এখন বঙ্গবন্ধুর নাম ইতিহাস থেকে মুছে ফেলা যাবে না : প্রধানমন্ত্রী

গোয়েন্দাদের গোপন রিপোর্ট সব বই হিসেবে প্রকাশিত

পাকিস্তানের গোয়েন্দা সংস্থা জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের বিরুদ্ধে যেসব গোপন রিপোর্ট তৈরি করেছিল সেসব বই হিসেব প্রকাশিত হওয়ায় এখন আর কেউ ইতিহাস থেকে বঙ্গবন্ধুর নাম মুছে ফেলতে পারছে না। পাশাপাশি বাংলাদেশের ইতিহাসও বিকৃত করতে পারছে না। এসব কথা বলেছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।

লন্ডনে সফররত প্রধানমন্ত্রী লন্ডনের স্থানীয় সময় বৃহস্পতিবার রাতে শহরের ক্লারিজ হোটেলে ‘দা সিক্রেট ডকুমেন্টস অফ ইন্টেলিজেন্স ব্রাঞ্চ অন ফাদার অফ দা নেশন বাংলাদেশ : বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান’ এবং ‘মুজিব ও পরিচিতি’ বই দুইটির প্রকাশনা অনুষ্ঠানে তিনি এসব কথা বলেন। অনুষ্ঠানের পরে শেখ হাসিনা বাংলাদেশ হাইকমিশন লন্ডনের উদ্যোগে ‘বঙ্গবন্ধু ও ব্রিটেন’ শীর্ষক চিত্র প্রদর্শনী উদ্বোধন করেন ও ঘুরে দেখেন। এই সময় তার সঙ্গে ছিলেন ছোট বোন শেখ রেহানা ও কন্যা সায়মা ওয়াজেদ হোসেন।

অনুষ্ঠানে বইটি নিয়ে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘আমি এইটুকু বলতে চাই এই ডকুমেন্টটা.. একটা জিনিস হবে যে পৃথিবীতে এটা হচ্ছে একটা পালিকেশন যেটা কখনও কেউ করে নাই। পরিবারের সদস্য হিসেবে আমরা অনুমতি দিয়েছি এবং উদ্যোগ নিয়েছি এই ডমুমেন্টগুলো প্রকাশ করার। আমি মনে করি এটা অনন্য।’

প্রধানমন্ত্রী আরও বলেন, ‘আমার মনে হয় পৃথিবীর কোন দেশে পাবেন না যে, একজন নেতার বিরুদ্ধে তার দেশের গোয়েন্দা সংস্থা কি রিপোর্ট দিয়েছে সেটা কোনদিন কেউ প্রকাশ করবে নিজেরা উদ্যোগী হয়ে, এটা হয় না।’

অনুষ্ঠানে শেখ হাসিনা জাতির পিতাকে নির্মমভাবে হত্যার পর যারা অবৈধভাবে সংবিধান লঙ্ঘন করে ক্ষমতা দখল করেছিল, তারা ইতিহাস থেকে জাতির পিতার নাম মুছে ফেলার অনেক অপচেষ্টা করেছিল বলেও জানান।

শেখ হাসিনা বলেন, ‘আমার বাবার নাম ইতিহাস থেকে মুছে ফেলা হয়েছিল। ৭ মার্চের ভাষণ ব্যান্ড, তার ফটো ব্যান্ড, উনার বক্তৃতা ব্যান্ড। এমনকি যে সেøাগান দিয়ে আমাদের স্বাধীনতা সেটাও ব্যান্ড বাংলাদেশে। ৭৫-এর পর এটাই ছিল বাংলাদেশের অবস্থা। তারা সবকিছু ব্যান্ড করেছিল।’

তিনি বলেন, ‘যখন এই বইটা বের হলো এরপর থেকে কিন্তু লোকে অনেক কিছু জানতে পারলো। এই অবস্থার মধ্যদিয়ে আমরা অন্তত বলতে পারি, এটা বের হওয়ার পর থেকে আর ইতিহাস বিকৃত কেউ করতে পারেনি, করতে পারবে না।’

