সরকার তেলের দাম বাড়ালো বাস-লঞ্চ বন্ধ হলো আর সাধারণ মানুষ ‘বলির পাঁঠা’

ভোগান্তির শিকার ভর্তি পরীক্ষার্থীদের প্রতিক্রিয়া

‘কোন সভ্য দেশেই এমন আচরণ করা ঠিক না’ এমন মন্তব্য করে রাগে ক্ষোভে ফেটে পড়েছিলেন বুয়েটে ভর্তি পরীক্ষা দিতে আসা দিনাজপুরের নাঈমুর রহমান। নাঈমুর বলেন, ‘তেলের দাম হঠাৎ বাড়ানো যেমন ঠিক না তেমনি এভাবে ধর্মঘট ডাকাও ভদ্রতা না।’

দ্বিতীয় দিনের মতো গতকালও দেশে ট্রেন ছাড়া সব গণপরিবহন বন্ধ থাকায় ভোগান্তিতে পড়েন নাঈমুরের মতো হাজারও সাধারণ মানুষ। গত শুক্রবার অঘোষিত বাস ধর্মঘট শুরু হওয়ায় দেশের বিভিন্ন জেলা থেকে চাকরি ও ভর্তি পরীক্ষা দিতে আসা সাধারণ মানুষ পড়েন বিপাকে।

এদিকে একমাত্র ভরসা ট্রেন হওয়ায় বাড়ি ফিরতে মানুষ ভিড় করেছেন কমলাপুর রেলস্টেশনে।

রবিউল ও হাসান নামের দুই পরীক্ষার্থী বলেন, গণপরিবহন না থাকায় তারা কমলাপুর রেলস্টেশনে এসেছেন। সকাল ৯টা থেকে দুপুর ১টা পর্যন্ত টিকেট না পেয়ে হতাশ হয়ে তারা বসে ছিলেন স্টেশনের সিঁড়িতে।

রবিউল বলেন, টিকেট পাব বলে সকাল সকাল এসেও টিকিট পাচ্ছি না। প্রচুর ভিড়। বগুড়া যাব। ভেবেছিলাম গাবতলী বাস টার্মিনালে দু একটা বাস বা ট্রাক পাব। কিন্তু গিয়ে দেখি সবই বন্ধ। তাই কমলাপুর রেলস্টেশনে টিকিট কাটতে লাইনে দাঁড়িয়ে আছি।

মাহমুদুল হাসান নামের আরেক যাত্রী বলেন, তেলের দামের সঙ্গে আমাদের জীবনযাপনের অনেকটাই সম্পৃক্ত। হঠাৎ সরকার তেলের দাম বৃদ্ধি করলো, আর বাস মালিকরা বাস বন্ধ করে দিল। আমরা সাধারণ মানুষ বলির পাঁঠা। অতিরিক্ত ভাড়া গুণতে একদিকে যেমন ঘাম ছুটে যাবে অন্যদিকে এমন ভোগান্তিতে পড়ে অসুস্থ হয়ে পড়তে হবে।’

পরীক্ষার হলে মোবাইল নেয়া নিষিদ্ধ হওয়ায় আত্মীয়ের বাসায় মোবাইল থাকায় কোন খোঁজই নিতে পারছিলেন না আল আমীন। বরিশালে ফিরতেই হবে কিন্তু লঞ্চের খবর জানেন না। টাকা পয়সাও নাই যে হোটেলে থাকবেন। যে আত্মীয়ের বাসায় ফোন রেখে এসেছেন তার কাছে থাকতে পারতেন, তারা অসুস্থ। ‘এমন সমস্যায় এর আগে পড়িনি’ বলে আলআমীন দূরে দৃষ্টি দিলেন। কথা বলতে বিরক্ত হচ্ছেন মুখে না বল্লেও আচরণে বুঝিয়ে দিলেন।

বুয়েটে ভর্তি পরীক্ষা দিতে দেশের বিভিন্ন জেলা থেকে গত শুক্রবার ঢাকায় আসার টিকিট কেটে রাখলেও ধর্মঘটের খবর শুনে বৃহস্পতিবারই অনেকে চলে এসেছেন। কুষ্টিয়া থেকে দুদিন আগেই মেয়েকে নিয়ে ঢাকায় আসেন শরীফুল ইসলাম। তিনি বলেন, ‘বাস বন্ধ হতে পারে শুনে বৃহস্পতিবার মেয়েকে নিয়ে চলে এসেছি। অনেক খাটাখাটুনি করে মূল পর্বে ৬ হাজার পরীক্ষার্থীর মধ্যে পরীক্ষা দেয়ার সুযোগ পেয়েছে আমার মেয়ে। এটা যদি মিস হতো, তাহলে তো ও মেয়েসহ আমার পরিবারের সবাই কষ্টে অসুস্থ হয়ে পড়তাম। কষ্ট হলো অনেক। চান্স না পেলে দুঃখ থাকবে না, কিন্তু যদি পরীক্ষাই দিতে না পারতো। মেয়ের স্বপ্ন ধুলিস্যাৎ হয়ে যেতো। আমাদের দেশের এই অরাজাকতা কবে শেষ হবে কে জানে?’

