বাসভাড়া নিয়ে নৈরাজ্য

সরকার বাড়ালো ২৭ শতাংশ, আদায় করা হচ্ছে অনেক বেশি

‘তেলের দাম বেড়েছে হেইলগ্যা গাড়ির ভাড়া বাড়ানো হয়েছে।’ পিছন থেকে অন্য একজন বললেন, ‘গ্যাসের দাম বাড়েনি। বাড়ছে তেলের দাম।’ ওয়েবিল স্বাক্ষরকারী বললেন, ‘গাড়ি আগে গ্যাসে চলতো। এখন তেলে চলে। একই জিনিস। এখন আর বাসে ১০ টাকার কোন ভাড়া নেই।’

গতকাল রাজধানীর ওয়ারীর বলদা গার্ডেনের সামনের সড়কে যাত্রাবাড়ী-মিরপুর রুটে চলাচল করে ট্রান্স সিলভা পরিবহনের ওয়েবিল (পথে যাত্রীর সংখ্যা গণনাকারী) স্বাক্ষরকারী এ সব কথা বলেন। এই বাসে আগে যাত্রাবাড়ী-গুলিস্তানের-শাহবাগের ভাড়া ছিল ১০-২০ টাকা। এখন নেয়া হচ্ছে ১২-২৬ টাকা। যাত্রাবাড়ী-মিরপুরের ভাড়া ছিল ৪০ টাকা। এখন নেয়া হচ্ছে ৪৮ টাকা।

এই বাসে ৩০ শতাংশ ভাড়া বাড়ানো হয়েছে। স্বল্প দূরত্বের ক্ষেত্রে আগের তুলেনায় ৫০ শতাংশ পর্যন্ত বেশি ভাড়া আদায়ের অভিযোগ করেন যাত্রীরা। যদিও সরকার ভাড়া বাড়িয়েছে ২৭ শতাংশ।

সরকার নির্ধারিত নতুন ভাড়ায় বাসে সর্বনি¤œ (তিন কিলোমিটার পর্যন্ত) হলো ১০ টাকা। মিনিবাসে ৮ টাকা করা হয়েছে। ঢাকা ও চট্টগ্রাম মহানগরীতে বাসের ভাড়া প্রতি কিলোমিটারে ১ টাকা ৭০ পয়সার থেকে বেড়িয়ে ২ টাকা ১৫ পয়সা করা হয়েছে। মিনিবাসের ক্ষেত্রে ১ টাকা ৬০ পয়সা থেকে বেড়িয়ে ২ টাকা ০৫ পয়সা। বাসের সর্বনিম্ন ভাড়া ৭ টাকার স্থলে ১০ টাকা এবং মিনিবাসে ৫ টাকার স্থলে ৮ টাকা নির্ধারণ করা হয়েছে।

কিন্তু রাজধানীর বেশিরভাগ পরিবহন আগেই অতিরিক্ত ভাড়া আদায় করা হতো। ওয়েবিল পদ্ধতি চালু করে দুই-তিন গুণ ভাড়া আদায় করতো। জ্বালানি তেলের দাম বৃদ্ধিতে নতুন ভাড়া ঘোষণা হওয়ায় আরও ভাড়া বাড়িয়েছে ওয়েবিলধারী পরিবহন মালিকরা। এ সব বাসে ১৫-২৫ টাকার নিচে কোন ভাড়া নেই অভিযোগ করে যাত্রীরা।

রাজধানীর গুলিস্তান এলাকায় শিকড় পরিবহনের এক যাত্রী সংবাদকে বলেন, ‘আগে গুলিস্তান থেকে ফার্মগেটের ভাড়াছিল ১০ টাকা। এখন তা ২০ টাকা নিচ্ছে। অথচ সর্বনি¤œ বাসের ভাড়া তো ১০ টাকা। কোন গাড়িতে ১০টাকা ভাড়া নিতে চায় না। বাসের উঠলেই বলে ২০ টাকা দিতে হবে। দেশে এখন অরাজকতা চলছে। অথচ বাসের ভাড়ার কোন চার্ট নেই।’

