ডিজেলের দাম বৃদ্ধির নিন্দা-প্রতিবাদ বিভিন্ন সংগঠন ও দলের প্রত্যাহার দাবি

আন্তর্জাতিক বাজারে দাম বৃদ্ধি ও তেল পাচারের অযুহাতে ডিজেল ও কেরোসিনের মূল্য বৃদ্ধির সিদ্ধান্তের তীব্র নিন্দা ও প্রতিবাদ জানিয়েছে বিভিন্ন সংগঠন ও রাজনৈতিক দল। এ সময় দফায় দফায় এলপিজি গ্যাস ও টিসিবির পণ্যের দাম বাড়ায় প্রতিবাদ জানানো হয়েছে। অবিলম্বে ডিজেল, কেরোসিন ও এলপিজি গ্যাসের বর্ধিত মূল্য প্রত্যাহারের জন্য সরকারের কাছে দাবি জানিয়েছে সংগঠনগুলো। তারা বলেন, সরকার বিভিন্ন পর্যায়ে শুল্কের ১৭ টাকা কমালে মূল্য বৃদ্ধির কোন দরকার নেই বরং কমানো সম্ভব।

বাংলাদেশের কমিউনিস্ট পার্টি (মার্কসবাদী-সিপিবি) ডিজেল, কেরোসিনসহ সব জ্বালানি তেলের দাম কমানোর দাবি জানিয়ে। গতকাল জাতীয় প্রেসক্লাবের সামনে আয়োজিত এক মানববন্ধন থেকে এসব দাবি জানানো হয়। মানববন্ধনে বক্তারা বলেন, সরকার অযাচিতভাবে ডিজেল, কেরোসিন ও সিলিন্ডার গ্যাসের দাম বাড়িয়েছে। ফলে এখন বাসভাড়া বাড়বে, বর্তমানে বাজারে সব ধরনের দ্রব্যমূল্য জনগণের ক্রয়ক্ষমতার বাইরে চলে গেছে। করোনা মহামারীতে জনগণ কোনরকমে খেয়ে না খেয়ে জীবনধারণ করছে। সরকার সেদিকে দৃষ্টি না দিয়ে আবারও কেরোসিন ও সিলিন্ডার গ্যাসের দাম বাড়িয়েছে। এ সরকার জনগণের কথা চিন্তা করে না। ভোটারবিহীন এ সরকার জনগণের দায়িত্ব নিতে পারছে না। এ সরকার মুনাফাখোর, লুটেরা শ্রেণীর সরকার। এ সরকার ব্যবসায়ীদের স্বার্থ দেখে, জনগণের স্বার্থ দেখে না।

মানববন্ধনে উপস্থিত ছিলেন- বাংলাদেশের কমিউনিস্ট পার্টি (মার্কসবাদী) সিপিবির সভাপতি ডা. এম. এ সামাদ, যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক তালেবুল ইসলাম, কেন্দ্রীয় সদস্য কমরেড মোস্তফা আল খালিদ, বীর মুক্তিযোদ্ধা সামসুল হক সরকার প্রমুখ।

ডিজেল, কেরোসিন, এলপি গ্যাস ও টিসিবি পণ্যের বর্ধিত মূল্য কমানোর দাবিতে গতকাল সমাবেশ ও মিছিল করেছে বাংলাদেশের সমাজতান্ত্রিক দল (বাসদ)। সমাবেশ শেষে একটি বিক্ষোভ মিছিল পল্টন, মুক্তাঙ্গন, জিরো পয়েন্ট, গুলিস্তান, বঙ্গবন্ধু এভিনিউ, বায়তুল মোকাররম হয়ে বিজয়নগর, সেগুনবাগিচা এলাকা প্রদক্ষিণ করে।

সমাবেশে সভাপতিত্ব করেন বাসদ ঢাকা মহানগর আহ্বায়ক কমরেড বজলুর রশীদ ফিরোজ। সমাবেশে বক্তারা বলেন, পাশের দেশে তেল পাচার ও আন্তর্জাতিক বাজারে মূল্য বৃদ্ধির অজুহাত দেখিয়ে মূল্য বৃদ্ধির ঘোষণা সম্পূর্ণ অযৌক্তিক। সরকার বিভিন্ন পর্যায়ে শুল্ক ১৭ টাকা কমালে মূল্য বৃদ্ধির কোন দরকার নেই। সরকারি শুল্ক ও অন্যান্য খরচ কমালে দাম না বাড়িয়ে বরং কমানো সম্ভব।

