বেদখল ৩০টি মুজিব কিল্লা

নোয়াখালীর উপকূলে দুর্যোগ মোকাবিলায় তৈরি করা হয় কিল্লাগুলো

নোয়াখালীর উপকূলকে রক্ষার তাগিদে ১৯৭২ সালে আশ্রায়ণ কেন্দ্রের পাশাপাশি প্রাকৃতিক দুর্যোগকালীন সময়ে মানুষ ও পশু-পাখির আশ্রয়স্থল হিসেবে ব্যবহারের জন্য মাটির নির্মিত মুজিব কিল্লাগুলো বর্তমানে বেদখলে। প্রভাবশালীরা কিল্লাগুলো দখল করে রেখেছে। ৩৩টি কিল্লার মধ্যে ৩টি বিভিন্ন সময়ে নদীর ভাঙনে বিলীন হলেও অবশিষ্ট ৩০টি কিল্লা বর্তমানে বেদখলে। দখল ও অধিকাংশ গাছপালাগুলো কেটে ফেলার কারণে বর্তমানে কিল্লাগুলো তার প্রকৃতি ও আকার হারিয়ে ফেলছে। কোথাও সমতলে পরিণত করা হয়েছে। সেখানে নির্মিত হয়েছে গরু, মুরগির খামার ও বসতি।

১৯৭০ সালের ১২ নভেম্বর, দিনভর গোমড়া ছিল আকাশ, সারাদিন ধরে ছিল গুঁড়ি গুঁড়ি বৃষ্টি। প্রতিদিনের মতো রাতে ঘুমিয়ে পড়ে সবাই। মধ্যরাতে হঠাৎ প্রলয়ংকারী ঘূর্ণিঝড় ‘গোর্কি’ আঘাত হানে উপকূলে, ওই তা-বে মুহূর্তের মধ্যে ল-ভ- হয়ে যায় সব। সেদিন গোর্কির আঘাতে প্রাণ হারায় নোয়াখালীর দ্বীপ উপজেলা হাতিয়া-সুবর্ণচর ও কোম্পানিগঞ্জ উপকূলের অর্ধলাখ মানুষ। মারা যায় লক্ষাধিক গৃহপালিত পশু। পরদিন ভোরের আলোয় উপকূলীয় অঞ্চলে যেন লাশের ঢেউ। প্রিয়জন হারানোর সে যন্ত্রণা এখনও তাড়িয়ে বেড়ায় স্বজনদের। সে থেকে ‘ভয়াল ১২ নভেম্বর’ পালন করে আসছে নোয়াখালীর বিভিন্ন সংগঠন।

এমন প্রাণহানী থেকে নোয়াখালীর উপকূলকে রক্ষার তাগিদে ১৯৭২ সালে আশ্রায়ণ কেন্দ্রের পাশাপাশি মাটির কিল্লা নির্মাণের প্রক্রিয়া শুরু করে নোয়াখালীর কৃত্বিমান পুরুষ সাবেক স্বাস্থ্যমন্ত্রী, স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী, পরবর্তীতে জাতীয় সংসদের স্পিকার ও আওয়ামী লীগের তৎকালীন কেন্দ্রীয় সভাপতি প্রয়াত অ্যাডভোকেট আবদুল মালেক উকিল।

জানা যায়, উপকূলে ৩৩টি কিল্লা নির্মাণের পর তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান এসব কিল্লা পরিদর্শনও করেন। তখন তিনি কিল্লাগুলো রক্ষণাবেক্ষণের জন্য রেড ক্রিসেন্টকে দায়িত্ব দেন। পরবর্তীতে এ অঞ্চলের মানুষ ও বিভিন্ন সংগঠন কিল্লাগুলোর নাম দেন ‘মুজিব কিল্লা’। এসব কিল্লার কারণে ১৯৮৫ ও ১৯৯১ এর ভয়াবহ বন্যায় রক্ষা পেয়েছিল এ উপকূলের মানুষ ও তাদের গৃহপালিত পশু।