গতকাল থেকে নতুন ভাড়া কার্যাকরের পর রাজধানীর বেশির ভাগ পরিবহন তাদের ইচ্ছামত ভাড়া বাড়িয়ে দিয়েছে। সরেজমিনে রাজধানীর বিভিন্ন স্থানে ঘুরে দেখা গেছে, বাস-মিনিবাসের নিয়ে চলছে নৈরাজ্য। পুরোপুরি জিম্মি করে যাত্রীদের কাছ থেকে অতিরিক্ত ভাড়া আদায় করছেন বাস-মিনিবাস চালকরা। এরা সরকারের কোন নিয়ম নীতির তোয়াক্কা করে না। সব বাসেই এখন ১৫-২০ টাকার নিচে কোন ভাড়া নেয়া হয় না।

রাজধানীর মানিকনগর এলাকায় তুরাগ পরিবহনের এক যাত্রী বলেন, ‘তুরাগে আগে সর্বনি¤œ ভাড়া ৫ টাকা নিতো। এখন ১০ টাকা নেয়। যাত্রাবাড়ী থেকে টঙ্গির স্টেশন রোড পর্যন্ত পর্যন্ত ভাড়া ৪০ টাকা। এখন নেয়া হচ্ছে ৬০ টাকা।’

পোস্তগোলা-টঙ্গী-চেরাগআলী রুটে রাইদা পরিবহনে প্রতি ওয়েবিলে ৫-১০ টাকা বাড়িয়ে দিয়েছে। বাসে ১৫-২৫ টাকার নিচে কোন ভাড়া নেই। যাত্রাবাড়ী-গাবতলী রুটে চলাচল করে বিরতিহীন পরিবহন (সাবেক ৮ নাম্বার), মিরপুর রুটে খাজাবাবা ও শিকড়ে একই অবস্থা। ভাড়া নতুন চার্ট ছাড়াই অতিরিক্ত ভাড়া আদায় করা হচ্ছে বলে অভিযোগ করে যাত্রীরা।

রাজধানীর শাহবাগ এলাকায় আশরাফুল নামের এক যাত্রী বলেন, ‘গ্যাসের দাম বাড়েনি। কিন্তু তারপর সিএনজি ও লেগুনাসহ সব যানবাহনে ভাড়া বাড়িয়ে দিয়েছে চালকরা। রিকশাওয়ালারা বেশি ভাড়া নিচ্ছে। ৫০ টাকার নিচের কোথাও যেতে চায় না রিকশাচালকরা।’

রাজধানীর বাড্ডা, রামপুরা, মৌচাক এলাকার বাসে ভাড়া নিয়ে কন্ডাক্টর-যাত্রীদের মধ্যে হাতাহাতির মতো ঘটনাও ঘটেছে। কোন বাসেই ছিল না নতুন ভাড়ার তালিকা। এ নিয়ে যাত্রী ও বাসের সহযোগীদের মধ্যে বাক-বিত-ার ঘটনা ঘটেছে।

এই রুটে আকাশ, ভিক্টর ক্লাসিক, রাইদা, অনাবিল, তুরাগ, রমজান, তরঙ্গ, স্বাধীন, নূরে মক্কাসহ একাধিক পরিবহন চলাচল করে। এ সব পরিবহন ওয়েবিলের কথা বলে নিজের ইচ্ছে মতো ভাড়া বাড়িয়ে দিয়েছে বলে অভিযোগ করেন যাত্রীরা।

মালিবাগ এলাকায় মিলন নামের অনাবিল পরিবহনের এক যাত্রী সংবাদকে বলেন, ‘অনাবিল বাসে ২০ টাকার নিচে কোন ভাড়া নেই। বাসে উঠে স্বল্প দূরত্বে নামলেও ২০ টাকা দিতে হয়। এ নিয়ে প্রতিবাদ করলেই খারাপ ব্যবহার করে বাস হেলপাররা।’

