কার্বন নির্গমনের জন্য দায়ী ধনকুবেররা

পরিবেশের জন্য সবচেয়ে ক্ষতিকর কার্বন নির্গমনের জন্যে ধনকুবেরদের দায়ী করা হয়েছে। জাতিসংঘের তথ্য মতে, বিশ্বের ৫০ শতাংশ দরিদ্র জনগোষ্ঠীর মোট নিঃসরণের দ্বিগুণ কার্বন সৃষ্টির পেছনে দায়ী মাত্র ১ শতাংশ ধনী। যে কারণে জলবায়ু সম্মেলনে বিশ্বের সবচেয়ে বেশি দূষণকারী ধনকুবেরদের বিলাসবহুল ও ভোগবাদী জীবনযাত্রায় পরিবর্তনের দাবি উঠেছে।

অভিজাত ও বিলাসবহুল দূষণকারী নামে খ্যাত ৫ শতাংশ ধনকুবের গত ২৫ বছরে কার্বন নির্গমন ৩৭ শতাংশ বৃদ্ধির জন্য দায়ী বলে প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়। বিশ্বে ভোগবাদী সংস্কৃতি ও জ্বালানি শক্তি নিয়ে গবেষণা করা একাধিক নৃবিজ্ঞানী দেখেছেন কীভাবে ভোগবাদিতা কার্বন নির্গমনের জন্য সরাসরি দায়ী।

ইউএস এনার্জি ইনফরমেশন অ্যাডমিনিস্ট্রেশন অ্যান্ড কার্বন ফুটপ্রিন্টের গবেষণায় দেখা গেছে, অতি ধনীরা যুক্তরাষ্ট্রের সাধারণ নাগরিকের চেয়ে কয়েক হাজার গুণ বেশি কার্বন নির্গমনের জন্য দায়ী। গবেষণায় দেখা যায়, যুক্তরাষ্ট্রের সাধারণ নাগরিক বছরে ১৫ টন কার্বন নির্গমনে দায়ী আর বিশ্বে গড়ে একজন মানুষ বছরে ৫ টন কার্বন নির্গমনের কারণ। শুধু একজন ধনকুবের তার বিলাসবহুল জীবনযাত্রার কারণে বছরে ৮ হাজার ১৯০ টন কার্বন পৃথিবীর বায়ুম-লে জমা করেন। তবে অতি ধনী এমন বিলিয়নিয়ারদের জীবনযাত্রায় ভিন্নতার কারণে এই কার্বন নির্গমনে বড় ধরনের তারতম্য দেখা যায়।ধনকুবেরদের ব্যবহৃত প্রমোদতরী, উড়োজাহাজ, একাধিক বিলাসবহুল বাসভবন থেকে প্রতিনিয়ত উৎপাদিত কার্বন পরিবেশে জমা হচ্ছে। হেলিকপ্টার ও সাবমেরিন সংবলিত বিশাল আকারের প্রমোদতরী বছরে বায়ুম-লে ছাড়ে ৭ হাজার ২০ টন কার্বন। এটি পরিবেশ দূষণকারী বাহনগুলোর মধ্যে সবচেয়ে ভয়াবহ। বিশ্বের অন্যতম ধনী বিল গেটসের সম্পদ সবচেয়ে বেশি পরিবেশ দূষণকারী ধনকুবের রোমান অ্যাব্রামোভিচের চেয়ে ৯ গুণ বেশি।

তা সত্ত্বেও বিল গেটস বছরে পরিবেশদূষণে দায়ী কার্বন উৎপাদন করে ৭ হাজার ৪০৮ টন আর রাশিয়ার অ্যাব্রামোভিচ উৎপাদন করে ৩০ হাজার ৯২৫ টন কার্বন। যা যুক্তরাষ্ট্রের বিলিয়নিয়ার বিল গেটসের চেয়ে চার গুণ বেশি। এর কারণ হিসেবে গবেষণায় বলা হয়েছে, অ্যাব্রামোভিচ সবচেয়ে বেশি দূষণকারী যান বিলাসবহুল প্রমোদতরীতে সারা বিশ্বে ঘুরে বেড়ান।

বিল গেটস এ ধরনের প্রমোদতরী ব্যবহার করেন না। তিনি ব্যবহার করেন সাধারণ উড়োজাহাজ। অন্যদিকে অ্যাব্রামোভিচ ব্যবহার করেন বিশেষভাবে তৈরি বোয়িং যার ভেতরকার ডাইনিং টেবিলে বসতে পারেন একসঙ্গে ৩০ জন।

সাধারণ মানুষ কীভাবে কার্বন ছড়ায়

জার্মানিভিত্তিক অলাভজনক প্রতিষ্ঠান অ্যাটমোসফেয়ারের তথ্যমতে, উড়োজাহাজে লন্ডন থেকে নিউইয়র্কে যাওয়া-আসা করলে প্রত্যেক যাত্রীর বিপরীতে কার্বন নির্গমন হয় ৯৮৬ কিলোগ্রাম। বুরুন্ডি, প্যারাগুয়েসহ আফ্রিকা ও লাতিন আমেরিকার অন্তত ৫৬ দেশের সাধারণ একজন নাগরিক সারা বছরে এর চেয়ে কম পরিমাণ কার্বন বাতাসে ছাড়ে।

