গ্যাস সংকট নিয়ে এখনই ভাবতে হবে

এসএম জাহাঙ্গীর আলম

এই বাংলার মাটির ও পানির (সমুদ্রে) নিচে রয়েছে গ্যাস ও তেলের মজুত, যা ব্রিটিশরা অনুমান করতে পারে। তৎকালীন সময়ে (ইংরেজ শাসনামলে) খনিজসম্পদ তেল ও গ্যাস সন্ধানের কারণে পূর্ববাংলা (বর্তমান বাংলাদেশে) ও আসাম (তৎকালীন সিলেটের অন্তর্ভুক্ত ছিল) বিশ্বের সর্বপ্রথম পেট্রোলিয়াম উৎপাদনকারীর প্রতিষ্ঠান ‘ইন্দো-বাংলা’ পেট্রোলিয়াম কোম্পানি আজকের এই বাংলাদেশে ১৯০৮ থেকে ১৯১৪ সালের মধ্যে সর্বপ্রথম খনিজ তেলের কূপ খনন করে চট্টগ্রামে। ১৯৫৫ সালে বার্মা খনিজ তেল কোম্পানি এবং পাকিস্তান পেট্রোলিয়াম আশির দশকের সাতটি গ্যাস ক্ষেত্রের সন্ধান পায়। ১৯৫৫ সালে সিলেটের হরিপুরে বার্মাওয়েল কোম্পানি গ্যাস ক্ষেত্র আবিষ্কার করে যেটি প্রাথমিক মজুত পাওয়া যায় শূন্য দশমিক ৪৪৪ টিএফসি, ১৯৫৯ সালে একই কোম্পানি সুনামগঞ্জের ছাতকে গ্যাস ক্ষেত্র আবিষ্কার করে, যেটিতে উত্তোলনযোগ্য মজুত পাওয়া যায় ১ দশমিক ৯০০ টিএফসি। ১৯৬০ থেকে পাকিস্তান অয়েল কোম্পানি রশিদপুর, কৈলাটিলা, তিতাস, হবিগঞ্জ, বাখরাবাদ গ্যাস ক্ষেত্র আবিষ্কার ও গ্যাস উৎপাদনে যায়। ১৯৬৯ সালে ওজিডিসি আবিষ্কার করে সেমুতাং গ্যাস ক্ষেত্র। ১৯৭৭ সালে ইউনিয়ন অয়েল কোম্পানি আবিষ্কার করে কতুবদিয়া গ্যাস ক্ষেত্র।

বাংলাদেশ স্বাধীন হওয়ার পর জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের নেতৃত্বে বাংলাদেশ সরকার ১৯৭৪ সালে বাংলাদেশ পেট্রোলিয়াম আইন পাস করে। এরপর আন্তর্জাতিক কোম্পানিগুলোকে আমন্ত্রণ জানায় তেল-গ্যাস অনুসন্ধানের জন্য। এতে করে বাংলাদেশের সাতটি অংশে ছয়টি আন্তর্জাতিক তেল কোম্পানি তেল-গ্যাস অনুসন্ধানে অংশ নেয়। ১৯৭৮ সালে কোম্পানিগুলো যান্ত্রিক ও রাজনৈতিক অস্থিতিশীলতার কারণে চলে যায়। তাদের মূল লক্ষ্য ছিল তেল। কিন্তু তেলে বদলে গ্যাসের সন্ধান মেলে। তবে আন্তর্জাতিক কোম্পানিগুলো গ্যাস অনুসন্ধানে আগ্রহী হয়। ১৯৯৮ সালে শেল, কেয়ার্ন এসার্জি ও সান্তোস এই তিন কোম্পানি সমুদ্রে গ্যাস অনুসন্ধান শুরু করে। শুরু হয় বাংলাদেশ সরকারের গঠিত ‘পেট্রোবাংলা’ কাজ। সেই থেকে পেট্রোবাংলার অধীনস্ত অধীনস্ত কোম্পানিগুলো তেল-গ্যাস অনুসন্ধান, উত্তোলন ও বিতরণের কাজ চালিয়ে যাচ্ছে।

