রাজশাহীর বাঘা উপজেলায় হলুদ চাষ করে বদলে যাচ্ছে কৃষকের ভাগ্য। উপজেলার সমতল ও চরাঞ্চল এলাকায় এ বছর ব্যাপক হলুদের চাষাবাদ হয়েছে। হলুদকে কেন্দ্র করে উপজেলার বিভিন্ন এলাকায় গড়ে উঠেছে বড় বড় প্রক্রিয়াজাতকরণ চাতাল। উপজেলার আড়ানীতে গড়ে উঠেছে সবেচেয়ে বেশি সংখ্যক চাতাল। এই এলাকায় গড়ে ওঠা শতাধিক চাতালে হলুদ প্রক্রিয়াজাতকরণের জন্য কাজ করছেন শত শত কৃষক-কৃষাণী। উপজেলার বিভিন্ন এলাকা সরেজমিনে ঘুরে দেখা গেছে, পতিত ও বাড়ির আশপাশের আবাদি জমিতে অন্যান্য ফসলের পাশাপাশি এ বছর ব্যাপকভাবে হলুদ চাষ করেছেন কৃষকরা।
কৃষকদের দেয়া তথ্যমতে, বিগত বছরগুলোয় হলুদ আবাদ করে ব্যাপক লাভবান হয়েছেন তারা। তাই পূর্বের চেয়েও বেশি জমিতে হলুদ চাষাবাদ করেছেন। শুরু হয়েছে হলুদ উত্তোলন। চলছে হলুদ সিদ্ধ, শুকানো ও অন্যান্য প্রক্রিয়াজাতকরণের কাজ ।
কৃষক ও সংশ্লিষ্টদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, হলুদ চাষে স্বল্প সময়ে কম পরিশ্রমেই বেশি লাভবান হওয়া যায়। কীটনাশকের তেমন একটা প্রয়োজন হয় না। এ কারণে অনেক কৃষকই আমবাগান ও পতিত জমিতে হলুদ চাষে ঝুঁকছেন।
উপজেলার পদ্মার চরাঞ্চলের কৃষক বাবলু দেওয়ান জানান, তিনি বিগত সময়ে চরের মাটিতে কখনই হলুদের চাষবাদ করেননি। কিন্তু গত বছর হলুদ আবাদিরা বাম্পার ফলন ও ব্যাপক দাম পাওয়ায় তিনি হলুদ চাষে আগ্রহী হয়েছেন। এবার প্রায় বিঘা দুয়েক উঁচু জমিতে হলুদ আবাদ করেছেন তিনি।
উপজেলার বাউসা গ্রামের একটি আম বাগানে হলুদ চাষ করেছেন উদ্যোমী যুবক আবদুল ওহাব। শিক্ষকতার পাশাপাশি তিনি চাষাবাদও করেন। তিনি বলেন, এ বছর প্রায় তিন বিঘা জমিতে হলুদ চাষ করেছি। এর মধ্যে এক বিঘা আম বাগানে হলুদ লাগিয়েছি। সাধনা ও শ্রম দিয়ে চাষাবাদ করলে যে কোন আবাদে সাবলম্বী হওয়া সম্ভব।
এই অঞ্চলের আবহাওয়া ও বড়াল নদীর কারণে হলুদ চাষে ব্যাপক লাভবান হয়েছে কৃষকরা। তাই আমের মতো রাজশাহীর বাঘা উপজেলার আড়ানীর হলুদ বিদেশে রপ্তানি করার পরিকল্পনা হাতে নেয়া হয়েছে। বৃহস্পতিবার বিষয়টি নিশ্চিত করেন উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা শফিউল্লাহ সুলতান।
সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে, উপজেলায় পাবনায়, গাঙ্গীয়া, সোনামুখী, ডিমলা বারী-১ প্রভৃতি জাতের হলুদ চাষ হয়। গাঙ্গীয়া জাতের হলুদ ভালো ফলন হয়। এই জাতের হলুদ আকারে মোটা এবং রং অন্যান্য হলুদের তুলনায় ভালো। প্রতি বিঘা জমিতে ৪৫ থেকে ৫০ মণ উৎপাদন হয়। হলুদ চাষে জৈবসার ব্যবহারে খরচ খুব কম হয়। বিঘা প্রতি সার ও বীজসহ খরচ হয় প্রায় আট থেকে ১০ হাজার টাকা। এক বিঘা জমির কাঁচা হলুদ প্রায় ৪৫ থেকে ৫০ হাজার টাকায় বিক্রি হয়।
