পূর্ণাঙ্গ রায় পাওয়ার আগে যেন দণ্ডিত ব্যক্তির ফাঁসি কার্যকর করা না হয়, এ জন্য অ্যাটর্নি জেনারেলকে কারা মহাপরিদর্শকের সঙ্গে কথা বলতে নির্দেশ দিয়েছেন সুপ্রিম কোর্টের আপিল বিভাগ। সর্বোচ্চ আদালতের পূর্ণাঙ্গ রায় প্রকাশ হওয়ার আগেই এক আসামির মৃত্যুদণ্ড কার্যকরে তোড়জোড় চলছে বলে তার আইনজীবী আদালতের দৃষ্টি আকর্ষণ করলে গতকাল প্রধান বিচারপতি সৈয়দ মাহমুদ হোসেনের নেতৃত্বাধীন পাঁচ সদস্যের আপিল বিভাগ এ আদেন দেন।
আদালতের কার্যক্রম শুরু হলে জ্যেষ্ঠ আইনজীবী ইউসুফ হোসেন হুমায়ুন একটি মামলা মেনশন করার কথা বলেন। এ সময় প্রধান বিচারপতি বলেন, হ্যাংগিংয়ের (ফাঁসি) মামলা নিয়ে কত সমালোচনা হচ্ছে। ২০০৬ সালের মামলা শুনতে লিস্টে নিয়ে এসেছি। ২০০৬, ২০০৭ ও ২০০৮ সালের মামলাগুলোর পর ২০১৫ সালের মামলাগুলো প্রায় শেষ করেছিলাম। এখন দেখা যায়, ২০১৩ সালের কিছু বাকি আছে।
তখন আইনজীবী হেলাল উদ্দিন মোল্লা আদালতকে জানান, পূর্ণাঙ্গ রায় প্রকাশ হওয়ার আগেই তার মক্কেলের ফাঁসি কার্যকরের উদ্যোগ নেয়া হয়েছে। এ সময় প্রধান বিচারপতি জানতে চান, আসামিপক্ষ রিভিউ আবেদন করেছে কিনা? আইনজীবী হেলাল উদ্দিন মোল্লা বলেন, ওকালতনামা পাইনি। ডিসির মাধ্যমে এখন ওকালতনামা পেতে ১০ দিন লাগে। অ্যাডভান্স অর্ডারের জন্য আসামির প্রাণভিক্ষার আবেদন খারিজ হয়েছে। এখনও রায়ে সই হয়নি।
বিচারপতি হাসান ফয়েজ সিদ্দিকী তখন বলেন, যাদের মৃত্যুদণ্ড থেকে যাবজ্জীবন হয়েছে তাদের ক্ষেত্রে অ্যাডভান্স অর্ডার দেয়া হয়েছে, যাতে তাদের কারাগারে কনডেম সেল থেকে সাধারণ কারা কক্ষে নেয়া হয়। আপিল বিভাগের ওই রায়ে এখনও সই হয়নি।
আইনজীবী হেলাল উদ্দিন মোল্লা বলেন, অথচ আদেশ কুষ্টিয়ার বিচারিক আদালতে গেছে। সেখান থেকে দণ্ড কার্যকর করতে কাশিমপুর কারাগারে মৃত্যু পরোয়ানা পাঠিয়ে দেয়া হয়েছে। প্রধান বিচারপতি বলেন, পূর্ণাঙ্গ রায় পাওয়ার আগে তো (দণ্ড কার্যকর) হবে না। পরে প্রধান বিচারপতি অ্যাটর্নি জেনারেল এ এম আমিন উদ্দিনকে বলেন, আপনি আইজি প্রিজনকে বলবেন, পূর্ণাঙ্গ রায় পাওয়ার আগে যাতে দণ্ড কার্যকর করা না হয়।