গ্যাস ছাড়া কোনো উন্নয়নের কথা চিন্তাই করা যায় না। শিল্প, বিদ্যুৎ, গৃহস্থালিসহ অনেক খাতেই গ্যাসের ব্যবহার। বাংলাদেশের প্রধান জ্বালানি খাত হলো গ্যাস। যদিও প্রতিবেশি ভারত, চীন, রাশিয়াসহ অনেক দেশেই কয়লা আছে প্রচুর পরিমাণ আর সেটাই সেসব দেশের প্রধান জ্বালানির উৎস। আমাদের দেশে কয়লা থাকলেও তা পরিমাণে কম। যে যাই হউক। গ্যাসের চাহিদা আমাদের দেশে দিন দিন বাড়ছেই। অপরদিকে ফুরিয়ে আসছে গ্যাসের মজুত। শিল্প ও বিদ্যুৎ খাতের উন্নয়নের সঙ্গে সঙ্গে গ্যাসের চাহিদা বেড়েই চলছে। বিদ্যুৎ, জ্বালানি ও খনিজ সম্পদ প্রতিমন্ত্রী জাতীয় সংসদে বলেছেন, আগামী ২০৩০ সালে উত্তোলনযোগ্য গ্যাসের মজুত ফুরিয়ে যাবে। যদি তাই হয় এরপর কি হবে? দেশে বর্তমানে গ্যাস সংকট লেগেই আছে।

সংকট মোকাবিলায় সরকার গত ২০১৮ সাল থেকে তরলীকৃত প্রাকৃতিক গ্যাস (এলএনজি) আমদানি শুরু করে। বেশি দামে গ্যাস কিনে কম দামে বিক্রি করতে হচ্ছে। আর লোকসান কমাতে গ্যাসের বাড়িয়ে দেয়া হচ্ছে। বর্তমানে পেট্রোবাংলা ও বেসরকারি প্রতিষ্ঠান সামিটের দুটি ভাসমান এলএনজি টার্মিনালের দৈনিক ৫০ কোটি করে মোট ১০০ কোটি ঘনফুট গ্যাস সরবরাহ করার সক্ষমতা আছে। প্রশ্ন হচ্ছে যে এলএনজি আমদানি করে কত দিন চলবে বা সরকার কত লোকসান গুনবে? বর্তমানে দৈনিক গ্যাসের চাহিদা প্রায় সাড়ে ৪০০ কোটি ঘন ফুট, আর সরবরাহ হচ্ছে ৩১০ কোটি ঘনফুট। হয়তো কিছু কম-বেশি হতে পারে। গ্যাসের মজুত নিয়ে নানা রকম কথা শুনা যায়। গত ২০২০ সালে জাতীয় সংসদে বিদ্যৎ, জ্বালানি ও খনিজ সম্পদ প্রতিমন্ত্রী বলেছিনে যে, বর্তমানে গ্যাসের উত্তোলন যোগ্য মুজত ১২ দশমিক ৫৪ ট্রিলিয়ন ঘনফুট (টিসিএফ)। আবার জ্বালানি সম্পর্কিত বিশেষজ্ঞরা বলছেন, ১২ ট্রিলিয়ন মজুত আছে। প্রতিমন্ত্রী এও বলেছেন যে, বর্তমান মজুত ২০৩০ সালে শেষ হয়ে যাবে।

