সোনালি অতীত ফেরাতে অসময়ে বীজ পাটের আবাদে সাফল্য

এক সময়ে সারাবিশ্বের দুই তৃতীয়াংশ পাট উৎপাদন হতো বাংলাদেশে। এতে দেশের দক্ষিণাঞ্চালের ফরিদপুর, ঝিনাইদহ, কালীগঞ্জ, কোটচাঁদপুর, যশোরসহ এ অঞ্চলের পর্যাপ্ত অবদান ছিল। কিন্ত বিগত কিছুদিন পাটের ন্যয্যমূল্য পায়নি কৃষক। তাছাড়াও, পাট পঁচানোর জলাশয় সঙ্কট এখন তীব্রতর। এছাড়াও পাটচাষে নিম্নমানের পাটবীজ হওয়ায় ও বীজবাহিত রোগ বালাইয়ে কৃষক বার বার লোকসানের শিকার হয়েছেন। লাগাতর এমনটি হওয়ার কারনে পাটের রাজ্য খ্যাত এ এলাকায় পাট চাষ একেবারেই থমকে গিয়েছিল। কিন্ত পাটচাষীরা আবার সোনালী আাঁশের সোনালী দিন ফেরার স্বপ্ন দেখছেন। কৃষকদের স্বপ্ন দেখাচ্ছে ফেরোমন ইন্ডাস্ট্রিজ কোম্পানি নামের একটি প্রতিষ্ঠান । কৃষকদের পাশে দাঁড়িয়ে সংগঠনটি। সহযোগিতা করছে দেশের পাট গবেষণা ইনস্টিটিউট। কাজ করছে কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরও। সরকারে এ দুটি দপ্তর ও বেসরকারী এ প্রতিষ্ঠানটি কৃষকদেরকে উৎসাহিত করেছে রবি-১ জাতের পাট চাষে।

কালীগঞ্জ উপজেলা কৃষি অফিসসূত্রে জানা গেছে, পাট বর্ষা মৌসুমের অর্থকরী ফসল। প্রতিবছর পাট চাষের মৌসুমে পাশ্ববর্তী দেশ থেকে অনুন্নত জাতের পাট বীজ বানের পানির মত ভেসে আসে। যে বীজগুলোর দাম অনেক বেশি। সেই তুলনায় ফলনও কম হয়। কোন কোন বছর বছর নিম্নœজাতের বীজ বোপন করে খেতে বীজবাহিত রোগ বালাইয়ের উপদ্রবে খেত নষ্টের মাধ্যমে লোকসানের সম্মুখীন হয়। এ সমস্যাটি ব্যাপকভাবে দেখা দেয়ায় বীজে আস্থা হারিয়ে পাট চাষই বন্ধ করে দিয়েছিল। যে কারণে পাটচাষ কমে গিয়েছিল। এটা থেকে রক্ষা করতে সরকার উন্নত পাটবীজ উৎপাদনে এগিয়ে এসেছে। সাথে রয়েছে ফেরোমন ইন্ড্রাস্ট্রিজ কোম্পানি ও পাট গভেষনা ইনস্টিটিউট। বীজ উৎপাদনের লক্ষ্যে তিন স্তরের যৌথ উদ্যোগে ঝিনাইদহের কালীগঞ্জ উপজেলায় এ রবি মৌসুমে প্রায় ৩শ’ বিঘা জমিতে পাটচাষ হয়েছে।

কৃষি অফিসের আরেকটি সূত্র নিশ্চিত করেছে, প্রতি মণ বীজ বিক্রি হবে ৬ থেকে ৭ হাজার টাকা । সেজন্য পাট বপনের পর থেকে মাত্র ১১০ দিন সময় লাগবে কৃষকের। একজন কৃষক প্রতিবিঘা জমিতে যে পাটবীজ উৎপাদন করবে কমপক্ষে ২৫ থেকে ৩০ হাজার টাকা আসবে তাদের।

