কক্সবাজারে আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতির অবনতি

পর্যটন নগরী কক্সবাজারে আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতির অবনতি হয়েছে। গত শুক্রবার এক রাতেই কক্সবাজারের মহেশখালী উপজেলার কালারমারছড়ায় এক জন নিহত ও কক্সবাজার সদরের লিংকরোড এলাকায় দুই আওয়ামী লীগ নেতা গুলিবিদ্ধ হয়েছেন।

শুক্রবার রাত ১০টার দিকে শহরতলীর লিংকরোডস্থ মেম্বার পদপ্রার্থী কুদরত উল্লাহ সিকদারের নিজস্ব কার্যালয়ে দুর্বৃত্তরা এলোপাতাড়ি গুলি করে পালিয়ে যায়। এর আগে একই রাতে মহেশখালীতে এলোপাতাড়ি কুপিয়ে হত্যা করা হয় আলাউদ্দিনকে।

গুলিবিদ্ধরা হলেন, কক্সবাজার জেলা শ্রমিক লীগের সভাপতি জহিরুল ইসলাম সিকদার ও তার ছোট ভাই ঝিলংজা ইউনিয়ন আওয়ামী লীগ সাধারণ সম্পাদক ও মেম্বার পদপ্রার্থী কুদরত উল্লাহ সিকদার। পরে স্থানীয়রা গুরুতর আহত দুই সহোদরকে উদ্ধার করে কক্সবাজার জেলা সদর হাসপাতালে ভর্তি করে।

হাসপাতাল সূত্রে জানা গেছে, কুদরত উল্লাহ সিকদারের শরীরে ৭টি গুলিবিদ্ধ হয়েছে এবং তার হাতের ১টি আঙ্গুল বিচ্ছিন্ন হয়ে গেছে। গুলিবিদ্ধ জহিরুল ইসলাম সিকদার ও কুদরত উল্লাহ সিকদারের অবস্থার অবনতি হওয়ায় তাদের শুক্রবার রাত ১টার দিকে অ্যাম্বুলেন্সযোগে চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে প্রেরণ করা হয়েছে।

প্রত্যক্ষদর্শীরা জানান, সদরের লিংকরোডস্থ কুদরত সিকদারের অফিসে দুর্বৃত্তরা হঠাৎ এসে প্রথমে তাদের দুজনকে টার্গেট করে ককটেল নিক্ষেপ করে। এতে আশপাশের সাধারণ মানুষ সরে পড়ে। ওই সময় দুই ভাইকে ৩ রাউন্ড গুলি ছুড়ে দুর্বৃত্তরা। পরে আরও ২ রাউন্ড ফাঁকা গুলি ছুড়ে দুর্বৃত্তরা দ্রুত পালিয়ে যায়।

কক্সবাজার সদর থানার ওসি (তদন্ত) বিপুল কৃষ্ণ জানান, ঘটনায় জড়িত কাউকে শনাক্ত করা যায়নি। বিস্তারিত খোঁজখবর নেয়া হচ্ছে। জড়িতদের বিরুদ্ধে দ্রুত আইনগত ব্যবস্থা নেয়া হবে। উল্লেখ্য, ভোটের আগে এমন কিছু ঘটনার আশঙ্কা প্রকাশ করে কয়েকদিন আগে নির্বাচন কর্মকর্তাকে লিখিত অভিযোগ দিয়েছিলেন মেম্বার পদপ্রার্থী কুদরত উল্লাহ সিকদার। সুষ্ঠু নির্বাচন প্রক্রিয়া ভন্ডুল ও দুই প্রার্থীর মধ্যে বিরোধ লাগিয়ে দিতে তৃতীয় কোন পক্ষ এ ঘটনা করেছে কিনা, তদন্তের দাবি করেছে স্থানীয় বাসিন্দারা।

ঘটনার খবর পেয়ে জেলা সদর হাসপাতালে ছুটে যান কক্সবাজার সদর-রামু আসনের সংসদ সদস্য সাইমুম সরওয়ার কমল ও ভারপ্রাপ্ত পুলিশ সুপার মো রফিকুল ইসলাম।

গত কয়েকদিন আগে শহরে সুগন্ধা পয়েন্টে সাবেক ছাত্রলীগ নেতা মোনাফ সিকদারকে গুলি করে হত্যা চেষ্টা চালায়। এর আগে গত ১৭ আগস্ট প্রকাশ্য দিবালোকে চকরিয়া পূর্ব বড়ভেওলা ইউনিয়নে চেয়ারম্যান পদপ্রার্থী ও চট্টগ্রাম ওমরগণি এমইএস কলেজ ছাত্র সংসদের সমাজ কল্যাণ সম্পাদক, সাবেক ছাত্রলীগ নেতা নাছির উদ্দিন নোবেলকে খুন করা হয়।

