পুলিশ পরিচয়ে গাড়ি ভাড়া নিয়ে ছিনতাই চক্র

পুলিশ পরিচয়ে তারা বিভিন্ন গাড়ি কয়েক ঘণ্টার জন্য ভাড়া করে। এরপর ভাড়া গাড়ি নিয়ে বিভিন্ন জায়গায় ঘোরাফেরার এক পর্যায়ে চালককে অচেতন করে গাড়ি ছিনিয়ে নিয়ে যায়। আর ছিনতাই করা গাড়ি দিয়েই ভাড়ায় চালিত গাড়ির চালক সেজে বিভিন্ন যাত্রী গাড়িতে তুলে লুট করতো মালামাল। ঢাকার মিরপুর, কেরানীগঞ্জ, মাওয়া এলাকায় তারা এসব কর্মকা-ের মাধ্যমে একাধিক গাড়ি ছিনতাইয়ের পর বিক্রিও করেছে। সর্বশান্ত করেছে অনেক ব্যক্তিকে।

‘দীর্ঘদিন ধরেই চক্রটি এ কাজ করে আসছিল। চক্রের সদস্যদের বিরুদ্ধে গাড়ি ছিনতাইসহ বিভিন্ন অপরাধে একাধিক মামলা থাকলেও তাদের কাজ থেমে নেই। তবে এবার চক্রটি ধরা পড়েছে পুলিশের অপরাধ তদন্ত বিভাগ সিআইডির কাছে। উদ্ধার হয়েছে ছিনতাই হওয়া গাড়িসহ ছিনতাইয়ের কাজে ব্যবহৃত বিভিন্ন সরঞ্জাম।

গত বুধবার থেকে বৃহস্পতিবার সিআইডি জানিয়েছে ঢাকা মেট্রো পশ্চিমের এএসপি দেলোয়ার আহমেদের নেতৃত্বে রামপুরা ও কেরানীগঞ্জ এলাকায় অভিযান চালিয়ে এ চক্রের ৩ জনকে আটক করা হয়। আটক হওয়া এ ৩ জন হলো মোহাম্মদ সোহেল রানা, জামাল ভূঁইয়া এবং জামাল শিকদার। আটক করার সময় এদের কাছ থেকে ছিনতাই করা একটি এলিয়ন প্রাইভেট কার, চেতনা নাশক এবং ওমানের ডলার পাওয়া যায়। এর পর এদের সিআইডি কার্যালয়ে এনে জিজ্ঞাসাবাদ করা হয়। এরপর তাদের দেয়া তথ্যে আরও একজনের নাম আসে। সবমিলিয়ে এ চক্রের ৪ জনকে আটক করেছে সিআইডি।

সিআইডি জানিয়েছে, এ চক্রের একাধিক সদস্য রয়েছে। এরা কয়েক গ্রুপে ভাগ হয়ে কাজ করে। রাজধানীর বিভিন্ন এলাকায় এরা ছিনতাই ছাড়াও ডাকাতি, চুরিসহ নানা অপরাধের সঙ্গে জড়িত। আটককৃতরা তাদের গ্রুপের আরও বেশ কয়েকজন সদস্যের নাম বলেছে। তাদের ধরতেও অভিযান চলছে।

সিআইডির অতিরিক্ত পুলিশ সুপার আজাদ রহমান জানান, ‘এই চক্রের সদস্যরা সিআইডি এবং ডিবি পুলিশ পরিচয় দিয়ে গাড়ি ভাড়া করতো। পরবর্তী সময়ে ড্রাইভারকে খাবারের সঙ্গে চেতনানাশক খাইয়ে কিংবা চোখে মলম লাগিয়ে নির্জন স্থানে ফেলে রেখে প্রাইভেটকার, মাইক্রোবাস ও সিএনজি ছিনতাই করতো। ছিনতাই হওয়া এসব গাড়ি ব্যবহার করে তারা রাজধানীর বিভিন্ন এলাকায় ঘুরে বেড়াতো। যাত্রী পরিবহনের নামে টার্গেট ব্যক্তিদের পৌঁছে দেয়ার কথা বলে গাড়িতে তুলে তাদের কাছ থেকে সবকিছু কেড়ে নিতো।

এছাড়া বিদেশি মুদ্রা বিক্রির লোভ দেখিয়ে সাধারণ মানুষকে গাড়িতে তুলে চেতনানাশক খাইয়েও তাদের মোবাইল ফোন ও টাকা-পয়সাসহ মূল্যবান জিনিসপত্র ছিনতাই করে নির্জন স্থানে ফেলে রেখে যেতো।’ রাজধানীর মিরপুর, মাওয়া এবং কেরানীগঞ্জ এলাকায় বেশ কয়েকটি ছিনতাই ঘটনা ঘটিয়েছে এ চক্রটি।

