গণপ্রকৌশল দিবস

পাপন বড়ুয়া

৮ নভেম্বর গণপ্রকৌশল দিবস। দেশের অন্যতম বৃহৎ পেশাজীবী সংগঠন ইনস্টিটিউশন অব ডিপ্লোমা ইঞ্জিনিয়ার্স বাংলাদেশ (আইডিইবি) এ দিনটি প্রতি বছর গুরুত্বের সঙ্গে পালন করে। প্রযুক্তিতে গণমানুষের সম-অধিকার প্রতিষ্ঠা করা এবং গণমুখী প্রযুক্তি প্রবর্তনই দিনটির মূল লক্ষ্য। এবার দিবসটির প্রতিপাদ্য নির্ধারণ করা হয়েছে ‘সম্প্রীতির সমৃদ্ধ জাতি গঠনে আধুনিক জ্ঞান ও কর্মশক্তিতে বলীয়ান শিক্ষা।’

সমাজে সম্প্রীতি বিদ্যমান থাকলে সেখানে মানুষের মধ্যে অবশ্যই বিরাজ করবে সৌহার্দ্য, সদ্ভাব, বন্ধুত্ব আর প্রীতিময় সম্পর্ক। যে সমাজে মানুষে মানুষে সম্প্রীতির বন্ধন শক্তিশালী সে সমাজে শান্তির অভাব হয় না। যে জাতি বা দেশ সম্প্রীতিতে যত এগিয়ে সে জাতি-দেশ তত বেশি সমৃদ্ধ, উন্নত। উদাহরণ হিসেবে জাপানের কথা বলা যেতে পারে। জাপান শুধু নিজ দেশে নয় বহিঃদেশগুলোর সঙ্গে সম্প্রীতির মায়াময় সম্পর্কে আবদ্ধ সেজন্য জাপান বিশ্বের উন্নত ও অগ্রগামী দেশগুলোর প্রথমসারির একটি দেশ।

পেশাজীবী সংগঠনের জন্ম হয় সংশ্লিষ্ট পেশাজীবীদের অধিকার রক্ষা তথা আত্মোন্নয়নের জন্য। পাশাপাশি সামাজিক ও জাতীয় উন্নয়নেও কিছুটা অবদান রাখে কিন্তু পাঁচ লক্ষাধিক সদস্যের দেশের অন্যতম বৃহৎ পেশাজীবী সংগঠন ইনস্টিটিউশন অব ডিপ্লোমা ইঞ্জিনিয়ার্স, বাংলাদেশ (আইডিইবি) একেবারে ভিন্ন। আইডিইবি তাদের কার্যক্রমের শতকরা ৭৫ ভাগ জাতির স্বার্থে এবং মাত্র ২৫ ভাগ সদস্য প্রকৌশলীদের স্বার্থ সংশ্লিষ্ট, যা পক্ষান্তরে জাতীয় স্বার্থেই পরিচালিত। মহান মুক্তিযুদ্ধের চেতনা ও আদর্শের প্রতি দায়বদ্ধ থেকে সুখী ও উন্নত বাংলাদেশ নির্মাণে আইডিইবি জাতীয় স্বার্থে বহুমাত্রিক কার্যক্রম পরিচালনা করে ইতোমধ্যে সুধীমহলের দৃষ্টি আকর্ষণে সমর্থ হয়েছে।

বিশেষ করে পানিসম্পদ ব্যবস্থাপনা, নদীর নাব্যতা রক্ষা, জলাবদ্ধতা নিরসন, পরিকল্পিত নগরায়ণ, উন্নত রেল, নৌ ও সড়ক যোগাযোগ, মানবসম্পদ উন্নয়নে কারিগরি বৃত্তিমূলক শিক্ষার প্রসার, কৃষি জমি রক্ষা, রোহিঙ্গা সংকট ও উত্তোরণ, জলবায়ু পরির্তনজনিত প্রাকৃতিক দুর্যোগ মোকাবিলায় প্রযুক্তির সহজলভ্যতা, বজ্রপাতজনিত ভয়াবহতা মোকাবিলায় করণীয়সহ আইডিইবি একাধিক গবেষণা কার্যক্রম পরিচালনা ও তথ্যবহুল প্রতিবেদন সরকার ও সংশ্লিষ্ট মহলে উপস্থাপন করে জনমত গঠনে কাজ করে যাচ্ছে। আইডিইবি ইতোমধ্যে শতাধিক জাতীয় ও গুরুত্বপূর্ণ বিষয়ে গবেষণা কার্যক্রম পরিচালনায় সক্ষম হয়েছে, যার অধিকাংশ সুপারিশ সরকার বাস্তবায়ন করেছে।

