চতুর্থ দিনের ধর্মঘট অব্যাহত, পেছালো ৯ হাজার ৭৮০ কনটেইনার পণ্যের রপ্তানি

জ্বালানি তেলের দাম বৃদ্ধির কারণে ভাড়া বাড়ানোর পর গণপরিবহন চলাচল শুরু হয়েছে। তবে সেই ধর্মঘট টানা চতুর্থ দিনের মতো অব্যাহত রেখেছেন পণ্যবাহী যানবাহনের মালিকরা। এতে গতকাল সকাল থেকে চট্টগ্রাম সমুদ্রবন্দরে সীমিতভাবে পণ্য খালাস হলেও এখনও ডিপো থেকে বন্দরে কনটেইনার আনানেয়া বন্ধ রয়েছে। এতে চরমভাবে ব্যাহত হচ্ছে আমদানি-রপ্তানি কার্যক্রম।

এই ধর্মঘটের প্রভাবে রপ্তানি পণ্য পরিবহনের চক্র পুরোপুরি ভেঙে পড়েছে বন্দরে। গত রোববার ১ হাজার ৯০০ কন্টেইনার পণ্য রপ্তানি হওয়ার কথা থাকলেও তা হয়নি। এ জন্য বেসরকারি কন্টেইনার ডিপোতে অপেক্ষায় থাকা ৯ হাজার ৭৮০ কনটেইনার পণ্যের রপ্তানি পিছিয়ে গেছে।

সমুদ্রপথে রপ্তানি কনটেইনারের ৯৮ শতাংশ চট্টগ্রাম বন্দর দিয়ে রপ্তানি হয়। প্রতিদিন এ বন্দর দিয়ে গড়ে ১ হাজার ৯০০ কনটেইনার পণ্য বিদেশে পাঠানো হয়।

আন্তর্জাতিক বাজারে জ্বালানি তেলের দামে ঊর্ধ্বগতির কারণে ভারতসহ বিশ্বের অন্যান্য দেশের মতো বাংলাদেশেও ডিজেল-কেরোসিনের দাম পুনর্র্নিধারণ করে সরকার। গত ৩ নভেম্বর রাতে বিদ্যুৎ, জ্বালানি ও খনিজ সম্পদ মন্ত্রণালয় ডিজেল ও কেরোসিনের দাম লিটারে ১৫ টাকা বাড়িয়ে বিজ্ঞপ্তি জারি করে। নতুন দাম ভোক্তা পর্যায়ে ৬৫ টাকা থেকে বাড়িয়ে ৮০ টাকা করা হয়েছে, যা বৃহস্পতিবার থেকে কার্যকর হয়।

এ নিয়ে পরদিন গত বৃহস্পতিবার পরিবহন খাতের বিভিন্ন সংগঠনের নেতারা বৈঠক করেন। বৈঠক শেষে পূবঘোষণা ছাড়াই শুক্রবার সকাল ছয়টা থেকে সারাদেশে ধর্মঘটের ডাক দেওয়া হয়। ধর্মঘটের তৃতীয় দিন রোববার দুপুরে ভাড়া বাড়ানোর ঘোষণা আসার পর বিকেলেই গণপরিবহন চলাচল শুরু হয়। তবে চতুর্থ দিনের মতো সোমবারও ধর্মঘট অব্যাহত রেখেছেন পণ্যবাহী যানবাহন মালিকরা।

চলমান ধর্মঘটে দেশের প্রায় ৯২ ভাগ আমদানি-রপ্তানি বাণিজ্যের নিয়ন্ত্রক চট্টগ্রাম বন্দরে গত শুক্রবার সকাল ছয়টা থেকে গত রোববার পর্যন্ত বন্ধ ছিলো পণ্য খালাস কার্যক্রম। সোমবার কিছু কিছু পণ্য খালাস হলেও বন্দরে ইয়ার্ডে বর্তমানে কনটেইনার জমা রয়েছে প্রায় ৩৮ হাজার টিইইউসেরও (২০ ফুট দৈর্ঘ্যের একক) বেশি। দ্রুত এ সমস্যার সমাধান না হলে পণ্যজটের আশঙ্কা করছেন বন্দর সংশ্লিষ্টরা।