তারা বলেন, আন্তর্জাতিক বাজারে মূল্য বৃদ্ধির অজুহাত দেখিয়ে এখন সরকার লস করছে সেই কথা বলছে। কিন্তু গত ৭ বছর আন্তর্জাতিক বাজারে দাম কম থাকার পরও দেশে দাম না কমিয়ে সরকার ৪০ হাজার কোটি টাকার বেশি মুনাফা করেছে। এই মুনাফার একটা অংশ এখন ভর্তুকি হিসেবে দিলেও দাম বাড়ানোর প্রয়োজন হতো না। তেল পাচারের অজুহাতও ভুয়া। কারণ তেল পকেটে করে পাচার করা যায় না। তাহলে জনগণের ট্যাক্সের টাকায় বেতন নেয়া পুলিশ, বিজিবি কেন পাচার রোধ করতে পারে না? বক্তারা আরও বলেন, ডিজেল, কেরোসিন ও ফার্নেস অয়েলের মূল্যবৃদ্ধির অভিঘাত দেশের ১৭ কোটি মানুষের ওপর পড়বে। কারণ ডিজেলের ওপর আমাদের কৃষি, পরিবহন, শিল্প ও বিদ্যুৎ উৎপাদন নির্ভরশীল।

বিএনপির নেতৃত্বাধীন ২০ দলীয় জোটের শরিক দল এলডিপির একাংশের সভাপতি আবদুল করিম আব্বাসী ও মহাসচিব শাহাদাত হোসেন সেলিম এক বিবৃতিতে ডিজেল, কেরোসিন ও এলপিজি গ্যাসের মূল্য বৃদ্ধির সিদ্ধান্তের তীব্র নিন্দা ও প্রতিবাদ জানান। তারা বলেন, ডিজেল-কেরোসিন ও এলপিজি গ্যাসের দাম বাড়ানোর ফলে কৃষি উৎপাদনে সেচ খরচ বাড়বে। ইতোমধ্যে গণপরিবহন ও লঞ্চ মালিকরা ধর্মঘটের নামে জনগণকে জিম্মি করে ফেলেছে বলে মন্তব্য করেন তারা।

বাংলাদেশ ট্রেড ইউনিয়ন কেন্দ্রের (টিইউসি) সভাপতি সহিদুল্লাহ চৌধুরী ও সাধারণ সম্পাদক ডা. ওয়াজেদুল ইসলাম খান এক বিবৃতিতে ডিজেল, কেরোসিন ও এলপিজি গ্যাসের মূল্য বৃদ্ধির সিদ্ধান্তের তীব্র নিন্দা ও প্রতিবাদ জানান। অবিলম্বে ডিজেল, কেরোসিন ও এলপিজি গ্যাসের বর্ধিত মূল্য প্রত্যাহারের জন্য সরকারের কাছে দাবি জানিয়েছে সংগঠনের নেতারা।

এদিকে, ইমরাত নির্মাণ শ্রমিক ইউনিয়ন বাংলাদেশের (ইনসাব) সভাপতি মো. রবিউল ইসলাম ও সাধারণ সম্পাদক মো. আবদুর রাজ্জাক এক বিবৃতিতে সরকারের ডিজেল ও কেরোসিনের মূল্য বৃদ্ধির সিদ্ধান্তে ক্ষোভ প্রকাশ করেন। অবিলম্বে বর্ধিত মূল্য প্রত্যাহারের দাবি জানান তারা।

গণতন্ত্রী পার্টির কেন্দ্রীয় কমিটির এক সভা থেকে সার, ডিজেল, কেরোসিন, পেট্রোল ও এলজিপি গ্যাসসহ নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্যের দাম বৃদ্ধিতে গভীর উদ্বেগ প্রকাশ করে দাম কমানোর জন্য সরকারের প্রতি আহ্বান জানানো হয়। সভার সভাপতিত্ব করেন ব্যারিস্টার আরশ আলী।

আরও খবর
শিক্ষক সংকট, মুখ থুবড়ে পড়েছে শিক্ষা ব্যবস্থা
ডিজেলের দাম বৃদ্ধির অজুহাতে পণ্যের দাম বাড়ছে : তথ্যমন্ত্রী
সচেতন হলে বজ্রপাতে মৃত্যুর সংখ্যা কমানো সম্ভব
জলবায়ুর ঝুঁকিপূর্ণ দেশগুলোর নৈতিক কন্ঠস্বর শেখ হাসিনা মোমেন
তেলের দাম বৃদ্ধিজনিত পরিস্থিতি পর্যবেক্ষণ করছেন প্রধানমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের
সাধারণ মানুষ না খেয়ে মরার পর্যায়ে চলে গেছে : ফখরুল
আমরা ধর্মঘট করিনি, আহ্বানও করিনি : রাঙ্গা
অন্যায়ের বিরুদ্ধে আন্দোলন চলছে, চলবে
প্রধানমন্ত্রী চান সম্প্রসারণ, শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের কর্মকর্তারা চান সংকোচন আইডিইবি নেতাদের অভিযোগ
সবার সমন্বিত উদ্যোগে সারাদেশে পুষ্টিসেবা কার্যক্রম বাস্তবায়ন সম্ভব সেব্রিনা ফ্লোরা
বদলে গেছে কৃষকের ভাগ্য