কিন্তু বর্তমানে এ কিল্লাগুলো পুরোটাই বেদখলে চলে গেছে। ৩৩টি কিল্লার মধ্যে ৩টি বিভিন্ন সময়ে নদীর ভাঙনে বিলীন হলেও অবশিষ্ট ৩০টি কিল্লা বর্তমানে বেদখলে। রেডক্রিসেন্ট সোসাইটি জেলা ইউনিট এসব কিল্লা দেখভাল করার কথা থাকলেও কিছু অসাধু কর্মকর্তা নিজেদের লোকজনের মধ্যে তা লিজ দিয়ে দেয়। তবে লিজ দেয়ার অভিযোগ অস্বীকার করে রেডক্রিসেন্ট দায় দিচ্ছেন সরকারি সংশ্লিষ্ট দপ্তরকে। আর বন্দোবস্তের বিষয়টি জানা নেই বলছেন স্থানীয় প্রশাসন। রেডক্রিসেন্ট সোসাইটি নোয়াখালী জেলা ইউনিটের তথ্য অনুযায়ী, প্রাকৃতিক দুর্যোগকালীন আশ্রয়স্থল হিসেবে দেশের বিভিন্ন উপকূলীয় অঞ্চলে মানুষের জন্য আশ্রায়ণ কেন্দ্র আর পশু-পাখির জন্য নির্মিত হয় মাটির কিল্লা। যখন আশ্রয় কেন্দ্রগুলোতে মানুষের সংকুলান হয় না তখন সাধারণ মানুষ ওই কিল্লাতে আশ্রয় নেয়। পুরো দেশের উপকূলীয় এলাকার ন্যায় জেলার দ্বীপ উপজেলা হাতিয়ায় ৪৫-৫০ ফুট উচ্চতার ১৮টি এবং সুবর্ণচরে ১৫টি মাটির কিল্লা নির্মাণ করা হয়। প্রত্যেকটি কিল্লার অনুকূলে ৫ একর জমি বরাদ্দ, কিল্লা নির্মাণের জন্য কাটা হয় ২টি করে পুকুর। নির্মাণ শেষ হলে এসব কিল্লাগুলো তত্ত্বাবধান, রক্ষণাবেক্ষণ ও প্রাকৃতিক দুর্যোগকালীন পশু-পাখির আশ্রয়স্থল হিসেবে ব্যবহারের জন্য রেড ক্রিসেন্টকে আনুষ্ঠানিকভাবে দায়িত্ব হস্তান্তর করা হয়।

সরেজমিনে গিয়ে দেখা যায়, সুবর্ণচরের মোহাম্মদপুর ও চরজব্বর ইউনিয়নে নির্মিত কিল্লাটিতে আড়াআড়িভাবে বাঁধ দিয়ে বাণিজ্যিকভাবে মাছের ঘের করা হয়েছে। জামাল ব্যাপারী ও আবুল কাশেমসহ স্থানীয় একাধিক প্রভাবশালী কিল্লাগুলো দখল করে রেখেছে। কেটে ফেলা হয়েছে অসংখ্য গাছ। একই অবস্থা চর আমান উল্যাহর কাটা বুনিয়া গ্রামের কিল্লাটি কেটে বাণিজ্যিকভাবে মুরগি, মাছ ও গরুর খামার গড়ে তোলা হয়েছে। বাউন্ডারী ওয়াল তোলা হয়েছে কিল্লার তিন পাশে, দেয়া হয়েছে লোহার গেইট।