সিআইডির ঢাকা মেট্রো পশ্চিমের বিশেষ পুলিশ সুপার সামসুন নাহার টেলিফোনে সংবাদকে জানান, অন্য একটি মামলার তদন্ত করতে গিয়ে আমরা এ চক্রের সন্ধান পাই। যে ৩ জনকে আমরা আটক করেছি তারা মূলত গ্রুপটি নিয়ন্ত্রণ করে। কাজের প্রয়োজনে তারা ৩ জন কোন কোন অভিযানে লোক ভাড়াও নেয়। ওই ৩ জন ছাড়াও আরও একজন আছে তাদের সঙ্গে। আমরা তার নাম ও পরিচয় সবকিছু উদ্ধার করেছি। তাকে নজরদারিতে রাখা হয়েছে।

এসপি সামসুন নাহার বলেন, মিরপুর এলাকায় একটি গাড়ি ছিনতাইয়ের সময় চক্রটি সিআইডির জালে ধরা পড়ে। আমারা তাদের অনেকদিন ধরেই নজরদারিতে রেখেছিলম। শেষ পর্যন্ত ৩ জনকে আটক করতে সক্ষম হয়েছি। এরা একাধিক বার জেলে গিয়েছে। আবার জামিনে বেরিয়ে এসে একই কাজে জড়িয়ে পড়েছে। চক্রটি কখনও এক কাজে থাকে না। গাড়ি ছিনতাই করার পর ডলার বিক্রির নামে মানুষকে ডেকে নিয়ে মালামাল লুট করে। আবার চুরি, ডাকাতিসহ হেনো কোন অপরাধ নেই যে, এরা করে না।

গাড়ি ছিনতাইয়ের টার্গেট নিয়ে এরা যেকোন একটি জায়গায় অবস্থান করে। আইনশৃঙ্খলা বাহিনী পরিচয় দিয়ে তারা আসামি গ্রেপ্তার করতে যাবে অথবা কোন অভিযানে যাওয়ার কথা বলে গাড়ি ভাড়া নেয়। চালককে সুবিধাজনক স্থানে নিয়ে অচেতন করে গাড়ি নিয়ে যায়। ওই গাড়ি কখনও ছিনতাইয়ের কাজে ব্যবহার করে আবার কখনও সঙ্গে সঙ্গে বিক্রি করে দেয়।

শনিবার, ০৬ নভেম্বর ২০২১ , ২১ কার্তিক ১৪২৮ ২৯ রবিউল আউয়াল ১৪৪৩

পুলিশ পরিচয়ে গাড়ি ভাড়া নিয়ে ছিনতাই চক্র

নিজস্ব বার্তা পরিবেশক

পুলিশ পরিচয়ে তারা বিভিন্ন গাড়ি কয়েক ঘণ্টার জন্য ভাড়া করে। এরপর ভাড়া গাড়ি নিয়ে বিভিন্ন জায়গায় ঘোরাফেরার এক পর্যায়ে চালককে অচেতন করে গাড়ি ছিনিয়ে নিয়ে যায়। আর ছিনতাই করা গাড়ি দিয়েই ভাড়ায় চালিত গাড়ির চালক সেজে বিভিন্ন যাত্রী গাড়িতে তুলে লুট করতো মালামাল। ঢাকার মিরপুর, কেরানীগঞ্জ, মাওয়া এলাকায় তারা এসব কর্মকা-ের মাধ্যমে একাধিক গাড়ি ছিনতাইয়ের পর বিক্রিও করেছে। সর্বশান্ত করেছে অনেক ব্যক্তিকে।

‘দীর্ঘদিন ধরেই চক্রটি এ কাজ করে আসছিল। চক্রের সদস্যদের বিরুদ্ধে গাড়ি ছিনতাইসহ বিভিন্ন অপরাধে একাধিক মামলা থাকলেও তাদের কাজ থেমে নেই। তবে এবার চক্রটি ধরা পড়েছে পুলিশের অপরাধ তদন্ত বিভাগ সিআইডির কাছে। উদ্ধার হয়েছে ছিনতাই হওয়া গাড়িসহ ছিনতাইয়ের কাজে ব্যবহৃত বিভিন্ন সরঞ্জাম।

গত বুধবার থেকে বৃহস্পতিবার সিআইডি জানিয়েছে ঢাকা মেট্রো পশ্চিমের এএসপি দেলোয়ার আহমেদের নেতৃত্বে রামপুরা ও কেরানীগঞ্জ এলাকায় অভিযান চালিয়ে এ চক্রের ৩ জনকে আটক করা হয়। আটক হওয়া এ ৩ জন হলো মোহাম্মদ সোহেল রানা, জামাল ভূঁইয়া এবং জামাল শিকদার। আটক করার সময় এদের কাছ থেকে ছিনতাই করা একটি এলিয়ন প্রাইভেট কার, চেতনা নাশক এবং ওমানের ডলার পাওয়া যায়। এর পর এদের সিআইডি কার্যালয়ে এনে জিজ্ঞাসাবাদ করা হয়। এরপর তাদের দেয়া তথ্যে আরও একজনের নাম আসে। সবমিলিয়ে এ চক্রের ৪ জনকে আটক করেছে সিআইডি।

