২০১৬ সালে গাইবান্ধায় আদিবাসীদের ওপর গুলি চলেছে। এখন মন্দিরে হামলা হচ্ছে। তেলের দাম বাড়ছে, খাদ্যের দাম বাড়ছে। অন্যায় আচরণের বিরুদ্ধে আন্দোলন চলছে। এই আন্দোলন সহজে থামবে না বলে মন্তব্য করেছেন গণস্বাস্থ্য কেন্দ্রের ট্রাস্টি ও ভাসানী অনুসারী পরিষদের সভাপতি ডা. জাফরুল্লাহ চৌধুরী।
গতকাল সাহেবগঞ্জ-বাগদাফার্ম ভূমি উদ্ধার সংহতি কমিটি ঢাকার পক্ষ থেকে সাঁওতাল হত্যা দিবস উপলক্ষে রাজধানীর কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারে আয়োজিত প্রতিবাদ সমাবেশে প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এ মন্তব্য করেন।
ব্যারিস্টার জ্যোতির্ময় বড়ুয়ার সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত সভায় বক্তব্য রাখেন গণসংহতি আন্দোলনের প্রধান সমন্বয়ক জোনায়েদ সাকি, রাষ্ট্র সংস্কার আন্দোলনের সদস্য সচিব অ্যাডভোকেট হাসনাত কাইয়ুম, ইউনাইটেড কমিউনিস্ট লীগ কেন্দ্রীয় কমিটির সাধারণ সম্পাদক মোশাররফ হোসেন নান্নুসহ সাহেবগঞ্জ-বাগদাফার্ম ভূমি উদ্ধার সংহতি কমিটির বিভিন্ন স্তরের নেতাকর্মীরা।
সমাবেশে ডা. জাফরুল্লাহ চৌধুরী বলেন, ২০১৬ সালে গুলিতে যারা নিহত ও আহত হয়েছেন তাদের পরিবারকে ক্ষতিপূরণ দিতে হবে। ওই এলাকার আন্দোলনরত সব নাগরিককে বিশেষ চিকিৎসা সুবিধা দেয়ার ঘোষণাও দেন তিনি।
অনুষ্ঠানে অর্থনীতিবিদ অধ্যাপক আনু মুহাম্মদের লিখিত সংহতি বক্তব্য পাঠ করেন শিল্পী বীথি ঘোষ। অনুষ্ঠান পরিচালনা করেন ভূমি উদ্ধার সংহতি কমিটির অন্যতম সদস্য জাকিয়া শিশির। সমাবেশে ভাসানী অনুসারী পরিষদের প্রেসিডিয়াম সদস্য নঈম জাহাঙ্গীর বলেন, সরকারের সঙ্গে চুক্তি এবং আইনানুযায়ী আদিবাসীদের জমি ফেরত দিতে হবে।
রাষ্ট্র সংস্কার আন্দোলনের সমন্বয়ক অ্যাডভোকেট হাসনাত কাইয়ূম বলেন, গত ৫০ বছর ধরে সরকারগুলো একটা কাজ করার চেষ্টা করে যাচ্ছে তা হলো মুসলমানদের হিন্দুদের বিরুদ্ধে, বাঙালিদের আদিবাসীদের বিরুদ্ধে, পাহাড়কে সমতলের বিরুদ্ধে বিভাজিত করার চক্রান্ত করছে। এই বিভাজনের বিরুদ্ধে আদিবাসী-বাঙালি একসঙ্গে মিলে তাদের ভূমি-জমি অধিকার আদায়ের জন্য লড়াই করছে। ঐক্যের দৃষ্টান্ত দেখাচ্ছে।
মোশাররফ হোসেন নান্নু বলেন, এই সরকারের উন্নয়ন হচ্ছে অধিকারহীন মানুষের ওপর ঝাঁপিয়ে পড়া।
গণসংহতি আন্দোলনের প্রধান সমন্বয়কারী জোনায়েদ সাকি বলেন, গাইবান্ধার সাহেবগঞ্জ-বাগদাফার্মের মানুষরা যে দাবি এখানে তুলে ধরেছেন তাতে এই সরকারের লজ্জা পাওয়া উচিত। এই রাষ্ট্রের লজ্জা পাওয়া উচিত- বিশেষ করে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার লজ্জা পাওয়া উচিত। একদিকে উন্নয়নের বুলি, অসাম্প্রদায়িক বাংলাদেশের জন্য মাঠ গরম করা, অন্যদিকে পাহাড়ে জমি দখল করে আদিবাসীদের উচ্ছেদ করে রিসোর্ট হোটেল বানাবে, কোথাও ইকোনমিক জোন করবে। তিনি বাগদাফার্ম এলাকার জনগণের জমি সসম্মানে ফেরত দেয়ার জোর দাবি জানান।