সাগরিকা সমাজ উন্নয়ন সংস্থার নির্বাহী প্রধান রফিক উল্যাহ সুমন জানান, উপকূলের এ অঞ্চলে প্রচুর পরিমাণে গবাদি পশু রয়েছে। দখলের কারণে বর্তমানে কিল্লাগুলো তার প্রকৃত আকার হারিয়ে ফেলছে। এভাবে চলতে থাকলে আগামী দিনে কিল্লাগুলোর অস্তিত্ব খুঁজে পাওয়া যাবে না। এতে করে এ অঞ্চলে প্রাকৃতিক দুর্যোগে ঝুঁকি বাড়বে। প্রাকৃতিক দুর্যোগে মানুষ ও তাদের পালনকৃত গবাদি পশুগুলো প্রাণ রক্ষার জন্য নিরাপদ স্থান পাবে না। তাই কিল্লাগুলো প্রভাবশালীদের কাছ থেকে দখলমুক্ত করে সোসাইটির দখলে নেয়ার জোর দাবি জানান তিনি।

চর তোরাব আলী গ্রামের বাসিন্দা দিদারুল আলম জানান, আমাদের এলাকার কিল্লাটি রেড ক্রিসেন্টের দায়িত্বে। গত ৩-৪ বছর আগে তারা কিল্লাটি লিজ দিয়েছে, কিন্তু কাকে দিয়েছে তা আমার জানা নেই। লিজ নেয়া লোকজন কিল্লা থেকে প্রায় ২ শতাধিক গাছ কেটে নিয়ে গেছে।

মোহাম্মদপুর সিপিবি ইউনিয়ন লিডার মো. নূর নবী জানান, নিয়ম না থাকলেও সোসাইটির জেলা ইউনিটের কর্মকর্তাদের নিজস্ব লোকজনকে লিজ দেয়া হয়। কোথাও কোথাও বন্দোবস্ত দিয়েছে ভূমি প্রশাসন। ফলে কোন কিল্লার গাছ কেটে নেয়া হয়েছে, কোথাও সমতলে পরিণত করা হয়েছে। সেখানে নির্মিত হয়েছে গরু, মুরগির খামার ও বসতি। দখলের বিষয়টি সোসাইটির বাৎসরিক সাধারণ সভায় জেলা ইউনিটের কর্মকর্তাদের একাধিকবার জানানো হয়েছে, কিন্তু এ বিষয়ে এখনও কোন ব্যবস্থা নেননি কর্তৃপক্ষ। মোহাম্মদপুরের চর আলাউদ্দিন গ্রামের কিল্লা দখলকারী অভিযুক্ত জামাল ব্যাপারী বলেন, স্থানীয় এক নারী একটি কিল্লার বন্দোবস্ত নিয়েছিল। পরে তার থেকে আমরা নথি নিয়ে বসতি, পুকুর ও মৎস্য খামার করেছি। কিন্তু আমরা কিল্লা জোর পূর্বক দখল করিনি।

চরজব্বর ইউনিয়নের কিল্লা দখলকারী আবুল কাশেম বলেন, মালিকানা জায়গা আমি ক্রয় করে নিয়েছি। এটা মুজিব কিল্লা কি-না তা আমার জানা নেই।

জেলা রেড ক্রিসেন্ট সোসাইটির উপপরিচালক আবদুল করিম বলেন, কিল্লার বিষয়ে বিস্তারিত আমাদের সাধারণ সম্পাদক বলতে পারবেন। এরপর আর তিনি কোন মন্তব্য করতে রাজি হননি।

সুবর্ণচর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) চৈতী সর্ববিদ্যা জানান, মুজিব কিল্লা বন্দোবস্ত ও বেদখলের বিষয়টি আমার জানা নেই। আপনাদের মাধ্যমে যেহেতু বিষয়টি জানতে পেরেছি এ বিষয়ে খোঁজ খবর নিয়ে দ্রুত ব্যবস্থা নেয়া হবে। জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবের স্মৃতি বিজোড়িত কিল্লাগুলো প্রভাবশালীদের কাছ থেকে দখলমুক্ত করার জোর দাবি জানান সচেতন মহল ও এলাকাবাসী।