১৯৮৯ সাল থেকে রাষ্ট্রীয় প্রতিষ্ঠান বাপেক্স কাজ শুরু করে। এই প্রতিষ্ঠানিক দক্ষতার সঙ্গে কাজ চালিয়ে যাচ্ছে। প্রতিষ্ঠানটি ২০০৯ সাল থেকে এ পর্যন্ত ৪ হাজার বর্গকিলোমিটার এলাকায় দ্বিমাত্রিক ও ত্রিমাত্রিক জরিপ করেছে বলে জানা যায়। ২ হাজার ৭০০ কিলোমিটা ত্রিমাত্রিক জরিপ চালাতে গিয়ে প্রতি কিলোমিটারে খরচ হয়েছে ৮ লাখ ৬৬ হাজার টাকা। বাপেক্স ৬টি ও ২৪টি কূপ থেকে গ্যাস উত্তোলন করে সরবরাহ করছে। অভিযোগ আছে যে, বাপেক্সের আবিষ্কৃত গ্যাস ক্ষেত্র বিদেশি কোম্পানির হাতে তুলে দেয়া হচ্ছে। এনিয়ে তাদের মধ্যে হতাশাও দেখা দিয়েছে। উল্লেখ্য-বাপেক্স প্রতিষ্ঠার পর থেকে এ পর্যন্ত ১২টি অনুসন্ধান কূপ খনন করে ৭টি ক্ষেত্রে আবিষ্কার করে।

আমাদের রয়েছে বিশাল সমুদ্রে এলাকা। বঙ্গোপসাগরের অগভীর অংশে ১১টি আর গভীর সমুদ্রে ব্লক ১৫টি। ভারত ও মায়ানমারের সঙ্গে বাংলাদেশের সমুদ্র সীমা নিষ্পত্তি হলেও সমুদ্রে গ্যাসক্ষেত্র অনুসন্ধ্যান চালানো হয়নি বলে অভিযোগ রয়েছে। ধারণা করা হচ্ছে যে সমুদ্রে যথেষ্ট গ্যাস আছে। ১৯৯৬ সালে অগভীর সমুদ্রের ৯ নং ব্লকে সাঙ্গু গ্যাসক্ষেত্র আবিষ্কার করে কেয়ার্নস এনার্জি। ১৯৯৮ সালে গ্যাস উত্তোলন শুরু করে। দুই বছর পর মজুত ফুরিয়ে যাওয়ার কথা বলে এই কোম্পানি ক্ষেত্রটি পরিত্যক্ত ঘোষণা করে। কুতুবদিয়া সাগরতীরে গ্যাসের সন্ধান পাওয়া গেলেও এখনও বাণিজ্যিকভাবে উত্তোলনে যাচ্ছে না। মায়ানমার ও ভারতের সঙ্গে সমুদ্র সীমা নিয়ে বিরোধ থাকলেও আন্তর্জাতিক আদালতের রায়ে বাংলাদেশ প্রায় এক লাখ ৩৮ হাজার ২৮৯ বর্গকিলোমিটার সমুদ্র অঞ্চল বাংলাদেশের অধিকার প্রতিষ্ঠিত হয়। সে যাই হোক, বাংলাদেশের সমুদ্র অঞ্চলে প্রচুর তেল-গ্যাস পাওয়া সম্ভাবনা আছে বলে জ্বালানি বিশেষজ্ঞরা মনে করেন। ভারত-মায়ানমার তো গ্যাস উত্তোলন করছে। আমাদেরও এ বিষয়টি গুরুত্ব সহকারে নিয়ে উদ্যোগী হতে হবে বলে আমি মনে করি। তবে এখানেই শেষ নয়, বিদ্যুৎ, জ্বালানি ও খনিজ সম্পদ প্রতিমন্ত্রী বলেছেন যে আগামী ২০৩০ সালে উত্তোলনযোগ্য গ্যাসের মজুত শেষ হবে যাবে। এরপর কী হবে? কাজেই এখনই বিষয়টি মাথায় নিয়ে সরকারকে উদ্যোগী হতে হবে। গ্যাস সংকটে পড়লে দেশে, শিল্প, বাণিজ্য, বিদ্যুৎ, গৃহস্থালি সবই মুখ থুবরে পড়বে।

[লেখক : সাবেক কর কর্মকর্তা, পরিচালক; বাংলাদেশ স্যাটেলাইট কো. লি.]

