বিশ্ববাজারে তেলের দাম কমলে দেশেও কমবে : প্রতিমন্ত্রী

বিশ্ববাজারে জ্বালানি তেলের মূল্য হ্রাস পাওয়ার সঙ্গে সঙ্গে বাংলাদেশে এর প্রতিফলন ঘটবে বলে জানিয়েছেন বিদ্যুৎ-জ্বালানি ও খনিজসম্পদ প্রতিমন্ত্রী নসরুল হামিদ। জ্বালানি তেলের দাম বৃদ্ধি নিয়ে গতকাল গণমাধ্যমে পাঠানো এক প্রতিক্রিয়ায় সাংবাদিকদের এ কথা বলেন জ্বালানি প্রতিমন্ত্রী নসরুল হামিদ। মন্ত্রণালয়ের এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে এ তথ্য জানানো হয়েছে।

প্রতিমন্ত্রী বলেন, ২০১৬ সালেও জ্বালানি তেলের মূল্য কমানো হয়েছিল। জ্বালানি তেলের বৈশ্বিক মূল্য বৃদ্ধি ও পাচার রোধে মূল্য সমন্বয় করা হয়েছে। সার্বিক প্রেক্ষাপট বিবেচনা করে জাতীয় স্বার্থে সরকার ৪ নভেম্বর দেশে ডিজেল ও কেরোসিনের মূল্য পুনঃনির্ধারণ করেছে বলেও দাবি করেন তিনি।

নসরুল হামিদ বলেন, আশপাশের অন্যান্য দেশের তুলনায় বাংলাদেশে ডিজেলের মূল্য এখনও কম। গতকাল ভারতের কলকাতায় প্রতি লিটার ডিজেলের মূল্য ছিল ৮৯.৭৯ রুপি বা ১০৪ টাকা। প্রতিমন্ত্রী আরও বলেন, আমাদের ইলেকট্রিক যানবাহনের দিকে যেতে হবে। বিশেষ করে পাবলিক পরিবহনগুলো ইলেকট্রিক করা গেলে দেশে পরিবেশবান্ধব যানবাহন নিশ্চিত হবে। ইলেকট্রিক যানবাহনের ইঞ্জিনের দক্ষতাও বেশি, সাশ্রয়ীও। তেল আমদানি খরচও কমে যাবে।

এদিকে, শুক্রবার বিদ্যুৎ, জ্বালানি ও খনিজ সম্পদ মন্ত্রণালয় এক বিবৃতিতে জানায়, বিশ্ববাজারে জ্বালানি তেলের মূল্য বৃদ্ধির কারণে বিশ্বের অন্যান্য দেশ জ্বালানি তেলের মূল্য সমন্বয় করছে। বিবৃতিতে মন্ত্রণালয়ের পক্ষ থেকে বলা হয়, গত সাড়ে ৫ মাসে ডিজেলের ক্ষেত্রে বাংলাদেশ পেট্রোলিয়াম করপোরেশনের (বিপিসি) মোট ১ হাজার ১৪৭ কোটি ৬০ লাখ টাকা লোকসান হয়েছে।

‘বাংলাদেশ জনগণের ক্রয় ক্ষমতা বিবেচনায় রেখে সাশ্রয়ী মূল্যে জ্বালানি তেল সরবরাহ করতে বদ্ধপরিকর’ উল্লেখ করে মন্ত্রণালয় জানায়, সরকার ২০১৩ সালের জানুয়ারিতে দেশে ডিজেলের দাম লিটার প্রতি ৬৮ টাকা নির্ধারণ করেছিল। পরে ২০১৬ সালের এপ্রিলে ডিজেলের দাম লিটার প্রতি ৩ টাকা কমিয়ে ৬৫ টাকা নির্ধারণ করে। গত সাড়ে ৫ বছরে দেশে ডিজেল ও কেরোসিনের দাম অপরিবর্তিত ছিল এবং ইতোমধ্যে বিপিসি ১০ হাজার কোটি টাকা সরকারি কোষাগারে জমা দিয়েছে বলে জানায় মন্ত্রণালয়।

