ডিজেলের বাড়তি দাম, প্রভাব ফেলতে পারে অন্য খাতেও

দীর্ঘদিন ধরে বেড়েই চলেছে নিত্যপণ্যের দাম। চাল ডাল তেল লবণ থেকে শুরু করে সবজি, সব পণ্যের দাম প্রতি সপ্তাহের ব্যবধানে বাড়ছে। এতে জীবন যাত্রার ব্যয় অনেক বেড়ে গেছে। এরপর আবার মরার উপর খাঁড়ার ঘা হয়ে বাড়ল ডিজেলের দাম। এই পণ্যটির দাম বাড়ায় ফের নিত্যপণ্যের দাম আরেক দফা বাড়ার আশঙ্কা তৈরি করেছে।

অর্থনীতিবিদরা বলছেন, এমনিতেই ব্যবসায়িরা যেকোন অজুহাতে দাম বাড়িয়ে দেয়। এর আবার ডিজেলের দাম বেড়েছে। এই অজুহাতে আবার বাড়বে সব ধরনের পণ্যের দাম।

ইতোমধ্যেই ডিজেলের দাম বৃদ্ধির সরাসরি প্রভাব পড়বে বাস, ট্রাক, কভার্ডভ্যানের ভাড়ায়। লঞ্চসহ নৌযানের ভাড়াও বাড়বে। আর এর পরোক্ষ প্রভাব পড়বে বহু খাতে। ট্রাক কিংবা নৌযানের ভাড়া বেড়ে গেলে শাক-সবজি থেকে শুরু করে যে সব পণ্য পরিবহনের মাধ্যমে বাজারে আসে, তার সবেরই দাম বাড়বে। ফলে দেশের সব পরিবারেরই মাসিক খরচের হিসাব নতুন করে সাজাতে হবে।

দেশের প্রধান রপ্তানি পণ্য তৈরি পোশাক শিল্পেও যে ডিজেলের দাম বৃদ্ধির আঁচ পড়বে, সেটাও বলছেন এই খাতের ব্যবসায়ীরা। ডিজেলচালিত বিদ্যুৎকেন্দ্র থাকায় বিদ্যুতের দাম বাড়ার শঙ্কাও দেখা দিয়েছে। কৃষিক্ষেত্রে সেচ পাম্প ও পাওয়ার টিলার ডিজেলে চলে বলে কৃষকেরও ব্যয় বাড়বে। মাছ ধরা ট্রলারগুলোরও জ্বালানি ডিজেল, তাই সেখানেও খরচ বাড়বে।

ভোক্তা অধিকার সংগঠন ক্যাবের চেয়ারম্যান গোলাম রহমান গণমাধ্যমকে বলেন, ‘বেআইনিভাবে’ সরকারের এই ব্যয় বৃদ্ধির ঘোষণায় ভোক্তার জীবন আরও দুর্বিষহ হয়ে উঠবে।’ সরকারকে এই সিদ্ধান্ত পুনর্বিবেচনার অনুরোধ করেন তিনি।

গত কয়েক মাস ধরে আন্তর্জাতিক বাজারে জ্বালানি তেলের মূল্যবৃদ্ধির প্রেক্ষাপটে লোকসান কমাতে সরকার বৃহস্পতিবার থেকে ডিজেল ও কেরোসিনের দাম প্রতি লিটার ৬৫ টাকা থেকে বাড়িয়ে ৮০ টাকা করে।

জ্বালানি তেলের দাম বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে সরকারের সিদ্ধান্তের জন্য অপেক্ষা না করে বিভিন্নস্থানে বাস থেকে বাড়তি ভাড়া আদায় শুরু হয়েছে। আবার কেন্দ্রীয়ভাবে শুক্রবার থেকে বাস-ট্রাক চালানো বন্ধ রাখার সিদ্ধান্ত নিয়েছেন পরিবহন মালিকরা।

এক লাফে তেলের দাম ১৫ টাকা বাড়ানোয় বাসের ভাড়া না বাড়ানো ছাড়া উপায় নেই বলে যুক্তি দেখাচ্ছেন পরিবহন মালিক-শ্রমিকরা। তবে মহামারীর এই সময়ে যাত্রীরা এই বর্ধিত ভাড়া দিতে পারবে কি না, তা নিয়েও সন্দিহান তারা।

এদিকে বাংলাদেশ কভার্ডভ্যান, ট্রাক ও ট্রান্সপোর্ট এজেন্সি মালিক সমিতি ও বাংলাদেশ ট্রাক কভার্ডভ্যান, প্রাইম মুভার ও পণ্য পরিবহন মালিক সমিতির ভাইস প্রেসিডেন্ট নুরুল ইসলাম জানান, তারা নতুন ভাড়া নির্ধারণ করতে জরুরি বৈঠকে বসছেন। ঢাকা-চট্টগ্রাম রুটে আমদানি পণ্য ১৫ থেকে ২০ হাজার টাকায় এবং রপ্তানি পণ্য ১০ থেকে ১২ হাজার টাকায় পরিবহন করা হয়।

