পানিফল : পুষ্টিসমৃদ্ধ ফল

আবদুর রহমান

পানিফল একটি সুস্বাদু ও পুষ্টিকর ফল। সাতক্ষীরা জেলায় বাণিজ্যিকভাবে পানিফলের চাষ শুরু হয়েছে। এর আরেক নাম ‘শিংড়া’। ফলগুলোতে শিংয়ের মতো খাঁজকাটা থাকে বলেই এ রকম নামকরণ হয়েছে বলে ধারণা করা হয়। কোথাও কোথাও একে ‘পানি সিংগাড়া’ নামেও ডাকা হয়। বীজ থেকে পানিফলের গাছ জন্মে। সাধারণত পাকা ফলের বীজ প্রথম দুই বছরের মধ্যেই গজিয়ে যায়। তবে বারো বছর পর্যন্ত পানিফলের বীজ গজানোর ক্ষমতা রাখে। পানিফলের ফুল ক্ষুদ্রাকার ও সাদা রঙের। ফুল উভয়লিঙ্গ। ফলচাষ শুরু হয় জুন-জুলাই মাসে এবং ফল সংগ্রহ শুরু করা হয় সেপ্টেম্বর-অক্টোবরে । ডিসেম্বর পর্যন্ত পানিফল সংগ্রহ করা যায়।

প্রতি ১০০ গ্রাম পানিফলে ৮৪.৯ গ্রাম পানি, ০.৯ গ্রাম খনিজ পদার্থ, ২.৫ গ্রাম আমিষ, ০.৯ গ্রাম চর্বি, ১১.৭ গ্রাম শর্করা, ১০ মিলিগ্রাম ক্যালসিয়াম, ০.৮ মিলিগ্রাম লৌহ, ০.১১ মিলি গ্রাম ভিটামিন বি-১, ০.০৫ মিলিগ্রাম ভিটামিন বি-২ ও ১৫ মিলিগ্রাম ভিটামিন ‘সি’ রয়েছে। তাছাড়া এ ফলে ৬৫ কিলোক্যালরি খাদ্যশক্তি থাকে। পানিফলে পর্যাপ্ত পরিমাণ ক্যালসিয়াম রয়েছে।

পানি ফলে যথেষ্ট পরিমাণে লৌহ পাওয়া যায়। প্রতি ১০০ গ্রাম পানি ফলে ভিটামিন ‘সি’ এর পরিমাণ ১৫ মিলিগ্রাম। আর শসাতে আছে ভিটামিন ‘সি’ মাত্র ৫ মিলি গ্রাম। ভিটামিন ‘সি’ শরীরে চামড়া, দাঁত ও মাড়ির স্বাস্থ্য রক্ষায় অপরিহার্য। তাছাড়া ভিটামিন ‘সি’ অন্ত্রে লৌহ শোষণে সাহায্য করে। বাংলাদেশের শতকরা ৯৩ ভাগ পরিবার ভিটামিন ‘সি’ এর অভাবে ভুগছে। খাদ্যে ভিটামিন ‘সি’ ও অন্যান্য পুষ্টি উপাদানের ঘাটতি বিবেচনা করে এ ফলের প্রতি আমাদের অধিকতর গুরুত্ব দেয়া প্রয়োজন।