‘আর এখন তো পারবেও না, কারণ আপনারা জানেন যে, ইউনেস্কো এরইমধ্যে মেমোরি অব দ্যা ওয়ার্ল্ড রেজিস্ট্রারে ৭ মার্চের ঐতিহাসিক ভাষণ এখন স্থান পেয়ে গেছে। অর্থাৎ ১৯৭১ সালের ৭ মার্চ বঙ্গবন্ধু ঐতিহাসিক ভাষণ এখন ইউনেস্কোর মেমোরি অব দ্যা ওয়ার্ল্ড রেজিস্ট্রারের অংশ। এটা পৃথিবীর অন্যতম অনুপ্রেরণাদানকারী ভাষণ বলে বিবেচিত’ বলেন শেখ হাসিনা।

তিনি বলেন, ‘জাতির পিতাকে নির্মমভাবে হত্যার পর দীর্ঘ ২১ বছর এই ভাষণ শোনা নিষিদ্ধ ছিল’।

জাতির পিতাকে নিয়ে পাকিস্তানের গোয়েন্দাদের প্রতিবেদনের উপর প্রকাশ করা বইটি প্রকাশের জন্য দীর্ঘ প্রায় ২০ বছর কাজ করতে হয়েছে জানিয়ে শেখ হাসিনা বলেন, ‘১৯৯৬ সালে আমরা কাজ শুরু করি এবং ২০০৯ সালে আমরা এটা প্রকাশ করার উদ্যোগ নেই, যখন আমি দ্বিতীয়বারের মতো প্রধানমন্ত্রীর দায়িত্ব পাই। তখন আমি এটা প্রকাশের উদ্যোগ নেই। ২০১৭ সালে আমরা এটা প্রকাশ করা শুরু করি। প্রায় ২০ বছর আমরা এটার উপর কাজ করেছি।’

বইটি প্রকাশের জন্য বিট্রিশ প্রকাশনা প্রতিষ্ঠান টেইলার অ্যান্ড ফ্রান্সিস গ্রুপকে অনুষ্ঠানে ধন্যবাদ জানান প্রধানমন্ত্রী।

ব্রিটিশ প্রকাশনা প্রতিষ্ঠানটি কেন বইটি প্রকাশ করতে আগ্রহ প্রকাশ করলো সেটা তাদের কাছে জানতে চাওয়ার কথা তুলে ধরে শেখ হাসিনা বলেন, ‘তারা আমাকে বলেছেন, এটার ভেতরে এমন কিছু তারা পেয়েছেন যেটা শুধু বাংলাদেশের জন্য না, সারাবিশ্বের জন্য খুবই গুরুত্বপূর্ণ দলিল। যার থেকে অনেক কিছু শেখার আছে বা এখনও গোয়েন্দা সংস্থার যারা তাদের প্রশিক্ষণের জন্য এটা কাজে লাগতে পারে। সেটাই সব থেকে বড় কথা।’

বইটি গবেষণার জন্য মানুষের কাছে যাবে এমন প্রত্যাশার কথা জানিয়ে অনুষ্ঠানে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘মানুষ বইটি পড়বে, এটি নিয়ে গবেষণা করবে এবং অনেক কিছু শিখবে, তথ্য সংগ্রহ করবে এবং তারা বাংলাদেশের ইতিহাস সম্পর্কে জানবে, শুধু বাঙালি জাতি নয় সারাবিশ্বের মানুষ। এটা সত্যিই অসাধারণ।’

প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘উনার (বঙ্গবন্ধুর) জীবনের অধিকাংশ সময় জেলে ছিলেন, আমরা সন্তান হিসেবে সব সময় বঞ্চিত। আমরা কতটুকু আর বাবার স্নেহ পেয়েছি। কারণ উনি যখন বাইরে তখন মানুষের জন্য কাজ করছেন আর তারপরে জেলখানায়। আমাদের সঙ্গে মাসের ১৫ দিনে একদিনই দেখা হতো। এই ছিল আমাদের জীবন। কিন্তু আমার মা কিন্তু..যখন আব্বা জেলে থাকতেন আমার মা কাজ করতেন। তবে আমার মার ব্যাপারে বলবো, উনি সত্যিকার গেরিলা ছিলেন। উনার কোন কর্মকাণ্ড কোনদিন গোয়েন্দারা ধরতে পারেননি।’