পরিবহন সংশ্লিষ্টরা বলছেন, ঢাকা চট্টগ্রাম আসা-যাওয়ায় ৪০০ কিলোমিটার পথে জ্বালানিবাবদ খরচ দুই হাজার টাকা বেড়ে যাবে। এভাবে অন্য দূরত্বেও বর্ধিত খরচ হিসাব করে নতুন ভাড়া নির্ধারণ করতে হবে।

শুধু তাই নয়, এর প্রভাব বাকি খাতগুলোতেও পড়বে বলে জানান ব্যবসায়িরা। পোশাক রপ্তানিকারকদের সংগঠন বিজিএমইএ সহ-সভাপতি শহীদুল্লাহ আজিম গণমাধ্যমকে বলেন, ‘জ্বালানির এই মূল্যবৃদ্ধি পণ্য পরিবহনের উপর ব্যাপক প্রভাব ফেলবে, যা সামলে উঠা এই খাতের পক্ষে সম্ভব হবে না। এমনিতেই আমাদের দেশে এখন ৭ বা ৮ হাজার টাকার কভার্ডভ্যান ভাড়া বেড়ে ১০ বা ১২ হাজার টাকা, আবার ক্ষেত্র বিশেষ ১৫ বা ২০ হাজার টাকা হয়ে গেছে। এখন নতুন করে দাম বৃদ্ধির খরচ কোথায় গিয়ে দাঁড়াবে, তা চিন্তাও করা যাচ্ছে না।’

এছাড়া পোশাক কারখানার জেনারেটর ও বয়লারগুলোও ডিজেলে চলে বলে সেখানেও ব্যয় বাড়বে বলে জানান তিনি।

বিপিসির হিসাবে, গত এক দশক ধরে কৃষি খাত, শিল্প খাত, বিদ্যুৎ উৎপাদন খাত, যোগাযোগ খাত, গৃহস্থালি খাতে দেশে প্রতি বছর ৫০ লাখ থেকে ৭০ লাখ টন ডিজেল ও কেরোসিন ব্যবহার হচ্ছে। কেবল ২০১৯-২০২০ অর্থবছরে যোগাযোগ খাতে ৬৪ শতাংশ, কৃষি খাতে ১৮ শতাংশ, শিল্প খাতে ৭ দশমিক ৬৫ শতাংশ, বিদ্যুৎ উৎপাদন খাতে ৬ দশমিক ৭৪ শতাংশ, গৃহস্থালি খাতে ২ শতাংশ জ্বালানি ব্যয় হয়েছিল।

রবিবার, ০৭ নভেম্বর ২০২১ , ২২ কার্তিক ১৪২৮ ৩০ রবিউল আউয়াল ১৪৪৩

ডিজেলের বাড়তি দাম, প্রভাব ফেলতে পারে অন্য খাতেও

অর্থনৈতিক বার্তা পরিবেশক

image

দীর্ঘদিন ধরে বেড়েই চলেছে নিত্যপণ্যের দাম। চাল ডাল তেল লবণ থেকে শুরু করে সবজি, সব পণ্যের দাম প্রতি সপ্তাহের ব্যবধানে বাড়ছে। এতে জীবন যাত্রার ব্যয় অনেক বেড়ে গেছে। এরপর আবার মরার উপর খাঁড়ার ঘা হয়ে বাড়ল ডিজেলের দাম। এই পণ্যটির দাম বাড়ায় ফের নিত্যপণ্যের দাম আরেক দফা বাড়ার আশঙ্কা তৈরি করেছে।

অর্থনীতিবিদরা বলছেন, এমনিতেই ব্যবসায়িরা যেকোন অজুহাতে দাম বাড়িয়ে দেয়। এর আবার ডিজেলের দাম বেড়েছে। এই অজুহাতে আবার বাড়বে সব ধরনের পণ্যের দাম।

ইতোমধ্যেই ডিজেলের দাম বৃদ্ধির সরাসরি প্রভাব পড়বে বাস, ট্রাক, কভার্ডভ্যানের ভাড়ায়। লঞ্চসহ নৌযানের ভাড়াও বাড়বে। আর এর পরোক্ষ প্রভাব পড়বে বহু খাতে। ট্রাক কিংবা নৌযানের ভাড়া বেড়ে গেলে শাক-সবজি থেকে শুরু করে যে সব পণ্য পরিবহনের মাধ্যমে বাজারে আসে, তার সবেরই দাম বাড়বে। ফলে দেশের সব পরিবারেরই মাসিক খরচের হিসাব নতুন করে সাজাতে হবে।

দেশের প্রধান রপ্তানি পণ্য তৈরি পোশাক শিল্পেও যে ডিজেলের দাম বৃদ্ধির আঁচ পড়বে, সেটাও বলছেন এই খাতের ব্যবসায়ীরা। ডিজেলচালিত বিদ্যুৎকেন্দ্র থাকায় বিদ্যুতের দাম বাড়ার শঙ্কাও দেখা দিয়েছে। কৃষিক্ষেত্রে সেচ পাম্প ও পাওয়ার টিলার ডিজেলে চলে বলে কৃষকেরও ব্যয় বাড়বে। মাছ ধরা ট্রলারগুলোরও জ্বালানি ডিজেল, তাই সেখানেও খরচ বাড়বে।

