বাস-ট্রাকের পর এবার লঞ্চও ধর্মঘটে

জিম্মি মানুষ, ভোগান্তি সীমাহীন

জ্বালানি তেলের মূল্যবৃদ্ধির কারণে ভাড়া বাড়ানোর দাবিতে সারাদেশে দ্বিতীয় দিনের মতো চলছে অনির্দিষ্টকালের যাত্রী ও পণ্যবাহী পরিবহন ধর্মঘট। একই দাবিতে গতকাল দুপুর থেকে সারাদেশের যাত্রীবাহী লঞ্চ চলাচল বন্ধ করে দিয়েছে মালিকরা। এর ফলে সীমাহীন দুর্ভোগ ও ভোগান্তির শিকার হতে হচ্ছে সড়ক ও নৌপথের যাত্রীদের।

বাস-লঞ্চের অনির্দিষ্টকালের এই ধর্মঘটের বিষয় সড়ক পরিবহন ও যাত্রীবাহী নৌযান মালিকদের সংগঠনের পক্ষ থেকে আনুষ্ঠানিক কোন ঘোষণা দেয়া হয়নি। বলা হচ্ছে জ্বালানি তেলের দাম বৃদ্ধির কারণে মালিকরা নিজ থেকে বাস ও লঞ্চ বন্ধ করে দিয়েছে।

কিন্তু রাজধানীর বিভিন্ন সড়কে বিআরটিসি বাস ও ব্যক্তি মালিকাধীন পরিবহনও চলতে দিচ্ছে না শ্রমিকরা। বিভিন্ন স্থানে পরিবহন শ্রমিকদের হামলার শিকার হয়েছে বিআরটিসি বাস চালকরা। এছাড়া এসি বাস ও সিএনজি চালিত বাসও বন্ধ রয়েছে। অথচ এ বিষয়ে কেউ কিছু বলছে না। এভাবে যাত্রীদের জিম্মি করে দাবি আদায়ের নজির পৃথিবীর অন্য কোথায় নেই বলে জানান সাধারণ মানুষ।

এ বিষয়ে সড়ক পরিবহন কর্তৃপক্ষের (বিআরটিএ) চেয়ারম্যান নূর মোহাম্মদ মজুমদার সংবাদকে বলেন, ‘ভাড়া বাড়ানোর দাবিতে পরিবহন মালিকদের এই ধর্মঘট সম্পূর্ণ বেআইনি। যাত্রীদের জিম্মি করে এভাবে দাবি আদায় করা আইনগত ভিত্তি নেই।’ এ বিষয়ে রোববার পরিবহন মালিকদের সঙ্গে বৈঠকে আলোচনা করা হবে বলে জানান তিনি।

সরেজমিনে রাজধানীর বিভিন্ন স্থান ঘুরে দেখা গেছে, বাস-মিনিবাস বন্ধ থাকায় রাজধানীর বেশিরভাগ সড়ক দখলে ছিল রিকশা, মোটরসাইকেল ও সিএনজিচালিত অটোরিকশা। গতকাল সরকারি অফিস বন্ধ থাকলেও বেশিরভাগ বেসরকারি অফিস ছিল খোলা। গণপরিবহন বন্ধ থাকায় চরম ভোগান্তি পোহাতে হয়েছে বেসরকারি অফিসের যাত্রীদের। বাস বন্ধ থাকায় অটোরিকশা ও রিকশায় দুই-তিনগুণ বেশি ভাড়া নেয়ার অভিযোগ করেন যাত্রীরা।

রাজধানীর টিকাটুলী এলাকায় মিলন নামের এক যাত্রী সংবাদকে বলেন, ‘অসুস্থ মা’কে নিয়ে ধানমন্ডি হাসপাতালে যাব। সিএনজি ভাড়া চাচ্ছে ৫০০ টাকা। অথচ আগে এই ভাড়া ছিল ২০০-২৫০ টাকা। রাস্তা ফাঁকা ভাড়া চাচ্ছে বেশি। বাস বন্ধ থাকায় সিএনজি চালকরা যাত্রীদের জিম্মি করছে। এভাবেই চলছে সব। বাস মালিকরা ভাড়া বাড়ানোর ধর্মঘট দিয়ে সাধারণ মানুষদের জিম্মি করছে। এটা দেখার কেউ নেই।