খড়িকাডাঙ্গা গ্রামের কৃষক আয়ুব হোসেন বলেন, নতুন উচ্চ ফলনশীল জাতের নিজেদের উৎপাদিত এই পাটবীজ খেতে বপন করে কমপক্ষে ২০ শতাংশ বেশি ফলন পাচ্ছে কৃষকেরা।

জেলার কালীগঞ্জ উপজেলার বিভিন্ন ইউনিয়নে বিচ্ছিন্নভাবে এ জাতের পাটের চাষ হয়েছে তবে ত্রিলোচনপুর ও সিমলা রোকনপুর ইউনিয়ন এবং পার্শ¦বর্তী এলাঙ্গী ইউনিয়নের ৯৭ জন কৃষক এবার ১৬৮ বিঘা জমিতে এই রবি-১ জাতের পাট চাষ করে বীজ উৎপাদন করছেন। তাদের লক্ষ্যমাত্রা এবার পায় ৭৬২ মণ পাট বীজ উৎপাদনের।

পার্শ্ববর্তী ভারতীয় পাট বীজ যেন বাংলাদেশের পাটবীজের বাজার দখল করতে না পারে এ জন্য কাজটি বাস্তবায়ন ও কারিগরি সহায়তা প্রদান করছেন ফেরোমন ইন্ডাস্ট্রিজ কোম্পানি। আর তাদের সার্বিক সহযোগিতা করছে স্থানীয় উপজেলা কৃষি অফিস এবং ইউএসএআইডি।

কালীগঞ্জ উপজেলার বড় সিমলা গ্রামের জাফর আহমেদ নামের একজন কৃষক জানান, তিনি এবার তার ১ একর জমিতে এই রবি-১ জাতের পাট বীজ বপন করেছেন। তিনি আশা করছেন এ জমিতে প্রায় ১০-১২ মণ রবি ১ জাতের বীজ উৎপাদন করতে পারবেন। মাত্র ৩ মাসে এ জমিতে কমপক্ষে ৭৫ থেকে ৮০ হাজার টাকা আসবে।

ফেরোমন ইন্ডাস্ট্রিজ এর প্রোডাকশন সুপারভাইজার জহুরুল ইসলাম জানান, এ বছর থেকে পাইলট প্রকল্প হিসেবে দুইটি উপজেলার ৩টি ইউনিয়নে ৯৭ জন কৃষকের খেতে এই পাট বীজ উৎপাদন হবে। যা সবটুকু তাদের প্রতিষ্ঠান কিনে নেবেন।

কালীগঞ্জ উপজেলা কৃষি অফিসার শিকদার মোহায়মেন আক্তার জানান, কালীগঞ্জ উপজেলার যে সকল কৃষক এই পাট বীজ উৎপাদন করছে তাদের কৃষি অফিসের পক্ষ থেকে প্রশিক্ষণ প্রদান করা হয়েছে। কমদামে বীজ উৎপাদনে স্বয়ংসম্পূর্ণ হওয়ায়, উন্নত উচ্চফলনশীল জাতের পাট বীজ কৃষকদের হাতে পৌঁছানোর লক্ষ্যে সরকারের এ উদ্যোগ। এভাবেই এ এলাকায় ফিরিয়ে আনা যাবে পাটের সোনালী অতীত।

image

কালীগঞ্জ (ঝিনাইদহ) : নতুন জাতের রবি-১ বীজপাট ক্ষেত পরিচর্যায় ব্যস্ত কৃষক -সংবাদ

আরও খবর
শীতের আগাম সবজি চাষে ব্যস্ত চাষিরা
নারায়ণগঞ্জে আবাস পেল সৎকার কর্মীরা
মাদ্রাসা অধ্যক্ষের হাত ভাঙল চাকরি প্রত্যাশী : মামলা
লামায় জামায়াত নেতার অত্যাচারে দিশেহারা একটি পরিবার
পাগলা মসজিদের সিন্দুকে এবার তিন কোটি টাকা
শীতের ব্যস্ততা বেড়েছে লেপ-তোশক কারিগরের
বর্ধিত বাস ভাড়া প্রত্যাহার দাবি
ঢাকা জেলা পরিষদের অর্থে দোহারে ১০ প্রকল্প উদ্বোধন
খবর প্রকাশের পর ‘মৃত’ সামাদ এখন জীবিত
দোহারে লাইসেন্সহীন ভাটাকে জরিমানা
চলনবিলে শুঁটকির ভরা মৌসুমে মাছ সংকট : হতাশ জেলেরা
চাটখিলে ১৫ হাজার শিক্ষার্থী পেল মাস্ক

