কর্ম দোষেই জেরার মুখে মানবজাতি

এম এ কবীর

এক.

এক সময়ের রাজা-বাদশাহদের ছিল বিচিত্র শখ। ছিল বিচিত্র খেয়াল। ছিল না গণতন্ত্র। ছিল না ভোটভিক্ষা। কারও কাছে জবাবদিহিও ছিল না। তাদর ইচ্ছেই রাজ্যের আইন। দাসদাসি, চাকর-বাকর, পাইক-পেয়াদার অভাব ছিল না। এখনও এমন শাসক পৃথিবীতে যে নেই তা জোর দিয়ে বলা যাবে না। তাদের বিপুল সম্পদের গল্প শোনা যায় মুখে মুখে। ইমেলদা মার্কোসের জুতা কাহিনী তো একসময় বেশ রগুড়ের জন্ম দেয়।

সে সময়কার এক রাজার ছিল কুকুর পোষার শখ। তার পোষা তেরটি কুকুর ছিল ভয়ানক হিংস্র্র। কোনো মন্ত্রী ঠিকমতো কাজ করতে না পারলে রাজা সেই মন্ত্রীকে কুকুরের সামনে ছুড়ে দিতেন। হিংস্র কুকুরের কামড়ে মন্ত্রীর মৃত্যু হতো। একদিন এক বয়স্ক মন্ত্রীর উপদেশ রাজার মনঃপূত না হওয়ায় তিনি ওই মন্ত্রীকে একই সাজার আদেশ দিলেন। মন্ত্রী অনেক কাকুতি-মিনতি করলেন, কিন্তু রাজার মন নরম হলো না। মন্ত্রী বললেন, ‘মহারাজ, আমি অনেক বছর ধরে আপনার সেবা করে আসছি, আপনার নির্দেশ পালন করছি, আপনার সুখের ব্যবস্থা নিশ্চিত করতে কত প্রজার ভিটেয় ঘুঘু চরিয়েছি। আজ আমার একটা সিদ্ধান্ত আপনার পছন্দ হয়নি, এ কারণে কঠোর শাস্তি দিলেন? দয়া করে এই শাস্তি দেবেন না।’ রাজা তার সিদ্ধান্তে অটল। হাকিম নড়বে তবু হুকুম নড়বে না। নিরূপায় মন্ত্রী শেষ মিনতি হিসেবে বললেন, ‘মহারাজ, আপনি আমায় মাত্র ১০ দিনের সময় দিন। রাজা ওই প্রবীণ মন্ত্রীকে ১০ দিন সময় দিলেন। এই ফাঁকে মন্ত্রী কুকুর পালনের কর্মচারীকে ১০ দিনের ছুটি দিলেন। আর এই ১০ দিন তিনি নিজের হাতে কুকুরগুলোর যতœআত্তি করলেন। তাদের গোসল করালেন, খাওয়ালেন, তাদের সঙ্গেই খেলা করলেন। ১০ দিন পর মন্ত্রী রাজসভায় প্রবেশ করলেন। নির্দেশ অনুযায়ী মন্ত্রীকে কুকুরের খাঁচায় নিক্ষেপ করা হলো। কিন্তু রাজা আশ্চর্য হয়ে দেখলেন, কুকুরগুলো মন্ত্রীকে আক্রমণ করার বদলে তার পা চেটে দিচ্ছে, লেজ নেড়ে আদর দিচ্ছে, পায়ের কাছে গড়াগড়ি খাচ্ছে। রাজা তো অবাক! এমন ‘মিরাকেল’ কীভাবে ঘটল? মন্ত্রীকে ডেকে জিজ্ঞেস করেন এর গোপন রহস্য। মন্ত্রী হাত কচলে সবিনয়ে বললেন, ‘মহারাজ, আমি মাত্র ১০ দিন এই কুকুরগুলোকে সেবা করেছি। তারা আমাকে মনে রেখেছে। আর আমি আপনাকে বছরের পর বছর সেবা করেছি, হুকুম তামিল করেছি, আপনি সে সবই ভুলে গেছেন!’ রাজা তার ভুল বুঝতে পারলেন, কিন্তু মন্ত্রীর বুদ্ধির কাছে ক্ষমতার মত্ততা হার মানতে পারে না। অবশেষে তিনি মন্ত্রীকে বরখাস্ত করলেন।

দুই.

মানুষকে ঠকিয়ে সম্পদের মালিক হওয়ার খবর যখন আমাদের বিষাদগ্রস্ত করে তখন হজরত আলীর গল্প আমাদের মন ভালো করে দেয়। হজরত আলীর বাগানে ২৭১ জাতের ৫০ হাজার ফলের গাছ রয়েছে। ২০১৯ সালে ১০০ বিঘা জমিতে মাল্টা, কমলা, আঙ্গুর, ড্রাগন, লটকন, পেঁপে, পেয়ারা, লেবু, কুল বরই, সৌদি খেজুরসহ ১২টি জাতের ফলের চাষ শুরু করেন। এখন ৮০০ বিঘা জমিতে রয়েছে ২৭১ জাতের ফল গাছ। তার নার্সারি ও বাগানে প্রায় দুইশত মানুষের কর্মসংস্থান হয়েছে। এ বছর ১৪ কোটি টাকার ফল বিক্রির লক্ষ্যমাত্রা ছিল। ইতোমধ্যে ১০ কোটি টাকার ফল বিক্রি হয়েছে।

