রোহিঙ্গা ক্যাম্পসংলগ্ন পাহাড়ে অস্ত্র কারখানা : চার ঘণ্টা বন্দুকযুদ্ধ

অস্ত্র উদ্ধার, গ্রেপ্তার ৩

কক্সবাজারের উখিয়া কুতুপালং রোহিঙ্গা কাম্পসংলগ্ন দুর্গম পাহাড়ে গোপন অস্ত্রের কারখানার সন্ধ্যান পাওয়া গেছে। গত রোববার গভীরাত থেকে গতকাল ভোর পর্যন্ত র‌্যারের ৩০ থেকে ৩৫ জন কর্মকর্তা ও সদস্য অভিযান চালিয়ে এই কারখানার সন্ধান পায়।

অভিযানের সময় সন্ত্রাসী রোহিঙ্গাদের সঙ্গে চার ঘণ্টার বেশি সময় ধরে বন্দুকযুদ্ধ চলে। এক পর্যায়ে র‌্যাব সদস্য অস্ত্রের কারখানায় অভিযান চালিয়ে ১০টি আগ্নেয়াস্ত্র ও গোলাবারুদ উদ্ধার করেছে। ৩ রোহিঙ্গা সন্ত্রাসীকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। গ্রেপ্তারকৃতরা হলো রোহিঙ্গা হাবিব উল্লাহ, বায়তুল্লাহ ও মো. হাছন। তারা কুতুপালং রোহিঙ্গা ক্যাম্প, সি-১ ও ব্লক-জিতে থাকত।

ঘটনাস্থল থেকে ৪টি এক নালা বন্দুক, ৫টি ওয়ান শুটারগান, ১টি শর্টগান, ১৩ রাউন্ড কার্তুজ, একটি কিরিচ, ১টি ছুরি, ৩টি দা ও বিপুল পরিমাণ অস্ত্র তৈরির সরঞ্জাম উদ্ধার করা হয়েছে।

কক্সবাজার থেকে র‌্যাবের অপারেশন শাখার একজন কর্মকর্তা সংবাদকে ফোনে জানান, রোহিঙ্গা ক্যাম্পের কাছে দুর্গম পাহাড়। ক্যাম্প থেকে দুর্গম পাহাড়ের অস্ত্রের কারখায় যেতে সময় লাগে ৭ থেকে ৮ মিনিট। র‌্যাবের ৩০ জনের বেশি সদস্য গোপন খবরের ভিত্তিতে অস্ত্রের কারখানার সন্ধান পেয়ে ঘেরাও করে অভিযান চালাতে গেলে গোলাগুলির ঘটনা ঘটে। অভিযানের সময় ৩ রোহিঙ্গা সন্ত্রাসী গ্রেপ্তার হলেও অন্যরা পালিয়ে গেছে। তাদের ধরতে র‌্যাবের অভিযান অব্যাহত আছে।

স্থানীয়দের মতে, রোহিঙ্গা ক্যাম্পে সন্ত্রাসী রোহিঙ্গাদের একাধিক গ্রুপ রয়েছে। তারা ক্যাম্পগুলোতে নিজেদের মধ্যে আধিপত্য বিস্তারের জন্য অস্ত্র মজুদ করে। একই সঙ্গে সন্ত্রাসী গ্রুপগুলোর মধ্যে অস্ত্র বেচাকেনা হয়। র‌্যাবের মতে, এ চক্র দীর্ঘদিন ধরে অস্ত্র তৈরি করে ক্যাম্পগুলোতে বিক্রি করত। এসব অবৈধ অস্ত্রের কারখানায় প্রশিক্ষণ প্রাপ্ত রোহিঙ্গা সন্ত্রাসীরা রয়েছে। এ ধরনের আরও অস্ত্রের কারখানা আছে কিনা তা নিয়ে র‌্যাবের অনুসন্ধান অব্যাহত আছে।