গোবিন্দগঞ্জের আদিবাসী বার্নাবাস টুডো বলেন, এতো উন্নয়নের কথা শুনি, কিন্তু দেখি না তো উন্নয়ন! যারা লুটেরা খালি তাদেরই উন্নয়ন হচ্ছে। গরিবরা আরও গরিব হচ্ছে। আমাদের জমি ফেরত না দিয়ে ভাওতাবাজি দেখানো হচ্ছে।
আদিবাসী নারীনেতা মেনা হেমব্রং বলেন, আমরা আমাদের জমি থেকে কোথাও যাব না। আদিবাসীদের কোন মূল্যান করা হয় না। এখনও পুলিশ আমাদের হয়রানি করে চলেছে। আমাদের বাচ্চারা ভয়ে নানার বাড়িতে থাকে। এমন তো আমরা কখনও চাইনি। আমরা নিজের জমি চাই, শান্তি চাই।
সভাপতির বক্তব্যে ব্যারিস্টার জ্যোতির্ময় বড়ুয়া দাবি তুলে বলেন, গাইবান্ধার সাহেবগঞ্জ-বাগদাফার্মের মানুষদের তাদের পৈত্রিক ভূমি নিঃশর্তে ফেরত দিতে হবে। সকল মিথ্যা মামলা প্রত্যাহার করতে হবে। পাঁচ বছর পূর্বে আন্দোলনে শহীদ শ্যামল হেমব্রম, মঙ্গল মার্ডি ও রমেশ টুডুর হত্যার অতিসত্বর বিচার হতে হবে এবং এর সঙ্গে সঙ্গে তিনি ওখানকার বসতিতে অগ্নিসংযোগ, লুটপাটের ঘটনার বিচার দাবি করেন। বিশেষ ইকোনমিক জোন (ইপিজেড) স্থাপন উদ্যোগ বন্ধ ও আদিবাসীদের ভূমি থেকে উচ্ছেদের চক্রান্ত বন্ধের দাবি জানান। ভূমির অধিকার ফিরে না পাওয়া পর্যন্ত আন্দোলন অব্যাহত থাকবে বলে তিনি জানান।
গতকাল কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারে সাঁওতাল হত্যা দিবসে সাহেবগঞ্জ-বাগদাফার্ম ভূমি উদ্ধার সংহতি কমিটির প্রতিবাদ সমাবেশ -সংবাদ
আরও খবররবিবার, ০৭ নভেম্বর ২০২১ , ২২ কার্তিক ১৪২৮ ৩০ রবিউল আউয়াল ১৪৪৩
নিজস্ব বার্তা পরিবেশক
গতকাল কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারে সাঁওতাল হত্যা দিবসে সাহেবগঞ্জ-বাগদাফার্ম ভূমি উদ্ধার সংহতি কমিটির প্রতিবাদ সমাবেশ -সংবাদ
২০১৬ সালে গাইবান্ধায় আদিবাসীদের ওপর গুলি চলেছে। এখন মন্দিরে হামলা হচ্ছে। তেলের দাম বাড়ছে, খাদ্যের দাম বাড়ছে। অন্যায় আচরণের বিরুদ্ধে আন্দোলন চলছে। এই আন্দোলন সহজে থামবে না বলে মন্তব্য করেছেন গণস্বাস্থ্য কেন্দ্রের ট্রাস্টি ও ভাসানী অনুসারী পরিষদের সভাপতি ডা. জাফরুল্লাহ চৌধুরী।
গতকাল সাহেবগঞ্জ-বাগদাফার্ম ভূমি উদ্ধার সংহতি কমিটি ঢাকার পক্ষ থেকে সাঁওতাল হত্যা দিবস উপলক্ষে রাজধানীর কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারে আয়োজিত প্রতিবাদ সমাবেশে প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এ মন্তব্য করেন।
ব্যারিস্টার জ্যোতির্ময় বড়ুয়ার সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত সভায় বক্তব্য রাখেন গণসংহতি আন্দোলনের প্রধান সমন্বয়ক জোনায়েদ সাকি, রাষ্ট্র সংস্কার আন্দোলনের সদস্য সচিব অ্যাডভোকেট হাসনাত কাইয়ুম, ইউনাইটেড কমিউনিস্ট লীগ কেন্দ্রীয় কমিটির সাধারণ সম্পাদক মোশাররফ হোসেন নান্নুসহ সাহেবগঞ্জ-বাগদাফার্ম ভূমি উদ্ধার সংহতি কমিটির বিভিন্ন স্তরের নেতাকর্মীরা।