শনিবার, ০৬ নভেম্বর ২০২১ , ২১ কার্তিক ১৪২৮ ২৯ রবিউল আউয়াল ১৪৪৩

বেদখল ৩০টি মুজিব কিল্লা

নোয়াখালীর উপকূলে দুর্যোগ মোকাবিলায় তৈরি করা হয় কিল্লাগুলো

মোস্তফা মহসিন, বেগমগঞ্জ (নোয়াখালী)

image

নোয়াখালীর উপকূলে দুর্যোগ মোকাবিলায় তৈরি করা হয় কিল্লা, এখন বেদখল হয়ে মাছের প্রজেক্ট ও মুরগির খামার -সংবাদ

নোয়াখালীর উপকূলকে রক্ষার তাগিদে ১৯৭২ সালে আশ্রায়ণ কেন্দ্রের পাশাপাশি প্রাকৃতিক দুর্যোগকালীন সময়ে মানুষ ও পশু-পাখির আশ্রয়স্থল হিসেবে ব্যবহারের জন্য মাটির নির্মিত মুজিব কিল্লাগুলো বর্তমানে বেদখলে। প্রভাবশালীরা কিল্লাগুলো দখল করে রেখেছে। ৩৩টি কিল্লার মধ্যে ৩টি বিভিন্ন সময়ে নদীর ভাঙনে বিলীন হলেও অবশিষ্ট ৩০টি কিল্লা বর্তমানে বেদখলে। দখল ও অধিকাংশ গাছপালাগুলো কেটে ফেলার কারণে বর্তমানে কিল্লাগুলো তার প্রকৃতি ও আকার হারিয়ে ফেলছে। কোথাও সমতলে পরিণত করা হয়েছে। সেখানে নির্মিত হয়েছে গরু, মুরগির খামার ও বসতি।

১৯৭০ সালের ১২ নভেম্বর, দিনভর গোমড়া ছিল আকাশ, সারাদিন ধরে ছিল গুঁড়ি গুঁড়ি বৃষ্টি। প্রতিদিনের মতো রাতে ঘুমিয়ে পড়ে সবাই। মধ্যরাতে হঠাৎ প্রলয়ংকারী ঘূর্ণিঝড় ‘গোর্কি’ আঘাত হানে উপকূলে, ওই তা-বে মুহূর্তের মধ্যে ল-ভ- হয়ে যায় সব। সেদিন গোর্কির আঘাতে প্রাণ হারায় নোয়াখালীর দ্বীপ উপজেলা হাতিয়া-সুবর্ণচর ও কোম্পানিগঞ্জ উপকূলের অর্ধলাখ মানুষ। মারা যায় লক্ষাধিক গৃহপালিত পশু। পরদিন ভোরের আলোয় উপকূলীয় অঞ্চলে যেন লাশের ঢেউ। প্রিয়জন হারানোর সে যন্ত্রণা এখনও তাড়িয়ে বেড়ায় স্বজনদের। সে থেকে ‘ভয়াল ১২ নভেম্বর’ পালন করে আসছে নোয়াখালীর বিভিন্ন সংগঠন।

এমন প্রাণহানী থেকে নোয়াখালীর উপকূলকে রক্ষার তাগিদে ১৯৭২ সালে আশ্রায়ণ কেন্দ্রের পাশাপাশি মাটির কিল্লা নির্মাণের প্রক্রিয়া শুরু করে নোয়াখালীর কৃত্বিমান পুরুষ সাবেক স্বাস্থ্যমন্ত্রী, স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী, পরবর্তীতে জাতীয় সংসদের স্পিকার ও আওয়ামী লীগের তৎকালীন কেন্দ্রীয় সভাপতি প্রয়াত অ্যাডভোকেট আবদুল মালেক উকিল।

জানা যায়, উপকূলে ৩৩টি কিল্লা নির্মাণের পর তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান এসব কিল্লা পরিদর্শনও করেন। তখন তিনি কিল্লাগুলো রক্ষণাবেক্ষণের জন্য রেড ক্রিসেন্টকে দায়িত্ব দেন। পরবর্তীতে এ অঞ্চলের মানুষ ও বিভিন্ন সংগঠন কিল্লাগুলোর নাম দেন ‘মুজিব কিল্লা’। এসব কিল্লার কারণে ১৯৮৫ ও ১৯৯১ এর ভয়াবহ বন্যায় রক্ষা পেয়েছিল এ উপকূলের মানুষ ও তাদের গৃহপালিত পশু।