গুলিস্তান এলাকায় সজিব নামের রামপুরার এক যাত্রী বলেন, রাস্তায় প্রচুর রিকশা। কিন্তু ভাড়া নিচ্ছে দ্বিগুণেরও বেশি। গুলিস্তান থেকে রামপুরা ভাড়া চাওয়া হচ্ছে ২০০ টাকা। এটা সর্বোচ্চ ৫০-৬০ টাকা হওয়ার কথা। এভাবে প্রকাশ্যে ডাকাতি করছে রিকশা চালকরা।

বাস না থাকলেও গতকাল রাজধানীর বিভিন্ন সড়কে প্রাইভেটকার, মোটরসাইকেল ও ব্যাটারিচালিত রিকশা চলাচল করতে দেখা গেছে। এসব পরিবহনে বাড়তি ভাড়া নেয়ার অভিযোগ যাত্রীদের। যাত্রাবাড়ী থেকে গুলিস্তান ৬০ টাকার রিকশার ভাড়া ১০০-১২০ টাকা নেয়ার অভিযোগ করেন যাত্রীরা।

যাত্রাবাড়ীর সুরুজ মিয়া নামের এক রিকশাচালক সংবাদকে বলেন, বাস বন্ধ থাকায় এখন মেইন রোড দিয়া এই রিকশা রিকস (রিস্ক) নিয়া চালাইতে হয়। পুলিশে ধরলে জরিমানা করে। বাড়তি টাকা দেয়া লাগতে পারে। এই কারণে ভাড়া কয়েক টাকা বেশি। খুব তো বেশি না!

রাইড শেয়ারিং অ্যাপ উবার বা পাঠাওয়ের পরিবহন সার্ভিস চালু থাকলেও বেশিভাগ চালকদের চুক্তিতে চলাচল করতে দেখা গেছে। পুরানা পল্টন এলাকায় পারভেজ নামের এক মোটরসাইকেল চালক সংবাদকে বলেন, পাঠাওয়ের অ্যাপ চালু আছে। কিন্তু টেকওয়ার্ক সমস্যার কারণে বন্ধ রাখতে হয়। এছাড়া এখন আর যাত্রী অ্যাপের মাধ্যমে চলাচল করে না। চুক্তিতে বেশি চলাচল করে। বাস বন্ধ থাকায় চুক্তিতে বেশি চলাচল করছে যাত্রীরা।

হঠাৎ লঞ্চ বন্ধ, ভোগান্তিতে যাত্রীরা

বৃহস্পতি ও শুক্রবার বাস-ট্রাক ধর্মঘট হলেও লঞ্চ চলাচল করছিল। কিন্তু গতকাল দুপুরের পর হঠাৎ করে যাত্রীবাহী লঞ্চ চলাচল বন্ধ করে দেয় মালিকরা। এতে চরম ভোগান্তিতে পড়েন বরিশালসহ দক্ষিণাঞ্চলের লঞ্চ যাত্রীরা। গতকাল বিকেল ৪টা ঢাকার সদরঘাট থেকে দেশের বিভিন্ন গন্তব্যে ৩৫টি লঞ্চ ছেড়ে গেছে। এরপর থেকে আরও কোন লঞ্চ সদরঘাট থেকে ছেড়ে যায়নি বলে বিআইডব্লিউটিএ’র সূত্র জানায়।

বিআইডব্লিউটিএ’র ঢাকা নদীবন্দরের যুগ্ম পরিচালক (নৌ-ট্রাফিক) জয়নাল আবেদীন সংবাদকে বলেন, ডিজেলের দাম বৃদ্ধির কারণে মালিকরা শনিবার বিকেল চারটা থেকে লঞ্চ চলাচল বন্ধ করে দিয়েছে। সকাল থেকে বিকেল পর্যন্ত ৩৫টি লঞ্চ সদরঘাট থেকে ছেড়ে গেছে। বিকেল ৪টার পর থেকে আর কোন লঞ্চ ঢাকা থেকে ছেড়ে যায়নি বলে জানান তিনি।

এ বিষয়ে লঞ্চ মালিকদের সংগঠন অভ্যন্তরীণ নৌযান যাত্রী সংস্থার ঢাকা বিভাগের সভাপতি মামুন হোসেন সংবাদকে বলেন, সংগঠনের পক্ষ থেকে কোন ধর্মঘট দেয়া হয়নি। তবে ডিজেলের দাম বৃদ্ধির কারণে মালিক নিজ থেকে লঞ্চ বন্ধ করে দিয়েছে। তবে পণ্যবাহী নৌযান চলাচল করছে। ভাড়া বৃদ্ধি না করা পর্যন্ত যাত্রীবাহী লঞ্চের অনির্দিষ্টকালের ধর্মঘট চলবে বলে জানান তিনি।