সমাবেশে ডা. জাফরুল্লাহ চৌধুরী বলেন, ২০১৬ সালে গুলিতে যারা নিহত ও আহত হয়েছেন তাদের পরিবারকে ক্ষতিপূরণ দিতে হবে। ওই এলাকার আন্দোলনরত সব নাগরিককে বিশেষ চিকিৎসা সুবিধা দেয়ার ঘোষণাও দেন তিনি।
অনুষ্ঠানে অর্থনীতিবিদ অধ্যাপক আনু মুহাম্মদের লিখিত সংহতি বক্তব্য পাঠ করেন শিল্পী বীথি ঘোষ। অনুষ্ঠান পরিচালনা করেন ভূমি উদ্ধার সংহতি কমিটির অন্যতম সদস্য জাকিয়া শিশির। সমাবেশে ভাসানী অনুসারী পরিষদের প্রেসিডিয়াম সদস্য নঈম জাহাঙ্গীর বলেন, সরকারের সঙ্গে চুক্তি এবং আইনানুযায়ী আদিবাসীদের জমি ফেরত দিতে হবে।
রাষ্ট্র সংস্কার আন্দোলনের সমন্বয়ক অ্যাডভোকেট হাসনাত কাইয়ূম বলেন, গত ৫০ বছর ধরে সরকারগুলো একটা কাজ করার চেষ্টা করে যাচ্ছে তা হলো মুসলমানদের হিন্দুদের বিরুদ্ধে, বাঙালিদের আদিবাসীদের বিরুদ্ধে, পাহাড়কে সমতলের বিরুদ্ধে বিভাজিত করার চক্রান্ত করছে। এই বিভাজনের বিরুদ্ধে আদিবাসী-বাঙালি একসঙ্গে মিলে তাদের ভূমি-জমি অধিকার আদায়ের জন্য লড়াই করছে। ঐক্যের দৃষ্টান্ত দেখাচ্ছে।
মোশাররফ হোসেন নান্নু বলেন, এই সরকারের উন্নয়ন হচ্ছে অধিকারহীন মানুষের ওপর ঝাঁপিয়ে পড়া।
গণসংহতি আন্দোলনের প্রধান সমন্বয়কারী জোনায়েদ সাকি বলেন, গাইবান্ধার সাহেবগঞ্জ-বাগদাফার্মের মানুষরা যে দাবি এখানে তুলে ধরেছেন তাতে এই সরকারের লজ্জা পাওয়া উচিত। এই রাষ্ট্রের লজ্জা পাওয়া উচিত- বিশেষ করে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার লজ্জা পাওয়া উচিত। একদিকে উন্নয়নের বুলি, অসাম্প্রদায়িক বাংলাদেশের জন্য মাঠ গরম করা, অন্যদিকে পাহাড়ে জমি দখল করে আদিবাসীদের উচ্ছেদ করে রিসোর্ট হোটেল বানাবে, কোথাও ইকোনমিক জোন করবে। তিনি বাগদাফার্ম এলাকার জনগণের জমি সসম্মানে ফেরত দেয়ার জোর দাবি জানান।
গোবিন্দগঞ্জের আদিবাসী বার্নাবাস টুডো বলেন, এতো উন্নয়নের কথা শুনি, কিন্তু দেখি না তো উন্নয়ন! যারা লুটেরা খালি তাদেরই উন্নয়ন হচ্ছে। গরিবরা আরও গরিব হচ্ছে। আমাদের জমি ফেরত না দিয়ে ভাওতাবাজি দেখানো হচ্ছে।
আদিবাসী নারীনেতা মেনা হেমব্রং বলেন, আমরা আমাদের জমি থেকে কোথাও যাব না। আদিবাসীদের কোন মূল্যান করা হয় না। এখনও পুলিশ আমাদের হয়রানি করে চলেছে। আমাদের বাচ্চারা ভয়ে নানার বাড়িতে থাকে। এমন তো আমরা কখনও চাইনি। আমরা নিজের জমি চাই, শান্তি চাই।
সভাপতির বক্তব্যে ব্যারিস্টার জ্যোতির্ময় বড়ুয়া দাবি তুলে বলেন, গাইবান্ধার সাহেবগঞ্জ-বাগদাফার্মের মানুষদের তাদের পৈত্রিক ভূমি নিঃশর্তে ফেরত দিতে হবে। সকল মিথ্যা মামলা প্রত্যাহার করতে হবে। পাঁচ বছর পূর্বে আন্দোলনে শহীদ শ্যামল হেমব্রম, মঙ্গল মার্ডি ও রমেশ টুডুর হত্যার অতিসত্বর বিচার হতে হবে এবং এর সঙ্গে সঙ্গে তিনি ওখানকার বসতিতে অগ্নিসংযোগ, লুটপাটের ঘটনার বিচার দাবি করেন। বিশেষ ইকোনমিক জোন (ইপিজেড) স্থাপন উদ্যোগ বন্ধ ও আদিবাসীদের ভূমি থেকে উচ্ছেদের চক্রান্ত বন্ধের দাবি জানান। ভূমির অধিকার ফিরে না পাওয়া পর্যন্ত আন্দোলন অব্যাহত থাকবে বলে তিনি জানান।