণ সম্পাদক নির্মল চৌধুরী বাদী হয়ে দুই থেকে আড়াই হাজার অজ্ঞাত পরিচয় ব্যক্তিকে আসামি করে নাসিরনগর থানায় মামলা করেন। মামলাটি তদন্ত শেষে মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা মো. শওকত হোসেন ২০১৭ সালের ১০ ডিসেম্বর ২২৮ জনের নাম উল্লেখ করে ব্রাহ্মণবাড়িয়ার চিফ জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট আদালতে চার্জশিট জমা দেন। এতে উক্ত তিন প্রার্থী গৌর মন্দির ভাঙচুর মামলার চার্জশিটভুক্ত আসামি। চার্জশিটে ২২৮ আসামির মধ্যে উপজেলা কৃষকলীগের আহ্বায়ক শেখ আবদুল আহাদ, হরিপুুর ইউনিয়ন আ.লীগের সভাপতি ফারুক মিয়া ও উপজেলা বিএনপি সাবেক সাধারণ সম্পাদক এম.এ হান্নানের নামও রয়েছে। বর্তমানে এরা তিনজন জামিনে রয়েছেন।

নাসিরনগরে হামলার ঘটনায় ৮টি মামলা দায়ের করা হয়েছিল। মাত্র একটি মামলা চার্জসিট দেয়া হয়েছে। গ্রেপ্তার করা হয়েছিল ১২৪ জনের অধিক। এদিকে এই তিন প্রার্থীর মধ্যে দুইজন আ.লীগের বিদ্রোহী প্রার্থী। তারা আ.লীগের দলীয় মনোনয়ন চেয়েছিলেন। কিন্তু দল তাদের মনোনয়ন দেয়নি। নাসিরনগর সদর ইউনিয়ন পরিষদ নির্বাচনে উপজেলা কৃষকলীগের আহ্বায়ক শেখ মো. আবদুল আহাদ আনারস প্রতীকে নির্বাচন করছেন। আ.লীগের আরেক বিদ্রোহী প্রার্থী হরিপুর ইউনিয়ন আ.লীগের সভাপতি মো. ফারুক মিয়া নির্বাচন করছেন আনারস প্রতীকে। বিএনপি ইউনিয়ন পরিষদ নির্বাচনে অংশগ্রহণ না করলেও উপজেলা বিএনপি সাবেক সাধারণ সম্পাদক এম.এ হান্নান নির্বাচন করছেন। তার প্রতীক হলো চশমা।

নাসিরনগর গৌর মন্দির কমিটির সাধারণ সম্পাদক নির্মল চৌধুরী জানান, এই তিনজন চেয়ারম্যান প্রার্থী আমার মামলার চার্জসিটভুক্ত আসামি। তারা যদি জনপ্রতিনিধি নির্বাচিত হয় তাহলে হিন্দু কমিউনিটির মধ্যে শঙ্কা থাকবে। এই ব্যাপারে ব্রাহ্মণবাড়িয়া অতিরিক্ত পুলিশ সুপার মোল্লা মোহাম্মদ শাহীন জানান, একটি মামলার চার্জসিট আদালতে জমা দেয়া হয়েছে। বাকি ৭টি মামলার তদন্ত কাজ শেষ পর্যায়ে। আগামী এক মাসের মধ্যে চূড়ান্ত প্রতিবেদন আদালতে জমা দেয়া হবে।

উল্লেখ্য, ব্রাহ্মণবাড়িয়ার নাসিরনগরে মন্দির ও হিন্দু পল্লীতে হামলা, ভাঙচুর ও অগ্নিসংযোগ ঘটনায় গৌর মন্দিরে হামলা ও ভাঙচুর মামলায় চার্জসিটভুক্ত দুই আসামিকে ইউনিয়ন পরিষদ নির্বাচনে আ.লীগের দলীয় মনোনয়ন দেয়ার পর ব্যাপক সমালোচনা আর বির্তকের মুখে দু’জনকে পরিবর্তন করে কেন্দ্রীয় আওয়ামী লীগের মনোনয়ন বোর্ড।