সোমবার, ০৮ নভেম্বর ২০২১ , ২৩ কার্তিক ১৪২৮ ৩১ রবিউল আউয়াল ১৪৪৩

সোনালি অতীত ফেরাতে অসময়ে বীজ পাটের আবাদে সাফল্য

প্রতিনিধি, কালীগঞ্জ (ঝিনাইদহ)

image

কালীগঞ্জ (ঝিনাইদহ) : নতুন জাতের রবি-১ বীজপাট ক্ষেত পরিচর্যায় ব্যস্ত কৃষক -সংবাদ

এক সময়ে সারাবিশ্বের দুই তৃতীয়াংশ পাট উৎপাদন হতো বাংলাদেশে। এতে দেশের দক্ষিণাঞ্চালের ফরিদপুর, ঝিনাইদহ, কালীগঞ্জ, কোটচাঁদপুর, যশোরসহ এ অঞ্চলের পর্যাপ্ত অবদান ছিল। কিন্ত বিগত কিছুদিন পাটের ন্যয্যমূল্য পায়নি কৃষক। তাছাড়াও, পাট পঁচানোর জলাশয় সঙ্কট এখন তীব্রতর। এছাড়াও পাটচাষে নিম্নমানের পাটবীজ হওয়ায় ও বীজবাহিত রোগ বালাইয়ে কৃষক বার বার লোকসানের শিকার হয়েছেন। লাগাতর এমনটি হওয়ার কারনে পাটের রাজ্য খ্যাত এ এলাকায় পাট চাষ একেবারেই থমকে গিয়েছিল। কিন্ত পাটচাষীরা আবার সোনালী আাঁশের সোনালী দিন ফেরার স্বপ্ন দেখছেন। কৃষকদের স্বপ্ন দেখাচ্ছে ফেরোমন ইন্ডাস্ট্রিজ কোম্পানি নামের একটি প্রতিষ্ঠান । কৃষকদের পাশে দাঁড়িয়ে সংগঠনটি। সহযোগিতা করছে দেশের পাট গবেষণা ইনস্টিটিউট। কাজ করছে কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরও। সরকারে এ দুটি দপ্তর ও বেসরকারী এ প্রতিষ্ঠানটি কৃষকদেরকে উৎসাহিত করেছে রবি-১ জাতের পাট চাষে।

কালীগঞ্জ উপজেলা কৃষি অফিসসূত্রে জানা গেছে, পাট বর্ষা মৌসুমের অর্থকরী ফসল। প্রতিবছর পাট চাষের মৌসুমে পাশ্ববর্তী দেশ থেকে অনুন্নত জাতের পাট বীজ বানের পানির মত ভেসে আসে। যে বীজগুলোর দাম অনেক বেশি। সেই তুলনায় ফলনও কম হয়। কোন কোন বছর বছর নিম্নœজাতের বীজ বোপন করে খেতে বীজবাহিত রোগ বালাইয়ের উপদ্রবে খেত নষ্টের মাধ্যমে লোকসানের সম্মুখীন হয়। এ সমস্যাটি ব্যাপকভাবে দেখা দেয়ায় বীজে আস্থা হারিয়ে পাট চাষই বন্ধ করে দিয়েছিল। যে কারণে পাটচাষ কমে গিয়েছিল। এটা থেকে রক্ষা করতে সরকার উন্নত পাটবীজ উৎপাদনে এগিয়ে এসেছে। সাথে রয়েছে ফেরোমন ইন্ড্রাস্ট্রিজ কোম্পানি ও পাট গভেষনা ইনস্টিটিউট। বীজ উৎপাদনের লক্ষ্যে তিন স্তরের যৌথ উদ্যোগে ঝিনাইদহের কালীগঞ্জ উপজেলায় এ রবি মৌসুমে প্রায় ৩শ’ বিঘা জমিতে পাটচাষ হয়েছে।