শনিবার, ০৬ নভেম্বর ২০২১ , ২১ কার্তিক ১৪২৮ ২৯ রবিউল আউয়াল ১৪৪৩

এখন বঙ্গবন্ধুর নাম ইতিহাস থেকে মুছে ফেলা যাবে না : প্রধানমন্ত্রী

গোয়েন্দাদের গোপন রিপোর্ট সব বই হিসেবে প্রকাশিত

যুক্তরাজ্যের লন্ডন থেকে সালাম জুবায়ের

image

পাকিস্তানের গোয়েন্দা সংস্থা জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের বিরুদ্ধে যেসব গোপন রিপোর্ট তৈরি করেছিল সেসব বই হিসেব প্রকাশিত হওয়ায় এখন আর কেউ ইতিহাস থেকে বঙ্গবন্ধুর নাম মুছে ফেলতে পারছে না। পাশাপাশি বাংলাদেশের ইতিহাসও বিকৃত করতে পারছে না। এসব কথা বলেছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।

লন্ডনে সফররত প্রধানমন্ত্রী লন্ডনের স্থানীয় সময় বৃহস্পতিবার রাতে শহরের ক্লারিজ হোটেলে ‘দা সিক্রেট ডকুমেন্টস অফ ইন্টেলিজেন্স ব্রাঞ্চ অন ফাদার অফ দা নেশন বাংলাদেশ : বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান’ এবং ‘মুজিব ও পরিচিতি’ বই দুইটির প্রকাশনা অনুষ্ঠানে তিনি এসব কথা বলেন। অনুষ্ঠানের পরে শেখ হাসিনা বাংলাদেশ হাইকমিশন লন্ডনের উদ্যোগে ‘বঙ্গবন্ধু ও ব্রিটেন’ শীর্ষক চিত্র প্রদর্শনী উদ্বোধন করেন ও ঘুরে দেখেন। এই সময় তার সঙ্গে ছিলেন ছোট বোন শেখ রেহানা ও কন্যা সায়মা ওয়াজেদ হোসেন।

অনুষ্ঠানে বইটি নিয়ে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘আমি এইটুকু বলতে চাই এই ডকুমেন্টটা.. একটা জিনিস হবে যে পৃথিবীতে এটা হচ্ছে একটা পালিকেশন যেটা কখনও কেউ করে নাই। পরিবারের সদস্য হিসেবে আমরা অনুমতি দিয়েছি এবং উদ্যোগ নিয়েছি এই ডমুমেন্টগুলো প্রকাশ করার। আমি মনে করি এটা অনন্য।’

প্রধানমন্ত্রী আরও বলেন, ‘আমার মনে হয় পৃথিবীর কোন দেশে পাবেন না যে, একজন নেতার বিরুদ্ধে তার দেশের গোয়েন্দা সংস্থা কি রিপোর্ট দিয়েছে সেটা কোনদিন কেউ প্রকাশ করবে নিজেরা উদ্যোগী হয়ে, এটা হয় না।’

অনুষ্ঠানে শেখ হাসিনা জাতির পিতাকে নির্মমভাবে হত্যার পর যারা অবৈধভাবে সংবিধান লঙ্ঘন করে ক্ষমতা দখল করেছিল, তারা ইতিহাস থেকে জাতির পিতার নাম মুছে ফেলার অনেক অপচেষ্টা করেছিল বলেও জানান।

শেখ হাসিনা বলেন, ‘আমার বাবার নাম ইতিহাস থেকে মুছে ফেলা হয়েছিল। ৭ মার্চের ভাষণ ব্যান্ড, তার ফটো ব্যান্ড, উনার বক্তৃতা ব্যান্ড। এমনকি যে সেøাগান দিয়ে আমাদের স্বাধীনতা সেটাও ব্যান্ড বাংলাদেশে। ৭৫-এর পর এটাই ছিল বাংলাদেশের অবস্থা। তারা সবকিছু ব্যান্ড করেছিল।’

তিনি বলেন, ‘যখন এই বইটা বের হলো এরপর থেকে কিন্তু লোকে অনেক কিছু জানতে পারলো। এই অবস্থার মধ্যদিয়ে আমরা অন্তত বলতে পারি, এটা বের হওয়ার পর থেকে আর ইতিহাস বিকৃত কেউ করতে পারেনি, করতে পারবে না।’

