সৌদি আরবকে ৬৫ কোটি ডলারের অস্ত্র দেবে যুক্তরাষ্ট্র

সৌদি আরবকে শক্তিশালী ক্ষেপণাস্ত্র দিতে যাচ্ছে যুক্তরাষ্ট্র। চুক্তি অনুযায়ী যুক্তরাষ্ট্রের তৈরি ৬৫ কোটি মার্কিন ডলারের ক্ষেপণাস্ত্র সরবরাহ করবে বাইডেন প্রশাসন। উপসাগরীয় দেশটির কাছে ক্ষেপণাস্ত্র বিক্রিতে ইতিমধ্যে অনুমোদনও দিয়েছে যুক্তরাষ্ট্রের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়। এক বিবৃতিতে এ তথ্য জানায় দেশটির প্রতিরক্ষা দপ্তর পেন্টাগন।

মার্কিন প্রেসিডেন্ট জো বাইডেনের প্রশাসন ক্ষমতায় আসার পর এই প্রথম সৌদিকে বিপুল অস্ত্র দিতে যাচ্ছে যুক্তরাষ্ট্র। মার্কিন প্রতিরক্ষা দপ্তর বিবৃতিতে জানায়, ড্রোন হামলা ঠেকিয়ে সৌদি আরব যাতে নিজেদের সুরক্ষিত রাখতে পারে, সে জন্য রিয়াদের কাছে এয়ার-টু-এয়ার মিসাইল দেবে ওয়াশিংটন। উড়োযান থেকে ছুড়ে মাঝ আকাশে অন্য উড়োযান ও ক্ষেপণাস্ত্র ধ্বংসে ব্যবহার করা হয় এ ধরনের অস্ত্র।

মাঝারি দূরত্ব অতিক্রমে সক্ষম অত্যাধুনিক প্রযুক্তির এ অস্ত্রের সঙ্গে দেয়া হবে এটি ব্যবহারে প্রয়োজনীয় অন্যান্য সরঞ্জামও। যার মধ্যে রয়েছে ২৮০টি অত্যাধুনিক মাঝারি পাল্লার এআইএম-১২০সি ক্ষেপণাস্ত্র। সংশ্লিষ্ট যন্ত্রপাতি কিনতে পারবে সৌদি। মধ্য পালার এআইএম-১২০সি-৭/সি-৮ মডেলের এয়ার-টু-এয়ার ক্ষেপণাস্ত্রগুলো ৬৫ কোটি ডলারে বিক্রি করছে যুক্তরাষ্ট্র। বাংলাদেশি মুদ্রায় যার পরিমাণ ৫ হাজার ৫৭৬ কোটি ৪০ লাখের বেশি।

পেন্টাগন জানিয়েছে, নিজস্ব নিরাপত্তা জোরদারে সৌদি আরব এ অস্ত্র কিনছে। মিত্র রিয়াদকে বর্তমান ও ভবিষ্যৎ নিরাপত্তা হুমকি মোকাবিলায় সহযোগিতার জন্য এ পদক্ষেপ নিয়েছে ওয়াশিংটন। ইয়েমেনে চলমান আগ্রাসনে সৌদি আরবকে যুক্তরাষ্ট্র আর সমর্থন দেবে না বলে জো বাইডেনের ঘোষণার কয়েক

মাস পরই এলো অস্ত্র বিক্রির এ খবর। ওই ঘোষণায় রিয়াদের কাছে অস্ত্র বিক্রি বন্ধের কথাও বলেছিলেন আমেরিকান প্রেসিডেন্ট। যুক্তরাষ্ট্রের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের রাজনৈতিক-সামরিক ব্যুরো বলছে, রিয়াদকে যে অস্ত্র দেয়া হচ্ছে, তা স্থল অভিযানে ব্যবহারযোগ্য নয়।

সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম টুইটারে ব্যুরোর পক্ষ থেকে লেখা হয়, গত এক বছরে সীমান্তের ওপার থেকে সৌদি ভূখ-ে হামলা বেড়েছে। এসব হামলা পারস্য উপসাগরীয় অঞ্চলে অবস্থানরত আমেরিকান সেনা এবং সৌদি আরবে বসবাসরত ৭০ হাজারের বেশি আমেরিকান নাগরিকের জন্যও হুমকি। এ হুমকি ঠেকাতে সহায়ক হবে অস্ত্র বিক্রির সিদ্ধান্ত।’

