সাধারণ মানুষ না খেয়ে মরার পর্যায়ে চলে গেছে : ফখরুল

দ্রব্যমূল্যের ঊর্ধ্বগতি, জ্বালানি তেলের মূল্যবৃদ্ধি এবং দফায়, দফায় গ্যাস-বিদ্যুতের দাম বাড়ানোয় সাধারণ মানুষ না খেয়ে মরার পর্যায়ে চলে গেছে বলে মন্তব্য করেছেন বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর। গতকাল রাজধানী ডিপ্লোমা ইঞ্জিনিয়ার্স ইনস্টিটিউশন মিলনায়তনে বিএনপির প্রয়াত নেতা তরিকুল ইসলামের মৃত্যুবার্ষিকী উপলক্ষে আয়োজিত স্মরণসভায় সভাপতির বক্তব্যে তিনি এ মন্তব্য করেন।

এদিন, স্মরণসভায় মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর প্রধান অতিথির বক্তব্যকালে কর্মীরা নিজেদের মধ্যে বিশৃঙ্খলা শুরু করে। এ সময় তিনি কর্মীদের শান্ত করার চেষ্টা করেন। পরিস্থিতি শান্ত না হওয়ায় ক্ষুব্ধ হয়ে বক্তব্য বন্ধ করে ডায়েস ছেড়ে চলে যান। কিছু সময় পর পরিস্থিতি শান্ত হলে আবার বক্তব্য দেয়া শুরু করেন তিনি।

একই অনুষ্ঠানে বিএনপির ভাইস চেয়ারম্যান শামসুজ্জামান দুদু বক্তব্য দেয়ার সময়ও নিজেদের মধ্যে কথা কাটাকাটি ও ধাক্কাধাক্কি করেন কর্মীরা। তখন শামসুজ্জামান দুদু কর্মীদের শান্ত করেন। অনুষ্ঠান শেষে গেট দিয়ে বের হওয়ার সময়ও ধাক্কাধাক্কি করেন উপস্থিত নেতাকর্মীরা। এতে সভাস্থলের কাচের গেটের একটি অংশ ভেঙে যায়।

সভায় মির্জা ফখরুল বলেন, এই সরকার অত্যন্ত পরিকল্পিতভাবে বাংলাদেশকে অকার্যকর রাষ্ট্র বানানোর চেষ্টা করছে। তারা বাংলাদেশকে অকার্যকর রাষ্ট্রে পরিণত করবে, নতজানু রাষ্ট্রে পরিণত করবে- সেই লক্ষ্যেই তারা কাজ করে যাচ্ছে। এই যে এত কথা তারা বলে, ডেভেলপমেন্ট, উন্নয়ন, মেগা প্রজেক্ট- সবকিছুর মূলে ঋণ নিয়ে বাংলাদেশকে ঋণগ্রস্ত করে ফেলা, বাংলাদেশকে হাঁটুভাঙা একটা জাতিতে পরিণত করা।

তিনি বলেন, যখন আমি আসছি উত্তরা থেকে, দেখি বাস চলছে না, ট্রাকও চলছে না, মানুষ পায়ে হাঁটছে। মোটরসাইকেল বেশি চলছে। কারণটা কী, আপনারা সবাই জানেন যে, ডিজেল ও কেরোসিনের দাম হঠাৎ করেই লিটারে ১৫ টাকা করে বাড়ানো হয়েছে। মানুষ যাবে কোথায়? একদিকে জিনিসপত্রের দাম বাড়ছে হু হু করে, অন্যদিকে এখন বাড়িয়ে দিল জ্বালানির দাম। এখন তো নিত্যপণ্যের দাম আরও কয়েকগুণ বাড়বে। সাধারণ মানুষ কোথায় যাবে? সাধারণ মানুষের তো এখন না খেয়ে মৃত্যুবরণ করার মতো অবস্থায় চলে গেছে।