বাগানের ছায়াযুক্ত জমিতে হলুদ চাষ ভালো হয়। এক সঙ্গে ফল ও হলুদ দুটো পাওয়া যায়। সরকারিভাবে বীজ সংরক্ষণের ব্যবস্থা গ্রহণ করা হলে আগামীতে অনেক চাষি হলুদ চাষ করতে আগ্রহী হবে।
এ বিষয়ে আড়ানীর হলুদ ব্যবসায়ী একরামুল হক সনত বলেন, এ এলাকার হলুদের সুনাম দেশব্যাপী রয়েছে। প্রতি সপ্তাহে শনি ও মঙ্গলবার হাটে হলুদ কিনে ঢাকা, চট্টগ্রাম, ময়মনসিংহ, বরিশাল, খুলনাসহ বিভিন্ন জায়গাতে নিয়ে যায়। বর্তমানে ৪০ কেজি শুকনা হলুদ সাড়ে তিন হাজার টাকা থেকে সাড়ে ৬ হাজার টাকায় বিক্রি হচ্ছে।
উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা শফিউল্লাহ সুলতান বলেন, উপজেলার পাশ দিয়ে বড়াল নদী বয়ে যাওয়ায় জমিতে বৃষ্টির পানি জমে থাকে না। উঁচু ও ছায়াযুক্ত জমিতে হলুদের ফলন ভালো হয়। উপজেলার হলুদ আমের মতো বিদেশে রপ্তানি করার পরিকল্পনা হাতে নেয়া হয়েছে।
উপজেলায় সাড়ে ৬০০ হেক্টর জমিতে হলুদের চাষ হয়েছে। লক্ষ্যমাত্রা ৮ হাজার ৩০০ মেট্রিক টন। এ বছর উৎপাদনের লক্ষ্য মাত্রা ধরা হয়েছে সাড়ে ১০ হাজার মেট্রিক টন।
রবিবার, ০৭ নভেম্বর ২০২১ , ২২ কার্তিক ১৪২৮ ৩০ রবিউল আউয়াল ১৪৪৩
জেলা বার্তা পরিবেশ, রাজশাহী
রাজশাহীর বাঘা উপজেলায় হলুদ চাষ করে বদলে যাচ্ছে কৃষকের ভাগ্য। উপজেলার সমতল ও চরাঞ্চল এলাকায় এ বছর ব্যাপক হলুদের চাষাবাদ হয়েছে। হলুদকে কেন্দ্র করে উপজেলার বিভিন্ন এলাকায় গড়ে উঠেছে বড় বড় প্রক্রিয়াজাতকরণ চাতাল। উপজেলার আড়ানীতে গড়ে উঠেছে সবেচেয়ে বেশি সংখ্যক চাতাল। এই এলাকায় গড়ে ওঠা শতাধিক চাতালে হলুদ প্রক্রিয়াজাতকরণের জন্য কাজ করছেন শত শত কৃষক-কৃষাণী। উপজেলার বিভিন্ন এলাকা সরেজমিনে ঘুরে দেখা গেছে, পতিত ও বাড়ির আশপাশের আবাদি জমিতে অন্যান্য ফসলের পাশাপাশি এ বছর ব্যাপকভাবে হলুদ চাষ করেছেন কৃষকরা।
কৃষকদের দেয়া তথ্যমতে, বিগত বছরগুলোয় হলুদ আবাদ করে ব্যাপক লাভবান হয়েছেন তারা। তাই পূর্বের চেয়েও বেশি জমিতে হলুদ চাষাবাদ করেছেন। শুরু হয়েছে হলুদ উত্তোলন। চলছে হলুদ সিদ্ধ, শুকানো ও অন্যান্য প্রক্রিয়াজাতকরণের কাজ ।
কৃষক ও সংশ্লিষ্টদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, হলুদ চাষে স্বল্প সময়ে কম পরিশ্রমেই বেশি লাভবান হওয়া যায়। কীটনাশকের তেমন একটা প্রয়োজন হয় না। এ কারণে অনেক কৃষকই আমবাগান ও পতিত জমিতে হলুদ চাষে ঝুঁকছেন।