এ বিষয়ে স্বাধীন পরিবহনের বাসের কন্ডাক্টর মো. আরাফাত বলেন, ‘মালিকের সিদ্ধান্ত অনুযায়ী রোববার রাতেই ভাড়া নির্ধারণ করা হইছে। সেই অনুযায়ী আমরা ভাড়া চাইতেছি। কিন্তু যাত্রীরা বাড়তি ভাড়া দিতে চায় না। চাইলে বকাবাজি করে।’

জাকির নামের রাইদা পরিবহনের এক চালন সংবাদকে বলেন, ‘রাইদা বাসের আগে প্রতি ওবিল (ওয়েবিল) ছিল ১০ ও ১৫ টাকা। এখন হইছে ১৫ ও ২৫ টাকা। ১৫ টাকার নিচে কোন ভাড়া নেই।’

দূরপাল্লার পরিবহনে নেয়া হচ্ছে দ্বিগুণ ভাড়া

আন্তঃজেলা ও দূরপাল্লার বাসের ভাড়া প্রতি কিলোমিটারে ১ টাকা ৪২ পয়সা থেকে বাড়িয়ে ১ টাকা ৮০ পয়সা করা হয়েছে। তবে ঢাকা পরিবহন সমন্বয় কর্তৃপক্ষ (ডিটিসিএ)’র অন্তর্ভুক্ত নারায়ণগঞ্জ, মুন্সিগঞ্জ, নরসিংদী, গাজীপুর, মানিকগঞ্জ ও ঢাকা জেলায় চলাচলকারী বাস ও মিনিবাসে প্রতি কিলোমিটারে ১ টাকা ৬০ পয়সার স্থলে ২ টাকা ০৫ পয়সা নির্ধারণ করা হয়েছে। তবে বেশিরভাগ বাসের দ্বিগুণ ভাড়া নেয়ার অভিযোগ করেন যাত্রীরা।

ঢাকার আশপাশের জেলা হিসেবে নরসিংদীকে ডিটিসিএ’র অন্তর্ভুক্ত করা হয়েছে। এ হিসেবে এই জেলার বাস ভাড়া প্রতিকিলোমিটারে ২ টাকা ০৫ পয়সা নির্ধারণ করা হয়েছে। কিন্তু আগে ঢাকা থেকে নরসিংদীর ভাড়া নেয়া হতো ৬০-৮০ টাকা। এখন তা নেয়া হচ্ছে ১০০-১২০ টাকা বলে অভিযোগ করেন যাত্রীরা। একই অবস্থা কুমিল্লার বিভিন্ন পরিবহনে সব বাসের ভাড়া দ্বিগুণ করা হয়েছে বলে যাত্রীরা অভিযোগ করেন।

রুবেল নামের নরসিংদীর এক যাত্রী সংবাদকে বলেন, ‘সায়েদাবাদ থেকে নরসিংদীর মোনোহরদী পর্যন্ত আগে ভাড়া ছিল ১২০ টাকা। এখন নেয়া হচ্ছে ১৮০ টাকা। কিছু বলতে গেলেই তেলের দামের অযুহাত দেখায়।’

লঞ্চে ঢাকা-বরিশালের নতুন ভাড়া ৩৫৫ টাকা

জ্বালানি তেলের মূল্যবৃদ্ধিতে যাত্রীবাহী লঞ্চের ভাড়া ৩৫ দশমিক ২৯ শতাংশ বাড়ানো হয়েছে। গতকাল থেকে কার্যকর করা হয়েছে। লঞ্চ নতুন ভাড়ায় ১০০ কিলোমিটার দূরত্ব পর্যন্ত ১ টাকা ৭০ পয়সার স্থলে ২ টাকা ৩০ পয়সা ও ১০০ কিলোমিটারের বেশি দূরত্বে প্রতি কিলোমিটার ১ টাকা ৪০ পয়সা স্থলে ২ টাকা নির্ধারণ করা হয়েছে। জনপ্রতি সর্বনি¤œ ভাড়া ১৮ টাকা থেকে বাড়িয়ে ২৫ টাকা নির্ধারণ করা হয়েছে।