লঞ্চ মালিক সমিতি ভাড়া শতভাগ বা দ্বিগুণ করার প্রস্তাব দিয়েছে বাংলাদেশ অভ্যন্তরীণ নৌপরিবহন কর্তৃপক্ষের (বিআইডব্লিউটিএ) কাছে। তাদের প্রস্তাবে বলা হয়েছে, বর্তমান ভাড়ার উপর ১০০ কিলোমিটার পর্যন্ত ১ দশমিক ৭০ টাকার স্থলে ৩ দশমিক ৪০ টাকা এবং ১০০ কিলোমিটারের ঊর্ধ্বে ১ দশমিক ৪০ টাকার স্থলে ২ দশমিক ৮০ টাকা করার প্রস্তাব দেয়া হয়েছে বলে লঞ্চ মালিকরা জানান।

আমিনুল ইসলাম নামের বরিশালের এক যাত্রী সংবাদকে বলেন, জরুরি প্রয়োজনে গ্রামের বাড়ি বরিশাল যেতে হবে। তাই বাস বন্ধ থাকায় মিরপুর থেকে সদরঘাট আসতে সিএনজি ভাড়া নিয়েছে ৫০০ টাকা। সদরঘাট এসে দেখি লঞ্চও বন্ধ। বিপদের উপর আরও বিপদ। এখন আবার ৫০০ টাকা ভাড়া দিয়ে মিরপুরে বাসায় যেতে হচ্ছে। ভাড়া বাড়ানোর দাবিতে যাত্রীদের এভাবে জিম্মি করা পুরোপুরি অযৌক্তিক বলে জানান তিনি।

স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর সঙ্গে পণ্যবাহী পরিবহন মালিকদের বৈঠক ব্যর্থ

স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামাল আলোচনা করেও ট্রাক মালিক-শ্রমিকদের ধর্মঘট থেকে সরাতে পারলেন না।

ডিজেলের দাম বাড়ানোর প্রতিবাদে ধর্মঘটের দ্বিতীয় দিন গতকাল দুপুরে ঢাকার ধানমন্ডিতে মন্ত্রীর বাড়িতে বৈঠক করেছেন ট্রাক মালিক ও শ্রমিক নেতারা।

বৈঠক শেষে বাংলাদেশ ট্রাক চালক শ্রমিক ফেডারেশনের সভাপতি তালুকদার মো. মনির বলেন, তারা কয়েকটি দাবি জানিয়েছেন, সেগুলো মানা হলে তবেই তারা ধর্মঘট তুলে নেবেন। পণ্য পরিবহন মালিক সমিতির সভাপতি মকবুল আহমেদ, সাধারণ সম্পাদক আবদুল মোতালেবসহ মালিক ও শ্রমিক সংগঠনগুলোর ২০ জন নেতা এই বৈঠকে ছিলেন বলে জানান তিনি।

মনির বলেন, মন্ত্রী আমাদের ডেকেছিলেন। আমরা জ্বালানি তেলের দাম বাড়ানোর সিদ্ধান্ত প্রত্যাহার, চাঁদা আদায় বন্ধ, বঙ্গবন্ধু সেতুর বাড়তি টোল আদায় বন্ধসহ বিভিন্ন প্রস্তাব দিয়েছি। এগুলো মানা হলে ধর্মঘট প্রত্যাহার করা হবে।

এই আলোচনার বিষয়ে তার কোন বক্তব্য পাওয়া না গেলেও ট্রাক শ্রমিক নেতা মনির বলেন, তাদের বক্তব্য প্রধানমন্ত্রীর কাছে তুলে ধরার আশ্বাস দিয়েছেন স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী। স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর সঙ্গে শনিবার সন্ধ্যায় অথবা রোববার আবারও বৈঠক হতে পারে বলে জানান মনির।