কিন্তু বর্তমানে এ কিল্লাগুলো পুরোটাই বেদখলে চলে গেছে। ৩৩টি কিল্লার মধ্যে ৩টি বিভিন্ন সময়ে নদীর ভাঙনে বিলীন হলেও অবশিষ্ট ৩০টি কিল্লা বর্তমানে বেদখলে। রেডক্রিসেন্ট সোসাইটি জেলা ইউনিট এসব কিল্লা দেখভাল করার কথা থাকলেও কিছু অসাধু কর্মকর্তা নিজেদের লোকজনের মধ্যে তা লিজ দিয়ে দেয়। তবে লিজ দেয়ার অভিযোগ অস্বীকার করে রেডক্রিসেন্ট দায় দিচ্ছেন সরকারি সংশ্লিষ্ট দপ্তরকে। আর বন্দোবস্তের বিষয়টি জানা নেই বলছেন স্থানীয় প্রশাসন। রেডক্রিসেন্ট সোসাইটি নোয়াখালী জেলা ইউনিটের তথ্য অনুযায়ী, প্রাকৃতিক দুর্যোগকালীন আশ্রয়স্থল হিসেবে দেশের বিভিন্ন উপকূলীয় অঞ্চলে মানুষের জন্য আশ্রায়ণ কেন্দ্র আর পশু-পাখির জন্য নির্মিত হয় মাটির কিল্লা। যখন আশ্রয় কেন্দ্রগুলোতে মানুষের সংকুলান হয় না তখন সাধারণ মানুষ ওই কিল্লাতে আশ্রয় নেয়। পুরো দেশের উপকূলীয় এলাকার ন্যায় জেলার দ্বীপ উপজেলা হাতিয়ায় ৪৫-৫০ ফুট উচ্চতার ১৮টি এবং সুবর্ণচরে ১৫টি মাটির কিল্লা নির্মাণ করা হয়। প্রত্যেকটি কিল্লার অনুকূলে ৫ একর জমি বরাদ্দ, কিল্লা নির্মাণের জন্য কাটা হয় ২টি করে পুকুর। নির্মাণ শেষ হলে এসব কিল্লাগুলো তত্ত্বাবধান, রক্ষণাবেক্ষণ ও প্রাকৃতিক দুর্যোগকালীন পশু-পাখির আশ্রয়স্থল হিসেবে ব্যবহারের জন্য রেড ক্রিসেন্টকে আনুষ্ঠানিকভাবে দায়িত্ব হস্তান্তর করা হয়।

সরেজমিনে গিয়ে দেখা যায়, সুবর্ণচরের মোহাম্মদপুর ও চরজব্বর ইউনিয়নে নির্মিত কিল্লাটিতে আড়াআড়িভাবে বাঁধ দিয়ে বাণিজ্যিকভাবে মাছের ঘের করা হয়েছে। জামাল ব্যাপারী ও আবুল কাশেমসহ স্থানীয় একাধিক প্রভাবশালী কিল্লাগুলো দখল করে রেখেছে। কেটে ফেলা হয়েছে অসংখ্য গাছ। একই অবস্থা চর আমান উল্যাহর কাটা বুনিয়া গ্রামের কিল্লাটি কেটে বাণিজ্যিকভাবে মুরগি, মাছ ও গরুর খামার গড়ে তোলা হয়েছে। বাউন্ডারী ওয়াল তোলা হয়েছে কিল্লার তিন পাশে, দেয়া হয়েছে লোহার গেইট।