রবিবার, ০৭ নভেম্বর ২০২১ , ২২ কার্তিক ১৪২৮ ৩০ রবিউল আউয়াল ১৪৪৩

গ্যাস সংকট নিয়ে এখনই ভাবতে হবে

এসএম জাহাঙ্গীর আলম

এই বাংলার মাটির ও পানির (সমুদ্রে) নিচে রয়েছে গ্যাস ও তেলের মজুত, যা ব্রিটিশরা অনুমান করতে পারে। তৎকালীন সময়ে (ইংরেজ শাসনামলে) খনিজসম্পদ তেল ও গ্যাস সন্ধানের কারণে পূর্ববাংলা (বর্তমান বাংলাদেশে) ও আসাম (তৎকালীন সিলেটের অন্তর্ভুক্ত ছিল) বিশ্বের সর্বপ্রথম পেট্রোলিয়াম উৎপাদনকারীর প্রতিষ্ঠান ‘ইন্দো-বাংলা’ পেট্রোলিয়াম কোম্পানি আজকের এই বাংলাদেশে ১৯০৮ থেকে ১৯১৪ সালের মধ্যে সর্বপ্রথম খনিজ তেলের কূপ খনন করে চট্টগ্রামে। ১৯৫৫ সালে বার্মা খনিজ তেল কোম্পানি এবং পাকিস্তান পেট্রোলিয়াম আশির দশকের সাতটি গ্যাস ক্ষেত্রের সন্ধান পায়। ১৯৫৫ সালে সিলেটের হরিপুরে বার্মাওয়েল কোম্পানি গ্যাস ক্ষেত্র আবিষ্কার করে যেটি প্রাথমিক মজুত পাওয়া যায় শূন্য দশমিক ৪৪৪ টিএফসি, ১৯৫৯ সালে একই কোম্পানি সুনামগঞ্জের ছাতকে গ্যাস ক্ষেত্র আবিষ্কার করে, যেটিতে উত্তোলনযোগ্য মজুত পাওয়া যায় ১ দশমিক ৯০০ টিএফসি। ১৯৬০ থেকে পাকিস্তান অয়েল কোম্পানি রশিদপুর, কৈলাটিলা, তিতাস, হবিগঞ্জ, বাখরাবাদ গ্যাস ক্ষেত্র আবিষ্কার ও গ্যাস উৎপাদনে যায়। ১৯৬৯ সালে ওজিডিসি আবিষ্কার করে সেমুতাং গ্যাস ক্ষেত্র। ১৯৭৭ সালে ইউনিয়ন অয়েল কোম্পানি আবিষ্কার করে কতুবদিয়া গ্যাস ক্ষেত্র।

বাংলাদেশ স্বাধীন হওয়ার পর জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের নেতৃত্বে বাংলাদেশ সরকার ১৯৭৪ সালে বাংলাদেশ পেট্রোলিয়াম আইন পাস করে। এরপর আন্তর্জাতিক কোম্পানিগুলোকে আমন্ত্রণ জানায় তেল-গ্যাস অনুসন্ধানের জন্য। এতে করে বাংলাদেশের সাতটি অংশে ছয়টি আন্তর্জাতিক তেল কোম্পানি তেল-গ্যাস অনুসন্ধানে অংশ নেয়। ১৯৭৮ সালে কোম্পানিগুলো যান্ত্রিক ও রাজনৈতিক অস্থিতিশীলতার কারণে চলে যায়। তাদের মূল লক্ষ্য ছিল তেল। কিন্তু তেলে বদলে গ্যাসের সন্ধান মেলে। তবে আন্তর্জাতিক কোম্পানিগুলো গ্যাস অনুসন্ধানে আগ্রহী হয়। ১৯৯৮ সালে শেল, কেয়ার্ন এসার্জি ও সান্তোস এই তিন কোম্পানি সমুদ্রে গ্যাস অনুসন্ধান শুরু করে। শুরু হয় বাংলাদেশ সরকারের গঠিত ‘পেট্রোবাংলা’ কাজ। সেই থেকে পেট্রোবাংলার অধীনস্ত অধীনস্ত কোম্পানিগুলো তেল-গ্যাস অনুসন্ধান, উত্তোলন ও বিতরণের কাজ চালিয়ে যাচ্ছে।

