জলবায়ু পরিবর্তন মোকাবিলায় দরিদ্র দেশগুলোকে ২৯ কোটি পাউন্ড দেবে যুক্তরাজ্য

জলবায়ু পরিবর্তনের কারণে ক্ষতিগ্রস্ত দরিদ্র দেশগুলোর জন্য ২৯ কোটি পাউন্ড সহায়তার প্রতিশ্রুতি দিয়েছে যুক্তরাজ্য। কপ২৬ জলবায়ু শীর্ষ সম্মেলনে এই প্রতিশ্রুতি দিয়েছে বরিস জনসনের দেশ। কপ২৬ সম্মেলনের দ্বিতীয় সপ্তাহ চলছে।

গতকাল বিবিসির একটি প্রতিবেদনে জানানো হয়, স্কটল্যান্ডের গ্লাসগোতে কপ-২৬ জলবায়ু সম্মেলনের দ্বিতীয় সপ্তাহের শুরুতে দেশটির পক্ষ থেকে এই প্রতিশ্রুতি দেয়া হয়।

গত ৩১ অক্টোবর শুরু হওয়া কনফারেন্স অব দ্য পার্টিজের (কপ) ২৬তম এই আয়োজন আগামী ১২ নভেম্বর শেষ হওয়ার কথা।

সম্মেলনে যুক্তরাজ্যের পক্ষ থেকে প্রতিশ্রুত অর্থের বড় অংশই বরাদ্দ দেয়া হয়েছে এশীয় এবং প্রশান্ত মহাসাগরীয় অঞ্চলের দেশগুলোর জলবায়ু নিয়ে পরিকল্পনা এবং বিভিন্ন কার্যক্রমে।

দেশটির সরকারের পক্ষ থেকে বলা হয়েছে, প্রাকৃতিক পরিবেশ সংরক্ষণ এবং কম কার্বন নিঃসরণভিত্তিক উন্নয়নকে উৎসাহিত করতে এই অর্থ দেয়া হবে।

বিবিসি জানিয়েছে, যুক্তরাজ্যের প্রতিশ্রুত ২৯ কোটি পাউন্ডের তহবিল জলবায়ু পরিবর্তনের প্রভাব মোকাবিলায় কয়েকটি ভাগে দেয়া হবে-

২৭ কোটি ৪০ লাখ পাউন্ড দেয়া হবে এশীয় এবং প্রশান্ত মহাসগরীয় দেশগুলোর জলবায়ু নিয়ে পরিকল্পনা ও বিভিন্ন কার্যক্রম পরিচালনায় বিনিয়োগের জন্য। পাশাপাশি পরিবেশ সংরক্ষণ এবং কম কার্বন নিঃসরণ করে এমন উন্নয়নে।

এক কোটি ৫০ লাখ পাউন্ড দেয়া হবে উন্নয়নশীয় দেশগুলোর সবচেয়ে বেশি প্রয়োজন এমন কার্যক্রমে গুরুত্ব বাড়িয়ে সহায়তা দেয়া যায় এমন একটি পরিকল্পনার মাধ্যমে।

১০ লাখ পাউন্ড দেয়া হবে জলবায়ু বিপর্যয়ে আরও বেশি দ্রুত এবং কার্যকর বৈশ্বিক মানবিক সহায়তা কার্যক্রমে সহায়তার লক্ষ্যে।

গত সপ্তাহে জলবায়ুর ‘ক্ষতিপূরণ তহবিলে’ প্রথম ১০ লাখ পাউন্ড দেয়ার প্রতিশ্রুতি দেন স্কটল্যান্ডের মুখ্যমন্ত্রী নিকোলা স্টার্জন।

বিবিসির প্রতিবেদনে বলা হয়, বাংলাদেশি বিশেষজ্ঞ অধ্যাপক ডা. সালিমুল হক নতুন তহবিলের ঘোষণাকে স্বাগত জানিয়েছেন।

ইন্টারন্যাশনাল সেন্টার ফর ক্লাইমেট চেইঞ্জ অ্যান্ড ডেভেলপমেন্টের পরিচালক সালিমুল হক বলেন, এ প্রতিশ্রুতির মাধ্যমে প্রথমবারের মতো উন্নত কোন দেশ পরোক্ষভাবে বৈশ্বিক উষ্ণায়নের দায় স্বীকার করে নিল। উন্নত অন্য দেশগুলোও এই কাতারে আসবে বলেও তিনি আশা করছেন। দ্বিতীয় সপ্তাহে প্রবেশ করা কপ-২৬ সম্মেলনে প্রাকৃতিক বিপর্যয়ে ক্ষতিগ্রস্ত দেশগুলোকে কিভাবে সহায়তা করা যায় এবং দরিদ্র ওই দেশগুলোকে ক্ষতিপূরণ দেয়া হবে কি না সে বিষয়ে আলোচনা করবেন বিশ্বনেতারা।