এদিকে, আদালত থেকে বেরিয়ে আইনজীবী হেলাল উদ্দিন মোল্লা জানান, গত ১৮ আগস্ট আপিল বিভাগ শুকুর আলীর ফাঁসি বহাল রাখেন। এ মামলায় অপর তিন আসামির মৃত্যুদণ্ড কমিয়ে যাবজ্জীবন কারাদণ্ড দেয়া হয়। এরপর আপিল বিভাগের রায়ের অগ্রিম অর্ডার পেয়ে কাশিমপুর কারা কর্তৃপক্ষ শুকুর আলীর ফাঁসি কার্যকরের উদ্যোগ নেয়। এর অংশ হিসেবে রাষ্ট্রপতির কাছে ক্ষমা প্রার্থনার আবেদন জানানো হয়। রাষ্ট্রপতি ক্ষমা প্রার্থনার আবেদন খারিজ করে দেন।
হেলাল উদ্দিন বলেন, ফাঁসি কার্যকরের উদ্যোগের কথা আমাকে জানানো হয়। তখন আমি কারা কর্তৃপক্ষের সঙ্গে যোগাযোগ করে আপিল বিভাগের পূর্ণাঙ্গ রায় ও রিভিউ আবেদন দায়ের করার কথা বলি। আপিল বিভাগের পূর্ণাঙ্গ রায় প্রকাশের আগে তো ফাঁসি কার্যকরের উদ্যোগ নিতে পারে না। এরপর রিভিউ আবেদনের সুযোগও আসামিকে দিতে হবে। আমি আদালতে এসব কথা বলেছি। পরে আপিল বিভাগ শুকুর আলীর ফাঁসি কার্যকর স্থগিত রাখতে বলেছেন।
গত ১৮ আগস্ট কুষ্টিয়ার দৌলতপুর উপজেলার লালনগরে এক শিশুকে ধর্ষণ ও হত্যার মামলায় আসামি শুকুর আলীর মৃত্যুদণ্ড বহাল রাখা হয়। নুরুদ্দিন সেন্টু, আজানুর রহমান ও মামুন হোসেনের দণ্ড কমিয়ে যাবজ্জীবন কারাদণ্ড দেয়া হয়। তাদের কনডেম সেল থেকে স্বাভাবিক সেলে স্থানান্তরের নির্দেশ দেয়া হয়।
সোমবার, ০৮ নভেম্বর ২০২১ , ২৩ কার্তিক ১৪২৮ ৩১ রবিউল আউয়াল ১৪৪৩
আদালত বার্তা পরিবেশক
পূর্ণাঙ্গ রায় পাওয়ার আগে যেন দণ্ডিত ব্যক্তির ফাঁসি কার্যকর করা না হয়, এ জন্য অ্যাটর্নি জেনারেলকে কারা মহাপরিদর্শকের সঙ্গে কথা বলতে নির্দেশ দিয়েছেন সুপ্রিম কোর্টের আপিল বিভাগ। সর্বোচ্চ আদালতের পূর্ণাঙ্গ রায় প্রকাশ হওয়ার আগেই এক আসামির মৃত্যুদণ্ড কার্যকরে তোড়জোড় চলছে বলে তার আইনজীবী আদালতের দৃষ্টি আকর্ষণ করলে গতকাল প্রধান বিচারপতি সৈয়দ মাহমুদ হোসেনের নেতৃত্বাধীন পাঁচ সদস্যের আপিল বিভাগ এ আদেন দেন।
আদালতের কার্যক্রম শুরু হলে জ্যেষ্ঠ আইনজীবী ইউসুফ হোসেন হুমায়ুন একটি মামলা মেনশন করার কথা বলেন। এ সময় প্রধান বিচারপতি বলেন, হ্যাংগিংয়ের (ফাঁসি) মামলা নিয়ে কত সমালোচনা হচ্ছে। ২০০৬ সালের মামলা শুনতে লিস্টে নিয়ে এসেছি। ২০০৬, ২০০৭ ও ২০০৮ সালের মামলাগুলোর পর ২০১৫ সালের মামলাগুলো প্রায় শেষ করেছিলাম। এখন দেখা যায়, ২০১৩ সালের কিছু বাকি আছে।
