সৈয়দপুরে ক্ষতিকর মশার কয়েলে বাজার সয়লাব : হুমকিতে জনস্বাস্থ্য

সৈয়দপুরে ক্ষতিকর কেমিক্যাল দিয়ে তৈরি নিম্নœমানের কয়েল অবাধে বিক্রি হচ্ছে। কোম্পানির নাম ঠিকানাবিহীন এসব কয়েল স্থানীয়ভাবে তৈরি করার অভিযোগ রয়েছে। এমনকি নামীদামী কোম্পানির মোড়কেও বিক্রি করা হচ্ছে নকল কয়েল। বিএসটিআইয়ের অনুমোদন ছাড়াই বর্ণিল মোড়কে হরেক নামের কয়েলে বাজার সয়লাব হয়ে গেছে। এসব কয়েলের বিষাক্ত ধোঁয়া ঘরের ভেতর বায়ু দূষণসহ মানবদেহের জন্য স্বাস্থ্যঝুঁকি সৃষ্টি করছে।

জানা যায়, বিশ্ব স্বাস্থ্যসংস্থা মশার কয়েলে সর্বোচ্চ শূন্য দশমিক ৩ মাত্রার অ্যাকটিভ ইনগ্রেডিয়েন্ট বা কেমিক্যাল ব্যবহারের নির্দেশনা রয়েছে। অধ্যাদেশ অনুসারে মশার কয়েল উৎপাদন, বাজারজাত ও সংরক্ষণে কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের অনুমোদন বাধ্যতামূলক। এছাড়া অনুমোদনের পর পাবলিক হেলথ প্রডাক্ট (পিএইচপি) নম্বর ও বিএসটিআইয়ের অনুমোদন নিয়েই সংশ্লিষ্ট কোম্পানিকে বালাইনাশক পণ্য উৎপাদন ও বাজারজাত করার কথা। কিন্তু এ উপজেলায় এ আইন মানা হচ্ছে না। শহরের গোলাহাট, মিস্ত্রিপাড়া, ইসলামবাগ, টার্মিনাল, কাজীরহাটসহ বিভিন্ন এলাকায় প্রায় ৫০-৬০টি মশার কয়েল তৈরির কারখানা গড়ে উঠেছে। অধিকাংশ ক্ষেত্রে বাসাবাড়ি ভাড়া নিয়ে এসব কারখানায় ক্ষতিকর মশার কয়েল উৎপাদন করা হয়। এসব কারখানায় নামীদামী ব্র্যান্ডের মশার কয়েলও তৈরি হয়। স্থানীয় বাজারে গেলে দেখা যায়, আকর্ষণীয় মোড়কে অসাধু ব্যবসায়ীরা শহরের উপকণ্ঠ আবাসিক এলাকায় স্থাপিত অবৈধ কারখানায় তৈরি করছে মানহীন নকল কয়েল। অধিক মুনাফার লোভেও এসব কয়েল বাজারে বিক্রিও হচ্ছে দেদারছে। ক্ষতিকর এসব নিম্নœমানের কয়েল অবাধে বিক্রি হলেও এসব বন্ধে কোন কার্যকর উদ্যোগ নেই সরকারের সংশ্লিষ্ট সংস্থাগুলোর।

স্থানীয় কারখানায় তৈরি কয়েলের মোড়কে ভুয়া পিএইচপি নম্বর ও বিএসটিআইয়ের লোগো ব্যবহার করা হচ্ছে। এসব অবৈধ কারখানাগুলোয় দিনে কোন কাজ করা হয় না। মূলতঃ প্রশাসন ও লোকজনের নজর এড়াতে গভীররাত থেকে ভোর পর্যন্ত কারখানাগুলোয় তৈরি করা হয় এ কয়েল। পরে এসব কয়েল একশ্রেণীর অসাধু কয়েল ডিলারের মাধ্যমে নামীদামী কোম্পানির কয়েল ও কার্টনের সঙ্গে নির্বিঘেœ বাজারজাত করা হয়। এছাড়াও বাহকের মাধ্যমে রিক্সা ভ্যানে গ্রামের হাট-বাজারে সরবরাহ করা হয় নিয়মিত। আর এসব কিনে নিজের অজান্তে প্রতারণার শিকার হচ্ছেন ক্রেতা সাধারণ।

স্থানীয় চিকিৎসকরা জানান, এসব কয়েলে ব্যবহার করা হচ্ছে মাত্রাতিরিক্ত রাসায়নিক পদার্থ, যা মানবদেহের জন্য মারাত্মক ক্ষতিকর। বিশেষ করে শিশু ও বয়স্করা হৃদরোগসহ বিভিন্ন প্রাণঘাতী অসুখের মুখে পড়ছেন এসব ক্ষতিকর ও নিম্নœমানের মশার কয়েলের ধোঁয়ায়। অনুমোদনহীন বিষাক্ত মশার কয়েলে শুধু মানুষ নয়, অন্য প্রাণীরাও ক্ষতি হয়। অন্যদিকে কয়েল কারখানায় কর্মরত শ্রমিকদের স্বাস্থ্যঝুঁকি বাড়ছে।