পত্রিকায় প্রকাশিত খবরে বলা হয়েছে, শেরপুর জেলা সদরের হাজি ইব্রাহিম খলিল উল্লাহর তিন ছেলের মধ্যে সবার বড় হজরত আলী। একসময় অর্থাভাবে খুব কষ্টে জীবনযাপন করতেন। রাজধানী ঢাকার যাত্রাবাড়ীতে মনোহারি ব্যবসা শুরু করেন। এরপর কৃষি বিশেষজ্ঞদের পরামর্শ নিয়ে শেরপুর সদর উপজেলার রৌহা ইউনিয়নের নিজ গ্রামে ২০১৯ সালে ১০০ বিঘা জমিতে বাণিজ্যিকভাবে চাষ শুরু করেন দেশি-বিদেশি বিভিন্ন প্রজাতির ফলের। এরই মধ্যে শেরপুর সদর উপজেলার কয়েকটি ইউনিয়নে প্রায় ৮০০ বিঘা জমিতে ১২টি ফল ও চারা উৎপাদনের বাগান করেছেন। ১০০ বিঘা জমি তার নিজের মালিকানাধীন, বাকি জমি ২০ বছরের জন্য লিজ নিয়েছেন। দেশের মানুষকে বিষমুক্ত ফল খাওয়ানোর ইচ্ছা থেকেই হজরত আলীর বাগান করার এই উদ্যোগ। হজরত আলীর এই সাফল্য অন্য এক বাংলাদেশের স্বপ্ন দেখায়।

তিন.

ঈশ^রদী উপজেলার রূপপুরের বাসিন্দা সিদ্দিকুর রহমান। তিনি বলছিলেন- ‘ওরা গোস্ত কেনে হাড্ডি ছাড়া, মাছটা কেনে কল্লা ছাড়া। তাতে দাম যত বেশি হোক না কেন, সেইটেই দেয়। এতে কইরে আমরা লোকালরা পড়ছি বিপদে।’ তার আফসোস আগের মতো তিনি আর মাছ, মাংস, ফলমূল কিনতে পারেন না। কারণ, রূপপুর পারমাণবিক বিদ্যুৎকেন্দ্রে কাজ করা বিদেশিদের জন্য গড়ে ওঠা গ্রিন সিটিকে ঘিরে ওই এলাকার বাজারে সবকিছুরই এখন দাম বেশি। গ্রিন সিটিতে পাঁচ হাজারের বেশি বিদেশির আবাস। এর মধ্যে রুশ প্রায় তিন হাজার। এছাড়া রয়েছেন কাজাখস্তান, বেলারুশসহ আরও কয়েকটি দেশের নাগরিকেরা। বিপুলসংখ্যক বিদেশির আগমনে বদলে গেছে রূপপুর। উন্নয়নের ছোঁয়া লেগেছে সবকিছুতেই। তৈরি হচ্ছে নতুন নতুন কর্মসংস্থান। স্থানীয় অর্থনীতিতেও এর ইতিবাচক প্রভাব পড়ছে। বিদেশিরা স্থানীয়দের সঙ্গে মিশছেন, একে অন্যের ভাষা শিখছেন। গড়ে উঠছে বন্ধুত্ব। স্থানীয় ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান এনামুল হক বিশ^াস বললেন, বিদেশিদের দোভাষী হিসেবে কাজ করা অনেকেই সাধারণ মানুষের কাছ থেকে টাকা নিয়ে চাকরি দেয়ার আশ^াস দিচ্ছেন। তিনি বেশ কিছু লিখিত অভিযোগও পেয়েছেন। এছাড়া বাজারে দাম বৃদ্ধির বিষয়টিও তার নজরে আসে। এ জন্য তিনি বাজারে মাইকিং করে দাম সহনশীল রাখার নির্দেশনাও দিয়েছেন। কিন্তু তাতে তেমন একটা কাজ হয়নি। তিনি জানান, বিদেশিদের কারণে কিছু সমস্যা তৈরি হলেও সার্বিকভাবে রূপপুরের উন্নয়ন হচ্ছে। বিদেশিদের চাহিদা মেটাতে নতুন নতুন দোকান, রেস্টুরেন্ট, হোটেল তৈরি হচ্ছে। বছর পাঁচেক আগেও যে জায়গাটায় ৫০টির মতো দোকান ছিল, সেখানে এখন পাঁচ শতাধিক দোকান। সব মিলিয়ে রূপপুর এখন আর গ্রাম নেই, হয়ে উঠছে আধুনিক এক শহর। আর এই আধুনিক শহরে রুশ প্রাধান্য সবচেয়ে বেশি। রুশ ভাষারও প্রচলন শুরু হয়েছে। সাইনবোর্ডগুলোতে বাংলা, ইংরেজির পাশাপাশি রুশ ভাষাও লেখা আছে। রাশিয়ানদের রুচি ও চাহিদার সঙ্গে মিল রেখে দোকানপাটে পণ্য তোলা হচ্ছে। সেলুন থেকে শুরু করে কাঁচাবাজার সব জায়গাতেই কর্মচারীরা কম-বেশি রুশ ভাষা শিখে নিয়েছেন। এমনকি ভিক্ষুকেরাও রুশ ভাষায় ভিক্ষা করছেন। রূপপুর ইউনিয়নে গড়ে উঠেছে কয়েকটি রুশ ভাষা শিক্ষাকেন্দ্র সেখানে তরুণদের উপচেপড়া ভিড়। রুশ ভাষা শিখতে আগ্রহী হচ্ছেন মধ্যবয়সী, এমনকি প্রবীণেরাও। ‘রুশ ল্যাঙ্গুয়েজ সেন্টার’ নামের একটি কোচিং সেন্টারে এই ভাষা শেখা ব্যবসায়ী জাহাঙ্গীর আলম বলেন, আমি ব্যবসায়ের প্রয়োজনে রুশ শিখেছি। আমার দোকান এবং রেস্টুরেন্টে যারা কাজ করছে, তাদেরও রুশ শেখানোর চেষ্টা করছি। কারণ, আমাদের ব্যবসা প্রতিষ্ঠানগুলোতে রুশরাই বেশি আসে।’