অভিযোগ রয়েছে, রোহিঙ্গা ক্যাম্পের গোপন অস্ত্রের কারখানায় কারিগররা ভাড়াটে। আগে এ চক্র কক্সবাজারের মহেশখালী দ্বীপের এই ধরনের অস্ত্র তৈরি করা হতো। রোহিঙ্গারা ওই চক্রের কাছ থেকে হাতে কলমে অস্ত্র তৈরি করা শিখে নিজেরা কারখানা গড়েছে। তারা ক্যাম্পে অস্থীতশীল পরিবেশ সৃষ্টি করার টার্গেট নিয়ে অস্ত্র তৈরি ও সন্ত্রাসী গ্রুপগুলোর কাছে বিক্রি করেছে।

এক তথ্যে জানা গেছে, রোহিঙ্গা ক্যাম্প থেকে র‌্যাবসহ অন্যান্য আইনশৃঙ্খলা বাহিনী একাধিক অভিযান চালিয়ে প্রায় ২শ দেশিবিদেশি আগ্নেয়াস্ত্র গোলাবারুদ উদ্ধার করেছে।

আমাদের কক্সবাজার প্রতিনিধি জানান, আটক করা হয় তিন রোহিঙ্গা অস্ত্র তৈরির কারিগর। র?্যাব-১৫-এর অধিনায়ক লে. কর্নেল খায়েরুল ইসলাম জানান, খবর ছিল দীর্ঘদিন ধরে একটি চক্র এ ক্যাম্পের গহীন বনে কারখানা তৈরি করে অস্ত্র বানিয়ে আসছিল। আর এই কারখানা থেকে রোহিঙ্গা সন্ত্রাসীদের কাছে অস্ত্র সরবারহ করা হচ্ছিল। এমন তথ্যের উপর ভিত্তি করে গত রোবববার গভীর রাত থেকে গতকাল ভোর পর্যন্ত উখিয়ার কুতুপালং ক্যাম্পের এক্সটেনশন ফোরে গহীন পাহাড়ে অভিযান চালায় র‌্যাব।

পরে তথ্য অনুযায়ী কারখানাটি শনাক্ত করে সেখানে অভিযান চালাতেই র‌্যাবকে লক্ষ্য করে গুলি চালায়। চার ঘণ্টার বেশি সময় গুলিবিনিময়ের পর কারখানাটি নিয়ন্ত্রণে নেয়া হয়। পরে সেখান থেকে চিহ্নিত হয় অস্ত্র কারখানা, জব্দ করা হয় ১০টি অস্ত্র, বিপুল পরিমাণ অস্ত্র তৈরির সরঞ্জাম। আটক করা হয় তিন জন রোহিঙ্গা অস্ত্র কারিগরকে। তিনি জানান, গোলাগুলির ফাঁকে বেশ কয়েকজন সন্ত্রাসী পাহাড়ের দিকে পালিয়ে যায়। র‌্যাবের অধিনায়ক জানান, ক্যাম্পের সব সন্ত্রাসী ও অস্ত্র কারখানার সন্ধান তারা করছে।

তিনি আরও জানান, ক্যাম্পগুলোতে সন্ত্রাসীদের তৎপরতা ঠেকাতে কাজ করছে র?্যাবের সদস্যরা। আটকদের পরবর্তী আইনি ব্যবস্থা শেষে উখিয়া থানায় হস্তান্তর করার প্রক্রিয়া চলছে।

এ দিকে গতকাল রাত ৯টার দিকে সর্বশেষ তথ্যে জানা গেছে, রোহিঙ্গা ক্যাম্পগুলোর নিরাপত্তা জোরদার করা হয়েছে। সেখানে পোশাকে ও সাদা পোশাকে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর নিরাপত্তা ও নজরদারি আরও বাড়ানো হয়েছে।

জেলা পুলিশের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা সাংবাদিকদের জানিয়েছে, ক্যাম্পে অস্ত্রধারী ও সন্ত্রাসীদের ধরতে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর তৎপরতা অব্যাহত আছে। আর অস্ত্র ও গোলবারুদ উদ্ধারের জন্য চেষ্টা অব্যাহত আছে।

