নিবন্ধন করে টিকার অপেক্ষায় দেড় কোটি মানুষ

‘সুরক্ষা অ্যাপে’ নিবন্ধন করে করোনাভাইরাসের টিকার অপেক্ষায় রয়েছেন সারাদেশের এক কোটি ৬০ লাখের মতো নাগরিক। ‘বিশেষ অভিযান’ বা ‘গণটিকা কর্মসূচি’ ছাড়া সাধারণত : দৈনিক ৫-৬ লাখ মানুষকে টিকার দিতে পারছে স্বাস্থ্য বিভাগ। এ হিসাবে নিবন্ধনকারী লোকজনকে টিকার জন্য ন্যূনতম এক থেকে দেড় মাস অপেক্ষায় থাকতে হচ্ছে। যদিও ৬ নভেম্বর একদিনেই প্রায় ১৭ লাখ মানুষকে টিকার প্রথম ও দ্বিতীয় ডোজ দেয়া হয়েছে।

বর্তমানে যে গতিতে টিকাদান কর্মসূচি চলছে আপাতত সেই গতিই থাকছে। সহসাই টিকা কর্মসূচিতে খুব একটা গতিশীলতা বা সম্প্রসারণ আসছে না বলে জানিয়েছেন স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের কর্মকর্তারা। তাদের দাবি, টিকা কর্মসূচি ‘স্ট্যান্ডার্ড পজিশনেই’ আছে, ‘ভালোভাবেই’ চলছে।

যদিও জনস্বাস্থ্যবিদরা বলছেন, মূলত ‘অব্যবস্থাপনার’ কারণেই নিবন্ধনকারীদের টিকা পেতে দীর্ঘ সময় অপেক্ষায় থাকতে হচ্ছে। এতে অনেকেই আস্থাহীনতায় ভুগছেন। মানুষের অনীহাও বাড়ছে, কেউ কেউ টিকা নিতেই চাচ্ছেন না।

স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের ৬ নভেম্বর রাতের তথ্য অনুযায়ী, জাতীয় পরিচয়পত্রের (এনআইডি) মাধ্যমে টিকার জন্য এ পর্যন্ত মোট ছয় কোটি ছয় লাখ ৭২ হাজার ৮৭৭ জন নিবন্ধন করেছেন। তাদের মধ্যে টিকার প্রথম ডোজ পেয়েছেন চার কোটি ৪৬ লাখ ৮৮ হাজার ৭০ জন।

এ হিসেবে এখনও টিকার অপেক্ষায় রয়েছেন এক কোটি ৫৯ লাখ ৮৪ হাজার ৮০৭ জন। এছাড়াও পাসপোর্টের মাধ্যমে টিকার জন্য নিবন্ধন করেছেন আট লাখ ৯৫ হাজার ৭৩৩ জন।

নিবন্ধনকারীদের অপেক্ষার অবসান ঘটাতে কোন পদক্ষেপ নেয়া হচ্ছে কী না জানতে চাইলে স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের পরিচালক (এমআইএস ও লাইন ডিরেক্টর এইচআইএস অ্যান্ড-ই-হেল্থ) প্রফেসর ডা. মিজানুর রহমান গতকাল সংবাদকে বলেন, ‘আমরা দৈনিক যেভাবে টিকা দিচ্ছি, (দৈনিক ৫-৬ লাখ) তালিকাটি এমনিতেই কমে যাবে। আমাদের যে রিসোর্স, ম্যান পাওয়ার... তা ইচ্ছে করলেই বাড়ানো যায় না। এরপরও বিশেষ ড্রাইবে আমরা একদিনে ৮০ লাখ মানুষকে টিকা দিয়েছি, যা পৃথিবীর কোন দেশেই সম্ভব হয়নি। তবে এখন আমরা যেভাবে যে গতিতে টিকা দিচ্ছি সেটিই স্যান্ডার্ড পজিশন।’