বিবৃতিতে বলা হয়, চলতি অর্থবছরের শুরু থেকে আন্তর্জাতিক বাজারে জ্বালানি তেলের দাম বৃদ্ধি পেতে থাকায় ডিজেলের দামে বিপিসি লোকসানের মুখোমুখি হয়। ডিজেলে লিটার প্রতি জুন মাসে ২ টাকা ৯৭ পয়সা, জুলাই মাসে ৩ টাকা ৭০ পয়সা, আগস্ট মাসে ১ টাকা ৫৮ পয়সা, সেপ্টেম্বর মাসে ৫ টাকা ৬২ পয়সা ও অক্টোবর মাসে ১৩ টাকা ১ পয়সা লোকসান হয় বিপিসির। সে হিসেবে গত সাড়ে ৫ মাসে ডিজেলের ক্ষেত্রে বিপিসির মোট লোকসানের পরিমাণ প্রায় ১ হাজার ১৪৭ কোটি ৬০ লাখ টাকা। সরকারকে ভর্তুকি দিয়ে এ টাকা সমন্বয় করতে হবে বলে জানায় মন্ত্রণালয়।

বিবৃতিতে আরও বলা হয়, জ্বালানি নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে প্রায় ৩৩ হাজার ৭৩৪ দশমিক ৭৮ কোটি টাকা ব্যয়ে বিভিন্ন উন্নয়ন প্রকল্প নিয়েছে বিপিসি। এ অবস্থায় বিপিসির লোকসান হলে এসব উন্নয়ন প্রকল্প বাস্তবায়ন বাধাগ্রস্ত হবে।

‘সার্বিক প্রেক্ষাপটে গত ৪ নভেম্বর সরকার দেশে ডিজেল ও কেরোসিনের দাম পুনর্নির্ধারণ করে’ উল্লেখ করে মন্ত্রণালয় জানায়, যদিও আশপাশের অন্যান্য দেশের তুলনায় বাংলাদেশে ডিজেলের মূল্য এখনও কম। গত ৩ নভেম্বর ভারতের কলকাতায় ডিজেলের মূল্য ছিল লিটার প্রতি ১০১ দশমিক ৫৩ রুপি বা ১২৪ টাকা ৩৭ পয়সা। তেলের ভেজালরোধে কেরোসিনের মূল্য ডিজেলের সমান রাখা হয়েছে। আন্তর্জাতিক বাজারে জ্বালানি তেলের মূল্য কমলে সরকার আবার ডিজেল ও কেরোসিনের মূল্য সমন্বয়ের উদ্যোগ নেবে।

রবিবার, ০৭ নভেম্বর ২০২১ , ২২ কার্তিক ১৪২৮ ৩০ রবিউল আউয়াল ১৪৪৩

বিশ্ববাজারে তেলের দাম কমলে দেশেও কমবে : প্রতিমন্ত্রী

নিজস্ব বার্তা পরিবেশক

বিশ্ববাজারে জ্বালানি তেলের মূল্য হ্রাস পাওয়ার সঙ্গে সঙ্গে বাংলাদেশে এর প্রতিফলন ঘটবে বলে জানিয়েছেন বিদ্যুৎ-জ্বালানি ও খনিজসম্পদ প্রতিমন্ত্রী নসরুল হামিদ। জ্বালানি তেলের দাম বৃদ্ধি নিয়ে গতকাল গণমাধ্যমে পাঠানো এক প্রতিক্রিয়ায় সাংবাদিকদের এ কথা বলেন জ্বালানি প্রতিমন্ত্রী নসরুল হামিদ। মন্ত্রণালয়ের এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে এ তথ্য জানানো হয়েছে।

প্রতিমন্ত্রী বলেন, ২০১৬ সালেও জ্বালানি তেলের মূল্য কমানো হয়েছিল। জ্বালানি তেলের বৈশ্বিক মূল্য বৃদ্ধি ও পাচার রোধে মূল্য সমন্বয় করা হয়েছে। সার্বিক প্রেক্ষাপট বিবেচনা করে জাতীয় স্বার্থে সরকার ৪ নভেম্বর দেশে ডিজেল ও কেরোসিনের মূল্য পুনঃনির্ধারণ করেছে বলেও দাবি করেন তিনি।

নসরুল হামিদ বলেন, আশপাশের অন্যান্য দেশের তুলনায় বাংলাদেশে ডিজেলের মূল্য এখনও কম। গতকাল ভারতের কলকাতায় প্রতি লিটার ডিজেলের মূল্য ছিল ৮৯.৭৯ রুপি বা ১০৪ টাকা। প্রতিমন্ত্রী আরও বলেন, আমাদের ইলেকট্রিক যানবাহনের দিকে যেতে হবে। বিশেষ করে পাবলিক পরিবহনগুলো ইলেকট্রিক করা গেলে দেশে পরিবেশবান্ধব যানবাহন নিশ্চিত হবে। ইলেকট্রিক যানবাহনের ইঞ্জিনের দক্ষতাও বেশি, সাশ্রয়ীও। তেল আমদানি খরচও কমে যাবে।