এদিকে, কক্সবাজারের দ্বীপ উপজেলা মহেশখালীর কালারমার ছড়ায় আলাউদ্দিন (৩০) নামের এক ব্যক্তিকে কুপিয়ে হত্যা করা হয়েছে। এ খবর নিশ্চিত করেন মহশেখালী থানার ওসি আবদুল হাই।

শুক্রবার রাতে মহেশখালী উপজেলার কালারমার ছড়া ইউনিয়নের অফিসপাড়া এলাকায় এ ঘটনা ঘটেছে। নিহত আলাউদ্দিন একজন জলদস্যু। ২০১৯ সালে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর আহ্বানে সাড়া দিয়ে অস্ত্র জমা দিয়ে স্বাভাবিক জীবনে ফিরেছিলেন।

স্থানীয় সূত্রে জানা যায়, শুক্রবার রাতে একদল দুর্বৃত্ত গাড়ি থেকে নেমে এলোপাতাড়ি কুপিয়ে আলাউদ্দিনকে মারাত্মক আহত করে পালিয়ে যায়। পরে স্থানীয়রা আহত অবস্থায় আলাউদ্দিনকে উদ্ধার করে চকরিয়ার বদরখালী জেনারেল হাসপাতালে নিয়ে যায়। উন্নত চিকিৎসার জন্য চট্টগ্রাম মেডিকেল হাসপাতালে নিয়ে যাওয়ার পথে মারা যান আলাউদ্দিন।

এদিকে, তার মৃত্যুর খবর ছড়িয়ে পড়লে ইউনিয়নের ছামিরাঘোনা এলাকার একাধিক বাড়িতে লুটপাট ও অগ্নিসংযোগ করা হয়। খবর পেয়ে মহেশখালী থানা পুলিশ ও ফায়ার সার্ভিসের দুটি ইউনিট ঘটনাস্থলে গিয়ে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনে।

এর আগে গত ১৮ অক্টোবর ও কালারমার ছড়ায় আধিপত্য বিস্তার নিয়ে প্রতিপক্ষের গুলিতে খুন হন যুবলীগের সাবেক সহসভাপতি রুহুল কাদের রুবেল।

উল্লেখ্য, সম্প্রতি রোহিঙ্গা শিবিরে ঘটে যাওয়া ঘটনাসহ এ সব মিলিয়ে কক্সবাজারের আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি অবনতি হয়েছে বলে মনে করছেন সচেতন মহল।

রবিবার, ০৭ নভেম্বর ২০২১ , ২২ কার্তিক ১৪২৮ ৩০ রবিউল আউয়াল ১৪৪৩

কক্সবাজারে আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতির অবনতি

জসিম সিদ্দিকী, কক্সবাজার

পর্যটন নগরী কক্সবাজারে আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতির অবনতি হয়েছে। গত শুক্রবার এক রাতেই কক্সবাজারের মহেশখালী উপজেলার কালারমারছড়ায় এক জন নিহত ও কক্সবাজার সদরের লিংকরোড এলাকায় দুই আওয়ামী লীগ নেতা গুলিবিদ্ধ হয়েছেন।

শুক্রবার রাত ১০টার দিকে শহরতলীর লিংকরোডস্থ মেম্বার পদপ্রার্থী কুদরত উল্লাহ সিকদারের নিজস্ব কার্যালয়ে দুর্বৃত্তরা এলোপাতাড়ি গুলি করে পালিয়ে যায়। এর আগে একই রাতে মহেশখালীতে এলোপাতাড়ি কুপিয়ে হত্যা করা হয় আলাউদ্দিনকে।

গুলিবিদ্ধরা হলেন, কক্সবাজার জেলা শ্রমিক লীগের সভাপতি জহিরুল ইসলাম সিকদার ও তার ছোট ভাই ঝিলংজা ইউনিয়ন আওয়ামী লীগ সাধারণ সম্পাদক ও মেম্বার পদপ্রার্থী কুদরত উল্লাহ সিকদার। পরে স্থানীয়রা গুরুতর আহত দুই সহোদরকে উদ্ধার করে কক্সবাজার জেলা সদর হাসপাতালে ভর্তি করে।

হাসপাতাল সূত্রে জানা গেছে, কুদরত উল্লাহ সিকদারের শরীরে ৭টি গুলিবিদ্ধ হয়েছে এবং তার হাতের ১টি আঙ্গুল বিচ্ছিন্ন হয়ে গেছে। গুলিবিদ্ধ জহিরুল ইসলাম সিকদার ও কুদরত উল্লাহ সিকদারের অবস্থার অবনতি হওয়ায় তাদের শুক্রবার রাত ১টার দিকে অ্যাম্বুলেন্সযোগে চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে প্রেরণ করা হয়েছে।