ইনস্টিটিউশন অব ডিপ্লোমা ইঞ্জিনিয়ার্স, বাংলাদেশ (আইডিইবি) দেশের সুশৃঙ্খল ও ব্যতিক্রমী একটি বৃহৎ পেশাজীবী সংগঠন। দাবি আদায়ের জন্য অন্যন্যা পেশাজীবী সংগঠনগুলো যখন হরতাল, কর্মবিরতিসহ রাষ্ট্রীয় ও জনক্ষতিকর কর্মসূচি পালনের মাধ্যমে আন্দোলন করে তখন আইডিইবি ‘ধ্বংস নয় সৃষ্টি’র মন্ত্রে উজ্জীবিত হয়ে মূল কর্মঘণ্টার এক ঘণ্টা অতিরিক্ত কাজ করে তাদের নৈতিক দাবি উপস্থাপন করেন। আইডিইবির এই পজিটিভ আন্দোলনের সংস্কৃতি সর্বমহলে বেশ প্রশংসিত হয়েছে।

আমাদের বিশ্বাস জাতি-ধর্ম-বর্ণ-ধনী-দরিদ্র নির্বিশেষে পৃথিবীর সব মানুষের মধ্যে সম্প্রীতি প্রতিষ্ঠা সম্ভব হলেই পুরো বিশ্বের উন্নয়ন ও অগ্রযাত্রা নিশ্চিত হবে। ‘প্রযুক্তি চিন্তাহীন রাজনীতি শোষণের হাতিয়ার’ এ সেøাগানকে বুকে ধারণ করা গণপ্রকৌশলীদের গণপ্রকৌশল দিবসের সফলতা জাতীয় উন্নয়নে অবদান রাখুকÑ এটাই আমাদের প্রত্যাশা।

[লেখক : ছাত্রবিষয়ক সম্পাদক, ইনস্টিটিউশন অব ডিপ্লোমা ইঞ্জিনিয়ার্স, বাংলাদেশ (আইডিইবি) চট্টগ্রাম জেলা নির্বাহী কমিটি]

সোমবার, ০৮ নভেম্বর ২০২১ , ২৩ কার্তিক ১৪২৮ ৩১ রবিউল আউয়াল ১৪৪৩

গণপ্রকৌশল দিবস

পাপন বড়ুয়া

৮ নভেম্বর গণপ্রকৌশল দিবস। দেশের অন্যতম বৃহৎ পেশাজীবী সংগঠন ইনস্টিটিউশন অব ডিপ্লোমা ইঞ্জিনিয়ার্স বাংলাদেশ (আইডিইবি) এ দিনটি প্রতি বছর গুরুত্বের সঙ্গে পালন করে। প্রযুক্তিতে গণমানুষের সম-অধিকার প্রতিষ্ঠা করা এবং গণমুখী প্রযুক্তি প্রবর্তনই দিনটির মূল লক্ষ্য। এবার দিবসটির প্রতিপাদ্য নির্ধারণ করা হয়েছে ‘সম্প্রীতির সমৃদ্ধ জাতি গঠনে আধুনিক জ্ঞান ও কর্মশক্তিতে বলীয়ান শিক্ষা।’

সমাজে সম্প্রীতি বিদ্যমান থাকলে সেখানে মানুষের মধ্যে অবশ্যই বিরাজ করবে সৌহার্দ্য, সদ্ভাব, বন্ধুত্ব আর প্রীতিময় সম্পর্ক। যে সমাজে মানুষে মানুষে সম্প্রীতির বন্ধন শক্তিশালী সে সমাজে শান্তির অভাব হয় না। যে জাতি বা দেশ সম্প্রীতিতে যত এগিয়ে সে জাতি-দেশ তত বেশি সমৃদ্ধ, উন্নত। উদাহরণ হিসেবে জাপানের কথা বলা যেতে পারে। জাপান শুধু নিজ দেশে নয় বহিঃদেশগুলোর সঙ্গে সম্প্রীতির মায়াময় সম্পর্কে আবদ্ধ সেজন্য জাপান বিশ্বের উন্নত ও অগ্রগামী দেশগুলোর প্রথমসারির একটি দেশ।