অস্ত্র বিক্রয়ের জন্য কংগ্রেসের অনুমোদনের প্রয়োজন হবে না। তবে মার্কিন আইনপ্রণেতারা সিনেট ও প্রতিনিধি পরিষদে একটি অসম্মতি বিল পাস করে এই চুক্তি আটকিয়ে দিতে পারেন। এর আগে, ইয়েমেনে নির্বিচারে হামলার জন্য চলতি বছরের ফেব্রুয়ারিতে সৌদি নেতৃত্বাধীন জোটকে সহায়তা বন্ধের ঘোষণা দেন প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন।

মধ্যপ্রাচ্যে সৌদি আরব দীর্ঘদিন ধরে ওয়াশিংটনের গুরুত্বপূর্ণ অংশীদার হলেও ইয়েমেনে হামলা ও দেশটিতে সৃষ্ট মানবিক সংকটের কারণে মার্কিন রাজনীতিকরা রিয়াদের সমালোচনা করে আসছে। এর আগে গত জানুয়ারিতে প্রেসিডেন্ট হিসেবে দায়িত্ব নেওয়ার পর সৌদির কাছে অস্ত্র বিক্রি স্থগিত করাসহ ইয়েমেন ইস্যুতে রিয়াদের ওপর থেকে সমর্থন প্রত্যাহারের ঘোষণা দিয়েছিলেন জো বাইডেন।

বেসামরিক মানুষের বিরুদ্ধে মার্কিন অস্ত্র ব্যবহার করা হবে না- এ নিশ্চয়তার দাবি করে যুক্তরাষ্ট্র এতদিন সৌদি আরবের কাছে সামরিক ক্রয়-বিক্রয় স্থগিত রেখেছিল। তবে পরিস্থিতির কোন পরিবর্তন বা উন্নতি না হলেও এর কয়েক মাসের মাথায় ফের দেশটির কাছে অস্ত্র বিক্রির অনুমোদন দিল বাইডেন প্রশাসন।

যুক্তরাষ্ট্রের প্রতিরক্ষা দপ্তরের দাবি, গত বেশ কয়েক বছরে সৌদি আরবে আন্তঃসীমান্ত হামলা বৃদ্ধি পেয়েছে বলে আমরা দেখতে পেয়েছি। ফলে দেশটিতে থাকা মার্কিন বাহিনী ও ৭০ হাজারের বেশি মার্কিন নাগরিক ঝুঁকিতে পড়েছেন। তবে এসব ক্ষেপণাস্ত্র আন্তঃসীমান্ত হামলা থেকে সৌদিকে নিরাপদে রাখতে সহায়তা করবে। এর আগে গত সেপ্টেম্বরে হেলিকপ্টার রক্ষণাবেক্ষণের জন্য সৌদি আরবের সঙ্গে ৫০ কোটি মার্কিন ডলারের চুক্তি করেছিল যুক্তরাষ্ট্র।

সৌদি নেতৃত্বাধীন সামরিক জোটের সঙ্গে ২০১৫ সাল থেকে লড়াই চালিয়ে যাচ্ছে ইরান সমর্থিত হুথি বিদ্রোহীরা। আন্তর্জাতিক সমর্থনপুষ্ট সরকারকে হটিয়ে হুথি বিদ্রোহীরা রাজধানী দখল করে নিলে এই সংঘাত শুরু হয়। সৌদি জোট ইয়েমেনে বিমান হামলায় মার্কিন অস্ত্র ব্যবহারের প্রমাণ রয়েছে। বেসামরিক মানুষের ওপর বিমান হামলায় সৌদি জোট ও যুক্তরাষ্ট্রের বিরুদ্ধে সমালোচনার ঝড় বয়। পরে জার্মানিসহ বেশ কয়েকটি দেশ সৌদির কাছে অস্ত্র বিক্রি বন্ধ করে দেয়।

