পীরগঞ্জে শিশুকে ধর্ষণ ও হত্যা আসামি হিরুর মৃত্যুদণ্ড

রংপুরের পীরগঞ্জ উপজেলার ওসমানপুর গ্রামে ৬ বছরের শিশুকে ধর্ষণ করে শ্বাসরোধ করে হত্যা এবং লাশ মাটিচাপা দিয়ে গুম করার অভিযোগে আসামি হিরু মিয়া ওরফে খোড়া হিরুকে দোষী সাব্যস্ত করে মৃত্যুদণ্ড দিয়েছেন আদালত। সেই সঙ্গে এক লাখ টাকা জরিমানাও করা হয়েছে। রংপুরের নারী ও শিশু নির্যাতন দমন আদালতের বিচারক আলী আহাম্মেদ জনাকীর্ণ আদালতে গতকাল দুপুর ১টায় এ রায় ঘোষণা করেন।

মামলার বিবরণে বলা হয়েছে ২০১৪ সালের ১১ এপ্রিল দুপুর ১২টা থেকে ২টার মধ্যে রংপুরের পীরগঞ্জ উপজেলার নন্দরামপুর ফতেপুর গ্রামের জহুরুল হকের ৬ বছরের শিশু কন্যাকে আসামি হিরু ওরফে খোড়া হিরু তার বাড়িতে নিয়ে গিয়ে ঘরের মধ্যে ধর্ষণ করে। এরপর শ্বাস রোধ করে হত্যা করার পর লাশ তার ঘরের ভেতরেই মাটি খুঁড়ে পুঁতে রাখে।

নিহত শিশুর স্বজন ও এলাকাবাসী শিশুটির লাশ উদ্ধার করে পুলিশে খবর দেয়। পীরগঞ্জ থানা পুলিশ ঘটনা স্থলে এসে শিশুটির লাশ উদ্ধার করে ময়নাতদন্তের জন্য রংপুর মেডিকেল কলেজের মর্গে পাঠায়। এ ঘটনায় নিহত শিশুর চাচা খলিলুর রহমান বাদী হয়ে পীরগঞ্জ থানায় মামলা দায়ের করে।

আসামি হিরু আদালতে ১৬৪ ধারায় স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি প্রদান করে শিশুটিকে হত্যা করে লাশ নিজের ঘরে মাটি চাপা দেবার কথা স্বীকার করে।

তদন্ত শেষে মামলার তদন্তকারী পুলিশ কর্মকর্তা এসআই সিরাজুল ইসলাম গত ২৩ জুন ২০১৪ ইং তারিখে আসামি হিরু মিয়ার বিরুদ্ধে আদালতে নারী ও শিশু নির্যাতন দমন আইনের ৯(২) ধারায় ও দন্ডবিধি আইনের ২০১ ধারায় চার্জসিট দাখিল করে।

আদালতে ১৯ জন সাক্ষীর সাক্ষ্য ও জেরা শেষে বিজ্ঞ আদালত আসামি হিরুকে দোষী সাব্যস্ত করে ফাঁসির আদেশ প্রদান করেন। সেই সঙ্গে এক লাখ টাকা জরিমানা করারও আদেশ দেন। আদালত তার রায় ঘোষণার সময় পর্যবেক্ষণে বলেছেন, আসামি হিরু ৬ বছরের শিশুকে তার নিজ ঘরে নিয়ে গিয়ে প্রথমে ধর্ষণ করে এরপর শ্বাস রোধ করে হত্যা করার পর নিজের ঘরেই কোদাল দিয়ে মাটি খুঁড়ে শিশুটির লাশ চাপা দিয়ে রাখে।

আসামি আদালতে স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দিতে হত্যা করে লাশ মাটি চাপা দেবার কথা স্বীকার করলেও ধর্ষণ করার কথা স্বীকার করেনি। কিন্তু নিহত শিশুর পড়নের কাপড় পুলিশের সুরতহাল প্রতিবেদন জব্দ তালিকা এবং ময়নাতদন্তের রিপোর্টে ধর্ষণের কথা স্বষ্টভাবে উল্লেখ করা হয়েছে। মাটি খোঁড়ার কাজে ব্যবহৃত কোদালটিও জব্দ তালিকায় আছে। এ সব সার্বিক বিষয় বিবেচনা করে আসামির বিরুদ্ধে সব অভিযোগ সন্দেহাতিতভাবে প্রমাণিত হওয়ায় তাকে ফাঁসির আদেশ দেয়া হলো সেই সঙ্গে এক লাখ টাকা জরিমানা করা হলো।

সরকার পক্ষে মামলা পরিচালনাকারী আইনজীবী নারী ও শিশু নির্যাতন দমন আদালতের বিশেষ পিপি তাইজুর রহমান লাইজু অ্যাডভোকেট বলেন, আসামির বিরুদ্ধে অভিযোগ সন্দেহাতিতভাবে প্রমাণিত হওয়ায় এ রায় প্রদান করেছেন। এ রায়ে সন্তোষ প্রকাশ করেন তিনি। অন্যদিকে আসামি পক্ষে মামলা পরিচালনাকারী আইনজীবী রুহুল আমিন অ্যাডভোকেট রায় ঘোষণার সময় আদালতে উপস্থিত না থাকায় তার বক্তব্য জানা যায়নি।