ঢাকার সাভার থেকে ছেলেকে নিয়ে সকালেই আসেন মো. সামসুজ্জোহা। তিনি বলেন, ‘খুব ভোরে ছেলেকে নিয়ে আসি। এই পরীক্ষা দেয়ার জন্য ও যে কষ্ট করেছে। তাই তিনগুণ বেশি ভাড়া গুণতে হয়েছে। ভোগান্তির চরমমাত্রায় এসে গেছি। রিজার্ভ করে সিএনজি দিয়ে আসতে হয়েছে।’

পরীক্ষার্থী ও তাদের অভিভাবকদের পরীক্ষা কেন্দ্রে আসতে হয়েছে সিএনজি বা ভাড়ায় চালিত বাইক নিয়ে। বাসে ১০ টাকার ভাড়া ৩শ টাকা ভাড়া দিয়ে সিএনজিতে আসতে হয়েছে অনেককেই।

দেশে চলমান পরিবহন ধর্মঘটের মধ্যে অনুষ্ঠিত হয়েছে বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয় (বুয়েট) ও ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় (ঢাবি) অধিভুক্ত সরকারি সাত কলেজের ২০২০-২০২১ সেশনের ভর্তি পরীক্ষা। পরীক্ষার্থী ও অভিভাবকরা জানান, রাস্তায় গণপরিবহন না চলায় পরীক্ষা কেন্দ্র পর্যন্ত আসতে তাদের ভোগান্তির শেষ ছিল না।

রবিবার, ০৭ নভেম্বর ২০২১ , ২২ কার্তিক ১৪২৮ ৩০ রবিউল আউয়াল ১৪৪৩

ভর্তি পরীক্ষার দ্বিতীয় দিন

সরকার তেলের দাম বাড়ালো বাস-লঞ্চ বন্ধ হলো আর সাধারণ মানুষ ‘বলির পাঁঠা’

ভোগান্তির শিকার ভর্তি পরীক্ষার্থীদের প্রতিক্রিয়া

জাহিদা পারভেজ ছন্দা

‘কোন সভ্য দেশেই এমন আচরণ করা ঠিক না’ এমন মন্তব্য করে রাগে ক্ষোভে ফেটে পড়েছিলেন বুয়েটে ভর্তি পরীক্ষা দিতে আসা দিনাজপুরের নাঈমুর রহমান। নাঈমুর বলেন, ‘তেলের দাম হঠাৎ বাড়ানো যেমন ঠিক না তেমনি এভাবে ধর্মঘট ডাকাও ভদ্রতা না।’

দ্বিতীয় দিনের মতো গতকালও দেশে ট্রেন ছাড়া সব গণপরিবহন বন্ধ থাকায় ভোগান্তিতে পড়েন নাঈমুরের মতো হাজারও সাধারণ মানুষ। গত শুক্রবার অঘোষিত বাস ধর্মঘট শুরু হওয়ায় দেশের বিভিন্ন জেলা থেকে চাকরি ও ভর্তি পরীক্ষা দিতে আসা সাধারণ মানুষ পড়েন বিপাকে।

এদিকে একমাত্র ভরসা ট্রেন হওয়ায় বাড়ি ফিরতে মানুষ ভিড় করেছেন কমলাপুর রেলস্টেশনে।

রবিউল ও হাসান নামের দুই পরীক্ষার্থী বলেন, গণপরিবহন না থাকায় তারা কমলাপুর রেলস্টেশনে এসেছেন। সকাল ৯টা থেকে দুপুর ১টা পর্যন্ত টিকেট না পেয়ে হতাশ হয়ে তারা বসে ছিলেন স্টেশনের সিঁড়িতে।