কৃষি অফিসের আরেকটি সূত্র নিশ্চিত করেছে, প্রতি মণ বীজ বিক্রি হবে ৬ থেকে ৭ হাজার টাকা । সেজন্য পাট বপনের পর থেকে মাত্র ১১০ দিন সময় লাগবে কৃষকের। একজন কৃষক প্রতিবিঘা জমিতে যে পাটবীজ উৎপাদন করবে কমপক্ষে ২৫ থেকে ৩০ হাজার টাকা আসবে তাদের।

খড়িকাডাঙ্গা গ্রামের কৃষক আয়ুব হোসেন বলেন, নতুন উচ্চ ফলনশীল জাতের নিজেদের উৎপাদিত এই পাটবীজ খেতে বপন করে কমপক্ষে ২০ শতাংশ বেশি ফলন পাচ্ছে কৃষকেরা।

জেলার কালীগঞ্জ উপজেলার বিভিন্ন ইউনিয়নে বিচ্ছিন্নভাবে এ জাতের পাটের চাষ হয়েছে তবে ত্রিলোচনপুর ও সিমলা রোকনপুর ইউনিয়ন এবং পার্শ¦বর্তী এলাঙ্গী ইউনিয়নের ৯৭ জন কৃষক এবার ১৬৮ বিঘা জমিতে এই রবি-১ জাতের পাট চাষ করে বীজ উৎপাদন করছেন। তাদের লক্ষ্যমাত্রা এবার পায় ৭৬২ মণ পাট বীজ উৎপাদনের।

পার্শ্ববর্তী ভারতীয় পাট বীজ যেন বাংলাদেশের পাটবীজের বাজার দখল করতে না পারে এ জন্য কাজটি বাস্তবায়ন ও কারিগরি সহায়তা প্রদান করছেন ফেরোমন ইন্ডাস্ট্রিজ কোম্পানি। আর তাদের সার্বিক সহযোগিতা করছে স্থানীয় উপজেলা কৃষি অফিস এবং ইউএসএআইডি।

কালীগঞ্জ উপজেলার বড় সিমলা গ্রামের জাফর আহমেদ নামের একজন কৃষক জানান, তিনি এবার তার ১ একর জমিতে এই রবি-১ জাতের পাট বীজ বপন করেছেন। তিনি আশা করছেন এ জমিতে প্রায় ১০-১২ মণ রবি ১ জাতের বীজ উৎপাদন করতে পারবেন। মাত্র ৩ মাসে এ জমিতে কমপক্ষে ৭৫ থেকে ৮০ হাজার টাকা আসবে।

ফেরোমন ইন্ডাস্ট্রিজ এর প্রোডাকশন সুপারভাইজার জহুরুল ইসলাম জানান, এ বছর থেকে পাইলট প্রকল্প হিসেবে দুইটি উপজেলার ৩টি ইউনিয়নে ৯৭ জন কৃষকের খেতে এই পাট বীজ উৎপাদন হবে। যা সবটুকু তাদের প্রতিষ্ঠান কিনে নেবেন।

কালীগঞ্জ উপজেলা কৃষি অফিসার শিকদার মোহায়মেন আক্তার জানান, কালীগঞ্জ উপজেলার যে সকল কৃষক এই পাট বীজ উৎপাদন করছে তাদের কৃষি অফিসের পক্ষ থেকে প্রশিক্ষণ প্রদান করা হয়েছে। কমদামে বীজ উৎপাদনে স্বয়ংসম্পূর্ণ হওয়ায়, উন্নত উচ্চফলনশীল জাতের পাট বীজ কৃষকদের হাতে পৌঁছানোর লক্ষ্যে সরকারের এ উদ্যোগ। এভাবেই এ এলাকায় ফিরিয়ে আনা যাবে পাটের সোনালী অতীত।