বন্দর সচিব ওমর ফারুক গণমাধ্যমকে বলেন, ‘ধর্মঘটের চতুর্থ দিনে কিছু পণ্য খালাস হলেও ডিপো থেকে বন্দরে মালামাল আনানেয়া বন্ধ রয়েছে। বন্দরে আরও ১১ হাজার টিইইউস কনটেইনার রাখা যাবে। দ্রুত ধর্মঘট প্রত্যাহার না হলে পণ্যজট তৈরি হতে পারে।’

সংশ্লিষ্টরা বলছেন, পণ্য পরিবহন বন্ধ থাকায় দেশের আমদানি-রপ্তানি ব্যাহত হচ্ছে। বন্দরে জাহাজের অপেক্ষা বাড়ছে। এতে বাড়ছে পরিবহন ব্যয়। সর্বোপরি ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছেন ব্যবসায়ীরা। যার প্রভাব পড়ছে জনগণের ওপর।

বাংলাদেশ ইনল্যান্ড কনটেইনার ডিপোস অ্যাসোসিয়েশন (বিকডা) মহাসচিব রুহুল আমিন শিকদার বলেন, ‘স্বাভাবিক সময়ে বন্দর থেকে বিভিন্ন ডিপোতে দৈনিক পাঁচ থেকে সাড়ে পাঁচ হাজার কনটেইনার আনানেয়া হয়। ধর্মঘটের পর থেকে সেটি বন্ধ রয়েছে। ডিপোতে বর্তমানে রপ্তানি পণ্যের কনটেইনার রয়েছে নয় হাজার ৭০০, আমদানি পণ্যের আট হাজার এবং খালি কনটেইনার রয়েছে ৩৪ হাজারের মতো।’

মঙ্গলবার, ০৯ নভেম্বর ২০২১ , ২৪ কার্তিক ১৪২৮ ৩ রবিউস সানি ১৪৪৩

চতুর্থ দিনের ধর্মঘট অব্যাহত, পেছালো ৯ হাজার ৭৮০ কনটেইনার পণ্যের রপ্তানি

অর্থনৈতিক বার্তা পরিবেশক

image

জ্বালানি তেলের দাম বৃদ্ধির কারণে ভাড়া বাড়ানোর পর গণপরিবহন চলাচল শুরু হয়েছে। তবে সেই ধর্মঘট টানা চতুর্থ দিনের মতো অব্যাহত রেখেছেন পণ্যবাহী যানবাহনের মালিকরা। এতে গতকাল সকাল থেকে চট্টগ্রাম সমুদ্রবন্দরে সীমিতভাবে পণ্য খালাস হলেও এখনও ডিপো থেকে বন্দরে কনটেইনার আনানেয়া বন্ধ রয়েছে। এতে চরমভাবে ব্যাহত হচ্ছে আমদানি-রপ্তানি কার্যক্রম।

এই ধর্মঘটের প্রভাবে রপ্তানি পণ্য পরিবহনের চক্র পুরোপুরি ভেঙে পড়েছে বন্দরে। গত রোববার ১ হাজার ৯০০ কন্টেইনার পণ্য রপ্তানি হওয়ার কথা থাকলেও তা হয়নি। এ জন্য বেসরকারি কন্টেইনার ডিপোতে অপেক্ষায় থাকা ৯ হাজার ৭৮০ কনটেইনার পণ্যের রপ্তানি পিছিয়ে গেছে।

সমুদ্রপথে রপ্তানি কনটেইনারের ৯৮ শতাংশ চট্টগ্রাম বন্দর দিয়ে রপ্তানি হয়। প্রতিদিন এ বন্দর দিয়ে গড়ে ১ হাজার ৯০০ কনটেইনার পণ্য বিদেশে পাঠানো হয়।