পানিফল খুব লাভজনক একটি ফসল। এর উৎপাদন খরচ খুব কম। জানা যায়, চারা রোপণের ৯০-১০০ দিন পর থেকে পানিফল সংগ্রহ করা যায়। প্রতি বিঘা জমিতে ৪০-৫০ মণ পানিফল উৎপন্ন হয়। সাতক্ষীরা জেলার সদর, কলারোয়া, দেবহাটা, কালিগঞ্জ, আশাশুনি ও শ্যামনগর উপজেলায় জলাবদ্ধ এলাকার চাষিরা পানিফল চাষ করে অধিক লাভবান হচ্ছেন। ফলে জনপ্রিয় হয়ে উঠেছে এ ফলের চাষ। জানা যায়, এ বছর সাতক্ষীরা জেলায় প্রায় ১৪০ হেক্টর জমিতে পানি ফলের চাষ হয়েছে। সুস্বাদু ও পুষ্টিকর এ ফল সবার কাছে পরিচিত না হলেও ক্রমশ, এ ফলের চাহিদা বাড়তে শুরু করেছে। সাতক্ষীরা-কালীগঞ্জ সড়কের দুই ধারে চোখে পড়ে এই পানিফল। এ জেলার হাটবাজারে ও ফুটপাতে ছাড়াও ক্ষেত থেকে তুলে মহাসড়কের ধারে পানিফল বিক্রি করতে দেখা যায় ব্যবসায়ীদের। প্রতি কেজি পানিফল স্থানভেদে ২০-২৫ টাকায় বিক্রি হয়। সাতক্ষীরায় উৎপাদিত ফলটি এখন জেলার চাহিদা মিটিয়ে যাচ্ছে রাজধানীসহ দেশের বিভিন্ন স্থানে। লাভ বেশি হওয়ায় পানি ফলের চাষ দিন দিন বাড়ছে। এতে জেলায় কৃষকরা আর্থিকভাবে লাভবান হচ্ছে। অপরদিকে বেকারত্ব দূর হচ্ছে।

এই সোনালি সম্ভাবনাকে সফল করার জন্য পানিফল চাষাবাদের আধুনিক প্রযুক্তি নিয়ে গবেষণা করা প্রয়োজন। সর্বোপরি সাতক্ষীরা জেলার জলাবদ্ধ পতিত জমির সদ্ব্যবহার, জনসাধারণের পুষ্টি চাহিদা পূরণ, কর্মসংস্থান সৃষ্টি ও গ্রামীণ দারিদ্র্য বিমোচনে পানিফল চাষের জন্য কৃষকদের প্রশিক্ষণ, উপকরণ সরবরাহ, ফল বাজারজাতকরণ ও তত্ত্বাবধায়নের উপর অধিক গুরুত্বারোপ করা একান্ত আবশ্যক।

[লেখক : উপ-সহকারী কৃষি কর্মকর্তা, উপজেলা কৃষি অফিস, রূপসা, খুলনা]

রবিবার, ০৭ নভেম্বর ২০২১ , ২২ কার্তিক ১৪২৮ ৩০ রবিউল আউয়াল ১৪৪৩

পানিফল : পুষ্টিসমৃদ্ধ ফল

আবদুর রহমান

পানিফল একটি সুস্বাদু ও পুষ্টিকর ফল। সাতক্ষীরা জেলায় বাণিজ্যিকভাবে পানিফলের চাষ শুরু হয়েছে। এর আরেক নাম ‘শিংড়া’। ফলগুলোতে শিংয়ের মতো খাঁজকাটা থাকে বলেই এ রকম নামকরণ হয়েছে বলে ধারণা করা হয়। কোথাও কোথাও একে ‘পানি সিংগাড়া’ নামেও ডাকা হয়। বীজ থেকে পানিফলের গাছ জন্মে। সাধারণত পাকা ফলের বীজ প্রথম দুই বছরের মধ্যেই গজিয়ে যায়। তবে বারো বছর পর্যন্ত পানিফলের বীজ গজানোর ক্ষমতা রাখে। পানিফলের ফুল ক্ষুদ্রাকার ও সাদা রঙের। ফুল উভয়লিঙ্গ। ফলচাষ শুরু হয় জুন-জুলাই মাসে এবং ফল সংগ্রহ শুরু করা হয় সেপ্টেম্বর-অক্টোবরে । ডিসেম্বর পর্যন্ত পানিফল সংগ্রহ করা যায়।

প্রতি ১০০ গ্রাম পানিফলে ৮৪.৯ গ্রাম পানি, ০.৯ গ্রাম খনিজ পদার্থ, ২.৫ গ্রাম আমিষ, ০.৯ গ্রাম চর্বি, ১১.৭ গ্রাম শর্করা, ১০ মিলিগ্রাম ক্যালসিয়াম, ০.৮ মিলিগ্রাম লৌহ, ০.১১ মিলি গ্রাম ভিটামিন বি-১, ০.০৫ মিলিগ্রাম ভিটামিন বি-২ ও ১৫ মিলিগ্রাম ভিটামিন ‘সি’ রয়েছে। তাছাড়া এ ফলে ৬৫ কিলোক্যালরি খাদ্যশক্তি থাকে। পানিফলে পর্যাপ্ত পরিমাণ ক্যালসিয়াম রয়েছে।