উপজেলার পদ্মার চরাঞ্চলের কৃষক বাবলু দেওয়ান জানান, তিনি বিগত সময়ে চরের মাটিতে কখনই হলুদের চাষবাদ করেননি। কিন্তু গত বছর হলুদ আবাদিরা বাম্পার ফলন ও ব্যাপক দাম পাওয়ায় তিনি হলুদ চাষে আগ্রহী হয়েছেন। এবার প্রায় বিঘা দুয়েক উঁচু জমিতে হলুদ আবাদ করেছেন তিনি।
উপজেলার বাউসা গ্রামের একটি আম বাগানে হলুদ চাষ করেছেন উদ্যোমী যুবক আবদুল ওহাব। শিক্ষকতার পাশাপাশি তিনি চাষাবাদও করেন। তিনি বলেন, এ বছর প্রায় তিন বিঘা জমিতে হলুদ চাষ করেছি। এর মধ্যে এক বিঘা আম বাগানে হলুদ লাগিয়েছি। সাধনা ও শ্রম দিয়ে চাষাবাদ করলে যে কোন আবাদে সাবলম্বী হওয়া সম্ভব।
এই অঞ্চলের আবহাওয়া ও বড়াল নদীর কারণে হলুদ চাষে ব্যাপক লাভবান হয়েছে কৃষকরা। তাই আমের মতো রাজশাহীর বাঘা উপজেলার আড়ানীর হলুদ বিদেশে রপ্তানি করার পরিকল্পনা হাতে নেয়া হয়েছে। বৃহস্পতিবার বিষয়টি নিশ্চিত করেন উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা শফিউল্লাহ সুলতান।
সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে, উপজেলায় পাবনায়, গাঙ্গীয়া, সোনামুখী, ডিমলা বারী-১ প্রভৃতি জাতের হলুদ চাষ হয়। গাঙ্গীয়া জাতের হলুদ ভালো ফলন হয়। এই জাতের হলুদ আকারে মোটা এবং রং অন্যান্য হলুদের তুলনায় ভালো। প্রতি বিঘা জমিতে ৪৫ থেকে ৫০ মণ উৎপাদন হয়। হলুদ চাষে জৈবসার ব্যবহারে খরচ খুব কম হয়। বিঘা প্রতি সার ও বীজসহ খরচ হয় প্রায় আট থেকে ১০ হাজার টাকা। এক বিঘা জমির কাঁচা হলুদ প্রায় ৪৫ থেকে ৫০ হাজার টাকায় বিক্রি হয়।
বাগানের ছায়াযুক্ত জমিতে হলুদ চাষ ভালো হয়। এক সঙ্গে ফল ও হলুদ দুটো পাওয়া যায়। সরকারিভাবে বীজ সংরক্ষণের ব্যবস্থা গ্রহণ করা হলে আগামীতে অনেক চাষি হলুদ চাষ করতে আগ্রহী হবে।
এ বিষয়ে আড়ানীর হলুদ ব্যবসায়ী একরামুল হক সনত বলেন, এ এলাকার হলুদের সুনাম দেশব্যাপী রয়েছে। প্রতি সপ্তাহে শনি ও মঙ্গলবার হাটে হলুদ কিনে ঢাকা, চট্টগ্রাম, ময়মনসিংহ, বরিশাল, খুলনাসহ বিভিন্ন জায়গাতে নিয়ে যায়। বর্তমানে ৪০ কেজি শুকনা হলুদ সাড়ে তিন হাজার টাকা থেকে সাড়ে ৬ হাজার টাকায় বিক্রি হচ্ছে।
উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা শফিউল্লাহ সুলতান বলেন, উপজেলার পাশ দিয়ে বড়াল নদী বয়ে যাওয়ায় জমিতে বৃষ্টির পানি জমে থাকে না। উঁচু ও ছায়াযুক্ত জমিতে হলুদের ফলন ভালো হয়। উপজেলার হলুদ আমের মতো বিদেশে রপ্তানি করার পরিকল্পনা হাতে নেয়া হয়েছে।
উপজেলায় সাড়ে ৬০০ হেক্টর জমিতে হলুদের চাষ হয়েছে। লক্ষ্যমাত্রা ৮ হাজার ৩০০ মেট্রিক টন। এ বছর উৎপাদনের লক্ষ্য মাত্রা ধরা হয়েছে সাড়ে ১০ হাজার মেট্রিক টন।