চার.

৫০ বছরের বাংলাদেশ এখন অনেক পরিণত। বাংলাদেশ এখন পদ্মা সেতুর দেশ। যে সেতু তৈরিতে শত ষড়যন্ত্র, সমালোচনা, বিতর্ক, প্রতিবন্ধকতা উপেক্ষা করে এখন দৃশ্যমান। এ সেতু যেন শুধু এপার-ওপারইজুড়ে দেয়নি, বরং মিলন ঘটিয়েছে ভালোবাসা ও বিরহেরও। এ সংযোগ যেন আস্থা, আত্মবিশ^াস আর সক্ষমতার। নদীর ওপর মাইলের পর মাইল যেন রূপকথার বিমূর্ত ছবি। অথচ রূপকথা নয়, এটিই আসল বাংলাদেশ।

খবরের কাগজে একটি ছবি ভেসে বেড়াচ্ছে। ছবিটি দেখলেই মন ভালো হয়ে যায়। ছবিটি দেখতে সুন্দর এমনও নয়, এ ছবির মধ্যেই রয়েছে আসলে বাংলাদেশ। একটি অন্য রকম বাংলাদেশ, যে বাংলাদেশ একটি রূপান্তরের গল্প বুনে যাচ্ছে বিরামহীন।

পায়রা নদীর এপার-ওপারকে সংযুক্ত করা দৃষ্টিনন্দন সেতুর ছবিটি দেখে মনে হয় ওই অঞ্চলের মানুষের জন্য এর চেয়ে খুশির খবর আর কী হতে পারে! সেতু হওয়ার আগে তাদের কত না ভোগান্তি সইতে হয়েছে! সেতুটি এখন শুধু দুই অঞ্চলের মানুষের চলাচলের পথ সহজ করেনি, বরং এটি বাংলাদেশের এগিয়ে যাওয়ার অসংখ্য গল্পের একটি। হাজারো সমস্যা, কষ্ট, সংগ্রাম পেরিয়ে একটি দেশের আত্মমর্যাদাশীল জাতি হিসেবে বিশ^ দরবারে মাথা তুলে দাঁড়ানোর গল্প।

কারও ঘরে ঢিল ছুড়ে উন্মত্ত নেশায় লাঠি হাতে নেয়ার এমন ছবি বাংলাদেশের ছবি নয়। সোশ্যাল মিডিয়ায় পোস্ট দিয়ে নিরপরাধ মানুষকে শিকারে পরিণত করাÑবাংলাদেশের আসল চিত্র নয়। বরং কুমিল্লার চৌদ্দগ্রামে মুসলমান বন্ধুর মৃত্যুতে তার কবরের পাশে বসে কান্নারত এক মনভাঙা হিন্দুর গল্পই আসল বাংলাদেশ।

দল বেঁধে অবহেলিত নারীদের কাজে যোগ দেয়ার মনোরম ছবি। ফসলের মাঠে মনজুড়ানো ধান, গম, সরষে, আলু, টমেটোসহ নানান জাতের শাকসবজির বিপুল সমাহার। ধর্ম-বর্ণ-জাত-পাত নির্বিশেষে মিলেমিশে সমৃদ্ধ বাংলাদেশ গড়ে তোলার ছবি বাংলাদেশ। নিজের চেষ্টায় হাঁস-মুরগি পালন, পোলট্রি, ডেইরি খামার করে লাখো নারী, পুরুষ-তরুণের জীবন বদলে দেয়ার গল্প বাংলাদেশ। শূন্য থেকে শুরু করা লাখো তরুণের চোখের সামনে তার সোনা ফলানো মৎস্য খামারে রুপালি মাছের ছবির চেয়ে সুন্দর ছবি আর কী হতে পারে!