আগাম নিবন্ধন করেও টিকা পেতে অপেক্ষার পালা দীর্ঘ হচ্ছে কেন- জানতে চাইলে জনস্বাস্থ্যবিদ ডা. আবু জামিল ফয়সাল গতকাল সংবাদকে বলেন, ‘এই অব্যবস্থাপনায় কমবে কেমন করে, আজকে আমি আমার নাতীকে টিকা দিতে ঢাকা কমার্স কলেজে গিয়েছিলাম; সর্বনাশ... চূড়ান্তরকম অব্যবস্থাপনা দেখলাম। এই কলেজে প্রায় দুই হাজার বাচ্চা সারাদিন অপেক্ষা করে ফেরত গেছে; টিকা নাকি শেষ হয়ে গেছে। তারা কী হিসাব করে টিকা আনল, আর কী হিসাব করে বাচ্চাদের আসতে বললো? এই অব্যবস্থাপনার শেষ নেই।’

টিকা কর্মসূচির পরিকল্পনায় ‘গলদ’ থাকতে পারে মন্তব্য করে এই জনস্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞ বলেন, ‘আমি জানি না, যারা প্ল্যানিংয়ে আছেন, তারা কী চিন্তা করে প্ল্যান করেন।’

স্বাস্থ্যমন্ত্রী জাহিদ মালেক গতকাল গাজীপুরে এক অনুষ্ঠানে জানিয়েছেন, দেশে ভ্যাকসিনের কোন ঘাটতি নেই। হাতে এক কোটির ওপরে ভ্যাকসিন আছে। ২১ কোটি ডোজ ভ্যাকসিন কিনে রাখা হয়েছে। সেখান থেকে চলতি মাসে অন্তত তিন কোটি ডোজ ভ্যাকসিন আসবে। আগামী মাসেও একই হারে আসার কথা রয়েছে বলে জানান মন্ত্রী।

ইতোমধ্যে অন্তত সাত কোটি ডোজ ভ্যাকসিন দেয়া হয়েছে জানিয়ে স্বাস্থ্যমন্ত্রী বলেন, ‘এভাবে চলতে থাকলে আগামী বছরের জানুয়ারি মাসের মধ্যেই কমপক্ষে ১২ কোটি ডোজ ভ্যাকসিন দেয়া সম্ভব হবে। সেটা করা গেলে করোনায় মৃত্যুহার শূন্যের কোটায় নামানো সম্ভব হবে।’

একদিনে টিকা পেলেন ১৭ লাখ মানুষ

করোনা সংক্রমণ ও মৃত্যু রোধে রাজধানীসহ সারাদেশে গতকাল সকাল পর্যন্ত ২৪ ঘণ্টায় প্রায় ১৭ লাখ মানুষকে টিকা দেয়া হয়েছে। এর মধ্যে ১৬ লাখ ৮১ হাজার ৪২৮ জনের মধ্যে প্রথম ডোজ ১৩ লাখ ৩১ হাজার ৭৯৭ জন ও দ্বিতীয় ডোজের টিকা পেয়েছেন তিন লাখ ৪৯ হাজার ৬৩১ জন।

২৪ ঘণ্টায় প্রথম ডোজের টিকা নেয়া লোকজনের মধ্যে পুরুষ ছয় লাখ সাত হাজার ৯৭১ জন ও নারী সাত লাখ ২৩ হাজার ৮২৬ জন। আর দ্বিতীয় ডোজের টিকাগ্রহিতাদের মধ্যে পুরুষ এক লাখ ৭৬ হাজার ৭১৯ জন ও নারী এক লাখ ৭২ হাজার ৯১২ জন।

গত ২৭ জানুয়ারি রাজধানীর কুর্মিটোলা জেনারেল হাসপাতালে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা করোনার টিকাদান কর্মসূচি উদ্বোধন করেন। প্রথমে ভারতের সেরাম ইনস্টিটিউটে উৎপাদিত অক্সফোর্ড-অ্যাস্ট্রাজেনেকার টিকা নিয়ে কর্মসূচি শুরু হয়। পরবর্তীতে চীনের সিনোফার্ম, যুক্তরাষ্ট্রের ফাইজারের বায়োএনটেক ও মডার্নার টিকা দেয়া হয়।