তিনি বলেন, যেহেতু দেশের মানুষ জেগে উঠতে শুরু করেছে, কথা বলতে শুরু করেছে, নিজেদের অধিকার আদায়ে কাজ করতে শুরু করেছে, ভোটের কথা বলছে, অধিকারের কথা বলছে, ভাতের অধিকারের কথা বলছে, স্বাস্থ্যের অধিকারের কথা বলছে, সুতরাং সেই খান থেকে জনগণের দৃষ্টি সরিয়ে দিতে হবে। সেই কাজ তারা শুরু করেছে বিভিন্ন রকম ইস্যু তৈরি করে।

মির্জা ফখরুল বলেন, আপনারা দেখুন ইউপি নির্বাচনে সাত মাসে ৮৪ জন মৃত্যুবরণ করেছে এবং সব তাদের লোক। তারা নিজেরা নিজেরা এখন মারামারি করে মরছে। কারণ, বিরোধী দল তো নাই। আজকে তারা লুট করে, মারামারি করে এবং মামলা দেয় বিএনপির বিরুদ্ধে। দুর্গাপূজার সময় কী করেছে। তারা নিজেরাই মণ্ডপ ভেঙে বিএনপি নেতাদের নাম উল্লেখ করে শত শত অজানা লোকের বিরুদ্ধে মামলা দিয়েছে। এখন যাকেই ধরে মামলায় ঢুকিয়ে দেয়। এটা তাদের পুরোনো স্টাইল।

আন্দোলনের কোন বিকল্প নেই মন্তব্য করে তিনি বলেন, একমাত্র পথ হচ্ছে এদের সরিয়ে দিয়ে জনগণের সরকার প্রতিষ্ঠা করা। আসুন আমরা সবাই ঐক্যবদ্ধ হই, রাজপথে নেমে আসি এবং আমাদের শক্তি দিয়ে, জনগণের শক্তি দিয়ে এই ভয়াবহ দানব সরকারকে পরাজিত করে সত্যিকার জনগণের রাষ্ট্র, জনগণের পার্লামেন্ট, জনগণের সরকার তৈরি করি।

মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেন, শুধু বাংলাদেশ নয়, এই পদ্মা, মেঘনা, যমুনা বিধৌত অঞ্চলে যেসব রাজনৈতিক নেতা মানুষের ভাগ্য পরিবর্তন করতে চেয়েছিলেন, দারিদ্র্য দূর করে, অশিক্ষা দূর করে একটা সুস্থ সমাজ গড়ে তুলবার জন্য নিজেদের জীবন উৎসর্গ করে গেছেন, সেই জাতের একজন মহান নেতা ছিলেন তরিকুল ইসলাম। তরিকুল ইসলাম সারাজীবন এই লক্ষ্যেই কাজ করেছেন যে, কী করে মানুষের ভাগ্যের পরিবর্তন করা যায়। সেই কারণে বাংলাদেশ সৃষ্টির আগে, মুক্তিযুদ্ধের আগে মওলানা ভাসানীর আদর্শ ধারণ করে তিনি রাজনীতি শুরু করেছিলেন।

মির্জা ফখরুল বলেন, যে সংকট চলছে, এই সংকটে তরিকুল ইসলাম আমাদের কাছে একটা বাতিঘর। তার দিকে তাকিয়ে আমরা যদি এগিয়ে যাই, নিজেদের ছোট-খাটো বিষয় নিয়ে দ্বন্দ্ব না করে ঐক্যবদ্ধ হয়ে সামনে দিকে এগিয়ে যাই, তাহলেই আমরা আমাদের লক্ষ্যে পৌঁছাতে পারব।

আরও খবর
শিক্ষক সংকট, মুখ থুবড়ে পড়েছে শিক্ষা ব্যবস্থা
ডিজেলের দাম বৃদ্ধির অজুহাতে পণ্যের দাম বাড়ছে : তথ্যমন্ত্রী
সচেতন হলে বজ্রপাতে মৃত্যুর সংখ্যা কমানো সম্ভব
জলবায়ুর ঝুঁকিপূর্ণ দেশগুলোর নৈতিক কন্ঠস্বর শেখ হাসিনা মোমেন
তেলের দাম বৃদ্ধিজনিত পরিস্থিতি পর্যবেক্ষণ করছেন প্রধানমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের
আমরা ধর্মঘট করিনি, আহ্বানও করিনি : রাঙ্গা
অন্যায়ের বিরুদ্ধে আন্দোলন চলছে, চলবে
ডিজেলের দাম বৃদ্ধির নিন্দা-প্রতিবাদ বিভিন্ন সংগঠন ও দলের প্রত্যাহার দাবি
প্রধানমন্ত্রী চান সম্প্রসারণ, শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের কর্মকর্তারা চান সংকোচন আইডিইবি নেতাদের অভিযোগ
সবার সমন্বিত উদ্যোগে সারাদেশে পুষ্টিসেবা কার্যক্রম বাস্তবায়ন সম্ভব সেব্রিনা ফ্লোরা
বদলে গেছে কৃষকের ভাগ্য