রূপপুরের আকাশে উঠে যাচ্ছে পারমাণবিক চুল্লির চিমনি। যে পদার্থে বিশ^ময় বোমা আর বিস্ফোরক বানিয়ে রক্তারক্তির আয়োজন চলে পরাশক্তিদের, তা দিয়ে ঘরে ঘরে আলো আর অর্থনীতির চাকা ঘুরিয়ে মানুষের ভাগ্যবদলে দেয়ার গল্প বাংলাদেশ। প্রতিটি গ্রামে যার যা কিছু আছে তাই দিয়ে নিজেরাই লিখছে নিজেদের ভাগ্যবদলের গল্প। কে ভেবেছিল বাংলাদেশের নারীদের হাতের স্পর্শে তৈরি ইউনিফর্ম পরবেন ন্যাটোর সেনাসদস্যরা? আর কারই-বা ধারণায় ছিল আমাদের রাবেয়া আলেয়া, সালেহাদের নিপুণ হাতের তৈরি জামা উঠবে ইউরোপ-আমেরিকানদের গায়ে?

কীভাবে ছাইভস্ম থেকে ফিনিক্স পাখি হয়ে নীল আকাশে উড়ে চলা বাংলাদেশের মানচিত্রে আঁকা ক্যানভাসে মহাকাশে ঘুরে বেড়াচ্ছে বঙ্গবন্ধু স্যাটেলাইট। এটি বিশ^ময় রূপান্তরিত বাংলাদেশের ছবি। জীবন সংগ্রামের সাফল্য আর মর্যাদাশীল জাতি হিসেবে নিজেদের অস্তিত্ব জানান দেয়ার প্রতীক এই স্যাটেলাইট। আর এটিই আসল বাংলাদেশ।

পানির নিচে সমরাস্ত্রবাহী যান শুধু একটি সাবমেরিন নয়, এটি বাংলাদেশের আরেক পরিচয়। এর মধ্য দিয়ে ফিনিক্স পাখির পালকে যুক্ত হয় আত্মবিশ^াস আর সক্ষমতার নতুন স্বীকৃতি।

দেশের প্রথম টানেলটির একাংশ পুরো তৈরি। আরেক অংশও তৈরি হয়ে যাচ্ছে। একদা অপরিকল্পিত শহর ঢাকার যানজট নিরসনে বিপুল অঙ্কের বাজেটে নির্মিতব্য মেট্রোরেলও এখন বাস্তবতা। ফ্লাইওভার, এক্সপ্রেসওয়ে মাথা তুলে দাঁড়াচ্ছে একের পর এক। একটি-দুটি নয়, একে একে তৈরি হচ্ছে ১০০টি বিশেষ অর্থনৈতিক অঞ্চল। সারাদেশে আমূল বদলে যাচ্ছে সড়ক নেটওয়ার্ক। সর্বত্র অবকাঠামো খাতে বিপুল রূপান্তর চলছে। তথ্যপ্রযুক্তিতে অবিশ^াস্য অগ্রগতি। দেশে বসেই তরুণেরা আয় করছেন বৈদেশিক মুদ্রা। শিক্ষা, শিল্প-সংস্কৃতি, আর প্রগতিশীল এবং অসাম্প্রদায়িক চেতনা ও মূল্যবোধে সমৃদ্ধ, পরিমিত উদার দেশের ছবিই বাংলাদেশ। যে দেশটি রোহিঙ্গাদের মতো ১১-১২ লাখ বাড়তি মানুষকে মানবিক সাহায্যের হাত বাড়িয়ে দিয়েছে, বছরের পর বছর তাদের থাকা-খাওয়ার ব্যবস্থা করেছে, তাদের সঙ্গে মানুষ হিসেবে মানুষের মতো আচরণ করছে, সেই দেশটি আর যা-ই হোক সাম্প্রদায়িক হতে পারে না।

পাঁচ.

মানুষ চাঁদে পা রেখেছে অনেক আগে। মঙ্গল গ্রহও চষে বেড়াচ্ছে অনেক দিন থেকে। বিভিন্ন গ্রহ উপগ্রহ নিয়ে নিত্য গবেষণা হচ্ছে। মিশন পাঠাচ্ছে মহাশূন্যে। কিন্তু এ সবের কোন মানেই হয় না, যদি না পৃথিবী সুস্থ থাকে। কারণ বেলা শেষে আপেল কি

কমলালেবু আকৃতির চিরচেনা এই পৃথিবীই এখনও পর্যন্ত মানুষের, সব ধরনের প্রাণীর বসবাসের একমাত্র ঠিকানা। প্রায় সাড়ে ৪০০ কোটি বছরের প্রাচীন বিশ^ আজ অস্তিত্ব সংকটে। কর্ম দোষেই জেরার মুখে আজ পুরো মানব জাতী। পৃথিবীর জ্বর যে হারে বাড়ছে, তার জন্য দায়ী মানুষের হিতাহিত জ্ঞান।

[লেখক : সভাপতি,

ঝিনাইদহ জেলা রিপোর্টার্স ইউনিটি]

শনিবার, ০৬ নভেম্বর ২০২১ , ২১ কার্তিক ১৪২৮ ২৯ রবিউল আউয়াল ১৪৪৩

কর্ম দোষেই জেরার মুখে মানবজাতি

এম এ কবীর

এক.

