রাষ্ট্রদ্রোহ মামলায় দণ্ডিতকে অফিস সহায়ক নিয়োগ!

ঘুষ লেনদেনের অডিও রেকর্ড ফাঁস

ময়মনসিংহের তারাকান্দা উপজেলায় চান্দুপুর উচ্চ বিদ্যালয়ে রাষ্ট্রদ্রোহ মামলার দণ্ডিত ব্যক্তিকে অফিস সহায়ক পদসহ অন্যপদে নিয়োগ বাণিজ্যের অভিযোগ পাওয়া গেছে। ঘুষের টাকা লেনদেনের একাধিক অডিও রেকর্ডিং ফাঁস হয়েছে। স্থানীয় কাশিগঞ্জ বাজারে ঘুষের টাকা নিয়ে পক্ষ বিপক্ষের মধ্যে তর্ক-বিতর্ক, দস্তাদস্তি, ধাওয়া পাল্টাধাওয়া ও মানববন্ধনও হয়েছে। ঘুষের টাকা ফেরত চেয়ে থানায় অভিযোগ দায়ের করা হয়েছে। এ নিয়ে এলাকা চাঞ্চল্যের সৃষ্টি হয়েছে।

জানা যায়, গত ২৬ অক্টোবর চান্দপুর উচ্চ বিদ্যালয়ে ৪ পদে নিয়োগ পরীক্ষা অনুষ্ঠিত হয়। পদগুলো হল, অফিস সহকারী কাম হিসাব সহকারী, অফিস সহায়ক, আয়া ও পরিচ্ছন্নতা কর্মী। ৪ পদের বিপরীতে নির্বাচনী পরীক্ষায় ৩০ জন অংশ নেন।

২৮ অক্টোবর নিয়োগপত্র প্রদান করা হয়। এতে দেখা যায় ৪ পদের বিদ্যালয় সভাপতি শহিদুল ইসলামের ছেলে পিলখানা বিডিআর রাষ্ট্রদ্রোহী মামলা সামরিক আদালতে বিচার চলাকালীন ১ বছর ৬ মাস হাজত বাস ও ৩ বছর ৬ মাস কারাদন্ডে দন্ডিত জাকারিয়া ইসলাম মুরাদকে অফিস সহায়ক পদে নিয়োগ দেয়া হয়েছে।

আয়া পদে নিয়োগ পান নুজরাহান। সূত্র জানায়, নুজরাহান ও তার স্বামী দুদু মিয়া সভাপতির বাড়িতেই স্থায়ীভাবে গত ৩০ বছর ধরে বসবাস করে আসছেন। নুজরাহান স্বামী বিদ্যালয় সভাপতির ভগ্নিপতি। সভাপতির বোন মারা গেলে, নুজরাহান বিয়ে করেন দুদু মিয়াকে, থাকেন সভাপতির বাড়িতেই। বিজ্ঞমহলের অভিযোগ নিয়ম রক্ষার নিয়োগ পরীক্ষা প্রকৃত অর্থে স্বীয় ক্ষমতাবলে অফিস সহায়ক ও আয়া এ দুটি পদে সভাপতির ছেলে ও বোনকে নিয়োগ দেয়া হয়েছে ।

অফিস সহকারী কাম হিসাব সহকারী পদে নির্বাচনী পরীক্ষা অংশ নেন ৭ জন। নির্দিষ্ট পদে চাকরি প্রার্থী শারমিন সুলতানার অভিযোগ তাকে চাকরি দেয়ার কথা বলে ৭ লাখ টাকা ঘুষ নিয়েছেন নিয়োগ কমিটির সভাপতি ও তার ছেলে রিয়াজুল ইসলাম নাদিম। ঘুষের টাকা ফেরত চাওয়ায় তালবাহানা করে আসছেন।

গত ২৯ অক্টোবর স্বর্ণার স্বামী রুবেল স্থানীয় কাশিগঞ্জ বাজারে ঘুষের অর্থ ফেরত চাওয়া নিয়ে দু’পক্ষের মধ্যে তর্ক বিতর্ক, দস্তাদস্তির ঘটনা ঘটে। এ নিয়ে বিক্ষোভ মিছিল ও মানববন্ধন অনুষ্ঠিত হয়।