রবিবার, ০৭ নভেম্বর ২০২১ , ২২ কার্তিক ১৪২৮ ৩০ রবিউল আউয়াল ১৪৪৩

সাধারণ মানুষ না খেয়ে মরার পর্যায়ে চলে গেছে : ফখরুল

নিজস্ব বার্তা পরিবেশক

দ্রব্যমূল্যের ঊর্ধ্বগতি, জ্বালানি তেলের মূল্যবৃদ্ধি এবং দফায়, দফায় গ্যাস-বিদ্যুতের দাম বাড়ানোয় সাধারণ মানুষ না খেয়ে মরার পর্যায়ে চলে গেছে বলে মন্তব্য করেছেন বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর। গতকাল রাজধানী ডিপ্লোমা ইঞ্জিনিয়ার্স ইনস্টিটিউশন মিলনায়তনে বিএনপির প্রয়াত নেতা তরিকুল ইসলামের মৃত্যুবার্ষিকী উপলক্ষে আয়োজিত স্মরণসভায় সভাপতির বক্তব্যে তিনি এ মন্তব্য করেন।

এদিন, স্মরণসভায় মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর প্রধান অতিথির বক্তব্যকালে কর্মীরা নিজেদের মধ্যে বিশৃঙ্খলা শুরু করে। এ সময় তিনি কর্মীদের শান্ত করার চেষ্টা করেন। পরিস্থিতি শান্ত না হওয়ায় ক্ষুব্ধ হয়ে বক্তব্য বন্ধ করে ডায়েস ছেড়ে চলে যান। কিছু সময় পর পরিস্থিতি শান্ত হলে আবার বক্তব্য দেয়া শুরু করেন তিনি।

একই অনুষ্ঠানে বিএনপির ভাইস চেয়ারম্যান শামসুজ্জামান দুদু বক্তব্য দেয়ার সময়ও নিজেদের মধ্যে কথা কাটাকাটি ও ধাক্কাধাক্কি করেন কর্মীরা। তখন শামসুজ্জামান দুদু কর্মীদের শান্ত করেন। অনুষ্ঠান শেষে গেট দিয়ে বের হওয়ার সময়ও ধাক্কাধাক্কি করেন উপস্থিত নেতাকর্মীরা। এতে সভাস্থলের কাচের গেটের একটি অংশ ভেঙে যায়।

সভায় মির্জা ফখরুল বলেন, এই সরকার অত্যন্ত পরিকল্পিতভাবে বাংলাদেশকে অকার্যকর রাষ্ট্র বানানোর চেষ্টা করছে। তারা বাংলাদেশকে অকার্যকর রাষ্ট্রে পরিণত করবে, নতজানু রাষ্ট্রে পরিণত করবে- সেই লক্ষ্যেই তারা কাজ করে যাচ্ছে। এই যে এত কথা তারা বলে, ডেভেলপমেন্ট, উন্নয়ন, মেগা প্রজেক্ট- সবকিছুর মূলে ঋণ নিয়ে বাংলাদেশকে ঋণগ্রস্ত করে ফেলা, বাংলাদেশকে হাঁটুভাঙা একটা জাতিতে পরিণত করা।