এক সময়ের রাজা-বাদশাহদের ছিল বিচিত্র শখ। ছিল বিচিত্র খেয়াল। ছিল না গণতন্ত্র। ছিল না ভোটভিক্ষা। কারও কাছে জবাবদিহিও ছিল না। তাদর ইচ্ছেই রাজ্যের আইন। দাসদাসি, চাকর-বাকর, পাইক-পেয়াদার অভাব ছিল না। এখনও এমন শাসক পৃথিবীতে যে নেই তা জোর দিয়ে বলা যাবে না। তাদের বিপুল সম্পদের গল্প শোনা যায় মুখে মুখে। ইমেলদা মার্কোসের জুতা কাহিনী তো একসময় বেশ রগুড়ের জন্ম দেয়।

সে সময়কার এক রাজার ছিল কুকুর পোষার শখ। তার পোষা তেরটি কুকুর ছিল ভয়ানক হিংস্র্র। কোনো মন্ত্রী ঠিকমতো কাজ করতে না পারলে রাজা সেই মন্ত্রীকে কুকুরের সামনে ছুড়ে দিতেন। হিংস্র কুকুরের কামড়ে মন্ত্রীর মৃত্যু হতো। একদিন এক বয়স্ক মন্ত্রীর উপদেশ রাজার মনঃপূত না হওয়ায় তিনি ওই মন্ত্রীকে একই সাজার আদেশ দিলেন। মন্ত্রী অনেক কাকুতি-মিনতি করলেন, কিন্তু রাজার মন নরম হলো না। মন্ত্রী বললেন, ‘মহারাজ, আমি অনেক বছর ধরে আপনার সেবা করে আসছি, আপনার নির্দেশ পালন করছি, আপনার সুখের ব্যবস্থা নিশ্চিত করতে কত প্রজার ভিটেয় ঘুঘু চরিয়েছি। আজ আমার একটা সিদ্ধান্ত আপনার পছন্দ হয়নি, এ কারণে কঠোর শাস্তি দিলেন? দয়া করে এই শাস্তি দেবেন না।’ রাজা তার সিদ্ধান্তে অটল। হাকিম নড়বে তবু হুকুম নড়বে না। নিরূপায় মন্ত্রী শেষ মিনতি হিসেবে বললেন, ‘মহারাজ, আপনি আমায় মাত্র ১০ দিনের সময় দিন। রাজা ওই প্রবীণ মন্ত্রীকে ১০ দিন সময় দিলেন। এই ফাঁকে মন্ত্রী কুকুর পালনের কর্মচারীকে ১০ দিনের ছুটি দিলেন। আর এই ১০ দিন তিনি নিজের হাতে কুকুরগুলোর যতœআত্তি করলেন। তাদের গোসল করালেন, খাওয়ালেন, তাদের সঙ্গেই খেলা করলেন। ১০ দিন পর মন্ত্রী রাজসভায় প্রবেশ করলেন। নির্দেশ অনুযায়ী মন্ত্রীকে কুকুরের খাঁচায় নিক্ষেপ করা হলো। কিন্তু রাজা আশ্চর্য হয়ে দেখলেন, কুকুরগুলো মন্ত্রীকে আক্রমণ করার বদলে তার পা চেটে দিচ্ছে, লেজ নেড়ে আদর দিচ্ছে, পায়ের কাছে গড়াগড়ি খাচ্ছে। রাজা তো অবাক! এমন ‘মিরাকেল’ কীভাবে ঘটল? মন্ত্রীকে ডেকে জিজ্ঞেস করেন এর গোপন রহস্য। মন্ত্রী হাত কচলে সবিনয়ে বললেন, ‘মহারাজ, আমি মাত্র ১০ দিন এই কুকুরগুলোকে সেবা করেছি। তারা আমাকে মনে রেখেছে। আর আমি আপনাকে বছরের পর বছর সেবা করেছি, হুকুম তামিল করেছি, আপনি সে সবই ভুলে গেছেন!’ রাজা তার ভুল বুঝতে পারলেন, কিন্তু মন্ত্রীর বুদ্ধির কাছে ক্ষমতার মত্ততা হার মানতে পারে না। অবশেষে তিনি মন্ত্রীকে বরখাস্ত করলেন।

দুই.