রবিবার, ০৭ নভেম্বর ২০২১ , ২২ কার্তিক ১৪২৮ ৩০ রবিউল আউয়াল ১৪৪৩

ডিজেলের দাম বৃদ্ধির নিন্দা-প্রতিবাদ বিভিন্ন সংগঠন ও দলের প্রত্যাহার দাবি

নিজস্ব বার্তা পরিবেশক

আন্তর্জাতিক বাজারে দাম বৃদ্ধি ও তেল পাচারের অযুহাতে ডিজেল ও কেরোসিনের মূল্য বৃদ্ধির সিদ্ধান্তের তীব্র নিন্দা ও প্রতিবাদ জানিয়েছে বিভিন্ন সংগঠন ও রাজনৈতিক দল। এ সময় দফায় দফায় এলপিজি গ্যাস ও টিসিবির পণ্যের দাম বাড়ায় প্রতিবাদ জানানো হয়েছে। অবিলম্বে ডিজেল, কেরোসিন ও এলপিজি গ্যাসের বর্ধিত মূল্য প্রত্যাহারের জন্য সরকারের কাছে দাবি জানিয়েছে সংগঠনগুলো। তারা বলেন, সরকার বিভিন্ন পর্যায়ে শুল্কের ১৭ টাকা কমালে মূল্য বৃদ্ধির কোন দরকার নেই বরং কমানো সম্ভব।

বাংলাদেশের কমিউনিস্ট পার্টি (মার্কসবাদী-সিপিবি) ডিজেল, কেরোসিনসহ সব জ্বালানি তেলের দাম কমানোর দাবি জানিয়ে। গতকাল জাতীয় প্রেসক্লাবের সামনে আয়োজিত এক মানববন্ধন থেকে এসব দাবি জানানো হয়। মানববন্ধনে বক্তারা বলেন, সরকার অযাচিতভাবে ডিজেল, কেরোসিন ও সিলিন্ডার গ্যাসের দাম বাড়িয়েছে। ফলে এখন বাসভাড়া বাড়বে, বর্তমানে বাজারে সব ধরনের দ্রব্যমূল্য জনগণের ক্রয়ক্ষমতার বাইরে চলে গেছে। করোনা মহামারীতে জনগণ কোনরকমে খেয়ে না খেয়ে জীবনধারণ করছে। সরকার সেদিকে দৃষ্টি না দিয়ে আবারও কেরোসিন ও সিলিন্ডার গ্যাসের দাম বাড়িয়েছে। এ সরকার জনগণের কথা চিন্তা করে না। ভোটারবিহীন এ সরকার জনগণের দায়িত্ব নিতে পারছে না। এ সরকার মুনাফাখোর, লুটেরা শ্রেণীর সরকার। এ সরকার ব্যবসায়ীদের স্বার্থ দেখে, জনগণের স্বার্থ দেখে না।

মানববন্ধনে উপস্থিত ছিলেন- বাংলাদেশের কমিউনিস্ট পার্টি (মার্কসবাদী) সিপিবির সভাপতি ডা. এম. এ সামাদ, যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক তালেবুল ইসলাম, কেন্দ্রীয় সদস্য কমরেড মোস্তফা আল খালিদ, বীর মুক্তিযোদ্ধা সামসুল হক সরকার প্রমুখ।

ডিজেল, কেরোসিন, এলপি গ্যাস ও টিসিবি পণ্যের বর্ধিত মূল্য কমানোর দাবিতে গতকাল সমাবেশ ও মিছিল করেছে বাংলাদেশের সমাজতান্ত্রিক দল (বাসদ)। সমাবেশ শেষে একটি বিক্ষোভ মিছিল পল্টন, মুক্তাঙ্গন, জিরো পয়েন্ট, গুলিস্তান, বঙ্গবন্ধু এভিনিউ, বায়তুল মোকাররম হয়ে বিজয়নগর, সেগুনবাগিচা এলাকা প্রদক্ষিণ করে।