একই পদের প্রার্থী আজাহারুল ইসলামের অভিযোগ তার কাছ থেকে ৯ লাখ টাকা ঘুষ নেন প্রধান শিক্ষক সিদ্দিকুর রহমান, চাকরিও হয়নি। এই পদে নিয়োগ পেয়েছেন শহিদুল ইসলাম। চাওর হওয়া খবরে শহিদুল নিয়োগ পান ১৩ লাখ টাকার বিনিময়ে।

শারমিন সুলতানার স্বামী রুবেল মিয়া ও আজহারুল ইসলাম জানান, এ ব্যাপারে তারাকান্দা উপজেলা নির্বাহী অফিসার, মাধ্যমিক শিক্ষা কর্মকর্তার বরাবরে অভিযোগ করা হয়েছে। তারা জানান, ঘুষের টাকা ফেরত পেতে থানায় অভিযোগ করা হয়েছে।

আজাহারুল ইসলাম লেনদেন সংক্রান্ত কথপোকথনের একাধিক অডিও রেকর্ডিং রেকর্ড করেন। যাতে বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক ও সভাপতির সঙ্গে ঘুষ লেনদেনের কথাবার্তা স্পষ্টভাবে উঠে এসেছে। এ ব্যাপারে সভাপতি অভিযোগ অস্বীকার করেন। প্রধান শিক্ষক সিদ্দিকুর রহমানের সাথে অডিও রেকর্ডিং সংক্রান্ত জিজ্ঞাসা করা হলে, তিনি বলেন মিথ্যা কথা বলে আজহারুল ইসলামকে ঘুরানো হয়েছে। একজন প্রধান শিক্ষক হিসেবে মিথ্যা বলে ঘুরানো কি যুক্তিসংঘত। এমন প্রশ্নের তিনি আর কোন জবাব দেননি।

রবিবার, ০৭ নভেম্বর ২০২১ , ২২ কার্তিক ১৪২৮ ৩০ রবিউল আউয়াল ১৪৪৩

তারাকান্দা চান্দপুর উচ্চ বিদ্যালয়

রাষ্ট্রদ্রোহ মামলায় দণ্ডিতকে অফিস সহায়ক নিয়োগ!

ঘুষ লেনদেনের অডিও রেকর্ড ফাঁস

প্রতিনিধি, তারাকান্দা (ময়মনসিংহ)

ময়মনসিংহের তারাকান্দা উপজেলায় চান্দুপুর উচ্চ বিদ্যালয়ে রাষ্ট্রদ্রোহ মামলার দণ্ডিত ব্যক্তিকে অফিস সহায়ক পদসহ অন্যপদে নিয়োগ বাণিজ্যের অভিযোগ পাওয়া গেছে। ঘুষের টাকা লেনদেনের একাধিক অডিও রেকর্ডিং ফাঁস হয়েছে। স্থানীয় কাশিগঞ্জ বাজারে ঘুষের টাকা নিয়ে পক্ষ বিপক্ষের মধ্যে তর্ক-বিতর্ক, দস্তাদস্তি, ধাওয়া পাল্টাধাওয়া ও মানববন্ধনও হয়েছে। ঘুষের টাকা ফেরত চেয়ে থানায় অভিযোগ দায়ের করা হয়েছে। এ নিয়ে এলাকা চাঞ্চল্যের সৃষ্টি হয়েছে।

জানা যায়, গত ২৬ অক্টোবর চান্দপুর উচ্চ বিদ্যালয়ে ৪ পদে নিয়োগ পরীক্ষা অনুষ্ঠিত হয়। পদগুলো হল, অফিস সহকারী কাম হিসাব সহকারী, অফিস সহায়ক, আয়া ও পরিচ্ছন্নতা কর্মী। ৪ পদের বিপরীতে নির্বাচনী পরীক্ষায় ৩০ জন অংশ নেন।