তিনি বলেন, যখন আমি আসছি উত্তরা থেকে, দেখি বাস চলছে না, ট্রাকও চলছে না, মানুষ পায়ে হাঁটছে। মোটরসাইকেল বেশি চলছে। কারণটা কী, আপনারা সবাই জানেন যে, ডিজেল ও কেরোসিনের দাম হঠাৎ করেই লিটারে ১৫ টাকা করে বাড়ানো হয়েছে। মানুষ যাবে কোথায়? একদিকে জিনিসপত্রের দাম বাড়ছে হু হু করে, অন্যদিকে এখন বাড়িয়ে দিল জ্বালানির দাম। এখন তো নিত্যপণ্যের দাম আরও কয়েকগুণ বাড়বে। সাধারণ মানুষ কোথায় যাবে? সাধারণ মানুষের তো এখন না খেয়ে মৃত্যুবরণ করার মতো অবস্থায় চলে গেছে।

তিনি বলেন, যেহেতু দেশের মানুষ জেগে উঠতে শুরু করেছে, কথা বলতে শুরু করেছে, নিজেদের অধিকার আদায়ে কাজ করতে শুরু করেছে, ভোটের কথা বলছে, অধিকারের কথা বলছে, ভাতের অধিকারের কথা বলছে, স্বাস্থ্যের অধিকারের কথা বলছে, সুতরাং সেই খান থেকে জনগণের দৃষ্টি সরিয়ে দিতে হবে। সেই কাজ তারা শুরু করেছে বিভিন্ন রকম ইস্যু তৈরি করে।

মির্জা ফখরুল বলেন, আপনারা দেখুন ইউপি নির্বাচনে সাত মাসে ৮৪ জন মৃত্যুবরণ করেছে এবং সব তাদের লোক। তারা নিজেরা নিজেরা এখন মারামারি করে মরছে। কারণ, বিরোধী দল তো নাই। আজকে তারা লুট করে, মারামারি করে এবং মামলা দেয় বিএনপির বিরুদ্ধে। দুর্গাপূজার সময় কী করেছে। তারা নিজেরাই মণ্ডপ ভেঙে বিএনপি নেতাদের নাম উল্লেখ করে শত শত অজানা লোকের বিরুদ্ধে মামলা দিয়েছে। এখন যাকেই ধরে মামলায় ঢুকিয়ে দেয়। এটা তাদের পুরোনো স্টাইল।

আন্দোলনের কোন বিকল্প নেই মন্তব্য করে তিনি বলেন, একমাত্র পথ হচ্ছে এদের সরিয়ে দিয়ে জনগণের সরকার প্রতিষ্ঠা করা। আসুন আমরা সবাই ঐক্যবদ্ধ হই, রাজপথে নেমে আসি এবং আমাদের শক্তি দিয়ে, জনগণের শক্তি দিয়ে এই ভয়াবহ দানব সরকারকে পরাজিত করে সত্যিকার জনগণের রাষ্ট্র, জনগণের পার্লামেন্ট, জনগণের সরকার তৈরি করি।

মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেন, শুধু বাংলাদেশ নয়, এই পদ্মা, মেঘনা, যমুনা বিধৌত অঞ্চলে যেসব রাজনৈতিক নেতা মানুষের ভাগ্য পরিবর্তন করতে চেয়েছিলেন, দারিদ্র্য দূর করে, অশিক্ষা দূর করে একটা সুস্থ সমাজ গড়ে তুলবার জন্য নিজেদের জীবন উৎসর্গ করে গেছেন, সেই জাতের একজন মহান নেতা ছিলেন তরিকুল ইসলাম। তরিকুল ইসলাম সারাজীবন এই লক্ষ্যেই কাজ করেছেন যে, কী করে মানুষের ভাগ্যের পরিবর্তন করা যায়। সেই কারণে বাংলাদেশ সৃষ্টির আগে, মুক্তিযুদ্ধের আগে মওলানা ভাসানীর আদর্শ ধারণ করে তিনি রাজনীতি শুরু করেছিলেন।

মির্জা ফখরুল বলেন, যে সংকট চলছে, এই সংকটে তরিকুল ইসলাম আমাদের কাছে একটা বাতিঘর। তার দিকে তাকিয়ে আমরা যদি এগিয়ে যাই, নিজেদের ছোট-খাটো বিষয় নিয়ে দ্বন্দ্ব না করে ঐক্যবদ্ধ হয়ে সামনে দিকে এগিয়ে যাই, তাহলেই আমরা আমাদের লক্ষ্যে পৌঁছাতে পারব।