মঙ্গলবার, ০৯ নভেম্বর ২০২১ , ২৪ কার্তিক ১৪২৮ ৩ রবিউস সানি ১৪৪৩

রোহিঙ্গা ক্যাম্পসংলগ্ন পাহাড়ে অস্ত্র কারখানা : চার ঘণ্টা বন্দুকযুদ্ধ

অস্ত্র উদ্ধার, গ্রেপ্তার ৩

নিজস্ব বার্তা পরিবেশক

image

কক্সবাজারের উখিয়া কুতুপালং রোহিঙ্গা কাম্পসংলগ্ন দুর্গম পাহাড়ে গোপন অস্ত্রের কারখানার সন্ধ্যান পাওয়া গেছে। গত রোববার গভীরাত থেকে গতকাল ভোর পর্যন্ত র‌্যারের ৩০ থেকে ৩৫ জন কর্মকর্তা ও সদস্য অভিযান চালিয়ে এই কারখানার সন্ধান পায়।

অভিযানের সময় সন্ত্রাসী রোহিঙ্গাদের সঙ্গে চার ঘণ্টার বেশি সময় ধরে বন্দুকযুদ্ধ চলে। এক পর্যায়ে র‌্যাব সদস্য অস্ত্রের কারখানায় অভিযান চালিয়ে ১০টি আগ্নেয়াস্ত্র ও গোলাবারুদ উদ্ধার করেছে। ৩ রোহিঙ্গা সন্ত্রাসীকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। গ্রেপ্তারকৃতরা হলো রোহিঙ্গা হাবিব উল্লাহ, বায়তুল্লাহ ও মো. হাছন। তারা কুতুপালং রোহিঙ্গা ক্যাম্প, সি-১ ও ব্লক-জিতে থাকত।

ঘটনাস্থল থেকে ৪টি এক নালা বন্দুক, ৫টি ওয়ান শুটারগান, ১টি শর্টগান, ১৩ রাউন্ড কার্তুজ, একটি কিরিচ, ১টি ছুরি, ৩টি দা ও বিপুল পরিমাণ অস্ত্র তৈরির সরঞ্জাম উদ্ধার করা হয়েছে।

কক্সবাজার থেকে র‌্যাবের অপারেশন শাখার একজন কর্মকর্তা সংবাদকে ফোনে জানান, রোহিঙ্গা ক্যাম্পের কাছে দুর্গম পাহাড়। ক্যাম্প থেকে দুর্গম পাহাড়ের অস্ত্রের কারখায় যেতে সময় লাগে ৭ থেকে ৮ মিনিট। র‌্যাবের ৩০ জনের বেশি সদস্য গোপন খবরের ভিত্তিতে অস্ত্রের কারখানার সন্ধান পেয়ে ঘেরাও করে অভিযান চালাতে গেলে গোলাগুলির ঘটনা ঘটে। অভিযানের সময় ৩ রোহিঙ্গা সন্ত্রাসী গ্রেপ্তার হলেও অন্যরা পালিয়ে গেছে। তাদের ধরতে র‌্যাবের অভিযান অব্যাহত আছে।

স্থানীয়দের মতে, রোহিঙ্গা ক্যাম্পে সন্ত্রাসী রোহিঙ্গাদের একাধিক গ্রুপ রয়েছে। তারা ক্যাম্পগুলোতে নিজেদের মধ্যে আধিপত্য বিস্তারের জন্য অস্ত্র মজুদ করে। একই সঙ্গে সন্ত্রাসী গ্রুপগুলোর মধ্যে অস্ত্র বেচাকেনা হয়। র‌্যাবের মতে, এ চক্র দীর্ঘদিন ধরে অস্ত্র তৈরি করে ক্যাম্পগুলোতে বিক্রি করত। এসব অবৈধ অস্ত্রের কারখানায় প্রশিক্ষণ প্রাপ্ত রোহিঙ্গা সন্ত্রাসীরা রয়েছে। এ ধরনের আরও অস্ত্রের কারখানা আছে কিনা তা নিয়ে র‌্যাবের অনুসন্ধান অব্যাহত আছে।