আন্তর্জাতিক বাজারে জ্বালানি তেলের দামে ঊর্ধ্বগতির কারণে ভারতসহ বিশ্বের অন্যান্য দেশের মতো বাংলাদেশেও ডিজেল-কেরোসিনের দাম পুনর্র্নিধারণ করে সরকার। গত ৩ নভেম্বর রাতে বিদ্যুৎ, জ্বালানি ও খনিজ সম্পদ মন্ত্রণালয় ডিজেল ও কেরোসিনের দাম লিটারে ১৫ টাকা বাড়িয়ে বিজ্ঞপ্তি জারি করে। নতুন দাম ভোক্তা পর্যায়ে ৬৫ টাকা থেকে বাড়িয়ে ৮০ টাকা করা হয়েছে, যা বৃহস্পতিবার থেকে কার্যকর হয়।

এ নিয়ে পরদিন গত বৃহস্পতিবার পরিবহন খাতের বিভিন্ন সংগঠনের নেতারা বৈঠক করেন। বৈঠক শেষে পূবঘোষণা ছাড়াই শুক্রবার সকাল ছয়টা থেকে সারাদেশে ধর্মঘটের ডাক দেওয়া হয়। ধর্মঘটের তৃতীয় দিন রোববার দুপুরে ভাড়া বাড়ানোর ঘোষণা আসার পর বিকেলেই গণপরিবহন চলাচল শুরু হয়। তবে চতুর্থ দিনের মতো সোমবারও ধর্মঘট অব্যাহত রেখেছেন পণ্যবাহী যানবাহন মালিকরা।

চলমান ধর্মঘটে দেশের প্রায় ৯২ ভাগ আমদানি-রপ্তানি বাণিজ্যের নিয়ন্ত্রক চট্টগ্রাম বন্দরে গত শুক্রবার সকাল ছয়টা থেকে গত রোববার পর্যন্ত বন্ধ ছিলো পণ্য খালাস কার্যক্রম। সোমবার কিছু কিছু পণ্য খালাস হলেও বন্দরে ইয়ার্ডে বর্তমানে কনটেইনার জমা রয়েছে প্রায় ৩৮ হাজার টিইইউসেরও (২০ ফুট দৈর্ঘ্যের একক) বেশি। দ্রুত এ সমস্যার সমাধান না হলে পণ্যজটের আশঙ্কা করছেন বন্দর সংশ্লিষ্টরা।

বন্দর সচিব ওমর ফারুক গণমাধ্যমকে বলেন, ‘ধর্মঘটের চতুর্থ দিনে কিছু পণ্য খালাস হলেও ডিপো থেকে বন্দরে মালামাল আনানেয়া বন্ধ রয়েছে। বন্দরে আরও ১১ হাজার টিইইউস কনটেইনার রাখা যাবে। দ্রুত ধর্মঘট প্রত্যাহার না হলে পণ্যজট তৈরি হতে পারে।’

সংশ্লিষ্টরা বলছেন, পণ্য পরিবহন বন্ধ থাকায় দেশের আমদানি-রপ্তানি ব্যাহত হচ্ছে। বন্দরে জাহাজের অপেক্ষা বাড়ছে। এতে বাড়ছে পরিবহন ব্যয়। সর্বোপরি ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছেন ব্যবসায়ীরা। যার প্রভাব পড়ছে জনগণের ওপর।

বাংলাদেশ ইনল্যান্ড কনটেইনার ডিপোস অ্যাসোসিয়েশন (বিকডা) মহাসচিব রুহুল আমিন শিকদার বলেন, ‘স্বাভাবিক সময়ে বন্দর থেকে বিভিন্ন ডিপোতে দৈনিক পাঁচ থেকে সাড়ে পাঁচ হাজার কনটেইনার আনানেয়া হয়। ধর্মঘটের পর থেকে সেটি বন্ধ রয়েছে। ডিপোতে বর্তমানে রপ্তানি পণ্যের কনটেইনার রয়েছে নয় হাজার ৭০০, আমদানি পণ্যের আট হাজার এবং খালি কনটেইনার রয়েছে ৩৪ হাজারের মতো।’