সমাবেশে সভাপতিত্ব করেন বাসদ ঢাকা মহানগর আহ্বায়ক কমরেড বজলুর রশীদ ফিরোজ। সমাবেশে বক্তারা বলেন, পাশের দেশে তেল পাচার ও আন্তর্জাতিক বাজারে মূল্য বৃদ্ধির অজুহাত দেখিয়ে মূল্য বৃদ্ধির ঘোষণা সম্পূর্ণ অযৌক্তিক। সরকার বিভিন্ন পর্যায়ে শুল্ক ১৭ টাকা কমালে মূল্য বৃদ্ধির কোন দরকার নেই। সরকারি শুল্ক ও অন্যান্য খরচ কমালে দাম না বাড়িয়ে বরং কমানো সম্ভব।

তারা বলেন, আন্তর্জাতিক বাজারে মূল্য বৃদ্ধির অজুহাত দেখিয়ে এখন সরকার লস করছে সেই কথা বলছে। কিন্তু গত ৭ বছর আন্তর্জাতিক বাজারে দাম কম থাকার পরও দেশে দাম না কমিয়ে সরকার ৪০ হাজার কোটি টাকার বেশি মুনাফা করেছে। এই মুনাফার একটা অংশ এখন ভর্তুকি হিসেবে দিলেও দাম বাড়ানোর প্রয়োজন হতো না। তেল পাচারের অজুহাতও ভুয়া। কারণ তেল পকেটে করে পাচার করা যায় না। তাহলে জনগণের ট্যাক্সের টাকায় বেতন নেয়া পুলিশ, বিজিবি কেন পাচার রোধ করতে পারে না? বক্তারা আরও বলেন, ডিজেল, কেরোসিন ও ফার্নেস অয়েলের মূল্যবৃদ্ধির অভিঘাত দেশের ১৭ কোটি মানুষের ওপর পড়বে। কারণ ডিজেলের ওপর আমাদের কৃষি, পরিবহন, শিল্প ও বিদ্যুৎ উৎপাদন নির্ভরশীল।

বিএনপির নেতৃত্বাধীন ২০ দলীয় জোটের শরিক দল এলডিপির একাংশের সভাপতি আবদুল করিম আব্বাসী ও মহাসচিব শাহাদাত হোসেন সেলিম এক বিবৃতিতে ডিজেল, কেরোসিন ও এলপিজি গ্যাসের মূল্য বৃদ্ধির সিদ্ধান্তের তীব্র নিন্দা ও প্রতিবাদ জানান। তারা বলেন, ডিজেল-কেরোসিন ও এলপিজি গ্যাসের দাম বাড়ানোর ফলে কৃষি উৎপাদনে সেচ খরচ বাড়বে। ইতোমধ্যে গণপরিবহন ও লঞ্চ মালিকরা ধর্মঘটের নামে জনগণকে জিম্মি করে ফেলেছে বলে মন্তব্য করেন তারা।

বাংলাদেশ ট্রেড ইউনিয়ন কেন্দ্রের (টিইউসি) সভাপতি সহিদুল্লাহ চৌধুরী ও সাধারণ সম্পাদক ডা. ওয়াজেদুল ইসলাম খান এক বিবৃতিতে ডিজেল, কেরোসিন ও এলপিজি গ্যাসের মূল্য বৃদ্ধির সিদ্ধান্তের তীব্র নিন্দা ও প্রতিবাদ জানান। অবিলম্বে ডিজেল, কেরোসিন ও এলপিজি গ্যাসের বর্ধিত মূল্য প্রত্যাহারের জন্য সরকারের কাছে দাবি জানিয়েছে সংগঠনের নেতারা।

এদিকে, ইমরাত নির্মাণ শ্রমিক ইউনিয়ন বাংলাদেশের (ইনসাব) সভাপতি মো. রবিউল ইসলাম ও সাধারণ সম্পাদক মো. আবদুর রাজ্জাক এক বিবৃতিতে সরকারের ডিজেল ও কেরোসিনের মূল্য বৃদ্ধির সিদ্ধান্তে ক্ষোভ প্রকাশ করেন। অবিলম্বে বর্ধিত মূল্য প্রত্যাহারের দাবি জানান তারা।

গণতন্ত্রী পার্টির কেন্দ্রীয় কমিটির এক সভা থেকে সার, ডিজেল, কেরোসিন, পেট্রোল ও এলজিপি গ্যাসসহ নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্যের দাম বৃদ্ধিতে গভীর উদ্বেগ প্রকাশ করে দাম কমানোর জন্য সরকারের প্রতি আহ্বান জানানো হয়। সভার সভাপতিত্ব করেন ব্যারিস্টার আরশ আলী।