রবিবার, ০৭ নভেম্বর ২০২১ , ২২ কার্তিক ১৪২৮ ৩০ রবিউল আউয়াল ১৪৪৩

বাস-ট্রাকের পর এবার লঞ্চও ধর্মঘটে

জিম্মি মানুষ, ভোগান্তি সীমাহীন

ইবরাহীম মাহমুদ আকাশ

image

বাসের পর গতকাল থেকে শুরু হয়েছে লঞ্চ ধর্মঘট, সদরঘাট লঞ্চঘাটে বাড়ি যাওয়ার অপেক্ষায় যাত্রীদের দিন কাটে -সংবাদ

জ্বালানি তেলের মূল্যবৃদ্ধির কারণে ভাড়া বাড়ানোর দাবিতে সারাদেশে দ্বিতীয় দিনের মতো চলছে অনির্দিষ্টকালের যাত্রী ও পণ্যবাহী পরিবহন ধর্মঘট। একই দাবিতে গতকাল দুপুর থেকে সারাদেশের যাত্রীবাহী লঞ্চ চলাচল বন্ধ করে দিয়েছে মালিকরা। এর ফলে সীমাহীন দুর্ভোগ ও ভোগান্তির শিকার হতে হচ্ছে সড়ক ও নৌপথের যাত্রীদের।

বাস-লঞ্চের অনির্দিষ্টকালের এই ধর্মঘটের বিষয় সড়ক পরিবহন ও যাত্রীবাহী নৌযান মালিকদের সংগঠনের পক্ষ থেকে আনুষ্ঠানিক কোন ঘোষণা দেয়া হয়নি। বলা হচ্ছে জ্বালানি তেলের দাম বৃদ্ধির কারণে মালিকরা নিজ থেকে বাস ও লঞ্চ বন্ধ করে দিয়েছে।

কিন্তু রাজধানীর বিভিন্ন সড়কে বিআরটিসি বাস ও ব্যক্তি মালিকাধীন পরিবহনও চলতে দিচ্ছে না শ্রমিকরা। বিভিন্ন স্থানে পরিবহন শ্রমিকদের হামলার শিকার হয়েছে বিআরটিসি বাস চালকরা। এছাড়া এসি বাস ও সিএনজি চালিত বাসও বন্ধ রয়েছে। অথচ এ বিষয়ে কেউ কিছু বলছে না। এভাবে যাত্রীদের জিম্মি করে দাবি আদায়ের নজির পৃথিবীর অন্য কোথায় নেই বলে জানান সাধারণ মানুষ।

এ বিষয়ে সড়ক পরিবহন কর্তৃপক্ষের (বিআরটিএ) চেয়ারম্যান নূর মোহাম্মদ মজুমদার সংবাদকে বলেন, ‘ভাড়া বাড়ানোর দাবিতে পরিবহন মালিকদের এই ধর্মঘট সম্পূর্ণ বেআইনি। যাত্রীদের জিম্মি করে এভাবে দাবি আদায় করা আইনগত ভিত্তি নেই।’ এ বিষয়ে রোববার পরিবহন মালিকদের সঙ্গে বৈঠকে আলোচনা করা হবে বলে জানান তিনি।

সরেজমিনে রাজধানীর বিভিন্ন স্থান ঘুরে দেখা গেছে, বাস-মিনিবাস বন্ধ থাকায় রাজধানীর বেশিরভাগ সড়ক দখলে ছিল রিকশা, মোটরসাইকেল ও সিএনজিচালিত অটোরিকশা। গতকাল সরকারি অফিস বন্ধ থাকলেও বেশিরভাগ বেসরকারি অফিস ছিল খোলা। গণপরিবহন বন্ধ থাকায় চরম ভোগান্তি পোহাতে হয়েছে বেসরকারি অফিসের যাত্রীদের। বাস বন্ধ থাকায় অটোরিকশা ও রিকশায় দুই-তিনগুণ বেশি ভাড়া নেয়ার অভিযোগ করেন যাত্রীরা।

রাজধানীর টিকাটুলী এলাকায় মিলন নামের এক যাত্রী সংবাদকে বলেন, ‘অসুস্থ মা’কে নিয়ে ধানমন্ডি হাসপাতালে যাব। সিএনজি ভাড়া চাচ্ছে ৫০০ টাকা। অথচ আগে এই ভাড়া ছিল ২০০-২৫০ টাকা। রাস্তা ফাঁকা ভাড়া চাচ্ছে বেশি। বাস বন্ধ থাকায় সিএনজি চালকরা যাত্রীদের জিম্মি করছে। এভাবেই চলছে সব। বাস মালিকরা ভাড়া বাড়ানোর ধর্মঘট দিয়ে সাধারণ মানুষদের জিম্মি করছে। এটা দেখার কেউ নেই।