গ্যাস ছাড়া কোনো উন্নয়নের কথা চিন্তাই করা যায় না। শিল্প, বিদ্যুৎ, গৃহস্থালিসহ অনেক খাতেই গ্যাসের ব্যবহার। বাংলাদেশের প্রধান জ্বালানি খাত হলো গ্যাস। যদিও প্রতিবেশি ভারত, চীন, রাশিয়াসহ অনেক দেশেই কয়লা আছে প্রচুর পরিমাণ আর সেটাই সেসব দেশের প্রধান জ্বালানির উৎস। আমাদের দেশে কয়লা থাকলেও তা পরিমাণে কম। যে যাই হউক। গ্যাসের চাহিদা আমাদের দেশে দিন দিন বাড়ছেই। অপরদিকে ফুরিয়ে আসছে গ্যাসের মজুত। শিল্প ও বিদ্যুৎ খাতের উন্নয়নের সঙ্গে সঙ্গে গ্যাসের চাহিদা বেড়েই চলছে। বিদ্যুৎ, জ্বালানি ও খনিজ সম্পদ প্রতিমন্ত্রী জাতীয় সংসদে বলেছেন, আগামী ২০৩০ সালে উত্তোলনযোগ্য গ্যাসের মজুত ফুরিয়ে যাবে। যদি তাই হয় এরপর কি হবে? দেশে বর্তমানে গ্যাস সংকট লেগেই আছে।

সংকট মোকাবিলায় সরকার গত ২০১৮ সাল থেকে তরলীকৃত প্রাকৃতিক গ্যাস (এলএনজি) আমদানি শুরু করে। বেশি দামে গ্যাস কিনে কম দামে বিক্রি করতে হচ্ছে। আর লোকসান কমাতে গ্যাসের বাড়িয়ে দেয়া হচ্ছে। বর্তমানে পেট্রোবাংলা ও বেসরকারি প্রতিষ্ঠান সামিটের দুটি ভাসমান এলএনজি টার্মিনালের দৈনিক ৫০ কোটি করে মোট ১০০ কোটি ঘনফুট গ্যাস সরবরাহ করার সক্ষমতা আছে। প্রশ্ন হচ্ছে যে এলএনজি আমদানি করে কত দিন চলবে বা সরকার কত লোকসান গুনবে? বর্তমানে দৈনিক গ্যাসের চাহিদা প্রায় সাড়ে ৪০০ কোটি ঘন ফুট, আর সরবরাহ হচ্ছে ৩১০ কোটি ঘনফুট। হয়তো কিছু কম-বেশি হতে পারে। গ্যাসের মজুত নিয়ে নানা রকম কথা শুনা যায়। গত ২০২০ সালে জাতীয় সংসদে বিদ্যৎ, জ্বালানি ও খনিজ সম্পদ প্রতিমন্ত্রী বলেছিনে যে, বর্তমানে গ্যাসের উত্তোলন যোগ্য মুজত ১২ দশমিক ৫৪ ট্রিলিয়ন ঘনফুট (টিসিএফ)। আবার জ্বালানি সম্পর্কিত বিশেষজ্ঞরা বলছেন, ১২ ট্রিলিয়ন মজুত আছে। প্রতিমন্ত্রী এও বলেছেন যে, বর্তমান মজুত ২০৩০ সালে শেষ হয়ে যাবে।