আগে ঢাকা থেকে বরিশালের ডেকের ভাড়া ছিল ২৫৬ টাকা। কিন্তু লঞ্চ মালিকরা ২০০ টাকা আদায় করে নিতেন। নতুন ভাড়ায় এখন তা ৩৫৫ টাকা হবে। কিন্তু যাত্রীরা তা দিতে চাচ্ছে না। তাই অনেক লঞ্চে ৩০০ টাকা আদায় করা হচ্ছে বলে যাত্রীরা জানান। এছাড়া ঢাকা-চাঁদপুরে আগে ভাড়া ছিল ১১৫ টাকা। এখন তা ১৫৫ টাকা হয়েছে। কিন্তু অনেক লঞ্চ মালিক ১৫০ টাকা নিচ্ছে বলে যাত্রীরা জানান।

এ বিষয়ে অভ্যন্তরীণ নৌপরিবহন কর্তৃপক্ষ (বিআইডব্লিউটিএ’র) ঢাকা নদী বন্দরের যুগ্ম পরিচালক জয়নাল আবেদীন সংবাদকে বলেন, ‘লঞ্চ মালিকরা নির্ধারিত ভাড়া থেকে কম নিচ্ছে। অনেকেই আবার নির্ধারিত ভাড়া নেয়ার চেষ্টা করছে। কিন্তু যাত্রীরা তা দিতে চাচ্ছে না। নির্ধারিত ভাড়া বেশি নেয়ার তেমন অভিযোগ পাওয়া যায়নি বলে জানান তিনি।

মঙ্গলবার, ০৯ নভেম্বর ২০২১ , ২৪ কার্তিক ১৪২৮ ৩ রবিউস সানি ১৪৪৩

বাসভাড়া নিয়ে নৈরাজ্য

সরকার বাড়ালো ২৭ শতাংশ, আদায় করা হচ্ছে অনেক বেশি

ইবরাহীম মাহমুদ আকাশ

‘তেলের দাম বেড়েছে হেইলগ্যা গাড়ির ভাড়া বাড়ানো হয়েছে।’ পিছন থেকে অন্য একজন বললেন, ‘গ্যাসের দাম বাড়েনি। বাড়ছে তেলের দাম।’ ওয়েবিল স্বাক্ষরকারী বললেন, ‘গাড়ি আগে গ্যাসে চলতো। এখন তেলে চলে। একই জিনিস। এখন আর বাসে ১০ টাকার কোন ভাড়া নেই।’

গতকাল রাজধানীর ওয়ারীর বলদা গার্ডেনের সামনের সড়কে যাত্রাবাড়ী-মিরপুর রুটে চলাচল করে ট্রান্স সিলভা পরিবহনের ওয়েবিল (পথে যাত্রীর সংখ্যা গণনাকারী) স্বাক্ষরকারী এ সব কথা বলেন। এই বাসে আগে যাত্রাবাড়ী-গুলিস্তানের-শাহবাগের ভাড়া ছিল ১০-২০ টাকা। এখন নেয়া হচ্ছে ১২-২৬ টাকা। যাত্রাবাড়ী-মিরপুরের ভাড়া ছিল ৪০ টাকা। এখন নেয়া হচ্ছে ৪৮ টাকা।

এই বাসে ৩০ শতাংশ ভাড়া বাড়ানো হয়েছে। স্বল্প দূরত্বের ক্ষেত্রে আগের তুলেনায় ৫০ শতাংশ পর্যন্ত বেশি ভাড়া আদায়ের অভিযোগ করেন যাত্রীরা। যদিও সরকার ভাড়া বাড়িয়েছে ২৭ শতাংশ।