ভোক্তা অধিকার সংগঠন ক্যাবের চেয়ারম্যান গোলাম রহমান গণমাধ্যমকে বলেন, ‘বেআইনিভাবে’ সরকারের এই ব্যয় বৃদ্ধির ঘোষণায় ভোক্তার জীবন আরও দুর্বিষহ হয়ে উঠবে।’ সরকারকে এই সিদ্ধান্ত পুনর্বিবেচনার অনুরোধ করেন তিনি।

গত কয়েক মাস ধরে আন্তর্জাতিক বাজারে জ্বালানি তেলের মূল্যবৃদ্ধির প্রেক্ষাপটে লোকসান কমাতে সরকার বৃহস্পতিবার থেকে ডিজেল ও কেরোসিনের দাম প্রতি লিটার ৬৫ টাকা থেকে বাড়িয়ে ৮০ টাকা করে।

জ্বালানি তেলের দাম বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে সরকারের সিদ্ধান্তের জন্য অপেক্ষা না করে বিভিন্নস্থানে বাস থেকে বাড়তি ভাড়া আদায় শুরু হয়েছে। আবার কেন্দ্রীয়ভাবে শুক্রবার থেকে বাস-ট্রাক চালানো বন্ধ রাখার সিদ্ধান্ত নিয়েছেন পরিবহন মালিকরা।

এক লাফে তেলের দাম ১৫ টাকা বাড়ানোয় বাসের ভাড়া না বাড়ানো ছাড়া উপায় নেই বলে যুক্তি দেখাচ্ছেন পরিবহন মালিক-শ্রমিকরা। তবে মহামারীর এই সময়ে যাত্রীরা এই বর্ধিত ভাড়া দিতে পারবে কি না, তা নিয়েও সন্দিহান তারা।

এদিকে বাংলাদেশ কভার্ডভ্যান, ট্রাক ও ট্রান্সপোর্ট এজেন্সি মালিক সমিতি ও বাংলাদেশ ট্রাক কভার্ডভ্যান, প্রাইম মুভার ও পণ্য পরিবহন মালিক সমিতির ভাইস প্রেসিডেন্ট নুরুল ইসলাম জানান, তারা নতুন ভাড়া নির্ধারণ করতে জরুরি বৈঠকে বসছেন। ঢাকা-চট্টগ্রাম রুটে আমদানি পণ্য ১৫ থেকে ২০ হাজার টাকায় এবং রপ্তানি পণ্য ১০ থেকে ১২ হাজার টাকায় পরিবহন করা হয়।

পরিবহন সংশ্লিষ্টরা বলছেন, ঢাকা চট্টগ্রাম আসা-যাওয়ায় ৪০০ কিলোমিটার পথে জ্বালানিবাবদ খরচ দুই হাজার টাকা বেড়ে যাবে। এভাবে অন্য দূরত্বেও বর্ধিত খরচ হিসাব করে নতুন ভাড়া নির্ধারণ করতে হবে।

শুধু তাই নয়, এর প্রভাব বাকি খাতগুলোতেও পড়বে বলে জানান ব্যবসায়িরা। পোশাক রপ্তানিকারকদের সংগঠন বিজিএমইএ সহ-সভাপতি শহীদুল্লাহ আজিম গণমাধ্যমকে বলেন, ‘জ্বালানির এই মূল্যবৃদ্ধি পণ্য পরিবহনের উপর ব্যাপক প্রভাব ফেলবে, যা সামলে উঠা এই খাতের পক্ষে সম্ভব হবে না। এমনিতেই আমাদের দেশে এখন ৭ বা ৮ হাজার টাকার কভার্ডভ্যান ভাড়া বেড়ে ১০ বা ১২ হাজার টাকা, আবার ক্ষেত্র বিশেষ ১৫ বা ২০ হাজার টাকা হয়ে গেছে। এখন নতুন করে দাম বৃদ্ধির খরচ কোথায় গিয়ে দাঁড়াবে, তা চিন্তাও করা যাচ্ছে না।’

এছাড়া পোশাক কারখানার জেনারেটর ও বয়লারগুলোও ডিজেলে চলে বলে সেখানেও ব্যয় বাড়বে বলে জানান তিনি।

বিপিসির হিসাবে, গত এক দশক ধরে কৃষি খাত, শিল্প খাত, বিদ্যুৎ উৎপাদন খাত, যোগাযোগ খাত, গৃহস্থালি খাতে দেশে প্রতি বছর ৫০ লাখ থেকে ৭০ লাখ টন ডিজেল ও কেরোসিন ব্যবহার হচ্ছে। কেবল ২০১৯-২০২০ অর্থবছরে যোগাযোগ খাতে ৬৪ শতাংশ, কৃষি খাতে ১৮ শতাংশ, শিল্প খাতে ৭ দশমিক ৬৫ শতাংশ, বিদ্যুৎ উৎপাদন খাতে ৬ দশমিক ৭৪ শতাংশ, গৃহস্থালি খাতে ২ শতাংশ জ্বালানি ব্যয় হয়েছিল।