সাগরিকা সমাজ উন্নয়ন সংস্থার নির্বাহী প্রধান রফিক উল্যাহ সুমন জানান, উপকূলের এ অঞ্চলে প্রচুর পরিমাণে গবাদি পশু রয়েছে। দখলের কারণে বর্তমানে কিল্লাগুলো তার প্রকৃত আকার হারিয়ে ফেলছে। এভাবে চলতে থাকলে আগামী দিনে কিল্লাগুলোর অস্তিত্ব খুঁজে পাওয়া যাবে না। এতে করে এ অঞ্চলে প্রাকৃতিক দুর্যোগে ঝুঁকি বাড়বে। প্রাকৃতিক দুর্যোগে মানুষ ও তাদের পালনকৃত গবাদি পশুগুলো প্রাণ রক্ষার জন্য নিরাপদ স্থান পাবে না। তাই কিল্লাগুলো প্রভাবশালীদের কাছ থেকে দখলমুক্ত করে সোসাইটির দখলে নেয়ার জোর দাবি জানান তিনি।

চর তোরাব আলী গ্রামের বাসিন্দা দিদারুল আলম জানান, আমাদের এলাকার কিল্লাটি রেড ক্রিসেন্টের দায়িত্বে। গত ৩-৪ বছর আগে তারা কিল্লাটি লিজ দিয়েছে, কিন্তু কাকে দিয়েছে তা আমার জানা নেই। লিজ নেয়া লোকজন কিল্লা থেকে প্রায় ২ শতাধিক গাছ কেটে নিয়ে গেছে।

মোহাম্মদপুর সিপিবি ইউনিয়ন লিডার মো. নূর নবী জানান, নিয়ম না থাকলেও সোসাইটির জেলা ইউনিটের কর্মকর্তাদের নিজস্ব লোকজনকে লিজ দেয়া হয়। কোথাও কোথাও বন্দোবস্ত দিয়েছে ভূমি প্রশাসন। ফলে কোন কিল্লার গাছ কেটে নেয়া হয়েছে, কোথাও সমতলে পরিণত করা হয়েছে। সেখানে নির্মিত হয়েছে গরু, মুরগির খামার ও বসতি। দখলের বিষয়টি সোসাইটির বাৎসরিক সাধারণ সভায় জেলা ইউনিটের কর্মকর্তাদের একাধিকবার জানানো হয়েছে, কিন্তু এ বিষয়ে এখনও কোন ব্যবস্থা নেননি কর্তৃপক্ষ। মোহাম্মদপুরের চর আলাউদ্দিন গ্রামের কিল্লা দখলকারী অভিযুক্ত জামাল ব্যাপারী বলেন, স্থানীয় এক নারী একটি কিল্লার বন্দোবস্ত নিয়েছিল। পরে তার থেকে আমরা নথি নিয়ে বসতি, পুকুর ও মৎস্য খামার করেছি। কিন্তু আমরা কিল্লা জোর পূর্বক দখল করিনি।

চরজব্বর ইউনিয়নের কিল্লা দখলকারী আবুল কাশেম বলেন, মালিকানা জায়গা আমি ক্রয় করে নিয়েছি। এটা মুজিব কিল্লা কি-না তা আমার জানা নেই।

জেলা রেড ক্রিসেন্ট সোসাইটির উপপরিচালক আবদুল করিম বলেন, কিল্লার বিষয়ে বিস্তারিত আমাদের সাধারণ সম্পাদক বলতে পারবেন। এরপর আর তিনি কোন মন্তব্য করতে রাজি হননি।

সুবর্ণচর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) চৈতী সর্ববিদ্যা জানান, মুজিব কিল্লা বন্দোবস্ত ও বেদখলের বিষয়টি আমার জানা নেই। আপনাদের মাধ্যমে যেহেতু বিষয়টি জানতে পেরেছি এ বিষয়ে খোঁজ খবর নিয়ে দ্রুত ব্যবস্থা নেয়া হবে। জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবের স্মৃতি বিজোড়িত কিল্লাগুলো প্রভাবশালীদের কাছ থেকে দখলমুক্ত করার জোর দাবি জানান সচেতন মহল ও এলাকাবাসী।