সরকার নির্ধারিত নতুন ভাড়ায় বাসে সর্বনি¤œ (তিন কিলোমিটার পর্যন্ত) হলো ১০ টাকা। মিনিবাসে ৮ টাকা করা হয়েছে। ঢাকা ও চট্টগ্রাম মহানগরীতে বাসের ভাড়া প্রতি কিলোমিটারে ১ টাকা ৭০ পয়সার থেকে বেড়িয়ে ২ টাকা ১৫ পয়সা করা হয়েছে। মিনিবাসের ক্ষেত্রে ১ টাকা ৬০ পয়সা থেকে বেড়িয়ে ২ টাকা ০৫ পয়সা। বাসের সর্বনিম্ন ভাড়া ৭ টাকার স্থলে ১০ টাকা এবং মিনিবাসে ৫ টাকার স্থলে ৮ টাকা নির্ধারণ করা হয়েছে।

কিন্তু রাজধানীর বেশিরভাগ পরিবহন আগেই অতিরিক্ত ভাড়া আদায় করা হতো। ওয়েবিল পদ্ধতি চালু করে দুই-তিন গুণ ভাড়া আদায় করতো। জ্বালানি তেলের দাম বৃদ্ধিতে নতুন ভাড়া ঘোষণা হওয়ায় আরও ভাড়া বাড়িয়েছে ওয়েবিলধারী পরিবহন মালিকরা। এ সব বাসে ১৫-২৫ টাকার নিচে কোন ভাড়া নেই অভিযোগ করে যাত্রীরা।

রাজধানীর গুলিস্তান এলাকায় শিকড় পরিবহনের এক যাত্রী সংবাদকে বলেন, ‘আগে গুলিস্তান থেকে ফার্মগেটের ভাড়াছিল ১০ টাকা। এখন তা ২০ টাকা নিচ্ছে। অথচ সর্বনি¤œ বাসের ভাড়া তো ১০ টাকা। কোন গাড়িতে ১০টাকা ভাড়া নিতে চায় না। বাসের উঠলেই বলে ২০ টাকা দিতে হবে। দেশে এখন অরাজকতা চলছে। অথচ বাসের ভাড়ার কোন চার্ট নেই।’

গতকাল থেকে নতুন ভাড়া কার্যাকরের পর রাজধানীর বেশির ভাগ পরিবহন তাদের ইচ্ছামত ভাড়া বাড়িয়ে দিয়েছে। সরেজমিনে রাজধানীর বিভিন্ন স্থানে ঘুরে দেখা গেছে, বাস-মিনিবাসের নিয়ে চলছে নৈরাজ্য। পুরোপুরি জিম্মি করে যাত্রীদের কাছ থেকে অতিরিক্ত ভাড়া আদায় করছেন বাস-মিনিবাস চালকরা। এরা সরকারের কোন নিয়ম নীতির তোয়াক্কা করে না। সব বাসেই এখন ১৫-২০ টাকার নিচে কোন ভাড়া নেয়া হয় না।

রাজধানীর মানিকনগর এলাকায় তুরাগ পরিবহনের এক যাত্রী বলেন, ‘তুরাগে আগে সর্বনি¤œ ভাড়া ৫ টাকা নিতো। এখন ১০ টাকা নেয়। যাত্রাবাড়ী থেকে টঙ্গির স্টেশন রোড পর্যন্ত পর্যন্ত ভাড়া ৪০ টাকা। এখন নেয়া হচ্ছে ৬০ টাকা।’

পোস্তগোলা-টঙ্গী-চেরাগআলী রুটে রাইদা পরিবহনে প্রতি ওয়েবিলে ৫-১০ টাকা বাড়িয়ে দিয়েছে। বাসে ১৫-২৫ টাকার নিচে কোন ভাড়া নেই। যাত্রাবাড়ী-গাবতলী রুটে চলাচল করে বিরতিহীন পরিবহন (সাবেক ৮ নাম্বার), মিরপুর রুটে খাজাবাবা ও শিকড়ে একই অবস্থা। ভাড়া নতুন চার্ট ছাড়াই অতিরিক্ত ভাড়া আদায় করা হচ্ছে বলে অভিযোগ করে যাত্রীরা।