মানুষকে ঠকিয়ে সম্পদের মালিক হওয়ার খবর যখন আমাদের বিষাদগ্রস্ত করে তখন হজরত আলীর গল্প আমাদের মন ভালো করে দেয়। হজরত আলীর বাগানে ২৭১ জাতের ৫০ হাজার ফলের গাছ রয়েছে। ২০১৯ সালে ১০০ বিঘা জমিতে মাল্টা, কমলা, আঙ্গুর, ড্রাগন, লটকন, পেঁপে, পেয়ারা, লেবু, কুল বরই, সৌদি খেজুরসহ ১২টি জাতের ফলের চাষ শুরু করেন। এখন ৮০০ বিঘা জমিতে রয়েছে ২৭১ জাতের ফল গাছ। তার নার্সারি ও বাগানে প্রায় দুইশত মানুষের কর্মসংস্থান হয়েছে। এ বছর ১৪ কোটি টাকার ফল বিক্রির লক্ষ্যমাত্রা ছিল। ইতোমধ্যে ১০ কোটি টাকার ফল বিক্রি হয়েছে।

পত্রিকায় প্রকাশিত খবরে বলা হয়েছে, শেরপুর জেলা সদরের হাজি ইব্রাহিম খলিল উল্লাহর তিন ছেলের মধ্যে সবার বড় হজরত আলী। একসময় অর্থাভাবে খুব কষ্টে জীবনযাপন করতেন। রাজধানী ঢাকার যাত্রাবাড়ীতে মনোহারি ব্যবসা শুরু করেন। এরপর কৃষি বিশেষজ্ঞদের পরামর্শ নিয়ে শেরপুর সদর উপজেলার রৌহা ইউনিয়নের নিজ গ্রামে ২০১৯ সালে ১০০ বিঘা জমিতে বাণিজ্যিকভাবে চাষ শুরু করেন দেশি-বিদেশি বিভিন্ন প্রজাতির ফলের। এরই মধ্যে শেরপুর সদর উপজেলার কয়েকটি ইউনিয়নে প্রায় ৮০০ বিঘা জমিতে ১২টি ফল ও চারা উৎপাদনের বাগান করেছেন। ১০০ বিঘা জমি তার নিজের মালিকানাধীন, বাকি জমি ২০ বছরের জন্য লিজ নিয়েছেন। দেশের মানুষকে বিষমুক্ত ফল খাওয়ানোর ইচ্ছা থেকেই হজরত আলীর বাগান করার এই উদ্যোগ। হজরত আলীর এই সাফল্য অন্য এক বাংলাদেশের স্বপ্ন দেখায়।

তিন.

ঈশ^রদী উপজেলার রূপপুরের বাসিন্দা সিদ্দিকুর রহমান। তিনি বলছিলেন- ‘ওরা গোস্ত কেনে হাড্ডি ছাড়া, মাছটা কেনে কল্লা ছাড়া। তাতে দাম যত বেশি হোক না কেন, সেইটেই দেয়। এতে কইরে আমরা লোকালরা পড়ছি বিপদে।’ তার আফসোস আগের মতো তিনি আর মাছ, মাংস, ফলমূল কিনতে পারেন না। কারণ, রূপপুর পারমাণবিক বিদ্যুৎকেন্দ্রে কাজ করা বিদেশিদের জন্য গড়ে ওঠা গ্রিন সিটিকে ঘিরে ওই এলাকার বাজারে সবকিছুরই এখন দাম বেশি। গ্রিন সিটিতে পাঁচ হাজারের বেশি বিদেশির আবাস। এর মধ্যে রুশ প্রায় তিন হাজার। এছাড়া রয়েছেন কাজাখস্তান, বেলারুশসহ আরও কয়েকটি দেশের নাগরিকেরা। বিপুলসংখ্যক বিদেশির আগমনে বদলে গেছে রূপপুর। উন্নয়নের ছোঁয়া লেগেছে সবকিছুতেই। তৈরি হচ্ছে নতুন নতুন কর্মসংস্থান। স্থানীয় অর্থনীতিতেও এর ইতিবাচক প্রভাব পড়ছে। বিদেশিরা স্থানীয়দের সঙ্গে মিশছেন, একে অন্যের ভাষা শিখছেন। গড়ে উঠছে বন্ধুত্ব। স্থানীয় ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান এনামুল হক বিশ^াস বললেন, বিদেশিদের দোভাষী হিসেবে কাজ করা অনেকেই সাধারণ মানুষের কাছ থেকে টাকা নিয়ে চাকরি দেয়ার আশ^াস দিচ্ছেন। তিনি বেশ কিছু লিখিত অভিযোগও পেয়েছেন। এছাড়া বাজারে দাম বৃদ্ধির বিষয়টিও তার নজরে আসে। এ জন্য তিনি বাজারে মাইকিং করে দাম সহনশীল রাখার নির্দেশনাও দিয়েছেন। কিন্তু তাতে তেমন একটা কাজ হয়নি। তিনি জানান, বিদেশিদের কারণে কিছু সমস্যা তৈরি হলেও সার্বিকভাবে রূপপুরের উন্নয়ন হচ্ছে। বিদেশিদের চাহিদা মেটাতে নতুন নতুন দোকান, রেস্টুরেন্ট, হোটেল তৈরি হচ্ছে। বছর পাঁচেক আগেও যে জায়গাটায় ৫০টির মতো দোকান ছিল, সেখানে এখন পাঁচ শতাধিক দোকান। সব মিলিয়ে রূপপুর এখন আর গ্রাম নেই, হয়ে উঠছে আধুনিক এক শহর। আর এই আধুনিক শহরে রুশ প্রাধান্য সবচেয়ে বেশি। রুশ ভাষারও প্রচলন শুরু হয়েছে। সাইনবোর্ডগুলোতে বাংলা, ইংরেজির পাশাপাশি রুশ ভাষাও লেখা আছে। রাশিয়ানদের রুচি ও চাহিদার সঙ্গে মিল রেখে দোকানপাটে পণ্য তোলা হচ্ছে। সেলুন থেকে শুরু করে কাঁচাবাজার সব জায়গাতেই কর্মচারীরা কম-বেশি রুশ ভাষা শিখে নিয়েছেন। এমনকি ভিক্ষুকেরাও রুশ ভাষায় ভিক্ষা করছেন। রূপপুর ইউনিয়নে গড়ে উঠেছে কয়েকটি রুশ ভাষা শিক্ষাকেন্দ্র সেখানে তরুণদের উপচেপড়া ভিড়। রুশ ভাষা শিখতে আগ্রহী হচ্ছেন মধ্যবয়সী, এমনকি প্রবীণেরাও। ‘রুশ ল্যাঙ্গুয়েজ সেন্টার’ নামের একটি কোচিং সেন্টারে এই ভাষা শেখা ব্যবসায়ী জাহাঙ্গীর আলম বলেন, আমি ব্যবসায়ের প্রয়োজনে রুশ শিখেছি। আমার দোকান এবং রেস্টুরেন্টে যারা কাজ করছে, তাদেরও রুশ শেখানোর চেষ্টা করছি। কারণ, আমাদের ব্যবসা প্রতিষ্ঠানগুলোতে রুশরাই বেশি আসে।’