গুলিস্তান এলাকায় সজিব নামের রামপুরার এক যাত্রী বলেন, রাস্তায় প্রচুর রিকশা। কিন্তু ভাড়া নিচ্ছে দ্বিগুণেরও বেশি। গুলিস্তান থেকে রামপুরা ভাড়া চাওয়া হচ্ছে ২০০ টাকা। এটা সর্বোচ্চ ৫০-৬০ টাকা হওয়ার কথা। এভাবে প্রকাশ্যে ডাকাতি করছে রিকশা চালকরা।

বাস না থাকলেও গতকাল রাজধানীর বিভিন্ন সড়কে প্রাইভেটকার, মোটরসাইকেল ও ব্যাটারিচালিত রিকশা চলাচল করতে দেখা গেছে। এসব পরিবহনে বাড়তি ভাড়া নেয়ার অভিযোগ যাত্রীদের। যাত্রাবাড়ী থেকে গুলিস্তান ৬০ টাকার রিকশার ভাড়া ১০০-১২০ টাকা নেয়ার অভিযোগ করেন যাত্রীরা।

যাত্রাবাড়ীর সুরুজ মিয়া নামের এক রিকশাচালক সংবাদকে বলেন, বাস বন্ধ থাকায় এখন মেইন রোড দিয়া এই রিকশা রিকস (রিস্ক) নিয়া চালাইতে হয়। পুলিশে ধরলে জরিমানা করে। বাড়তি টাকা দেয়া লাগতে পারে। এই কারণে ভাড়া কয়েক টাকা বেশি। খুব তো বেশি না!

রাইড শেয়ারিং অ্যাপ উবার বা পাঠাওয়ের পরিবহন সার্ভিস চালু থাকলেও বেশিভাগ চালকদের চুক্তিতে চলাচল করতে দেখা গেছে। পুরানা পল্টন এলাকায় পারভেজ নামের এক মোটরসাইকেল চালক সংবাদকে বলেন, পাঠাওয়ের অ্যাপ চালু আছে। কিন্তু টেকওয়ার্ক সমস্যার কারণে বন্ধ রাখতে হয়। এছাড়া এখন আর যাত্রী অ্যাপের মাধ্যমে চলাচল করে না। চুক্তিতে বেশি চলাচল করে। বাস বন্ধ থাকায় চুক্তিতে বেশি চলাচল করছে যাত্রীরা।

হঠাৎ লঞ্চ বন্ধ, ভোগান্তিতে যাত্রীরা

বৃহস্পতি ও শুক্রবার বাস-ট্রাক ধর্মঘট হলেও লঞ্চ চলাচল করছিল। কিন্তু গতকাল দুপুরের পর হঠাৎ করে যাত্রীবাহী লঞ্চ চলাচল বন্ধ করে দেয় মালিকরা। এতে চরম ভোগান্তিতে পড়েন বরিশালসহ দক্ষিণাঞ্চলের লঞ্চ যাত্রীরা। গতকাল বিকেল ৪টা ঢাকার সদরঘাট থেকে দেশের বিভিন্ন গন্তব্যে ৩৫টি লঞ্চ ছেড়ে গেছে। এরপর থেকে আরও কোন লঞ্চ সদরঘাট থেকে ছেড়ে যায়নি বলে বিআইডব্লিউটিএ’র সূত্র জানায়।

বিআইডব্লিউটিএ’র ঢাকা নদীবন্দরের যুগ্ম পরিচালক (নৌ-ট্রাফিক) জয়নাল আবেদীন সংবাদকে বলেন, ডিজেলের দাম বৃদ্ধির কারণে মালিকরা শনিবার বিকেল চারটা থেকে লঞ্চ চলাচল বন্ধ করে দিয়েছে। সকাল থেকে বিকেল পর্যন্ত ৩৫টি লঞ্চ সদরঘাট থেকে ছেড়ে গেছে। বিকেল ৪টার পর থেকে আর কোন লঞ্চ ঢাকা থেকে ছেড়ে যায়নি বলে জানান তিনি।