ক্লাইমেট ভালোনারেবল ফোরামের (সিভিএফ) ৪৮ সদস্য দেশ মোট বৈশ্বিক নির্গমনের মাত্র ৫ শতাংশের জন্য দায়ী, অথচ জলবায়ু পরিবর্তনের বিরূপ প্রভাব এসব দেশে জীবন ও জীবিকার জন্য মৌলিক হুমকি সৃষ্টি করেছে।

বায়ুম-লে অতিমাত্রায় কার্বন নির্গমনের ফলে বৈশ্বিক উষ্ণতা বাড়ছে। এতে হিমবাহের বরফ গলছে, বাড়ছে সমুদ্রে পানির উচ্চতা। প্লাবিত ও বিলীন হয়ে যাচ্ছে নি¤œাঞ্চল। জলবায়ু পরিবর্তনের বিরূপ প্রভাবে পুড়ছে ফসল আর বন। অন্যদিকে মানুষ, গবাদিপশু, ঘরবাড়ি ভাসছে বন্যায়। অনেক উন্নত দেশ পুড়ছে দাবানলের আগুনে। জলবায়ু পরিবর্তনে উন্নত দেশগুলো ক্ষতিকর গ্রিনহাউস গ্যাস নির্গমনের জন্য বেশি দায়ী।

উন্নয়নশীল ও অনুন্নত দেশ মাথাপিছু কার্বন নিঃসরণের জন্য যত না দায়ী, তার চেয়ে জলবায়ু পরিবর্তনের বিরূপ প্রভাবে আক্রান্ত হচ্ছে। উন্নত দেশগুলোর পক্ষ থেকে উন্নয়নশীল ও অনুন্নত দেশগুলোর জন্য জলবায়ু পরিবর্তনবিষয়ক ঝুঁকি মোকাবিলায় অর্থসহায়তা দিতে ১০০ বিলিয়ন ডলার দেয়ার বিষয়ে গত বছরের জলবায়ু সম্মেলনে সম্মত হয় অংশগ্রহণকারী দেশগুলো।

সোমবার, ০৮ নভেম্বর ২০২১ , ২৩ কার্তিক ১৪২৮ ৩১ রবিউল আউয়াল ১৪৪৩

কার্বন নির্গমনের জন্য দায়ী ধনকুবেররা

image

পরিবেশদূষণকারী বাহনগুলোর মধ্যে ধনকুবের রোমান অ্যাব্রামোভিচের হেলিকপ্টার ও সাবমেরিন সংবলিত বিশাল আকারের প্রমোদতরী -এপি

পরিবেশের জন্য সবচেয়ে ক্ষতিকর কার্বন নির্গমনের জন্যে ধনকুবেরদের দায়ী করা হয়েছে। জাতিসংঘের তথ্য মতে, বিশ্বের ৫০ শতাংশ দরিদ্র জনগোষ্ঠীর মোট নিঃসরণের দ্বিগুণ কার্বন সৃষ্টির পেছনে দায়ী মাত্র ১ শতাংশ ধনী। যে কারণে জলবায়ু সম্মেলনে বিশ্বের সবচেয়ে বেশি দূষণকারী ধনকুবেরদের বিলাসবহুল ও ভোগবাদী জীবনযাত্রায় পরিবর্তনের দাবি উঠেছে।

অভিজাত ও বিলাসবহুল দূষণকারী নামে খ্যাত ৫ শতাংশ ধনকুবের গত ২৫ বছরে কার্বন নির্গমন ৩৭ শতাংশ বৃদ্ধির জন্য দায়ী বলে প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়। বিশ্বে ভোগবাদী সংস্কৃতি ও জ্বালানি শক্তি নিয়ে গবেষণা করা একাধিক নৃবিজ্ঞানী দেখেছেন কীভাবে ভোগবাদিতা কার্বন নির্গমনের জন্য সরাসরি দায়ী।