সোমবার, ০৮ নভেম্বর ২০২১ , ২৩ কার্তিক ১৪২৮ ৩১ রবিউল আউয়াল ১৪৪৩

পীরগঞ্জে শিশুকে ধর্ষণ ও হত্যা আসামি হিরুর মৃত্যুদণ্ড

নিজস্ব বার্তা পরিবেশক, রংপুর

image

রংপুরের পীরগঞ্জ উপজেলার ওসমানপুর গ্রামে ৬ বছরের শিশুকে ধর্ষণ করে শ্বাসরোধ করে হত্যা এবং লাশ মাটিচাপা দিয়ে গুম করার অভিযোগে আসামি হিরু মিয়া ওরফে খোড়া হিরুকে দোষী সাব্যস্ত করে মৃত্যুদণ্ড দিয়েছেন আদালত। সেই সঙ্গে এক লাখ টাকা জরিমানাও করা হয়েছে। রংপুরের নারী ও শিশু নির্যাতন দমন আদালতের বিচারক আলী আহাম্মেদ জনাকীর্ণ আদালতে গতকাল দুপুর ১টায় এ রায় ঘোষণা করেন।

মামলার বিবরণে বলা হয়েছে ২০১৪ সালের ১১ এপ্রিল দুপুর ১২টা থেকে ২টার মধ্যে রংপুরের পীরগঞ্জ উপজেলার নন্দরামপুর ফতেপুর গ্রামের জহুরুল হকের ৬ বছরের শিশু কন্যাকে আসামি হিরু ওরফে খোড়া হিরু তার বাড়িতে নিয়ে গিয়ে ঘরের মধ্যে ধর্ষণ করে। এরপর শ্বাস রোধ করে হত্যা করার পর লাশ তার ঘরের ভেতরেই মাটি খুঁড়ে পুঁতে রাখে।

নিহত শিশুর স্বজন ও এলাকাবাসী শিশুটির লাশ উদ্ধার করে পুলিশে খবর দেয়। পীরগঞ্জ থানা পুলিশ ঘটনা স্থলে এসে শিশুটির লাশ উদ্ধার করে ময়নাতদন্তের জন্য রংপুর মেডিকেল কলেজের মর্গে পাঠায়। এ ঘটনায় নিহত শিশুর চাচা খলিলুর রহমান বাদী হয়ে পীরগঞ্জ থানায় মামলা দায়ের করে।

আসামি হিরু আদালতে ১৬৪ ধারায় স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি প্রদান করে শিশুটিকে হত্যা করে লাশ নিজের ঘরে মাটি চাপা দেবার কথা স্বীকার করে।

তদন্ত শেষে মামলার তদন্তকারী পুলিশ কর্মকর্তা এসআই সিরাজুল ইসলাম গত ২৩ জুন ২০১৪ ইং তারিখে আসামি হিরু মিয়ার বিরুদ্ধে আদালতে নারী ও শিশু নির্যাতন দমন আইনের ৯(২) ধারায় ও দন্ডবিধি আইনের ২০১ ধারায় চার্জসিট দাখিল করে।

আদালতে ১৯ জন সাক্ষীর সাক্ষ্য ও জেরা শেষে বিজ্ঞ আদালত আসামি হিরুকে দোষী সাব্যস্ত করে ফাঁসির আদেশ প্রদান করেন। সেই সঙ্গে এক লাখ টাকা জরিমানা করারও আদেশ দেন। আদালত তার রায় ঘোষণার সময় পর্যবেক্ষণে বলেছেন, আসামি হিরু ৬ বছরের শিশুকে তার নিজ ঘরে নিয়ে গিয়ে প্রথমে ধর্ষণ করে এরপর শ্বাস রোধ করে হত্যা করার পর নিজের ঘরেই কোদাল দিয়ে মাটি খুঁড়ে শিশুটির লাশ চাপা দিয়ে রাখে।

আসামি আদালতে স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দিতে হত্যা করে লাশ মাটি চাপা দেবার কথা স্বীকার করলেও ধর্ষণ করার কথা স্বীকার করেনি। কিন্তু নিহত শিশুর পড়নের কাপড় পুলিশের সুরতহাল প্রতিবেদন জব্দ তালিকা এবং ময়নাতদন্তের রিপোর্টে ধর্ষণের কথা স্বষ্টভাবে উল্লেখ করা হয়েছে। মাটি খোঁড়ার কাজে ব্যবহৃত কোদালটিও জব্দ তালিকায় আছে। এ সব সার্বিক বিষয় বিবেচনা করে আসামির বিরুদ্ধে সব অভিযোগ সন্দেহাতিতভাবে প্রমাণিত হওয়ায় তাকে ফাঁসির আদেশ দেয়া হলো সেই সঙ্গে এক লাখ টাকা জরিমানা করা হলো।

সরকার পক্ষে মামলা পরিচালনাকারী আইনজীবী নারী ও শিশু নির্যাতন দমন আদালতের বিশেষ পিপি তাইজুর রহমান লাইজু অ্যাডভোকেট বলেন, আসামির বিরুদ্ধে অভিযোগ সন্দেহাতিতভাবে প্রমাণিত হওয়ায় এ রায় প্রদান করেছেন। এ রায়ে সন্তোষ প্রকাশ করেন তিনি। অন্যদিকে আসামি পক্ষে মামলা পরিচালনাকারী আইনজীবী রুহুল আমিন অ্যাডভোকেট রায় ঘোষণার সময় আদালতে উপস্থিত না থাকায় তার বক্তব্য জানা যায়নি।