প্রত্যক্ষদর্শীরা জানান, সদরের লিংকরোডস্থ কুদরত সিকদারের অফিসে দুর্বৃত্তরা হঠাৎ এসে প্রথমে তাদের দুজনকে টার্গেট করে ককটেল নিক্ষেপ করে। এতে আশপাশের সাধারণ মানুষ সরে পড়ে। ওই সময় দুই ভাইকে ৩ রাউন্ড গুলি ছুড়ে দুর্বৃত্তরা। পরে আরও ২ রাউন্ড ফাঁকা গুলি ছুড়ে দুর্বৃত্তরা দ্রুত পালিয়ে যায়।

কক্সবাজার সদর থানার ওসি (তদন্ত) বিপুল কৃষ্ণ জানান, ঘটনায় জড়িত কাউকে শনাক্ত করা যায়নি। বিস্তারিত খোঁজখবর নেয়া হচ্ছে। জড়িতদের বিরুদ্ধে দ্রুত আইনগত ব্যবস্থা নেয়া হবে। উল্লেখ্য, ভোটের আগে এমন কিছু ঘটনার আশঙ্কা প্রকাশ করে কয়েকদিন আগে নির্বাচন কর্মকর্তাকে লিখিত অভিযোগ দিয়েছিলেন মেম্বার পদপ্রার্থী কুদরত উল্লাহ সিকদার। সুষ্ঠু নির্বাচন প্রক্রিয়া ভন্ডুল ও দুই প্রার্থীর মধ্যে বিরোধ লাগিয়ে দিতে তৃতীয় কোন পক্ষ এ ঘটনা করেছে কিনা, তদন্তের দাবি করেছে স্থানীয় বাসিন্দারা।

ঘটনার খবর পেয়ে জেলা সদর হাসপাতালে ছুটে যান কক্সবাজার সদর-রামু আসনের সংসদ সদস্য সাইমুম সরওয়ার কমল ও ভারপ্রাপ্ত পুলিশ সুপার মো রফিকুল ইসলাম।

গত কয়েকদিন আগে শহরে সুগন্ধা পয়েন্টে সাবেক ছাত্রলীগ নেতা মোনাফ সিকদারকে গুলি করে হত্যা চেষ্টা চালায়। এর আগে গত ১৭ আগস্ট প্রকাশ্য দিবালোকে চকরিয়া পূর্ব বড়ভেওলা ইউনিয়নে চেয়ারম্যান পদপ্রার্থী ও চট্টগ্রাম ওমরগণি এমইএস কলেজ ছাত্র সংসদের সমাজ কল্যাণ সম্পাদক, সাবেক ছাত্রলীগ নেতা নাছির উদ্দিন নোবেলকে খুন করা হয়।

এদিকে, কক্সবাজারের দ্বীপ উপজেলা মহেশখালীর কালারমার ছড়ায় আলাউদ্দিন (৩০) নামের এক ব্যক্তিকে কুপিয়ে হত্যা করা হয়েছে। এ খবর নিশ্চিত করেন মহশেখালী থানার ওসি আবদুল হাই।

শুক্রবার রাতে মহেশখালী উপজেলার কালারমার ছড়া ইউনিয়নের অফিসপাড়া এলাকায় এ ঘটনা ঘটেছে। নিহত আলাউদ্দিন একজন জলদস্যু। ২০১৯ সালে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর আহ্বানে সাড়া দিয়ে অস্ত্র জমা দিয়ে স্বাভাবিক জীবনে ফিরেছিলেন।

স্থানীয় সূত্রে জানা যায়, শুক্রবার রাতে একদল দুর্বৃত্ত গাড়ি থেকে নেমে এলোপাতাড়ি কুপিয়ে আলাউদ্দিনকে মারাত্মক আহত করে পালিয়ে যায়। পরে স্থানীয়রা আহত অবস্থায় আলাউদ্দিনকে উদ্ধার করে চকরিয়ার বদরখালী জেনারেল হাসপাতালে নিয়ে যায়। উন্নত চিকিৎসার জন্য চট্টগ্রাম মেডিকেল হাসপাতালে নিয়ে যাওয়ার পথে মারা যান আলাউদ্দিন।

এদিকে, তার মৃত্যুর খবর ছড়িয়ে পড়লে ইউনিয়নের ছামিরাঘোনা এলাকার একাধিক বাড়িতে লুটপাট ও অগ্নিসংযোগ করা হয়। খবর পেয়ে মহেশখালী থানা পুলিশ ও ফায়ার সার্ভিসের দুটি ইউনিট ঘটনাস্থলে গিয়ে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনে।

এর আগে গত ১৮ অক্টোবর ও কালারমার ছড়ায় আধিপত্য বিস্তার নিয়ে প্রতিপক্ষের গুলিতে খুন হন যুবলীগের সাবেক সহসভাপতি রুহুল কাদের রুবেল।

উল্লেখ্য, সম্প্রতি রোহিঙ্গা শিবিরে ঘটে যাওয়া ঘটনাসহ এ সব মিলিয়ে কক্সবাজারের আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি অবনতি হয়েছে বলে মনে করছেন সচেতন মহল।