জলবায়ু পরিবর্তনের কারণে ইতোমধ্যে ক্ষতিগ্রস্ত এবং আরও বেশি ক্ষতির ঝুঁকিতে থাকা দরিদ্র দেশগুলোর পক্ষ থেকে প্রতিশ্রুত বার্ষিক ১০০ কোটি ডলার দাবি করা হচ্ছে। ধনী দেশগুলোর পক্ষ থেকে ২০০৯ সালের সম্মেলনে এই অর্থ দেয়ার প্রতিশ্রুতি দেয়া হয়। কিন্তু ২০২০ সালেও তা বাস্তবায়ন না করে ২০২৩ সালে নতুন লক্ষ্যমাত্রা দেয়ায় উন্নয়নশীল দেশগুলোর মধ্যে এ নিয়ে তীব্র হতাশা দেখা দিয়েছে।

বিবিসির প্রতিবেদনে বলা হয়, ঐতিহাসিকভাবে জলবায়ু পরিবর্তনের জন্য উন্নয়নশীল দেশগুলোর দায় খুব সামন্যই। অপরদিকে বৈশ্বিক জনসংখ্যার মাত্র ১ শতাংশ ধনী মানুষ দরিদ্রতম ৫০ শতাংশ মানুষের চেয়ে দ্বিগুণেরও বেশি কার্বন নিঃসরণ করছে।

গতকাল কপ-২৬ সম্মেলনে ‘অ্যাডাপটেশন, লস অ্যান্ড ড্যামেজ ডে’ ঘিরে বৈশ্বিক উষ্ণায়নের প্রভাব মোকাবিলার উপায় নিয়ে আলোচনা হবে। বিশেষ করে দরিদ্র দেশগুলোর জন্য এ আলোচনা হবে।

আগামী রোববার পর্যন্ত জাতিসংঘ আয়োজিত এই জলবায়ু সম্মেলনে বৈশ্বিক তাপমাত্রা কিভাবে বেঁধে দেয়া সীমা ১ দশমিক ৫ ডিগ্রি সেলসিয়াসের মধ্যে ধরে রাখা যায় সে বিষয়ে আলোচনায় গুরুত্ব দেয়া হবে।

মঙ্গলবার, ০৯ নভেম্বর ২০২১ , ২৪ কার্তিক ১৪২৮ ৩ রবিউস সানি ১৪৪৩

জলবায়ু পরিবর্তন মোকাবিলায় দরিদ্র দেশগুলোকে ২৯ কোটি পাউন্ড দেবে যুক্তরাজ্য

জলবায়ু পরিবর্তনের কারণে ক্ষতিগ্রস্ত দরিদ্র দেশগুলোর জন্য ২৯ কোটি পাউন্ড সহায়তার প্রতিশ্রুতি দিয়েছে যুক্তরাজ্য। কপ২৬ জলবায়ু শীর্ষ সম্মেলনে এই প্রতিশ্রুতি দিয়েছে বরিস জনসনের দেশ। কপ২৬ সম্মেলনের দ্বিতীয় সপ্তাহ চলছে।

গতকাল বিবিসির একটি প্রতিবেদনে জানানো হয়, স্কটল্যান্ডের গ্লাসগোতে কপ-২৬ জলবায়ু সম্মেলনের দ্বিতীয় সপ্তাহের শুরুতে দেশটির পক্ষ থেকে এই প্রতিশ্রুতি দেয়া হয়।

গত ৩১ অক্টোবর শুরু হওয়া কনফারেন্স অব দ্য পার্টিজের (কপ) ২৬তম এই আয়োজন আগামী ১২ নভেম্বর শেষ হওয়ার কথা।

সম্মেলনে যুক্তরাজ্যের পক্ষ থেকে প্রতিশ্রুত অর্থের বড় অংশই বরাদ্দ দেয়া হয়েছে এশীয় এবং প্রশান্ত মহাসাগরীয় অঞ্চলের দেশগুলোর জলবায়ু নিয়ে পরিকল্পনা এবং বিভিন্ন কার্যক্রমে।

দেশটির সরকারের পক্ষ থেকে বলা হয়েছে, প্রাকৃতিক পরিবেশ সংরক্ষণ এবং কম কার্বন নিঃসরণভিত্তিক উন্নয়নকে উৎসাহিত করতে এই অর্থ দেয়া হবে।

বিবিসি জানিয়েছে, যুক্তরাজ্যের প্রতিশ্রুত ২৯ কোটি পাউন্ডের তহবিল জলবায়ু পরিবর্তনের প্রভাব মোকাবিলায় কয়েকটি ভাগে দেয়া হবে-