সরেজমিনে দেখা গেছে, বিএসটিআইয়ের অনুমতি তালিকার বাইরে বাজারে সেভেন ভোস্টার, সুপার ডিসকভারি, প্যাগোডা গোল্ড, তুলসীপাতা, সেফগার্ড, লিজার্ড মেগা, বস সুপার, ম্যাজিক, সোলার, মাছরাঙা, মেঘা, বাংলা কিলার, হান্টার, বিচ্ছু, চমক, সুপার যাদু, রকেট ও সুপার যাদু ব্র্যান্ডের কয়েল বিক্রি হচ্ছে। এসব কয়েলের গাযে ঢাকা, ভৈরব কিংবা চট্টগ্রাম লেখা থাকলেও পূর্ণাঙ্গ কোনো ঠিকানা নেই। শহরের ইসলামবাগ এলাকার দোকানদার আলামিন বলেন, ‘কোম্পানির লোক এসে কয়েল দিয়ে যায়। তাই এসব বিক্রি করছি। বিএসটিআইয়ের অনুমোদন আছে কি না তা খেয়াল করিনি।’

সৈয়দপুর উপজেলা স্বাস্ত্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা ডা. আলেমুল বাশার বলেন, অ্যাকটিভ ইনগ্রেডিয়েন্ট বা কেমিক্যাল ব্যবহারের ফলে ক্যানসার, শ্বাসনালীতে প্রদাহসহ বিকলাঙ্গের মতো ভয়াবহ রোগ হতে পারে। এমনকি গর্ভের শিশুও এতে ক্ষতির শিকার হতে পারে। খাদ্যে ফরমালিন ও পানিতে আর্সেনিকের প্রভাব যেমন দীর্ঘমেয়াদী, তেমনি এসব কয়েলের বিষাক্ত উপাদান মানুষের শরীরে দীর্ঘমেয়াদী জটিল রোগের বাসা তৈরি করছে।

ক্ষতিকর কয়েলের বাজারজাত করা প্রসঙ্গে জাতীয় ভোক্তা অধিকার ও সংরক্ষণ অধিদপ্তরের নীলফামারী জেলা সহকারী পরিচালক বোরহান উদ্দীন জানান, শীঘ্রই অনুমোদনহীন কয়েল কারখানার বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়া হবে। এছাড়া বিক্রেতাদের বিরুদ্ধেও ভ্রাম্যমাণ আদালত পরিচালনা করা হবে বলে জানান তিনি।

মঙ্গলবার, ০৯ নভেম্বর ২০২১ , ২৪ কার্তিক ১৪২৮ ৩ রবিউস সানি ১৪৪৩

সৈয়দপুরে ক্ষতিকর মশার কয়েলে বাজার সয়লাব : হুমকিতে জনস্বাস্থ্য

প্রতিনিধি, সৈয়দপুর (নীলফামারী)

সৈয়দপুরে ক্ষতিকর কেমিক্যাল দিয়ে তৈরি নিম্নœমানের কয়েল অবাধে বিক্রি হচ্ছে। কোম্পানির নাম ঠিকানাবিহীন এসব কয়েল স্থানীয়ভাবে তৈরি করার অভিযোগ রয়েছে। এমনকি নামীদামী কোম্পানির মোড়কেও বিক্রি করা হচ্ছে নকল কয়েল। বিএসটিআইয়ের অনুমোদন ছাড়াই বর্ণিল মোড়কে হরেক নামের কয়েলে বাজার সয়লাব হয়ে গেছে। এসব কয়েলের বিষাক্ত ধোঁয়া ঘরের ভেতর বায়ু দূষণসহ মানবদেহের জন্য স্বাস্থ্যঝুঁকি সৃষ্টি করছে।

জানা যায়, বিশ্ব স্বাস্থ্যসংস্থা মশার কয়েলে সর্বোচ্চ শূন্য দশমিক ৩ মাত্রার অ্যাকটিভ ইনগ্রেডিয়েন্ট বা কেমিক্যাল ব্যবহারের নির্দেশনা রয়েছে। অধ্যাদেশ অনুসারে মশার কয়েল উৎপাদন, বাজারজাত ও সংরক্ষণে কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের অনুমোদন বাধ্যতামূলক। এছাড়া অনুমোদনের পর পাবলিক হেলথ প্রডাক্ট (পিএইচপি) নম্বর ও বিএসটিআইয়ের অনুমোদন নিয়েই সংশ্লিষ্ট কোম্পানিকে বালাইনাশক পণ্য উৎপাদন ও বাজারজাত করার কথা। কিন্তু এ উপজেলায় এ আইন মানা হচ্ছে না। শহরের গোলাহাট, মিস্ত্রিপাড়া, ইসলামবাগ, টার্মিনাল, কাজীরহাটসহ বিভিন্ন এলাকায় প্রায় ৫০-৬০টি মশার কয়েল তৈরির কারখানা গড়ে উঠেছে। অধিকাংশ ক্ষেত্রে বাসাবাড়ি ভাড়া নিয়ে এসব কারখানায় ক্ষতিকর মশার কয়েল উৎপাদন করা হয়। এসব কারখানায় নামীদামী ব্র্যান্ডের মশার কয়েলও তৈরি হয়। স্থানীয় বাজারে গেলে দেখা যায়, আকর্ষণীয় মোড়কে অসাধু ব্যবসায়ীরা শহরের উপকণ্ঠ আবাসিক এলাকায় স্থাপিত অবৈধ কারখানায় তৈরি করছে মানহীন নকল কয়েল। অধিক মুনাফার লোভেও এসব কয়েল বাজারে বিক্রিও হচ্ছে দেদারছে। ক্ষতিকর এসব নিম্নœমানের কয়েল অবাধে বিক্রি হলেও এসব বন্ধে কোন কার্যকর উদ্যোগ নেই সরকারের সংশ্লিষ্ট সংস্থাগুলোর।