সোমবার, ০৮ নভেম্বর ২০২১ , ২৩ কার্তিক ১৪২৮ ৩১ রবিউল আউয়াল ১৪৪৩

নিবন্ধন করে টিকার অপেক্ষায় দেড় কোটি মানুষ

নিজস্ব বার্তা পরিবেশক

‘সুরক্ষা অ্যাপে’ নিবন্ধন করে করোনাভাইরাসের টিকার অপেক্ষায় রয়েছেন সারাদেশের এক কোটি ৬০ লাখের মতো নাগরিক। ‘বিশেষ অভিযান’ বা ‘গণটিকা কর্মসূচি’ ছাড়া সাধারণত : দৈনিক ৫-৬ লাখ মানুষকে টিকার দিতে পারছে স্বাস্থ্য বিভাগ। এ হিসাবে নিবন্ধনকারী লোকজনকে টিকার জন্য ন্যূনতম এক থেকে দেড় মাস অপেক্ষায় থাকতে হচ্ছে। যদিও ৬ নভেম্বর একদিনেই প্রায় ১৭ লাখ মানুষকে টিকার প্রথম ও দ্বিতীয় ডোজ দেয়া হয়েছে।

বর্তমানে যে গতিতে টিকাদান কর্মসূচি চলছে আপাতত সেই গতিই থাকছে। সহসাই টিকা কর্মসূচিতে খুব একটা গতিশীলতা বা সম্প্রসারণ আসছে না বলে জানিয়েছেন স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের কর্মকর্তারা। তাদের দাবি, টিকা কর্মসূচি ‘স্ট্যান্ডার্ড পজিশনেই’ আছে, ‘ভালোভাবেই’ চলছে।

যদিও জনস্বাস্থ্যবিদরা বলছেন, মূলত ‘অব্যবস্থাপনার’ কারণেই নিবন্ধনকারীদের টিকা পেতে দীর্ঘ সময় অপেক্ষায় থাকতে হচ্ছে। এতে অনেকেই আস্থাহীনতায় ভুগছেন। মানুষের অনীহাও বাড়ছে, কেউ কেউ টিকা নিতেই চাচ্ছেন না।

স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের ৬ নভেম্বর রাতের তথ্য অনুযায়ী, জাতীয় পরিচয়পত্রের (এনআইডি) মাধ্যমে টিকার জন্য এ পর্যন্ত মোট ছয় কোটি ছয় লাখ ৭২ হাজার ৮৭৭ জন নিবন্ধন করেছেন। তাদের মধ্যে টিকার প্রথম ডোজ পেয়েছেন চার কোটি ৪৬ লাখ ৮৮ হাজার ৭০ জন।

এ হিসেবে এখনও টিকার অপেক্ষায় রয়েছেন এক কোটি ৫৯ লাখ ৮৪ হাজার ৮০৭ জন। এছাড়াও পাসপোর্টের মাধ্যমে টিকার জন্য নিবন্ধন করেছেন আট লাখ ৯৫ হাজার ৭৩৩ জন।

নিবন্ধনকারীদের অপেক্ষার অবসান ঘটাতে কোন পদক্ষেপ নেয়া হচ্ছে কী না জানতে চাইলে স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের পরিচালক (এমআইএস ও লাইন ডিরেক্টর এইচআইএস অ্যান্ড-ই-হেল্থ) প্রফেসর ডা. মিজানুর রহমান গতকাল সংবাদকে বলেন, ‘আমরা দৈনিক যেভাবে টিকা দিচ্ছি, (দৈনিক ৫-৬ লাখ) তালিকাটি এমনিতেই কমে যাবে। আমাদের যে রিসোর্স, ম্যান পাওয়ার... তা ইচ্ছে করলেই বাড়ানো যায় না। এরপরও বিশেষ ড্রাইবে আমরা একদিনে ৮০ লাখ মানুষকে টিকা দিয়েছি, যা পৃথিবীর কোন দেশেই সম্ভব হয়নি। তবে এখন আমরা যেভাবে যে গতিতে টিকা দিচ্ছি সেটিই স্যান্ডার্ড পজিশন।’