২৭ কোটি ৪০ লাখ পাউন্ড দেয়া হবে এশীয় এবং প্রশান্ত মহাসগরীয় দেশগুলোর জলবায়ু নিয়ে পরিকল্পনা ও বিভিন্ন কার্যক্রম পরিচালনায় বিনিয়োগের জন্য। পাশাপাশি পরিবেশ সংরক্ষণ এবং কম কার্বন নিঃসরণ করে এমন উন্নয়নে।

এক কোটি ৫০ লাখ পাউন্ড দেয়া হবে উন্নয়নশীয় দেশগুলোর সবচেয়ে বেশি প্রয়োজন এমন কার্যক্রমে গুরুত্ব বাড়িয়ে সহায়তা দেয়া যায় এমন একটি পরিকল্পনার মাধ্যমে।

১০ লাখ পাউন্ড দেয়া হবে জলবায়ু বিপর্যয়ে আরও বেশি দ্রুত এবং কার্যকর বৈশ্বিক মানবিক সহায়তা কার্যক্রমে সহায়তার লক্ষ্যে।

গত সপ্তাহে জলবায়ুর ‘ক্ষতিপূরণ তহবিলে’ প্রথম ১০ লাখ পাউন্ড দেয়ার প্রতিশ্রুতি দেন স্কটল্যান্ডের মুখ্যমন্ত্রী নিকোলা স্টার্জন।

বিবিসির প্রতিবেদনে বলা হয়, বাংলাদেশি বিশেষজ্ঞ অধ্যাপক ডা. সালিমুল হক নতুন তহবিলের ঘোষণাকে স্বাগত জানিয়েছেন।

ইন্টারন্যাশনাল সেন্টার ফর ক্লাইমেট চেইঞ্জ অ্যান্ড ডেভেলপমেন্টের পরিচালক সালিমুল হক বলেন, এ প্রতিশ্রুতির মাধ্যমে প্রথমবারের মতো উন্নত কোন দেশ পরোক্ষভাবে বৈশ্বিক উষ্ণায়নের দায় স্বীকার করে নিল। উন্নত অন্য দেশগুলোও এই কাতারে আসবে বলেও তিনি আশা করছেন। দ্বিতীয় সপ্তাহে প্রবেশ করা কপ-২৬ সম্মেলনে প্রাকৃতিক বিপর্যয়ে ক্ষতিগ্রস্ত দেশগুলোকে কিভাবে সহায়তা করা যায় এবং দরিদ্র ওই দেশগুলোকে ক্ষতিপূরণ দেয়া হবে কি না সে বিষয়ে আলোচনা করবেন বিশ্বনেতারা।

জলবায়ু পরিবর্তনের কারণে ইতোমধ্যে ক্ষতিগ্রস্ত এবং আরও বেশি ক্ষতির ঝুঁকিতে থাকা দরিদ্র দেশগুলোর পক্ষ থেকে প্রতিশ্রুত বার্ষিক ১০০ কোটি ডলার দাবি করা হচ্ছে। ধনী দেশগুলোর পক্ষ থেকে ২০০৯ সালের সম্মেলনে এই অর্থ দেয়ার প্রতিশ্রুতি দেয়া হয়। কিন্তু ২০২০ সালেও তা বাস্তবায়ন না করে ২০২৩ সালে নতুন লক্ষ্যমাত্রা দেয়ায় উন্নয়নশীল দেশগুলোর মধ্যে এ নিয়ে তীব্র হতাশা দেখা দিয়েছে।

বিবিসির প্রতিবেদনে বলা হয়, ঐতিহাসিকভাবে জলবায়ু পরিবর্তনের জন্য উন্নয়নশীল দেশগুলোর দায় খুব সামন্যই। অপরদিকে বৈশ্বিক জনসংখ্যার মাত্র ১ শতাংশ ধনী মানুষ দরিদ্রতম ৫০ শতাংশ মানুষের চেয়ে দ্বিগুণেরও বেশি কার্বন নিঃসরণ করছে।

গতকাল কপ-২৬ সম্মেলনে ‘অ্যাডাপটেশন, লস অ্যান্ড ড্যামেজ ডে’ ঘিরে বৈশ্বিক উষ্ণায়নের প্রভাব মোকাবিলার উপায় নিয়ে আলোচনা হবে। বিশেষ করে দরিদ্র দেশগুলোর জন্য এ আলোচনা হবে।

আগামী রোববার পর্যন্ত জাতিসংঘ আয়োজিত এই জলবায়ু সম্মেলনে বৈশ্বিক তাপমাত্রা কিভাবে বেঁধে দেয়া সীমা ১ দশমিক ৫ ডিগ্রি সেলসিয়াসের মধ্যে ধরে রাখা যায় সে বিষয়ে আলোচনায় গুরুত্ব দেয়া হবে।