চার.

৫০ বছরের বাংলাদেশ এখন অনেক পরিণত। বাংলাদেশ এখন পদ্মা সেতুর দেশ। যে সেতু তৈরিতে শত ষড়যন্ত্র, সমালোচনা, বিতর্ক, প্রতিবন্ধকতা উপেক্ষা করে এখন দৃশ্যমান। এ সেতু যেন শুধু এপার-ওপারইজুড়ে দেয়নি, বরং মিলন ঘটিয়েছে ভালোবাসা ও বিরহেরও। এ সংযোগ যেন আস্থা, আত্মবিশ^াস আর সক্ষমতার। নদীর ওপর মাইলের পর মাইল যেন রূপকথার বিমূর্ত ছবি। অথচ রূপকথা নয়, এটিই আসল বাংলাদেশ।

খবরের কাগজে একটি ছবি ভেসে বেড়াচ্ছে। ছবিটি দেখলেই মন ভালো হয়ে যায়। ছবিটি দেখতে সুন্দর এমনও নয়, এ ছবির মধ্যেই রয়েছে আসলে বাংলাদেশ। একটি অন্য রকম বাংলাদেশ, যে বাংলাদেশ একটি রূপান্তরের গল্প বুনে যাচ্ছে বিরামহীন।

পায়রা নদীর এপার-ওপারকে সংযুক্ত করা দৃষ্টিনন্দন সেতুর ছবিটি দেখে মনে হয় ওই অঞ্চলের মানুষের জন্য এর চেয়ে খুশির খবর আর কী হতে পারে! সেতু হওয়ার আগে তাদের কত না ভোগান্তি সইতে হয়েছে! সেতুটি এখন শুধু দুই অঞ্চলের মানুষের চলাচলের পথ সহজ করেনি, বরং এটি বাংলাদেশের এগিয়ে যাওয়ার অসংখ্য গল্পের একটি। হাজারো সমস্যা, কষ্ট, সংগ্রাম পেরিয়ে একটি দেশের আত্মমর্যাদাশীল জাতি হিসেবে বিশ^ দরবারে মাথা তুলে দাঁড়ানোর গল্প।

কারও ঘরে ঢিল ছুড়ে উন্মত্ত নেশায় লাঠি হাতে নেয়ার এমন ছবি বাংলাদেশের ছবি নয়। সোশ্যাল মিডিয়ায় পোস্ট দিয়ে নিরপরাধ মানুষকে শিকারে পরিণত করাÑবাংলাদেশের আসল চিত্র নয়। বরং কুমিল্লার চৌদ্দগ্রামে মুসলমান বন্ধুর মৃত্যুতে তার কবরের পাশে বসে কান্নারত এক মনভাঙা হিন্দুর গল্পই আসল বাংলাদেশ।

দল বেঁধে অবহেলিত নারীদের কাজে যোগ দেয়ার মনোরম ছবি। ফসলের মাঠে মনজুড়ানো ধান, গম, সরষে, আলু, টমেটোসহ নানান জাতের শাকসবজির বিপুল সমাহার। ধর্ম-বর্ণ-জাত-পাত নির্বিশেষে মিলেমিশে সমৃদ্ধ বাংলাদেশ গড়ে তোলার ছবি বাংলাদেশ। নিজের চেষ্টায় হাঁস-মুরগি পালন, পোলট্রি, ডেইরি খামার করে লাখো নারী, পুরুষ-তরুণের জীবন বদলে দেয়ার গল্প বাংলাদেশ। শূন্য থেকে শুরু করা লাখো তরুণের চোখের সামনে তার সোনা ফলানো মৎস্য খামারে রুপালি মাছের ছবির চেয়ে সুন্দর ছবি আর কী হতে পারে!