তখন আইনজীবী হেলাল উদ্দিন মোল্লা আদালতকে জানান, পূর্ণাঙ্গ রায় প্রকাশ হওয়ার আগেই তার মক্কেলের ফাঁসি কার্যকরের উদ্যোগ নেয়া হয়েছে। এ সময় প্রধান বিচারপতি জানতে চান, আসামিপক্ষ রিভিউ আবেদন করেছে কিনা? আইনজীবী হেলাল উদ্দিন মোল্লা বলেন, ওকালতনামা পাইনি। ডিসির মাধ্যমে এখন ওকালতনামা পেতে ১০ দিন লাগে। অ্যাডভান্স অর্ডারের জন্য আসামির প্রাণভিক্ষার আবেদন খারিজ হয়েছে। এখনও রায়ে সই হয়নি।
বিচারপতি হাসান ফয়েজ সিদ্দিকী তখন বলেন, যাদের মৃত্যুদণ্ড থেকে যাবজ্জীবন হয়েছে তাদের ক্ষেত্রে অ্যাডভান্স অর্ডার দেয়া হয়েছে, যাতে তাদের কারাগারে কনডেম সেল থেকে সাধারণ কারা কক্ষে নেয়া হয়। আপিল বিভাগের ওই রায়ে এখনও সই হয়নি।
আইনজীবী হেলাল উদ্দিন মোল্লা বলেন, অথচ আদেশ কুষ্টিয়ার বিচারিক আদালতে গেছে। সেখান থেকে দণ্ড কার্যকর করতে কাশিমপুর কারাগারে মৃত্যু পরোয়ানা পাঠিয়ে দেয়া হয়েছে। প্রধান বিচারপতি বলেন, পূর্ণাঙ্গ রায় পাওয়ার আগে তো (দণ্ড কার্যকর) হবে না। পরে প্রধান বিচারপতি অ্যাটর্নি জেনারেল এ এম আমিন উদ্দিনকে বলেন, আপনি আইজি প্রিজনকে বলবেন, পূর্ণাঙ্গ রায় পাওয়ার আগে যাতে দণ্ড কার্যকর করা না হয়।
এদিকে, আদালত থেকে বেরিয়ে আইনজীবী হেলাল উদ্দিন মোল্লা জানান, গত ১৮ আগস্ট আপিল বিভাগ শুকুর আলীর ফাঁসি বহাল রাখেন। এ মামলায় অপর তিন আসামির মৃত্যুদণ্ড কমিয়ে যাবজ্জীবন কারাদণ্ড দেয়া হয়। এরপর আপিল বিভাগের রায়ের অগ্রিম অর্ডার পেয়ে কাশিমপুর কারা কর্তৃপক্ষ শুকুর আলীর ফাঁসি কার্যকরের উদ্যোগ নেয়। এর অংশ হিসেবে রাষ্ট্রপতির কাছে ক্ষমা প্রার্থনার আবেদন জানানো হয়। রাষ্ট্রপতি ক্ষমা প্রার্থনার আবেদন খারিজ করে দেন।
হেলাল উদ্দিন বলেন, ফাঁসি কার্যকরের উদ্যোগের কথা আমাকে জানানো হয়। তখন আমি কারা কর্তৃপক্ষের সঙ্গে যোগাযোগ করে আপিল বিভাগের পূর্ণাঙ্গ রায় ও রিভিউ আবেদন দায়ের করার কথা বলি। আপিল বিভাগের পূর্ণাঙ্গ রায় প্রকাশের আগে তো ফাঁসি কার্যকরের উদ্যোগ নিতে পারে না। এরপর রিভিউ আবেদনের সুযোগও আসামিকে দিতে হবে। আমি আদালতে এসব কথা বলেছি। পরে আপিল বিভাগ শুকুর আলীর ফাঁসি কার্যকর স্থগিত রাখতে বলেছেন।
গত ১৮ আগস্ট কুষ্টিয়ার দৌলতপুর উপজেলার লালনগরে এক শিশুকে ধর্ষণ ও হত্যার মামলায় আসামি শুকুর আলীর মৃত্যুদণ্ড বহাল রাখা হয়। নুরুদ্দিন সেন্টু, আজানুর রহমান ও মামুন হোসেনের দণ্ড কমিয়ে যাবজ্জীবন কারাদণ্ড দেয়া হয়। তাদের কনডেম সেল থেকে স্বাভাবিক সেলে স্থানান্তরের নির্দেশ দেয়া হয়।