এরা হলেন, নাসিরনগর সদর ইউনিয়নে আবুল হাসেমের পরিবর্তে নাসিরনগর সদর ইউনিয়ন পরিষদে সংরক্ষিত নারী ইউপি সদস্য ও উপজেলা আ.লীগের মহিলা বিষয়ক সম্পাদক পুতুল রানী দাস এবং হরিপুর ইউনিয়নে দেওয়ান আতিকুর রহমান আঁখির পরিবর্তে সাবেক চেয়ারম্যান ও নাসিরনগর উপজেলা আ. লীগের সাবেক যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক আবদুল মান্নানের ছেলে হরিপুর ইউনিয়ন আ.লীগ নেতা মো. ওয়াসিম আহমেদকে আ.লীগের প্রার্থী করা হয়েছে। তবে এই ঘটনায় সংখ্যালঘুসহ সংশ্লিষ্ট ইউনিয়নের ভোটারদের মাঝে ব্যাপক আলোচনা চলছে।

শনিবার, ০৬ নভেম্বর ২০২১ , ২১ কার্তিক ১৪২৮ ২৯ রবিউল আউয়াল ১৪৪৩

নাসিরনগরে মন্দিরে হামলা মামলার ৩ আসামি চেয়ারম্যান প্রার্থী

মো. সাদেকুর রহমান, ব্রাহ্মণবাড়িয়া

আর মাত্র পাঁচ দিন পর আগামী ১১ নভেম্বর ব্রাহ্মণবাড়িয়ার নাসিরনগরে ১৩টি ইউনিয়ন পরিষদে নির্বাচন অনুষ্ঠিত হবে। আসন্ন এই নির্বাচনে নাসিরনগরের চাঞ্চল্যকর গৌর মন্দিরে হামলা ও ভাঙচুর মামলার চার্জসিটভুক্ত ৩ আসামি এবার ইউনিয়ন পরিষদ নির্বাচনে চেয়ারম্যান পদে অংশগ্রহণ করছেন।

এরা হলেন, নাসিরনগর সদর ইউনিয়নের উপজেলা কৃষকলীগের আহ্বায়ক শেখ মো. আবদুল আহাদ, হরিপুুর ইউনিয়ন পরিষদে ইউনিয়ন আ.লীগের সভাপতি মো. ফারুক মিয়া ও গোকর্ন ইউনিয়ন পরিষদ নির্বাচনে উপজেলা বিএনপি সাবেক সাধারণ সম্পাদক এম.এ হান্নান। এই তিনজন প্রার্থী তাদের স্ব-স্ব ইউনিয়নে জোরেসোরে মাঠে নেমেছেন এবং নির্বাচনী প্রচারণা চালাচ্ছেন। তবে এই তিন প্রার্থী চেয়ারম্যান পদে নির্বাচিত হলে হিন্দু কমিউনিটির মধ্যে শঙ্কা বাড়ার কথা জানিয়েছেন মামলার বাদী। জানা যায় বিগত ২০১৬ সালের ৩০ অক্টোবর ব্রাহ্মণবাড়িয়ার নাসিরনগরে ফেইসবুকে গুজব রটিয়ে ব্রাহ্মণবাড়িয়া জেলার নাসিরনগরে হিন্দু সম্প্রদায়ের মন্দিরসহ শতাধিক বাড়িঘর ভাঙচুর ও অগ্নিসংযোগ করা হয়।

এই ঘটনায় নাসিরনগর গৌর মন্দির কমিটি সাধারণ সম্পাদক নির্মল চৌধুরী বাদী হয়ে দুই থেকে আড়াই হাজার অজ্ঞাত পরিচয় ব্যক্তিকে আসামি করে নাসিরনগর থানায় মামলা করেন। মামলাটি তদন্ত শেষে মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা মো. শওকত হোসেন ২০১৭ সালের ১০ ডিসেম্বর ২২৮ জনের নাম উল্লেখ করে ব্রাহ্মণবাড়িয়ার চিফ জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট আদালতে চার্জশিট জমা দেন। এতে উক্ত তিন প্রার্থী গৌর মন্দির ভাঙচুর মামলার চার্জশিটভুক্ত আসামি। চার্জশিটে ২২৮ আসামির মধ্যে উপজেলা কৃষকলীগের আহ্বায়ক শেখ আবদুল আহাদ, হরিপুুর ইউনিয়ন আ.লীগের সভাপতি ফারুক মিয়া ও উপজেলা বিএনপি সাবেক সাধারণ সম্পাদক এম.এ হান্নানের নামও রয়েছে। বর্তমানে এরা তিনজন জামিনে রয়েছেন।