এ বিষয়ে লঞ্চ মালিকদের সংগঠন অভ্যন্তরীণ নৌযান যাত্রী সংস্থার ঢাকা বিভাগের সভাপতি মামুন হোসেন সংবাদকে বলেন, সংগঠনের পক্ষ থেকে কোন ধর্মঘট দেয়া হয়নি। তবে ডিজেলের দাম বৃদ্ধির কারণে মালিক নিজ থেকে লঞ্চ বন্ধ করে দিয়েছে। তবে পণ্যবাহী নৌযান চলাচল করছে। ভাড়া বৃদ্ধি না করা পর্যন্ত যাত্রীবাহী লঞ্চের অনির্দিষ্টকালের ধর্মঘট চলবে বলে জানান তিনি।

লঞ্চ মালিক সমিতি ভাড়া শতভাগ বা দ্বিগুণ করার প্রস্তাব দিয়েছে বাংলাদেশ অভ্যন্তরীণ নৌপরিবহন কর্তৃপক্ষের (বিআইডব্লিউটিএ) কাছে। তাদের প্রস্তাবে বলা হয়েছে, বর্তমান ভাড়ার উপর ১০০ কিলোমিটার পর্যন্ত ১ দশমিক ৭০ টাকার স্থলে ৩ দশমিক ৪০ টাকা এবং ১০০ কিলোমিটারের ঊর্ধ্বে ১ দশমিক ৪০ টাকার স্থলে ২ দশমিক ৮০ টাকা করার প্রস্তাব দেয়া হয়েছে বলে লঞ্চ মালিকরা জানান।

আমিনুল ইসলাম নামের বরিশালের এক যাত্রী সংবাদকে বলেন, জরুরি প্রয়োজনে গ্রামের বাড়ি বরিশাল যেতে হবে। তাই বাস বন্ধ থাকায় মিরপুর থেকে সদরঘাট আসতে সিএনজি ভাড়া নিয়েছে ৫০০ টাকা। সদরঘাট এসে দেখি লঞ্চও বন্ধ। বিপদের উপর আরও বিপদ। এখন আবার ৫০০ টাকা ভাড়া দিয়ে মিরপুরে বাসায় যেতে হচ্ছে। ভাড়া বাড়ানোর দাবিতে যাত্রীদের এভাবে জিম্মি করা পুরোপুরি অযৌক্তিক বলে জানান তিনি।

স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর সঙ্গে পণ্যবাহী পরিবহন মালিকদের বৈঠক ব্যর্থ

স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামাল আলোচনা করেও ট্রাক মালিক-শ্রমিকদের ধর্মঘট থেকে সরাতে পারলেন না।

ডিজেলের দাম বাড়ানোর প্রতিবাদে ধর্মঘটের দ্বিতীয় দিন গতকাল দুপুরে ঢাকার ধানমন্ডিতে মন্ত্রীর বাড়িতে বৈঠক করেছেন ট্রাক মালিক ও শ্রমিক নেতারা।

বৈঠক শেষে বাংলাদেশ ট্রাক চালক শ্রমিক ফেডারেশনের সভাপতি তালুকদার মো. মনির বলেন, তারা কয়েকটি দাবি জানিয়েছেন, সেগুলো মানা হলে তবেই তারা ধর্মঘট তুলে নেবেন। পণ্য পরিবহন মালিক সমিতির সভাপতি মকবুল আহমেদ, সাধারণ সম্পাদক আবদুল মোতালেবসহ মালিক ও শ্রমিক সংগঠনগুলোর ২০ জন নেতা এই বৈঠকে ছিলেন বলে জানান তিনি।

মনির বলেন, মন্ত্রী আমাদের ডেকেছিলেন। আমরা জ্বালানি তেলের দাম বাড়ানোর সিদ্ধান্ত প্রত্যাহার, চাঁদা আদায় বন্ধ, বঙ্গবন্ধু সেতুর বাড়তি টোল আদায় বন্ধসহ বিভিন্ন প্রস্তাব দিয়েছি। এগুলো মানা হলে ধর্মঘট প্রত্যাহার করা হবে।

এই আলোচনার বিষয়ে তার কোন বক্তব্য পাওয়া না গেলেও ট্রাক শ্রমিক নেতা মনির বলেন, তাদের বক্তব্য প্রধানমন্ত্রীর কাছে তুলে ধরার আশ্বাস দিয়েছেন স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী। স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর সঙ্গে শনিবার সন্ধ্যায় অথবা রোববার আবারও বৈঠক হতে পারে বলে জানান মনির।