অভিযোগ রয়েছে, রোহিঙ্গা ক্যাম্পের গোপন অস্ত্রের কারখানায় কারিগররা ভাড়াটে। আগে এ চক্র কক্সবাজারের মহেশখালী দ্বীপের এই ধরনের অস্ত্র তৈরি করা হতো। রোহিঙ্গারা ওই চক্রের কাছ থেকে হাতে কলমে অস্ত্র তৈরি করা শিখে নিজেরা কারখানা গড়েছে। তারা ক্যাম্পে অস্থীতশীল পরিবেশ সৃষ্টি করার টার্গেট নিয়ে অস্ত্র তৈরি ও সন্ত্রাসী গ্রুপগুলোর কাছে বিক্রি করেছে।

এক তথ্যে জানা গেছে, রোহিঙ্গা ক্যাম্প থেকে র‌্যাবসহ অন্যান্য আইনশৃঙ্খলা বাহিনী একাধিক অভিযান চালিয়ে প্রায় ২শ দেশিবিদেশি আগ্নেয়াস্ত্র গোলাবারুদ উদ্ধার করেছে।

আমাদের কক্সবাজার প্রতিনিধি জানান, আটক করা হয় তিন রোহিঙ্গা অস্ত্র তৈরির কারিগর। র?্যাব-১৫-এর অধিনায়ক লে. কর্নেল খায়েরুল ইসলাম জানান, খবর ছিল দীর্ঘদিন ধরে একটি চক্র এ ক্যাম্পের গহীন বনে কারখানা তৈরি করে অস্ত্র বানিয়ে আসছিল। আর এই কারখানা থেকে রোহিঙ্গা সন্ত্রাসীদের কাছে অস্ত্র সরবারহ করা হচ্ছিল। এমন তথ্যের উপর ভিত্তি করে গত রোবববার গভীর রাত থেকে গতকাল ভোর পর্যন্ত উখিয়ার কুতুপালং ক্যাম্পের এক্সটেনশন ফোরে গহীন পাহাড়ে অভিযান চালায় র‌্যাব।

পরে তথ্য অনুযায়ী কারখানাটি শনাক্ত করে সেখানে অভিযান চালাতেই র‌্যাবকে লক্ষ্য করে গুলি চালায়। চার ঘণ্টার বেশি সময় গুলিবিনিময়ের পর কারখানাটি নিয়ন্ত্রণে নেয়া হয়। পরে সেখান থেকে চিহ্নিত হয় অস্ত্র কারখানা, জব্দ করা হয় ১০টি অস্ত্র, বিপুল পরিমাণ অস্ত্র তৈরির সরঞ্জাম। আটক করা হয় তিন জন রোহিঙ্গা অস্ত্র কারিগরকে। তিনি জানান, গোলাগুলির ফাঁকে বেশ কয়েকজন সন্ত্রাসী পাহাড়ের দিকে পালিয়ে যায়। র‌্যাবের অধিনায়ক জানান, ক্যাম্পের সব সন্ত্রাসী ও অস্ত্র কারখানার সন্ধান তারা করছে।

তিনি আরও জানান, ক্যাম্পগুলোতে সন্ত্রাসীদের তৎপরতা ঠেকাতে কাজ করছে র?্যাবের সদস্যরা। আটকদের পরবর্তী আইনি ব্যবস্থা শেষে উখিয়া থানায় হস্তান্তর করার প্রক্রিয়া চলছে।

এ দিকে গতকাল রাত ৯টার দিকে সর্বশেষ তথ্যে জানা গেছে, রোহিঙ্গা ক্যাম্পগুলোর নিরাপত্তা জোরদার করা হয়েছে। সেখানে পোশাকে ও সাদা পোশাকে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর নিরাপত্তা ও নজরদারি আরও বাড়ানো হয়েছে।

জেলা পুলিশের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা সাংবাদিকদের জানিয়েছে, ক্যাম্পে অস্ত্রধারী ও সন্ত্রাসীদের ধরতে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর তৎপরতা অব্যাহত আছে। আর অস্ত্র ও গোলবারুদ উদ্ধারের জন্য চেষ্টা অব্যাহত আছে।