আগাম নিবন্ধন করেও টিকা পেতে অপেক্ষার পালা দীর্ঘ হচ্ছে কেন- জানতে চাইলে জনস্বাস্থ্যবিদ ডা. আবু জামিল ফয়সাল গতকাল সংবাদকে বলেন, ‘এই অব্যবস্থাপনায় কমবে কেমন করে, আজকে আমি আমার নাতীকে টিকা দিতে ঢাকা কমার্স কলেজে গিয়েছিলাম; সর্বনাশ... চূড়ান্তরকম অব্যবস্থাপনা দেখলাম। এই কলেজে প্রায় দুই হাজার বাচ্চা সারাদিন অপেক্ষা করে ফেরত গেছে; টিকা নাকি শেষ হয়ে গেছে। তারা কী হিসাব করে টিকা আনল, আর কী হিসাব করে বাচ্চাদের আসতে বললো? এই অব্যবস্থাপনার শেষ নেই।’

টিকা কর্মসূচির পরিকল্পনায় ‘গলদ’ থাকতে পারে মন্তব্য করে এই জনস্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞ বলেন, ‘আমি জানি না, যারা প্ল্যানিংয়ে আছেন, তারা কী চিন্তা করে প্ল্যান করেন।’

স্বাস্থ্যমন্ত্রী জাহিদ মালেক গতকাল গাজীপুরে এক অনুষ্ঠানে জানিয়েছেন, দেশে ভ্যাকসিনের কোন ঘাটতি নেই। হাতে এক কোটির ওপরে ভ্যাকসিন আছে। ২১ কোটি ডোজ ভ্যাকসিন কিনে রাখা হয়েছে। সেখান থেকে চলতি মাসে অন্তত তিন কোটি ডোজ ভ্যাকসিন আসবে। আগামী মাসেও একই হারে আসার কথা রয়েছে বলে জানান মন্ত্রী।

ইতোমধ্যে অন্তত সাত কোটি ডোজ ভ্যাকসিন দেয়া হয়েছে জানিয়ে স্বাস্থ্যমন্ত্রী বলেন, ‘এভাবে চলতে থাকলে আগামী বছরের জানুয়ারি মাসের মধ্যেই কমপক্ষে ১২ কোটি ডোজ ভ্যাকসিন দেয়া সম্ভব হবে। সেটা করা গেলে করোনায় মৃত্যুহার শূন্যের কোটায় নামানো সম্ভব হবে।’

একদিনে টিকা পেলেন ১৭ লাখ মানুষ

করোনা সংক্রমণ ও মৃত্যু রোধে রাজধানীসহ সারাদেশে গতকাল সকাল পর্যন্ত ২৪ ঘণ্টায় প্রায় ১৭ লাখ মানুষকে টিকা দেয়া হয়েছে। এর মধ্যে ১৬ লাখ ৮১ হাজার ৪২৮ জনের মধ্যে প্রথম ডোজ ১৩ লাখ ৩১ হাজার ৭৯৭ জন ও দ্বিতীয় ডোজের টিকা পেয়েছেন তিন লাখ ৪৯ হাজার ৬৩১ জন।

২৪ ঘণ্টায় প্রথম ডোজের টিকা নেয়া লোকজনের মধ্যে পুরুষ ছয় লাখ সাত হাজার ৯৭১ জন ও নারী সাত লাখ ২৩ হাজার ৮২৬ জন। আর দ্বিতীয় ডোজের টিকাগ্রহিতাদের মধ্যে পুরুষ এক লাখ ৭৬ হাজার ৭১৯ জন ও নারী এক লাখ ৭২ হাজার ৯১২ জন।

গত ২৭ জানুয়ারি রাজধানীর কুর্মিটোলা জেনারেল হাসপাতালে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা করোনার টিকাদান কর্মসূচি উদ্বোধন করেন। প্রথমে ভারতের সেরাম ইনস্টিটিউটে উৎপাদিত অক্সফোর্ড-অ্যাস্ট্রাজেনেকার টিকা নিয়ে কর্মসূচি শুরু হয়। পরবর্তীতে চীনের সিনোফার্ম, যুক্তরাষ্ট্রের ফাইজারের বায়োএনটেক ও মডার্নার টিকা দেয়া হয়।