রূপপুরের আকাশে উঠে যাচ্ছে পারমাণবিক চুল্লির চিমনি। যে পদার্থে বিশ^ময় বোমা আর বিস্ফোরক বানিয়ে রক্তারক্তির আয়োজন চলে পরাশক্তিদের, তা দিয়ে ঘরে ঘরে আলো আর অর্থনীতির চাকা ঘুরিয়ে মানুষের ভাগ্যবদলে দেয়ার গল্প বাংলাদেশ। প্রতিটি গ্রামে যার যা কিছু আছে তাই দিয়ে নিজেরাই লিখছে নিজেদের ভাগ্যবদলের গল্প। কে ভেবেছিল বাংলাদেশের নারীদের হাতের স্পর্শে তৈরি ইউনিফর্ম পরবেন ন্যাটোর সেনাসদস্যরা? আর কারই-বা ধারণায় ছিল আমাদের রাবেয়া আলেয়া, সালেহাদের নিপুণ হাতের তৈরি জামা উঠবে ইউরোপ-আমেরিকানদের গায়ে?

কীভাবে ছাইভস্ম থেকে ফিনিক্স পাখি হয়ে নীল আকাশে উড়ে চলা বাংলাদেশের মানচিত্রে আঁকা ক্যানভাসে মহাকাশে ঘুরে বেড়াচ্ছে বঙ্গবন্ধু স্যাটেলাইট। এটি বিশ^ময় রূপান্তরিত বাংলাদেশের ছবি। জীবন সংগ্রামের সাফল্য আর মর্যাদাশীল জাতি হিসেবে নিজেদের অস্তিত্ব জানান দেয়ার প্রতীক এই স্যাটেলাইট। আর এটিই আসল বাংলাদেশ।

পানির নিচে সমরাস্ত্রবাহী যান শুধু একটি সাবমেরিন নয়, এটি বাংলাদেশের আরেক পরিচয়। এর মধ্য দিয়ে ফিনিক্স পাখির পালকে যুক্ত হয় আত্মবিশ^াস আর সক্ষমতার নতুন স্বীকৃতি।

দেশের প্রথম টানেলটির একাংশ পুরো তৈরি। আরেক অংশও তৈরি হয়ে যাচ্ছে। একদা অপরিকল্পিত শহর ঢাকার যানজট নিরসনে বিপুল অঙ্কের বাজেটে নির্মিতব্য মেট্রোরেলও এখন বাস্তবতা। ফ্লাইওভার, এক্সপ্রেসওয়ে মাথা তুলে দাঁড়াচ্ছে একের পর এক। একটি-দুটি নয়, একে একে তৈরি হচ্ছে ১০০টি বিশেষ অর্থনৈতিক অঞ্চল। সারাদেশে আমূল বদলে যাচ্ছে সড়ক নেটওয়ার্ক। সর্বত্র অবকাঠামো খাতে বিপুল রূপান্তর চলছে। তথ্যপ্রযুক্তিতে অবিশ^াস্য অগ্রগতি। দেশে বসেই তরুণেরা আয় করছেন বৈদেশিক মুদ্রা। শিক্ষা, শিল্প-সংস্কৃতি, আর প্রগতিশীল এবং অসাম্প্রদায়িক চেতনা ও মূল্যবোধে সমৃদ্ধ, পরিমিত উদার দেশের ছবিই বাংলাদেশ। যে দেশটি রোহিঙ্গাদের মতো ১১-১২ লাখ বাড়তি মানুষকে মানবিক সাহায্যের হাত বাড়িয়ে দিয়েছে, বছরের পর বছর তাদের থাকা-খাওয়ার ব্যবস্থা করেছে, তাদের সঙ্গে মানুষ হিসেবে মানুষের মতো আচরণ করছে, সেই দেশটি আর যা-ই হোক সাম্প্রদায়িক হতে পারে না।

পাঁচ.

মানুষ চাঁদে পা রেখেছে অনেক আগে। মঙ্গল গ্রহও চষে বেড়াচ্ছে অনেক দিন থেকে। বিভিন্ন গ্রহ উপগ্রহ নিয়ে নিত্য গবেষণা হচ্ছে। মিশন পাঠাচ্ছে মহাশূন্যে। কিন্তু এ সবের কোন মানেই হয় না, যদি না পৃথিবী সুস্থ থাকে। কারণ বেলা শেষে আপেল কি

কমলালেবু আকৃতির চিরচেনা এই পৃথিবীই এখনও পর্যন্ত মানুষের, সব ধরনের প্রাণীর বসবাসের একমাত্র ঠিকানা। প্রায় সাড়ে ৪০০ কোটি বছরের প্রাচীন বিশ^ আজ অস্তিত্ব সংকটে। কর্ম দোষেই জেরার মুখে আজ পুরো মানব জাতী। পৃথিবীর জ্বর যে হারে বাড়ছে, তার জন্য দায়ী মানুষের হিতাহিত জ্ঞান।

[লেখক : সভাপতি,

ঝিনাইদহ জেলা রিপোর্টার্স ইউনিটি]