‘আর এখন তো পারবেও না, কারণ আপনারা জানেন যে, ইউনেস্কো এরইমধ্যে মেমোরি অব দ্যা ওয়ার্ল্ড রেজিস্ট্রারে ৭ মার্চের ঐতিহাসিক ভাষণ এখন স্থান পেয়ে গেছে। অর্থাৎ ১৯৭১ সালের ৭ মার্চ বঙ্গবন্ধু ঐতিহাসিক ভাষণ এখন ইউনেস্কোর মেমোরি অব দ্যা ওয়ার্ল্ড রেজিস্ট্রারের অংশ। এটা পৃথিবীর অন্যতম অনুপ্রেরণাদানকারী ভাষণ বলে বিবেচিত’ বলেন শেখ হাসিনা।

তিনি বলেন, ‘জাতির পিতাকে নির্মমভাবে হত্যার পর দীর্ঘ ২১ বছর এই ভাষণ শোনা নিষিদ্ধ ছিল’।

জাতির পিতাকে নিয়ে পাকিস্তানের গোয়েন্দাদের প্রতিবেদনের উপর প্রকাশ করা বইটি প্রকাশের জন্য দীর্ঘ প্রায় ২০ বছর কাজ করতে হয়েছে জানিয়ে শেখ হাসিনা বলেন, ‘১৯৯৬ সালে আমরা কাজ শুরু করি এবং ২০০৯ সালে আমরা এটা প্রকাশ করার উদ্যোগ নেই, যখন আমি দ্বিতীয়বারের মতো প্রধানমন্ত্রীর দায়িত্ব পাই। তখন আমি এটা প্রকাশের উদ্যোগ নেই। ২০১৭ সালে আমরা এটা প্রকাশ করা শুরু করি। প্রায় ২০ বছর আমরা এটার উপর কাজ করেছি।’

বইটি প্রকাশের জন্য বিট্রিশ প্রকাশনা প্রতিষ্ঠান টেইলার অ্যান্ড ফ্রান্সিস গ্রুপকে অনুষ্ঠানে ধন্যবাদ জানান প্রধানমন্ত্রী।

ব্রিটিশ প্রকাশনা প্রতিষ্ঠানটি কেন বইটি প্রকাশ করতে আগ্রহ প্রকাশ করলো সেটা তাদের কাছে জানতে চাওয়ার কথা তুলে ধরে শেখ হাসিনা বলেন, ‘তারা আমাকে বলেছেন, এটার ভেতরে এমন কিছু তারা পেয়েছেন যেটা শুধু বাংলাদেশের জন্য না, সারাবিশ্বের জন্য খুবই গুরুত্বপূর্ণ দলিল। যার থেকে অনেক কিছু শেখার আছে বা এখনও গোয়েন্দা সংস্থার যারা তাদের প্রশিক্ষণের জন্য এটা কাজে লাগতে পারে। সেটাই সব থেকে বড় কথা।’

বইটি গবেষণার জন্য মানুষের কাছে যাবে এমন প্রত্যাশার কথা জানিয়ে অনুষ্ঠানে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘মানুষ বইটি পড়বে, এটি নিয়ে গবেষণা করবে এবং অনেক কিছু শিখবে, তথ্য সংগ্রহ করবে এবং তারা বাংলাদেশের ইতিহাস সম্পর্কে জানবে, শুধু বাঙালি জাতি নয় সারাবিশ্বের মানুষ। এটা সত্যিই অসাধারণ।’

প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘উনার (বঙ্গবন্ধুর) জীবনের অধিকাংশ সময় জেলে ছিলেন, আমরা সন্তান হিসেবে সব সময় বঞ্চিত। আমরা কতটুকু আর বাবার স্নেহ পেয়েছি। কারণ উনি যখন বাইরে তখন মানুষের জন্য কাজ করছেন আর তারপরে জেলখানায়। আমাদের সঙ্গে মাসের ১৫ দিনে একদিনই দেখা হতো। এই ছিল আমাদের জীবন। কিন্তু আমার মা কিন্তু..যখন আব্বা জেলে থাকতেন আমার মা কাজ করতেন। তবে আমার মার ব্যাপারে বলবো, উনি সত্যিকার গেরিলা ছিলেন। উনার কোন কর্মকাণ্ড কোনদিন গোয়েন্দারা ধরতে পারেননি।’