রাজধানীর শাহবাগ এলাকায় আশরাফুল নামের এক যাত্রী বলেন, ‘গ্যাসের দাম বাড়েনি। কিন্তু তারপর সিএনজি ও লেগুনাসহ সব যানবাহনে ভাড়া বাড়িয়ে দিয়েছে চালকরা। রিকশাওয়ালারা বেশি ভাড়া নিচ্ছে। ৫০ টাকার নিচের কোথাও যেতে চায় না রিকশাচালকরা।’

রাজধানীর বাড্ডা, রামপুরা, মৌচাক এলাকার বাসে ভাড়া নিয়ে কন্ডাক্টর-যাত্রীদের মধ্যে হাতাহাতির মতো ঘটনাও ঘটেছে। কোন বাসেই ছিল না নতুন ভাড়ার তালিকা। এ নিয়ে যাত্রী ও বাসের সহযোগীদের মধ্যে বাক-বিত-ার ঘটনা ঘটেছে।

এই রুটে আকাশ, ভিক্টর ক্লাসিক, রাইদা, অনাবিল, তুরাগ, রমজান, তরঙ্গ, স্বাধীন, নূরে মক্কাসহ একাধিক পরিবহন চলাচল করে। এ সব পরিবহন ওয়েবিলের কথা বলে নিজের ইচ্ছে মতো ভাড়া বাড়িয়ে দিয়েছে বলে অভিযোগ করেন যাত্রীরা।

মালিবাগ এলাকায় মিলন নামের অনাবিল পরিবহনের এক যাত্রী সংবাদকে বলেন, ‘অনাবিল বাসে ২০ টাকার নিচে কোন ভাড়া নেই। বাসে উঠে স্বল্প দূরত্বে নামলেও ২০ টাকা দিতে হয়। এ নিয়ে প্রতিবাদ করলেই খারাপ ব্যবহার করে বাস হেলপাররা।’

এ বিষয়ে স্বাধীন পরিবহনের বাসের কন্ডাক্টর মো. আরাফাত বলেন, ‘মালিকের সিদ্ধান্ত অনুযায়ী রোববার রাতেই ভাড়া নির্ধারণ করা হইছে। সেই অনুযায়ী আমরা ভাড়া চাইতেছি। কিন্তু যাত্রীরা বাড়তি ভাড়া দিতে চায় না। চাইলে বকাবাজি করে।’

জাকির নামের রাইদা পরিবহনের এক চালন সংবাদকে বলেন, ‘রাইদা বাসের আগে প্রতি ওবিল (ওয়েবিল) ছিল ১০ ও ১৫ টাকা। এখন হইছে ১৫ ও ২৫ টাকা। ১৫ টাকার নিচে কোন ভাড়া নেই।’

দূরপাল্লার পরিবহনে নেয়া হচ্ছে দ্বিগুণ ভাড়া

আন্তঃজেলা ও দূরপাল্লার বাসের ভাড়া প্রতি কিলোমিটারে ১ টাকা ৪২ পয়সা থেকে বাড়িয়ে ১ টাকা ৮০ পয়সা করা হয়েছে। তবে ঢাকা পরিবহন সমন্বয় কর্তৃপক্ষ (ডিটিসিএ)’র অন্তর্ভুক্ত নারায়ণগঞ্জ, মুন্সিগঞ্জ, নরসিংদী, গাজীপুর, মানিকগঞ্জ ও ঢাকা জেলায় চলাচলকারী বাস ও মিনিবাসে প্রতি কিলোমিটারে ১ টাকা ৬০ পয়সার স্থলে ২ টাকা ০৫ পয়সা নির্ধারণ করা হয়েছে। তবে বেশিরভাগ বাসের দ্বিগুণ ভাড়া নেয়ার অভিযোগ করেন যাত্রীরা।