স্থানীয় কারখানায় তৈরি কয়েলের মোড়কে ভুয়া পিএইচপি নম্বর ও বিএসটিআইয়ের লোগো ব্যবহার করা হচ্ছে। এসব অবৈধ কারখানাগুলোয় দিনে কোন কাজ করা হয় না। মূলতঃ প্রশাসন ও লোকজনের নজর এড়াতে গভীররাত থেকে ভোর পর্যন্ত কারখানাগুলোয় তৈরি করা হয় এ কয়েল। পরে এসব কয়েল একশ্রেণীর অসাধু কয়েল ডিলারের মাধ্যমে নামীদামী কোম্পানির কয়েল ও কার্টনের সঙ্গে নির্বিঘেœ বাজারজাত করা হয়। এছাড়াও বাহকের মাধ্যমে রিক্সা ভ্যানে গ্রামের হাট-বাজারে সরবরাহ করা হয় নিয়মিত। আর এসব কিনে নিজের অজান্তে প্রতারণার শিকার হচ্ছেন ক্রেতা সাধারণ।

স্থানীয় চিকিৎসকরা জানান, এসব কয়েলে ব্যবহার করা হচ্ছে মাত্রাতিরিক্ত রাসায়নিক পদার্থ, যা মানবদেহের জন্য মারাত্মক ক্ষতিকর। বিশেষ করে শিশু ও বয়স্করা হৃদরোগসহ বিভিন্ন প্রাণঘাতী অসুখের মুখে পড়ছেন এসব ক্ষতিকর ও নিম্নœমানের মশার কয়েলের ধোঁয়ায়। অনুমোদনহীন বিষাক্ত মশার কয়েলে শুধু মানুষ নয়, অন্য প্রাণীরাও ক্ষতি হয়। অন্যদিকে কয়েল কারখানায় কর্মরত শ্রমিকদের স্বাস্থ্যঝুঁকি বাড়ছে।

সরেজমিনে দেখা গেছে, বিএসটিআইয়ের অনুমতি তালিকার বাইরে বাজারে সেভেন ভোস্টার, সুপার ডিসকভারি, প্যাগোডা গোল্ড, তুলসীপাতা, সেফগার্ড, লিজার্ড মেগা, বস সুপার, ম্যাজিক, সোলার, মাছরাঙা, মেঘা, বাংলা কিলার, হান্টার, বিচ্ছু, চমক, সুপার যাদু, রকেট ও সুপার যাদু ব্র্যান্ডের কয়েল বিক্রি হচ্ছে। এসব কয়েলের গাযে ঢাকা, ভৈরব কিংবা চট্টগ্রাম লেখা থাকলেও পূর্ণাঙ্গ কোনো ঠিকানা নেই। শহরের ইসলামবাগ এলাকার দোকানদার আলামিন বলেন, ‘কোম্পানির লোক এসে কয়েল দিয়ে যায়। তাই এসব বিক্রি করছি। বিএসটিআইয়ের অনুমোদন আছে কি না তা খেয়াল করিনি।’

সৈয়দপুর উপজেলা স্বাস্ত্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা ডা. আলেমুল বাশার বলেন, অ্যাকটিভ ইনগ্রেডিয়েন্ট বা কেমিক্যাল ব্যবহারের ফলে ক্যানসার, শ্বাসনালীতে প্রদাহসহ বিকলাঙ্গের মতো ভয়াবহ রোগ হতে পারে। এমনকি গর্ভের শিশুও এতে ক্ষতির শিকার হতে পারে। খাদ্যে ফরমালিন ও পানিতে আর্সেনিকের প্রভাব যেমন দীর্ঘমেয়াদী, তেমনি এসব কয়েলের বিষাক্ত উপাদান মানুষের শরীরে দীর্ঘমেয়াদী জটিল রোগের বাসা তৈরি করছে।

ক্ষতিকর কয়েলের বাজারজাত করা প্রসঙ্গে জাতীয় ভোক্তা অধিকার ও সংরক্ষণ অধিদপ্তরের নীলফামারী জেলা সহকারী পরিচালক বোরহান উদ্দীন জানান, শীঘ্রই অনুমোদনহীন কয়েল কারখানার বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়া হবে। এছাড়া বিক্রেতাদের বিরুদ্ধেও ভ্রাম্যমাণ আদালত পরিচালনা করা হবে বলে জানান তিনি।