নাসিরনগরে হামলার ঘটনায় ৮টি মামলা দায়ের করা হয়েছিল। মাত্র একটি মামলা চার্জসিট দেয়া হয়েছে। গ্রেপ্তার করা হয়েছিল ১২৪ জনের অধিক। এদিকে এই তিন প্রার্থীর মধ্যে দুইজন আ.লীগের বিদ্রোহী প্রার্থী। তারা আ.লীগের দলীয় মনোনয়ন চেয়েছিলেন। কিন্তু দল তাদের মনোনয়ন দেয়নি। নাসিরনগর সদর ইউনিয়ন পরিষদ নির্বাচনে উপজেলা কৃষকলীগের আহ্বায়ক শেখ মো. আবদুল আহাদ আনারস প্রতীকে নির্বাচন করছেন। আ.লীগের আরেক বিদ্রোহী প্রার্থী হরিপুর ইউনিয়ন আ.লীগের সভাপতি মো. ফারুক মিয়া নির্বাচন করছেন আনারস প্রতীকে। বিএনপি ইউনিয়ন পরিষদ নির্বাচনে অংশগ্রহণ না করলেও উপজেলা বিএনপি সাবেক সাধারণ সম্পাদক এম.এ হান্নান নির্বাচন করছেন। তার প্রতীক হলো চশমা।

নাসিরনগর গৌর মন্দির কমিটির সাধারণ সম্পাদক নির্মল চৌধুরী জানান, এই তিনজন চেয়ারম্যান প্রার্থী আমার মামলার চার্জসিটভুক্ত আসামি। তারা যদি জনপ্রতিনিধি নির্বাচিত হয় তাহলে হিন্দু কমিউনিটির মধ্যে শঙ্কা থাকবে। এই ব্যাপারে ব্রাহ্মণবাড়িয়া অতিরিক্ত পুলিশ সুপার মোল্লা মোহাম্মদ শাহীন জানান, একটি মামলার চার্জসিট আদালতে জমা দেয়া হয়েছে। বাকি ৭টি মামলার তদন্ত কাজ শেষ পর্যায়ে। আগামী এক মাসের মধ্যে চূড়ান্ত প্রতিবেদন আদালতে জমা দেয়া হবে।

উল্লেখ্য, ব্রাহ্মণবাড়িয়ার নাসিরনগরে মন্দির ও হিন্দু পল্লীতে হামলা, ভাঙচুর ও অগ্নিসংযোগ ঘটনায় গৌর মন্দিরে হামলা ও ভাঙচুর মামলায় চার্জসিটভুক্ত দুই আসামিকে ইউনিয়ন পরিষদ নির্বাচনে আ.লীগের দলীয় মনোনয়ন দেয়ার পর ব্যাপক সমালোচনা আর বির্তকের মুখে দু’জনকে পরিবর্তন করে কেন্দ্রীয় আওয়ামী লীগের মনোনয়ন বোর্ড।

এরা হলেন, নাসিরনগর সদর ইউনিয়নে আবুল হাসেমের পরিবর্তে নাসিরনগর সদর ইউনিয়ন পরিষদে সংরক্ষিত নারী ইউপি সদস্য ও উপজেলা আ.লীগের মহিলা বিষয়ক সম্পাদক পুতুল রানী দাস এবং হরিপুর ইউনিয়নে দেওয়ান আতিকুর রহমান আঁখির পরিবর্তে সাবেক চেয়ারম্যান ও নাসিরনগর উপজেলা আ. লীগের সাবেক যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক আবদুল মান্নানের ছেলে হরিপুর ইউনিয়ন আ.লীগ নেতা মো. ওয়াসিম আহমেদকে আ.লীগের প্রার্থী করা হয়েছে। তবে এই ঘটনায় সংখ্যালঘুসহ সংশ্লিষ্ট ইউনিয়নের ভোটারদের মাঝে ব্যাপক আলোচনা চলছে।