ঢাকার আশপাশের জেলা হিসেবে নরসিংদীকে ডিটিসিএ’র অন্তর্ভুক্ত করা হয়েছে। এ হিসেবে এই জেলার বাস ভাড়া প্রতিকিলোমিটারে ২ টাকা ০৫ পয়সা নির্ধারণ করা হয়েছে। কিন্তু আগে ঢাকা থেকে নরসিংদীর ভাড়া নেয়া হতো ৬০-৮০ টাকা। এখন তা নেয়া হচ্ছে ১০০-১২০ টাকা বলে অভিযোগ করেন যাত্রীরা। একই অবস্থা কুমিল্লার বিভিন্ন পরিবহনে সব বাসের ভাড়া দ্বিগুণ করা হয়েছে বলে যাত্রীরা অভিযোগ করেন।

রুবেল নামের নরসিংদীর এক যাত্রী সংবাদকে বলেন, ‘সায়েদাবাদ থেকে নরসিংদীর মোনোহরদী পর্যন্ত আগে ভাড়া ছিল ১২০ টাকা। এখন নেয়া হচ্ছে ১৮০ টাকা। কিছু বলতে গেলেই তেলের দামের অযুহাত দেখায়।’

লঞ্চে ঢাকা-বরিশালের নতুন ভাড়া ৩৫৫ টাকা

জ্বালানি তেলের মূল্যবৃদ্ধিতে যাত্রীবাহী লঞ্চের ভাড়া ৩৫ দশমিক ২৯ শতাংশ বাড়ানো হয়েছে। গতকাল থেকে কার্যকর করা হয়েছে। লঞ্চ নতুন ভাড়ায় ১০০ কিলোমিটার দূরত্ব পর্যন্ত ১ টাকা ৭০ পয়সার স্থলে ২ টাকা ৩০ পয়সা ও ১০০ কিলোমিটারের বেশি দূরত্বে প্রতি কিলোমিটার ১ টাকা ৪০ পয়সা স্থলে ২ টাকা নির্ধারণ করা হয়েছে। জনপ্রতি সর্বনি¤œ ভাড়া ১৮ টাকা থেকে বাড়িয়ে ২৫ টাকা নির্ধারণ করা হয়েছে।

আগে ঢাকা থেকে বরিশালের ডেকের ভাড়া ছিল ২৫৬ টাকা। কিন্তু লঞ্চ মালিকরা ২০০ টাকা আদায় করে নিতেন। নতুন ভাড়ায় এখন তা ৩৫৫ টাকা হবে। কিন্তু যাত্রীরা তা দিতে চাচ্ছে না। তাই অনেক লঞ্চে ৩০০ টাকা আদায় করা হচ্ছে বলে যাত্রীরা জানান। এছাড়া ঢাকা-চাঁদপুরে আগে ভাড়া ছিল ১১৫ টাকা। এখন তা ১৫৫ টাকা হয়েছে। কিন্তু অনেক লঞ্চ মালিক ১৫০ টাকা নিচ্ছে বলে যাত্রীরা জানান।

এ বিষয়ে অভ্যন্তরীণ নৌপরিবহন কর্তৃপক্ষ (বিআইডব্লিউটিএ’র) ঢাকা নদী বন্দরের যুগ্ম পরিচালক জয়নাল আবেদীন সংবাদকে বলেন, ‘লঞ্চ মালিকরা নির্ধারিত ভাড়া থেকে কম নিচ্ছে। অনেকেই আবার নির্ধারিত ভাড়া নেয়ার চেষ্টা করছে। কিন্তু যাত্রীরা তা দিতে চাচ্ছে না। নির্ধারিত ভাড়া বেশি নেয়ার তেমন অভিযোগ পাওয়া যায়নি বলে জানান তিনি।