সিআইডি জানিয়েছে, এ চক্রের একাধিক সদস্য রয়েছে। এরা কয়েক গ্রুপে ভাগ হয়ে কাজ করে। রাজধানীর বিভিন্ন এলাকায় এরা ছিনতাই ছাড়াও ডাকাতি, চুরিসহ নানা অপরাধের সঙ্গে জড়িত। আটককৃতরা তাদের গ্রুপের আরও বেশ কয়েকজন সদস্যের নাম বলেছে। তাদের ধরতেও অভিযান চলছে।

সিআইডির অতিরিক্ত পুলিশ সুপার আজাদ রহমান জানান, ‘এই চক্রের সদস্যরা সিআইডি এবং ডিবি পুলিশ পরিচয় দিয়ে গাড়ি ভাড়া করতো। পরবর্তী সময়ে ড্রাইভারকে খাবারের সঙ্গে চেতনানাশক খাইয়ে কিংবা চোখে মলম লাগিয়ে নির্জন স্থানে ফেলে রেখে প্রাইভেটকার, মাইক্রোবাস ও সিএনজি ছিনতাই করতো। ছিনতাই হওয়া এসব গাড়ি ব্যবহার করে তারা রাজধানীর বিভিন্ন এলাকায় ঘুরে বেড়াতো। যাত্রী পরিবহনের নামে টার্গেট ব্যক্তিদের পৌঁছে দেয়ার কথা বলে গাড়িতে তুলে তাদের কাছ থেকে সবকিছু কেড়ে নিতো।

এছাড়া বিদেশি মুদ্রা বিক্রির লোভ দেখিয়ে সাধারণ মানুষকে গাড়িতে তুলে চেতনানাশক খাইয়েও তাদের মোবাইল ফোন ও টাকা-পয়সাসহ মূল্যবান জিনিসপত্র ছিনতাই করে নির্জন স্থানে ফেলে রেখে যেতো।’ রাজধানীর মিরপুর, মাওয়া এবং কেরানীগঞ্জ এলাকায় বেশ কয়েকটি ছিনতাই ঘটনা ঘটিয়েছে এ চক্রটি।

সিআইডির ঢাকা মেট্রো পশ্চিমের বিশেষ পুলিশ সুপার সামসুন নাহার টেলিফোনে সংবাদকে জানান, অন্য একটি মামলার তদন্ত করতে গিয়ে আমরা এ চক্রের সন্ধান পাই। যে ৩ জনকে আমরা আটক করেছি তারা মূলত গ্রুপটি নিয়ন্ত্রণ করে। কাজের প্রয়োজনে তারা ৩ জন কোন কোন অভিযানে লোক ভাড়াও নেয়। ওই ৩ জন ছাড়াও আরও একজন আছে তাদের সঙ্গে। আমরা তার নাম ও পরিচয় সবকিছু উদ্ধার করেছি। তাকে নজরদারিতে রাখা হয়েছে।

এসপি সামসুন নাহার বলেন, মিরপুর এলাকায় একটি গাড়ি ছিনতাইয়ের সময় চক্রটি সিআইডির জালে ধরা পড়ে। আমারা তাদের অনেকদিন ধরেই নজরদারিতে রেখেছিলম। শেষ পর্যন্ত ৩ জনকে আটক করতে সক্ষম হয়েছি। এরা একাধিক বার জেলে গিয়েছে। আবার জামিনে বেরিয়ে এসে একই কাজে জড়িয়ে পড়েছে। চক্রটি কখনও এক কাজে থাকে না। গাড়ি ছিনতাই করার পর ডলার বিক্রির নামে মানুষকে ডেকে নিয়ে মালামাল লুট করে। আবার চুরি, ডাকাতিসহ হেনো কোন অপরাধ নেই যে, এরা করে না।

গাড়ি ছিনতাইয়ের টার্গেট নিয়ে এরা যেকোন একটি জায়গায় অবস্থান করে। আইনশৃঙ্খলা বাহিনী পরিচয় দিয়ে তারা আসামি গ্রেপ্তার করতে যাবে অথবা কোন অভিযানে যাওয়ার কথা বলে গাড়ি ভাড়া নেয়। চালককে সুবিধাজনক স্থানে নিয়ে অচেতন করে গাড়ি নিয়ে যায়। ওই গাড়ি কখনও ছিনতাইয়ের কাজে ব্যবহার করে আবার কখনও সঙ্গে সঙ্গে বিক্রি করে দেয়।