পেশাজীবী সংগঠনের জন্ম হয় সংশ্লিষ্ট পেশাজীবীদের অধিকার রক্ষা তথা আত্মোন্নয়নের জন্য। পাশাপাশি সামাজিক ও জাতীয় উন্নয়নেও কিছুটা অবদান রাখে কিন্তু পাঁচ লক্ষাধিক সদস্যের দেশের অন্যতম বৃহৎ পেশাজীবী সংগঠন ইনস্টিটিউশন অব ডিপ্লোমা ইঞ্জিনিয়ার্স, বাংলাদেশ (আইডিইবি) একেবারে ভিন্ন। আইডিইবি তাদের কার্যক্রমের শতকরা ৭৫ ভাগ জাতির স্বার্থে এবং মাত্র ২৫ ভাগ সদস্য প্রকৌশলীদের স্বার্থ সংশ্লিষ্ট, যা পক্ষান্তরে জাতীয় স্বার্থেই পরিচালিত। মহান মুক্তিযুদ্ধের চেতনা ও আদর্শের প্রতি দায়বদ্ধ থেকে সুখী ও উন্নত বাংলাদেশ নির্মাণে আইডিইবি জাতীয় স্বার্থে বহুমাত্রিক কার্যক্রম পরিচালনা করে ইতোমধ্যে সুধীমহলের দৃষ্টি আকর্ষণে সমর্থ হয়েছে।

বিশেষ করে পানিসম্পদ ব্যবস্থাপনা, নদীর নাব্যতা রক্ষা, জলাবদ্ধতা নিরসন, পরিকল্পিত নগরায়ণ, উন্নত রেল, নৌ ও সড়ক যোগাযোগ, মানবসম্পদ উন্নয়নে কারিগরি বৃত্তিমূলক শিক্ষার প্রসার, কৃষি জমি রক্ষা, রোহিঙ্গা সংকট ও উত্তোরণ, জলবায়ু পরির্তনজনিত প্রাকৃতিক দুর্যোগ মোকাবিলায় প্রযুক্তির সহজলভ্যতা, বজ্রপাতজনিত ভয়াবহতা মোকাবিলায় করণীয়সহ আইডিইবি একাধিক গবেষণা কার্যক্রম পরিচালনা ও তথ্যবহুল প্রতিবেদন সরকার ও সংশ্লিষ্ট মহলে উপস্থাপন করে জনমত গঠনে কাজ করে যাচ্ছে। আইডিইবি ইতোমধ্যে শতাধিক জাতীয় ও গুরুত্বপূর্ণ বিষয়ে গবেষণা কার্যক্রম পরিচালনায় সক্ষম হয়েছে, যার অধিকাংশ সুপারিশ সরকার বাস্তবায়ন করেছে।

ইনস্টিটিউশন অব ডিপ্লোমা ইঞ্জিনিয়ার্স, বাংলাদেশ (আইডিইবি) দেশের সুশৃঙ্খল ও ব্যতিক্রমী একটি বৃহৎ পেশাজীবী সংগঠন। দাবি আদায়ের জন্য অন্যন্যা পেশাজীবী সংগঠনগুলো যখন হরতাল, কর্মবিরতিসহ রাষ্ট্রীয় ও জনক্ষতিকর কর্মসূচি পালনের মাধ্যমে আন্দোলন করে তখন আইডিইবি ‘ধ্বংস নয় সৃষ্টি’র মন্ত্রে উজ্জীবিত হয়ে মূল কর্মঘণ্টার এক ঘণ্টা অতিরিক্ত কাজ করে তাদের নৈতিক দাবি উপস্থাপন করেন। আইডিইবির এই পজিটিভ আন্দোলনের সংস্কৃতি সর্বমহলে বেশ প্রশংসিত হয়েছে।

আমাদের বিশ্বাস জাতি-ধর্ম-বর্ণ-ধনী-দরিদ্র নির্বিশেষে পৃথিবীর সব মানুষের মধ্যে সম্প্রীতি প্রতিষ্ঠা সম্ভব হলেই পুরো বিশ্বের উন্নয়ন ও অগ্রযাত্রা নিশ্চিত হবে। ‘প্রযুক্তি চিন্তাহীন রাজনীতি শোষণের হাতিয়ার’ এ সেøাগানকে বুকে ধারণ করা গণপ্রকৌশলীদের গণপ্রকৌশল দিবসের সফলতা জাতীয় উন্নয়নে অবদান রাখুকÑ এটাই আমাদের প্রত্যাশা।

[লেখক : ছাত্রবিষয়ক সম্পাদক, ইনস্টিটিউশন অব ডিপ্লোমা ইঞ্জিনিয়ার্স, বাংলাদেশ (আইডিইবি) চট্টগ্রাম জেলা নির্বাহী কমিটি]