শনিবার, ০৬ নভেম্বর ২০২১ , ২১ কার্তিক ১৪২৮ ২৯ রবিউল আউয়াল ১৪৪৩

সৌদি আরবকে ৬৫ কোটি ডলারের অস্ত্র দেবে যুক্তরাষ্ট্র

image

সৌদি আরবকে শক্তিশালী ক্ষেপণাস্ত্র দিতে যাচ্ছে যুক্তরাষ্ট্র। চুক্তি অনুযায়ী যুক্তরাষ্ট্রের তৈরি ৬৫ কোটি মার্কিন ডলারের ক্ষেপণাস্ত্র সরবরাহ করবে বাইডেন প্রশাসন। উপসাগরীয় দেশটির কাছে ক্ষেপণাস্ত্র বিক্রিতে ইতিমধ্যে অনুমোদনও দিয়েছে যুক্তরাষ্ট্রের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়। এক বিবৃতিতে এ তথ্য জানায় দেশটির প্রতিরক্ষা দপ্তর পেন্টাগন।

মার্কিন প্রেসিডেন্ট জো বাইডেনের প্রশাসন ক্ষমতায় আসার পর এই প্রথম সৌদিকে বিপুল অস্ত্র দিতে যাচ্ছে যুক্তরাষ্ট্র। মার্কিন প্রতিরক্ষা দপ্তর বিবৃতিতে জানায়, ড্রোন হামলা ঠেকিয়ে সৌদি আরব যাতে নিজেদের সুরক্ষিত রাখতে পারে, সে জন্য রিয়াদের কাছে এয়ার-টু-এয়ার মিসাইল দেবে ওয়াশিংটন। উড়োযান থেকে ছুড়ে মাঝ আকাশে অন্য উড়োযান ও ক্ষেপণাস্ত্র ধ্বংসে ব্যবহার করা হয় এ ধরনের অস্ত্র।

মাঝারি দূরত্ব অতিক্রমে সক্ষম অত্যাধুনিক প্রযুক্তির এ অস্ত্রের সঙ্গে দেয়া হবে এটি ব্যবহারে প্রয়োজনীয় অন্যান্য সরঞ্জামও। যার মধ্যে রয়েছে ২৮০টি অত্যাধুনিক মাঝারি পাল্লার এআইএম-১২০সি ক্ষেপণাস্ত্র। সংশ্লিষ্ট যন্ত্রপাতি কিনতে পারবে সৌদি। মধ্য পালার এআইএম-১২০সি-৭/সি-৮ মডেলের এয়ার-টু-এয়ার ক্ষেপণাস্ত্রগুলো ৬৫ কোটি ডলারে বিক্রি করছে যুক্তরাষ্ট্র। বাংলাদেশি মুদ্রায় যার পরিমাণ ৫ হাজার ৫৭৬ কোটি ৪০ লাখের বেশি।

পেন্টাগন জানিয়েছে, নিজস্ব নিরাপত্তা জোরদারে সৌদি আরব এ অস্ত্র কিনছে। মিত্র রিয়াদকে বর্তমান ও ভবিষ্যৎ নিরাপত্তা হুমকি মোকাবিলায় সহযোগিতার জন্য এ পদক্ষেপ নিয়েছে ওয়াশিংটন। ইয়েমেনে চলমান আগ্রাসনে সৌদি আরবকে যুক্তরাষ্ট্র আর সমর্থন দেবে না বলে জো বাইডেনের ঘোষণার কয়েক

মাস পরই এলো অস্ত্র বিক্রির এ খবর। ওই ঘোষণায় রিয়াদের কাছে অস্ত্র বিক্রি বন্ধের কথাও বলেছিলেন আমেরিকান প্রেসিডেন্ট। যুক্তরাষ্ট্রের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের রাজনৈতিক-সামরিক ব্যুরো বলছে, রিয়াদকে যে অস্ত্র দেয়া হচ্ছে, তা স্থল অভিযানে ব্যবহারযোগ্য নয়।

সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম টুইটারে ব্যুরোর পক্ষ থেকে লেখা হয়, গত এক বছরে সীমান্তের ওপার থেকে সৌদি ভূখ-ে হামলা বেড়েছে। এসব হামলা পারস্য উপসাগরীয় অঞ্চলে অবস্থানরত আমেরিকান সেনা এবং সৌদি আরবে বসবাসরত ৭০ হাজারের বেশি আমেরিকান নাগরিকের জন্যও হুমকি। এ হুমকি ঠেকাতে সহায়ক হবে অস্ত্র বিক্রির সিদ্ধান্ত।’

অস্ত্র বিক্রয়ের জন্য কংগ্রেসের অনুমোদনের প্রয়োজন হবে না। তবে মার্কিন আইনপ্রণেতারা সিনেট ও প্রতিনিধি পরিষদে একটি অসম্মতি বিল পাস করে এই চুক্তি আটকিয়ে দিতে পারেন। এর আগে, ইয়েমেনে নির্বিচারে হামলার জন্য চলতি বছরের ফেব্রুয়ারিতে সৌদি নেতৃত্বাধীন জোটকে সহায়তা বন্ধের ঘোষণা দেন প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন।

মধ্যপ্রাচ্যে সৌদি আরব দীর্ঘদিন ধরে ওয়াশিংটনের গুরুত্বপূর্ণ অংশীদার হলেও ইয়েমেনে হামলা ও দেশটিতে সৃষ্ট মানবিক সংকটের কারণে মার্কিন রাজনীতিকরা রিয়াদের সমালোচনা করে আসছে। এর আগে গত জানুয়ারিতে প্রেসিডেন্ট হিসেবে দায়িত্ব নেওয়ার পর সৌদির কাছে অস্ত্র বিক্রি স্থগিত করাসহ ইয়েমেন ইস্যুতে রিয়াদের ওপর থেকে সমর্থন প্রত্যাহারের ঘোষণা দিয়েছিলেন জো বাইডেন।

বেসামরিক মানুষের বিরুদ্ধে মার্কিন অস্ত্র ব্যবহার করা হবে না- এ নিশ্চয়তার দাবি করে যুক্তরাষ্ট্র এতদিন সৌদি আরবের কাছে সামরিক ক্রয়-বিক্রয় স্থগিত রেখেছিল। তবে পরিস্থিতির কোন পরিবর্তন বা উন্নতি না হলেও এর কয়েক মাসের মাথায় ফের দেশটির কাছে অস্ত্র বিক্রির অনুমোদন দিল বাইডেন প্রশাসন।

যুক্তরাষ্ট্রের প্রতিরক্ষা দপ্তরের দাবি, গত বেশ কয়েক বছরে সৌদি আরবে আন্তঃসীমান্ত হামলা বৃদ্ধি পেয়েছে বলে আমরা দেখতে পেয়েছি। ফলে দেশটিতে থাকা মার্কিন বাহিনী ও ৭০ হাজারের বেশি মার্কিন নাগরিক ঝুঁকিতে পড়েছেন। তবে এসব ক্ষেপণাস্ত্র আন্তঃসীমান্ত হামলা থেকে সৌদিকে নিরাপদে রাখতে সহায়তা করবে। এর আগে গত সেপ্টেম্বরে হেলিকপ্টার রক্ষণাবেক্ষণের জন্য সৌদি আরবের সঙ্গে ৫০ কোটি মার্কিন ডলারের চুক্তি করেছিল যুক্তরাষ্ট্র।

সৌদি নেতৃত্বাধীন সামরিক জোটের সঙ্গে ২০১৫ সাল থেকে লড়াই চালিয়ে যাচ্ছে ইরান সমর্থিত হুথি বিদ্রোহীরা। আন্তর্জাতিক সমর্থনপুষ্ট সরকারকে হটিয়ে হুথি বিদ্রোহীরা রাজধানী দখল করে নিলে এই সংঘাত শুরু হয়। সৌদি জোট ইয়েমেনে বিমান হামলায় মার্কিন অস্ত্র ব্যবহারের প্রমাণ রয়েছে। বেসামরিক মানুষের ওপর বিমান হামলায় সৌদি জোট ও যুক্তরাষ্ট্রের বিরুদ্ধে সমালোচনার ঝড় বয়। পরে জার্মানিসহ বেশ কয়েকটি দেশ সৌদির কাছে অস্ত্র বিক্রি বন্ধ করে দেয়।