২৮ অক্টোবর নিয়োগপত্র প্রদান করা হয়। এতে দেখা যায় ৪ পদের বিদ্যালয় সভাপতি শহিদুল ইসলামের ছেলে পিলখানা বিডিআর রাষ্ট্রদ্রোহী মামলা সামরিক আদালতে বিচার চলাকালীন ১ বছর ৬ মাস হাজত বাস ও ৩ বছর ৬ মাস কারাদন্ডে দন্ডিত জাকারিয়া ইসলাম মুরাদকে অফিস সহায়ক পদে নিয়োগ দেয়া হয়েছে।

আয়া পদে নিয়োগ পান নুজরাহান। সূত্র জানায়, নুজরাহান ও তার স্বামী দুদু মিয়া সভাপতির বাড়িতেই স্থায়ীভাবে গত ৩০ বছর ধরে বসবাস করে আসছেন। নুজরাহান স্বামী বিদ্যালয় সভাপতির ভগ্নিপতি। সভাপতির বোন মারা গেলে, নুজরাহান বিয়ে করেন দুদু মিয়াকে, থাকেন সভাপতির বাড়িতেই। বিজ্ঞমহলের অভিযোগ নিয়ম রক্ষার নিয়োগ পরীক্ষা প্রকৃত অর্থে স্বীয় ক্ষমতাবলে অফিস সহায়ক ও আয়া এ দুটি পদে সভাপতির ছেলে ও বোনকে নিয়োগ দেয়া হয়েছে ।

অফিস সহকারী কাম হিসাব সহকারী পদে নির্বাচনী পরীক্ষা অংশ নেন ৭ জন। নির্দিষ্ট পদে চাকরি প্রার্থী শারমিন সুলতানার অভিযোগ তাকে চাকরি দেয়ার কথা বলে ৭ লাখ টাকা ঘুষ নিয়েছেন নিয়োগ কমিটির সভাপতি ও তার ছেলে রিয়াজুল ইসলাম নাদিম। ঘুষের টাকা ফেরত চাওয়ায় তালবাহানা করে আসছেন।

গত ২৯ অক্টোবর স্বর্ণার স্বামী রুবেল স্থানীয় কাশিগঞ্জ বাজারে ঘুষের অর্থ ফেরত চাওয়া নিয়ে দু’পক্ষের মধ্যে তর্ক বিতর্ক, দস্তাদস্তির ঘটনা ঘটে। এ নিয়ে বিক্ষোভ মিছিল ও মানববন্ধন অনুষ্ঠিত হয়।

একই পদের প্রার্থী আজাহারুল ইসলামের অভিযোগ তার কাছ থেকে ৯ লাখ টাকা ঘুষ নেন প্রধান শিক্ষক সিদ্দিকুর রহমান, চাকরিও হয়নি। এই পদে নিয়োগ পেয়েছেন শহিদুল ইসলাম। চাওর হওয়া খবরে শহিদুল নিয়োগ পান ১৩ লাখ টাকার বিনিময়ে।

শারমিন সুলতানার স্বামী রুবেল মিয়া ও আজহারুল ইসলাম জানান, এ ব্যাপারে তারাকান্দা উপজেলা নির্বাহী অফিসার, মাধ্যমিক শিক্ষা কর্মকর্তার বরাবরে অভিযোগ করা হয়েছে। তারা জানান, ঘুষের টাকা ফেরত পেতে থানায় অভিযোগ করা হয়েছে।

আজাহারুল ইসলাম লেনদেন সংক্রান্ত কথপোকথনের একাধিক অডিও রেকর্ডিং রেকর্ড করেন। যাতে বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক ও সভাপতির সঙ্গে ঘুষ লেনদেনের কথাবার্তা স্পষ্টভাবে উঠে এসেছে। এ ব্যাপারে সভাপতি অভিযোগ অস্বীকার করেন। প্রধান শিক্ষক সিদ্দিকুর রহমানের সাথে অডিও রেকর্ডিং সংক্রান্ত জিজ্ঞাসা করা হলে, তিনি বলেন মিথ্যা কথা বলে আজহারুল ইসলামকে ঘুরানো হয়েছে। একজন প্রধান শিক্ষক হিসেবে মিথ্যা বলে ঘুরানো কি যুক্তিসংঘত। এমন প্রশ্নের তিনি আর কোন জবাব দেননি।