১৯৮৯ সাল থেকে রাষ্ট্রীয় প্রতিষ্ঠান বাপেক্স কাজ শুরু করে। এই প্রতিষ্ঠানিক দক্ষতার সঙ্গে কাজ চালিয়ে যাচ্ছে। প্রতিষ্ঠানটি ২০০৯ সাল থেকে এ পর্যন্ত ৪ হাজার বর্গকিলোমিটার এলাকায় দ্বিমাত্রিক ও ত্রিমাত্রিক জরিপ করেছে বলে জানা যায়। ২ হাজার ৭০০ কিলোমিটা ত্রিমাত্রিক জরিপ চালাতে গিয়ে প্রতি কিলোমিটারে খরচ হয়েছে ৮ লাখ ৬৬ হাজার টাকা। বাপেক্স ৬টি ও ২৪টি কূপ থেকে গ্যাস উত্তোলন করে সরবরাহ করছে। অভিযোগ আছে যে, বাপেক্সের আবিষ্কৃত গ্যাস ক্ষেত্র বিদেশি কোম্পানির হাতে তুলে দেয়া হচ্ছে। এনিয়ে তাদের মধ্যে হতাশাও দেখা দিয়েছে। উল্লেখ্য-বাপেক্স প্রতিষ্ঠার পর থেকে এ পর্যন্ত ১২টি অনুসন্ধান কূপ খনন করে ৭টি ক্ষেত্রে আবিষ্কার করে।

আমাদের রয়েছে বিশাল সমুদ্রে এলাকা। বঙ্গোপসাগরের অগভীর অংশে ১১টি আর গভীর সমুদ্রে ব্লক ১৫টি। ভারত ও মায়ানমারের সঙ্গে বাংলাদেশের সমুদ্র সীমা নিষ্পত্তি হলেও সমুদ্রে গ্যাসক্ষেত্র অনুসন্ধ্যান চালানো হয়নি বলে অভিযোগ রয়েছে। ধারণা করা হচ্ছে যে সমুদ্রে যথেষ্ট গ্যাস আছে। ১৯৯৬ সালে অগভীর সমুদ্রের ৯ নং ব্লকে সাঙ্গু গ্যাসক্ষেত্র আবিষ্কার করে কেয়ার্নস এনার্জি। ১৯৯৮ সালে গ্যাস উত্তোলন শুরু করে। দুই বছর পর মজুত ফুরিয়ে যাওয়ার কথা বলে এই কোম্পানি ক্ষেত্রটি পরিত্যক্ত ঘোষণা করে। কুতুবদিয়া সাগরতীরে গ্যাসের সন্ধান পাওয়া গেলেও এখনও বাণিজ্যিকভাবে উত্তোলনে যাচ্ছে না। মায়ানমার ও ভারতের সঙ্গে সমুদ্র সীমা নিয়ে বিরোধ থাকলেও আন্তর্জাতিক আদালতের রায়ে বাংলাদেশ প্রায় এক লাখ ৩৮ হাজার ২৮৯ বর্গকিলোমিটার সমুদ্র অঞ্চল বাংলাদেশের অধিকার প্রতিষ্ঠিত হয়। সে যাই হোক, বাংলাদেশের সমুদ্র অঞ্চলে প্রচুর তেল-গ্যাস পাওয়া সম্ভাবনা আছে বলে জ্বালানি বিশেষজ্ঞরা মনে করেন। ভারত-মায়ানমার তো গ্যাস উত্তোলন করছে। আমাদেরও এ বিষয়টি গুরুত্ব সহকারে নিয়ে উদ্যোগী হতে হবে বলে আমি মনে করি। তবে এখানেই শেষ নয়, বিদ্যুৎ, জ্বালানি ও খনিজ সম্পদ প্রতিমন্ত্রী বলেছেন যে আগামী ২০৩০ সালে উত্তোলনযোগ্য গ্যাসের মজুত শেষ হবে যাবে। এরপর কী হবে? কাজেই এখনই বিষয়টি মাথায় নিয়ে সরকারকে উদ্যোগী হতে হবে। গ্যাস সংকটে পড়লে দেশে, শিল্প, বাণিজ্য, বিদ্যুৎ, গৃহস্থালি সবই মুখ থুবরে পড়বে।

[লেখক : সাবেক কর কর্মকর্তা, পরিচালক; বাংলাদেশ স্যাটেলাইট কো. লি.]