রবিউল বলেন, টিকেট পাব বলে সকাল সকাল এসেও টিকিট পাচ্ছি না। প্রচুর ভিড়। বগুড়া যাব। ভেবেছিলাম গাবতলী বাস টার্মিনালে দু একটা বাস বা ট্রাক পাব। কিন্তু গিয়ে দেখি সবই বন্ধ। তাই কমলাপুর রেলস্টেশনে টিকিট কাটতে লাইনে দাঁড়িয়ে আছি।

মাহমুদুল হাসান নামের আরেক যাত্রী বলেন, তেলের দামের সঙ্গে আমাদের জীবনযাপনের অনেকটাই সম্পৃক্ত। হঠাৎ সরকার তেলের দাম বৃদ্ধি করলো, আর বাস মালিকরা বাস বন্ধ করে দিল। আমরা সাধারণ মানুষ বলির পাঁঠা। অতিরিক্ত ভাড়া গুণতে একদিকে যেমন ঘাম ছুটে যাবে অন্যদিকে এমন ভোগান্তিতে পড়ে অসুস্থ হয়ে পড়তে হবে।’

পরীক্ষার হলে মোবাইল নেয়া নিষিদ্ধ হওয়ায় আত্মীয়ের বাসায় মোবাইল থাকায় কোন খোঁজই নিতে পারছিলেন না আল আমীন। বরিশালে ফিরতেই হবে কিন্তু লঞ্চের খবর জানেন না। টাকা পয়সাও নাই যে হোটেলে থাকবেন। যে আত্মীয়ের বাসায় ফোন রেখে এসেছেন তার কাছে থাকতে পারতেন, তারা অসুস্থ। ‘এমন সমস্যায় এর আগে পড়িনি’ বলে আলআমীন দূরে দৃষ্টি দিলেন। কথা বলতে বিরক্ত হচ্ছেন মুখে না বল্লেও আচরণে বুঝিয়ে দিলেন।

বুয়েটে ভর্তি পরীক্ষা দিতে দেশের বিভিন্ন জেলা থেকে গত শুক্রবার ঢাকায় আসার টিকিট কেটে রাখলেও ধর্মঘটের খবর শুনে বৃহস্পতিবারই অনেকে চলে এসেছেন। কুষ্টিয়া থেকে দুদিন আগেই মেয়েকে নিয়ে ঢাকায় আসেন শরীফুল ইসলাম। তিনি বলেন, ‘বাস বন্ধ হতে পারে শুনে বৃহস্পতিবার মেয়েকে নিয়ে চলে এসেছি। অনেক খাটাখাটুনি করে মূল পর্বে ৬ হাজার পরীক্ষার্থীর মধ্যে পরীক্ষা দেয়ার সুযোগ পেয়েছে আমার মেয়ে। এটা যদি মিস হতো, তাহলে তো ও মেয়েসহ আমার পরিবারের সবাই কষ্টে অসুস্থ হয়ে পড়তাম। কষ্ট হলো অনেক। চান্স না পেলে দুঃখ থাকবে না, কিন্তু যদি পরীক্ষাই দিতে না পারতো। মেয়ের স্বপ্ন ধুলিস্যাৎ হয়ে যেতো। আমাদের দেশের এই অরাজাকতা কবে শেষ হবে কে জানে?’

ঢাকার সাভার থেকে ছেলেকে নিয়ে সকালেই আসেন মো. সামসুজ্জোহা। তিনি বলেন, ‘খুব ভোরে ছেলেকে নিয়ে আসি। এই পরীক্ষা দেয়ার জন্য ও যে কষ্ট করেছে। তাই তিনগুণ বেশি ভাড়া গুণতে হয়েছে। ভোগান্তির চরমমাত্রায় এসে গেছি। রিজার্ভ করে সিএনজি দিয়ে আসতে হয়েছে।’

পরীক্ষার্থী ও তাদের অভিভাবকদের পরীক্ষা কেন্দ্রে আসতে হয়েছে সিএনজি বা ভাড়ায় চালিত বাইক নিয়ে। বাসে ১০ টাকার ভাড়া ৩শ টাকা ভাড়া দিয়ে সিএনজিতে আসতে হয়েছে অনেককেই।

দেশে চলমান পরিবহন ধর্মঘটের মধ্যে অনুষ্ঠিত হয়েছে বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয় (বুয়েট) ও ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় (ঢাবি) অধিভুক্ত সরকারি সাত কলেজের ২০২০-২০২১ সেশনের ভর্তি পরীক্ষা। পরীক্ষার্থী ও অভিভাবকরা জানান, রাস্তায় গণপরিবহন না চলায় পরীক্ষা কেন্দ্র পর্যন্ত আসতে তাদের ভোগান্তির শেষ ছিল না।