ইউএস এনার্জি ইনফরমেশন অ্যাডমিনিস্ট্রেশন অ্যান্ড কার্বন ফুটপ্রিন্টের গবেষণায় দেখা গেছে, অতি ধনীরা যুক্তরাষ্ট্রের সাধারণ নাগরিকের চেয়ে কয়েক হাজার গুণ বেশি কার্বন নির্গমনের জন্য দায়ী। গবেষণায় দেখা যায়, যুক্তরাষ্ট্রের সাধারণ নাগরিক বছরে ১৫ টন কার্বন নির্গমনে দায়ী আর বিশ্বে গড়ে একজন মানুষ বছরে ৫ টন কার্বন নির্গমনের কারণ। শুধু একজন ধনকুবের তার বিলাসবহুল জীবনযাত্রার কারণে বছরে ৮ হাজার ১৯০ টন কার্বন পৃথিবীর বায়ুম-লে জমা করেন। তবে অতি ধনী এমন বিলিয়নিয়ারদের জীবনযাত্রায় ভিন্নতার কারণে এই কার্বন নির্গমনে বড় ধরনের তারতম্য দেখা যায়।ধনকুবেরদের ব্যবহৃত প্রমোদতরী, উড়োজাহাজ, একাধিক বিলাসবহুল বাসভবন থেকে প্রতিনিয়ত উৎপাদিত কার্বন পরিবেশে জমা হচ্ছে। হেলিকপ্টার ও সাবমেরিন সংবলিত বিশাল আকারের প্রমোদতরী বছরে বায়ুম-লে ছাড়ে ৭ হাজার ২০ টন কার্বন। এটি পরিবেশ দূষণকারী বাহনগুলোর মধ্যে সবচেয়ে ভয়াবহ। বিশ্বের অন্যতম ধনী বিল গেটসের সম্পদ সবচেয়ে বেশি পরিবেশ দূষণকারী ধনকুবের রোমান অ্যাব্রামোভিচের চেয়ে ৯ গুণ বেশি।

তা সত্ত্বেও বিল গেটস বছরে পরিবেশদূষণে দায়ী কার্বন উৎপাদন করে ৭ হাজার ৪০৮ টন আর রাশিয়ার অ্যাব্রামোভিচ উৎপাদন করে ৩০ হাজার ৯২৫ টন কার্বন। যা যুক্তরাষ্ট্রের বিলিয়নিয়ার বিল গেটসের চেয়ে চার গুণ বেশি। এর কারণ হিসেবে গবেষণায় বলা হয়েছে, অ্যাব্রামোভিচ সবচেয়ে বেশি দূষণকারী যান বিলাসবহুল প্রমোদতরীতে সারা বিশ্বে ঘুরে বেড়ান।

বিল গেটস এ ধরনের প্রমোদতরী ব্যবহার করেন না। তিনি ব্যবহার করেন সাধারণ উড়োজাহাজ। অন্যদিকে অ্যাব্রামোভিচ ব্যবহার করেন বিশেষভাবে তৈরি বোয়িং যার ভেতরকার ডাইনিং টেবিলে বসতে পারেন একসঙ্গে ৩০ জন।

সাধারণ মানুষ কীভাবে কার্বন ছড়ায়

জার্মানিভিত্তিক অলাভজনক প্রতিষ্ঠান অ্যাটমোসফেয়ারের তথ্যমতে, উড়োজাহাজে লন্ডন থেকে নিউইয়র্কে যাওয়া-আসা করলে প্রত্যেক যাত্রীর বিপরীতে কার্বন নির্গমন হয় ৯৮৬ কিলোগ্রাম। বুরুন্ডি, প্যারাগুয়েসহ আফ্রিকা ও লাতিন আমেরিকার অন্তত ৫৬ দেশের সাধারণ একজন নাগরিক সারা বছরে এর চেয়ে কম পরিমাণ কার্বন বাতাসে ছাড়ে।

ক্লাইমেট ভালোনারেবল ফোরামের (সিভিএফ) ৪৮ সদস্য দেশ মোট বৈশ্বিক নির্গমনের মাত্র ৫ শতাংশের জন্য দায়ী, অথচ জলবায়ু পরিবর্তনের বিরূপ প্রভাব এসব দেশে জীবন ও জীবিকার জন্য মৌলিক হুমকি সৃষ্টি করেছে।

বায়ুম-লে অতিমাত্রায় কার্বন নির্গমনের ফলে বৈশ্বিক উষ্ণতা বাড়ছে। এতে হিমবাহের বরফ গলছে, বাড়ছে সমুদ্রে পানির উচ্চতা। প্লাবিত ও বিলীন হয়ে যাচ্ছে নি¤œাঞ্চল। জলবায়ু পরিবর্তনের বিরূপ প্রভাবে পুড়ছে ফসল আর বন। অন্যদিকে মানুষ, গবাদিপশু, ঘরবাড়ি ভাসছে বন্যায়। অনেক উন্নত দেশ পুড়ছে দাবানলের আগুনে। জলবায়ু পরিবর্তনে উন্নত দেশগুলো ক্ষতিকর গ্রিনহাউস গ্যাস নির্গমনের জন্য বেশি দায়ী।

উন্নয়নশীল ও অনুন্নত দেশ মাথাপিছু কার্বন নিঃসরণের জন্য যত না দায়ী, তার চেয়ে জলবায়ু পরিবর্তনের বিরূপ প্রভাবে আক্রান্ত হচ্ছে। উন্নত দেশগুলোর পক্ষ থেকে উন্নয়নশীল ও অনুন্নত দেশগুলোর জন্য জলবায়ু পরিবর্তনবিষয়ক ঝুঁকি মোকাবিলায় অর্থসহায়তা দিতে ১০০ বিলিয়ন ডলার দেয়ার বিষয়ে গত বছরের জলবায়ু সম্মেলনে সম্মত হয় অংশগ্রহণকারী দেশগুলো।