পানি ফলে যথেষ্ট পরিমাণে লৌহ পাওয়া যায়। প্রতি ১০০ গ্রাম পানি ফলে ভিটামিন ‘সি’ এর পরিমাণ ১৫ মিলিগ্রাম। আর শসাতে আছে ভিটামিন ‘সি’ মাত্র ৫ মিলি গ্রাম। ভিটামিন ‘সি’ শরীরে চামড়া, দাঁত ও মাড়ির স্বাস্থ্য রক্ষায় অপরিহার্য। তাছাড়া ভিটামিন ‘সি’ অন্ত্রে লৌহ শোষণে সাহায্য করে। বাংলাদেশের শতকরা ৯৩ ভাগ পরিবার ভিটামিন ‘সি’ এর অভাবে ভুগছে। খাদ্যে ভিটামিন ‘সি’ ও অন্যান্য পুষ্টি উপাদানের ঘাটতি বিবেচনা করে এ ফলের প্রতি আমাদের অধিকতর গুরুত্ব দেয়া প্রয়োজন।

পানিফল খুব লাভজনক একটি ফসল। এর উৎপাদন খরচ খুব কম। জানা যায়, চারা রোপণের ৯০-১০০ দিন পর থেকে পানিফল সংগ্রহ করা যায়। প্রতি বিঘা জমিতে ৪০-৫০ মণ পানিফল উৎপন্ন হয়। সাতক্ষীরা জেলার সদর, কলারোয়া, দেবহাটা, কালিগঞ্জ, আশাশুনি ও শ্যামনগর উপজেলায় জলাবদ্ধ এলাকার চাষিরা পানিফল চাষ করে অধিক লাভবান হচ্ছেন। ফলে জনপ্রিয় হয়ে উঠেছে এ ফলের চাষ। জানা যায়, এ বছর সাতক্ষীরা জেলায় প্রায় ১৪০ হেক্টর জমিতে পানি ফলের চাষ হয়েছে। সুস্বাদু ও পুষ্টিকর এ ফল সবার কাছে পরিচিত না হলেও ক্রমশ, এ ফলের চাহিদা বাড়তে শুরু করেছে। সাতক্ষীরা-কালীগঞ্জ সড়কের দুই ধারে চোখে পড়ে এই পানিফল। এ জেলার হাটবাজারে ও ফুটপাতে ছাড়াও ক্ষেত থেকে তুলে মহাসড়কের ধারে পানিফল বিক্রি করতে দেখা যায় ব্যবসায়ীদের। প্রতি কেজি পানিফল স্থানভেদে ২০-২৫ টাকায় বিক্রি হয়। সাতক্ষীরায় উৎপাদিত ফলটি এখন জেলার চাহিদা মিটিয়ে যাচ্ছে রাজধানীসহ দেশের বিভিন্ন স্থানে। লাভ বেশি হওয়ায় পানি ফলের চাষ দিন দিন বাড়ছে। এতে জেলায় কৃষকরা আর্থিকভাবে লাভবান হচ্ছে। অপরদিকে বেকারত্ব দূর হচ্ছে।

এই সোনালি সম্ভাবনাকে সফল করার জন্য পানিফল চাষাবাদের আধুনিক প্রযুক্তি নিয়ে গবেষণা করা প্রয়োজন। সর্বোপরি সাতক্ষীরা জেলার জলাবদ্ধ পতিত জমির সদ্ব্যবহার, জনসাধারণের পুষ্টি চাহিদা পূরণ, কর্মসংস্থান সৃষ্টি ও গ্রামীণ দারিদ্র্য বিমোচনে পানিফল চাষের জন্য কৃষকদের প্রশিক্ষণ, উপকরণ সরবরাহ, ফল বাজারজাতকরণ ও তত্ত্বাবধায়নের উপর অধিক গুরুত্বারোপ করা একান্ত আবশ্যক।

[লেখক : উপ-সহকারী কৃষি কর্মকর্তা, উপজেলা কৃষি অফিস, রূপসা, খুলনা]