এদিকে, শুক্রবার বিদ্যুৎ, জ্বালানি ও খনিজ সম্পদ মন্ত্রণালয় এক বিবৃতিতে জানায়, বিশ্ববাজারে জ্বালানি তেলের মূল্য বৃদ্ধির কারণে বিশ্বের অন্যান্য দেশ জ্বালানি তেলের মূল্য সমন্বয় করছে। বিবৃতিতে মন্ত্রণালয়ের পক্ষ থেকে বলা হয়, গত সাড়ে ৫ মাসে ডিজেলের ক্ষেত্রে বাংলাদেশ পেট্রোলিয়াম করপোরেশনের (বিপিসি) মোট ১ হাজার ১৪৭ কোটি ৬০ লাখ টাকা লোকসান হয়েছে।

‘বাংলাদেশ জনগণের ক্রয় ক্ষমতা বিবেচনায় রেখে সাশ্রয়ী মূল্যে জ্বালানি তেল সরবরাহ করতে বদ্ধপরিকর’ উল্লেখ করে মন্ত্রণালয় জানায়, সরকার ২০১৩ সালের জানুয়ারিতে দেশে ডিজেলের দাম লিটার প্রতি ৬৮ টাকা নির্ধারণ করেছিল। পরে ২০১৬ সালের এপ্রিলে ডিজেলের দাম লিটার প্রতি ৩ টাকা কমিয়ে ৬৫ টাকা নির্ধারণ করে। গত সাড়ে ৫ বছরে দেশে ডিজেল ও কেরোসিনের দাম অপরিবর্তিত ছিল এবং ইতোমধ্যে বিপিসি ১০ হাজার কোটি টাকা সরকারি কোষাগারে জমা দিয়েছে বলে জানায় মন্ত্রণালয়।

বিবৃতিতে বলা হয়, চলতি অর্থবছরের শুরু থেকে আন্তর্জাতিক বাজারে জ্বালানি তেলের দাম বৃদ্ধি পেতে থাকায় ডিজেলের দামে বিপিসি লোকসানের মুখোমুখি হয়। ডিজেলে লিটার প্রতি জুন মাসে ২ টাকা ৯৭ পয়সা, জুলাই মাসে ৩ টাকা ৭০ পয়সা, আগস্ট মাসে ১ টাকা ৫৮ পয়সা, সেপ্টেম্বর মাসে ৫ টাকা ৬২ পয়সা ও অক্টোবর মাসে ১৩ টাকা ১ পয়সা লোকসান হয় বিপিসির। সে হিসেবে গত সাড়ে ৫ মাসে ডিজেলের ক্ষেত্রে বিপিসির মোট লোকসানের পরিমাণ প্রায় ১ হাজার ১৪৭ কোটি ৬০ লাখ টাকা। সরকারকে ভর্তুকি দিয়ে এ টাকা সমন্বয় করতে হবে বলে জানায় মন্ত্রণালয়।

বিবৃতিতে আরও বলা হয়, জ্বালানি নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে প্রায় ৩৩ হাজার ৭৩৪ দশমিক ৭৮ কোটি টাকা ব্যয়ে বিভিন্ন উন্নয়ন প্রকল্প নিয়েছে বিপিসি। এ অবস্থায় বিপিসির লোকসান হলে এসব উন্নয়ন প্রকল্প বাস্তবায়ন বাধাগ্রস্ত হবে।

‘সার্বিক প্রেক্ষাপটে গত ৪ নভেম্বর সরকার দেশে ডিজেল ও কেরোসিনের দাম পুনর্নির্ধারণ করে’ উল্লেখ করে মন্ত্রণালয় জানায়, যদিও আশপাশের অন্যান্য দেশের তুলনায় বাংলাদেশে ডিজেলের মূল্য এখনও কম। গত ৩ নভেম্বর ভারতের কলকাতায় ডিজেলের মূল্য ছিল লিটার প্রতি ১০১ দশমিক ৫৩ রুপি বা ১২৪ টাকা ৩৭ পয়সা। তেলের ভেজালরোধে কেরোসিনের মূল্য ডিজেলের সমান রাখা হয়েছে। আন্তর্জাতিক বাজারে জ্বালানি তেলের মূল্য কমলে সরকার আবার ডিজেল ও কেরোসিনের মূল্য সমন্বয়ের উদ্যোগ নেবে।